২৮ এপ্রিল ২০১২, রবিবার, ০৪:২৭:৩৫ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
‘শেরে বাংলা আপাদমস্তক একজন পারফেক্ট বাঙালি ছিলেন’ বিএনপির বহিস্কৃতদের জন্য সুখবর! মে দিবসে নয়পল্টনে বিএনপির শ্রমিক সমাবেশ উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়ার জের, বিএনপির বহিস্কার ৭৬ থাইল্যান্ডের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আহ্বান ‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়


সরকার হটাতে তৃণমূলের জনগনকে সম্পৃক্ত করতে চায় বিএনপি
ইউনিয়ন পর্যায়ে পদযাত্রার নতুন কর্মসূচি
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৪-০২-২০২৩
ইউনিয়ন পর্যায়ে পদযাত্রার নতুন কর্মসূচি বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশে মির্জা ফখরুল বক্তব্য দিচ্ছেন/ছবি সংগৃহীত


সরকার পতনের আন্দোলনে তৃণমূলের জনগনকে সম্পৃক্ত করতে ইউনিয়ন পর্যায়ে পদযাত্রার নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আগামী ১১ ফেব্রুয়ারি বিএনপি সারাদেশে ইউনিয়নে ইউনিয়নে পদযাত্রা করবে। শনিবার বিকালে নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এক সমাবেশ থেকে বিএনপি মহাসচিব এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন।

তিনি বলেন, “আমাদের এবারের কর্মসূচি হবে একেবারে ইউনিয়ন পর্যায় থেকে। গ্যাস-বিদ্যুত-চাল-ডালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, সরকারের পদত্যাগসহ ১০ দফা দাবি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে যুগপত আন্দোলনের অংশ হিসেবে আগামী ১১ ফেব্রুয়ারি শনিবার সারাদেশে ইউনিয়ন পর্যায়ে পদযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে।”

ইউনিয়ন পর্যায় থেকে ধারাবাহিকভাবে কর্মসূচি হবে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ এবার ইউনিয়ন পর্যায় থেকে আমরা পদযাত্রা শুরু করব। এরপরে ধীরে ধীরে আমরা উপজেলা-জেলা-মহানগর এবং এরপরে সেই তাদের যে ক্ষমতার মসনদ সেই মসনদ জনগন দখল করে নেবে, জনগনের সরকার গঠন করবে। আমাদেরকে মনে রাখতে হবে যে, আমরা ধীরে ধীরে চলছি, আমরা মানুষের অধিকারকে রক্ষা করার জন্য সামনের দিকে এগিয়ে চলছি। আপনারা দেখেছেন যে, ঢাকায় ইতিমধ্যে পদযাত্রার মধ্য দিয়ে আমরা সকল মানুষের দৃষ্টি আকর্ষন করতে সক্ষম হয়েছি এবং মানুষকে নিয়ে এগিয়ে চলার মধ্য দিয়ে যে একটা লং মার্চ সেই লং মার্চের মধ্য দিয়ে আমরা এদেরকে পরাজিত করে সত্যিকার অর্থেই জনগনের একটা রাষ্ট্র বানাতে চাই।”

ইউনিয়ন পর্যায়ের কর্মসূচি সফল করতে নেতা-কর্মীদের প্রতি আহবান রেখে তিনি বলেন, ‘‘ আসুন আজকে গ্রামের মানুষকে সঙ্গে নিয়ে ইউনিয়নের মানুষকে সঙ্গে নিয়ে উপজেলা-জেলার মানুষকে সঙ্গে নিয়ে একসাথে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য এই ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটানোর জন্য আমরা এগিয়ে চলি, এগিয়ে চলা হবে আমাদের বিজয় ইনশাল্লাহ।”

নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের একপাশের সড়কে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে ১০ দফা দাবিতে এই সমাবেশ হয় ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিনের আয়োজনে। ঢাকা ছাড়াও অন্য ৯টি বিভাগীয় শহরে একযোগে এই কর্মসূচি হয়েছে।

১০ দফা দাবিতে সরকার বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো যে যুগপত আন্দোলন শুরু করেছে এটি তার চতুর্থ কর্মসূচি। গত ২৪ ডিসেম্বর ৯ বিভাগীয় শহরে এবং ৩০ ডিসেম্বর ঢাকায় গণমিছিল, ১১ জানুয়ারি সারাদেশে অবস্থান কর্মসূচি এবং ২৫ জানুয়ারি সারাদেশে বিক্ষোভ সমাবেশ করে বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো।

শনিবার ঢাকায় গণতন্ত্র মঞ্চ, গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য, ১২ দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, এলডিপি, গণফোরাম-পিপলস পার্টি আলাদা আলাদা সমাবেশ করে।তারাও ১১ ফেব্রুয়ারি পদযাত্রার অভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণা করে। বেলা ১২টা থেকে রাজধানীর বিভিন্ন ওয়ার্ডের নেতা-কর্মীরা মিছিল নিয়ে নয়া পল্টনে সমাবেশস্থলে আসতে শুরু সমাবেশের কার্যক্রম বেলা ২টায় শুরু হয়ে শেষ হয় বিকাল সাড়ে ৫টায়। কাকরাইলের নাইটেঙ্গল রেষ্টুরেন্ট মোড় থেকে ফকিরাপুল মোড় পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে হাজার হাজার নেতা-কর্মীর উপস্থিতি সমাবেশ জনসমুদ্রে রুপ নেয়। নেতা-কর্মীরা লাল-হলুদ-নীল-সবুজ টুপি পড়ে, তাদের কারো কারো হাতে ছিলো জাতীয় ও বিএনপির পতাকা।


‘উপনির্বাচন: এই সরকারের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হয় নয়’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ এই সরকারের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হতে পারে না। এটা প্রমাণিত হয়েছে আবার যেসব উপনির্বাচন হয়ে গেলো, সেই উপনির্বাচনগুলোতে। আমি সে বিষয়ে যাবো না। আমি শুধু বলতে চাই, একটি কথা। হিরো আলম(বুগড়া উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী) সে একটি মাত্র কারণে আজকে প্রমাণ করেছে সে যে, আওয়ামী লীগ এই হিরো আলমের কাছেও কতটা অসহায় যে তাকে(আওয়ামী লীগ) রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে জিততে হয় ৬/৭‘শ ভোটে।”

তিনি বলেন, ‘‘ আজকে প্রমাণিত হয়েছে যে, আবদুস সাত্তার(উকিল আবদুস সাত্তার) যিনি দল ত্যাগ করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন তাকে আওয়ামী লীগ নিজের লোক মনে করে তাকে জয়ী করতে বিরোধী প্রার্থীকে গুম করতে হয়। এই সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে কী, সুষ্ঠু হবে কী, আপনারা ভোট দিতে পারবে?”



বাজারের অবস্থা তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ বাজারে অবস্থা আপনারা জানেন। এক লাফে গ্যাস সিলিন্ডারের দাম ২৬৩ টাকা বেড়েছে। আজকে মা-বোনেরা এখানে আছেন। তারা জানেন, কি কষ্ট করে তাদেরকে সংসার চালাতে হয়।”

‘আইএমএফের ঋণের প্রসঙ্গে’


মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ এই সরকার আমাদের ভবিষ্যতে নষ্ট করে দিয়েছে। তারা আজকে ঋণ গ্রহন করছে। আপত্তি নাই। উন্নয়নের জন্য অবশ্যই ঋণ নিতে হবে, ঋণ নিতে হয়। কিন্তু সেই ঋণের টাকা নিয়ে যদি পাচার করে কানাডার বেগমপাড়াতে গিয়ে বাড়ি তৈরি করেন, ঋণ এনে ফ্ল্যাট কিনেন, মালয়েশিয়াতে সেকেন্ড হোম তৈরি করেন তাহলে সেই ঋণের টাকা বাংলাদেশের মানুষ পরিশোধ করবে কেনো? ঋণের টাকা আনবেন আর আমাদের জনগনের পকেট কেটে টাকা নিয়ে যাবে। মানুষের এখন দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। এখন মানুষ সরকারের পতন দেখতে চায়, পরিবর্তন দেখতে চায়।”


তিনি বলেন, ‘‘ আমরা দেখছি যে, তারা(সরকার) মেগা প্রজেক্ট আবার শুরু করেছে। পাতাল রেলের প্রজেক্ট করেছে, সেই প্রজেক্টে ৫২ হাজার কোটি টাকা খরচ হবে। আর আমার সাধারণ মানুষকে গরীব-দুস্থ ভাতা দিতো সেই ভাতার টাকা তারা(সরকার) চুরি করে লুট করতে শুরু করেছে এবং সেই ভাতার টাকাও বন্ধ করে দিচ্ছে।

 এই সরকার আজকে সাধারণ মানুষের দিকে তাঁকায় না। তারা(ক্ষমতাসীনরা) তিলে তিলে বড় হচ্ছে, ফুলে ফেপে উঠছে। পাকিস্তান আমলে এই আওয়ামী লীগ শ্লোগান দিতো ২২ পরিবারকে দূর করতে হবে, জনগনের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আজকে সেই আওয়ামী লীগ কয়েক হাজার পরিবার তৈরি করেছে যে পরিবার বাংলাদেশের সমস্ত সম্পদ লুন্ঠন করে নিয়ে যাচ্ছে। আজকে এদেশে লুটেরাদের বাংলাদেশে পরিণত হয়েছে। এই লুটেরার নেতৃত্ব দিচ্ছে আওয়ামী লীগ।”


 


তিনি বলেন, ‘‘ এখনো সময় আছে ক্ষমতা ছেড়ে দিন। এই আন্দোলন শুরু হয়েছে। এই আন্দোলনের পতন ঘটাবো, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করব, আমাদের নেতা তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনবো, কারাবন্দি সকল রাজবন্দিদের মুক্ত করব।”


 


ভুলে ভরা পাঠাপুস্তক প্রকাশের সমালোচনা করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘‘আমাদের কৃষ্টি, আমাদের সংস্কৃতি, আমাদের সামাজিক মূল্য বোধ, আমাদের ঐতিয্য সমস্ত কিছুকে ধবংস করেছে। আমাদের সংসদ করেছে, আমাদের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ধবংস করছে, আমাদের ধর্মবোধকে ধবংস করছে। আমাদেরকে সত্যিকার অর্থে একটা নতজানু রাষ্ট্রে পরিণত করবার চেষ্টা করছে। এই সরকার দেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করতে যাচ্ছে।”


ঢাকা মহানগর দক্ষিনের আহ্বায়ক আবদুস সালামের সভাপতিত্বে ও দক্ষিনের সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু ও উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল হকের সঞ্চালনায় সমাবেশে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এজেডএম জাহিদ হোসেন, আহমেদ আজম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমান উল্লাহ আমান, কেন্দ্রীয় নেতা শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, ফজুলল হক মিলন, আবদুস সালাম আজাদ, আসাদুজ্জামান রিপন, কামরুজ্জামান রতন, মীর সরাফত আলী সপু, শিরিন সুলতানা, বেনজীর আহম্মেদ টিটু, সাইফুল আলম নিরব, নারায়নগঞ্জের সাবেক সাংসদ গিয়াস উদ্দিন, সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের সদস্য সচিব কাদের গনি চৌধুরী বক্তব্য দেন।


 এছাড়া ঢাকা মহানগর বিএনপির তাবিথ আউয়াল, ইশরাক হোসেন, মহিলা দলের আফরোজা আব্বাস, যুব দলের সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের এসএম জিলানী, মুক্তিযোদ্ধা দলের সাদেক আহমেদ খান, কৃষক দলের শহিদুল ইসলাম বাবুল, মতস্যজীবী দলের আবদুর রহিম, তাঁতী দলের আবুল কালাম আজাদ, জাসাসের জাকির হোসেন রোকন, ছাত্র দলের কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ প্রমূখ বক্তব্য রাখেন।


শেয়ার করুন