২৯ এপ্রিল ২০১২, সোমবার, ১০:৬:০৮ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
সরকার ও বেসরকারি উদ্যোগে দরিদ্রমুক্ত দেশ গড়ে উঠবে - আসাদুজ্জামান খান কামাল ৭০ শতাংশ মৃত্যু অসংক্রামক রোগে, বাজেটে বরাদ্দ বৃদ্ধির দাবি ‘বিদেশে দেশবিরোধী অপপ্রচারকারীদের বিরুদ্ধে স্থানীয় আইনে ব্যবস্থা নিন’ ভূল স্বীকার করে সরে দাড়ানোয় একজনের বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহার বাফেলোতে সন্ত্রাসীদের গুলিতে দুই বাংলাদেশী নিহত ‘শেরে বাংলা আপাদমস্তক একজন পারফেক্ট বাঙালি ছিলেন’ বিএনপির বহিস্কৃতদের জন্য সুখবর! মে দিবসে নয়পল্টনে বিএনপির শ্রমিক সমাবেশ উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়ার জের, বিএনপির বহিস্কার ৭৬ থাইল্যান্ডের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আহ্বান


কৌশলগত ভুলে সংকট চারিদিকে
সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৪-০৬-২০২৩
কৌশলগত ভুলে সংকট চারিদিকে


সরকারের কৌশলকৃত ভুলের কারণে কঠিন সময়ে চতুর্মুখী সংকট অর্থনীতিকে নাজুক করেছে। ডলার সংকটে আমদানি জ্বালানিনির্ভর জ্বালানি নিরাপত্তা ভেঙে পড়েছে। তীব্র গরমে মারাত্মক বিদ্যুৎ লোডশেডিং জনজীবন বিপর্যস্ত করেছে, শিল্পকারখানাগুলোর উৎপাদন পরিস্থিতি বিপর্যস্ত। জ্বালানি সংকটের আশু সমাধান হবে বলে মনে হয় না। এই অবস্থা দীর্ঘস্থায়ী হলে আমদানি-রপ্তানি উভয় দিকেই সংকট দীর্ঘায়িত হবে। অর্থনীতি বিপর্যস্ত হবে। এমন অবস্থায় সরকার অনেকটাই বেসামাল হয়ে পড়েছে। নুন আনতে পান্তা ফুরানো পরিস্থিতিতে বাজেট ঘাটতি কাটাতে আইএমএফের দিকে হাত বাড়িয়েছে। আইএমএফ করসংস্কার, ভর্তুকি তুলে নেওয়াসহ কিছু শর্ত দিয়েছে। এমতাবস্তায় জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব করেছে। সেখানেও দুর্দশাগ্রস্ত জ্বালানি বিদ্যুৎ খাত নিয়ে কোনো সুখবর নেই। 

টাকার মান কৃত্রিমভাবে ধরে রাখার খেসারত দিতে হচ্ছে গোটা অর্থনীতিকে। ডলারের বিনিময় হার বাংলাদেশ ব্যাংক ধরে রেখেছিল বহু বছর। কিন্তু অর্থনীতি যখন সংকটে পড়লো, কমে গেল ডলার আয়, তখন আর পরিস্থিতি সামাল দিতে পারলো না বাংলাদেশ। ভুল অর্থনৈতিক নীতি সংকটকে আরো প্রকট করছে। ফলে যে সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা দেশে উচ্চ প্রবৃদ্ধি দিয়েছে, তা-ও হুমকির মুখে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখন সরকারের অগ্রাধিকার হতে হবে সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা। কিন্তু তা না করে প্রবৃদ্ধি বাড়ানোর নীতিতেই আগ্রহ বেশি সরকারের। এতে সংকট আরো বাড়ছে। এমনিতেই নানা দুর্নীতির কারণে বাংলাদেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থায় সংকট। বিপুল পরিমাণ ঋণ অনাদায়ী থাকায় অনেক ব্যাংক তারল্য সংকটে, বিদেশে পাচার হয়ে গাছে বিপুল পরিমাণ বিদেশি মুদ্রা। সরকার যতই বলুক বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চয় সন্তোষজনক তবুও সরকারের আচরণে প্রতীয়মান বৈদেশিক মুদ্রা সঞ্চয় নিয়ে সরকার কিছুটা আতঙ্কিত। আমদানি নিয়ন্ত্রিত হয়েছে। বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য জ্বালানি আমদানি করা যাচ্ছে না সহজে। কয়লা, তরল জ্বালানি এবং এলএনজি আমদানির প্রভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন কমেছে আশঙ্কাজনকভাবে। বিপিসি, বিপিডিবি, পেট্রোবাংলা সবার সংকট। 

সরকার প্রস্তাবিত বাজেটে তরল জ্বালানি আমদানি শুল্ক সমন্বয় করায় বিপিসির সংকট কিছুটা কমতে পারে। এমনিতেই বিশ্ববাজারে জ্বালানির মূল্য অনেক কমে গেলেও সরকারের নীতির দুর্বলতার কারণে সরকার সুবিধা নিতে পারছে না। অনেকটা আইএফসির শর্তের কারণে জ্বালানি বিদ্যুতে ভর্তুকি উল্লেখ করেনি।  বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে জ্বালানি বিদ্যুৎ মূল্য এখনো বাণিজ্যিক পর্যায় থেকে কম। সরকারের পক্ষে জ্বালানি বিদ্যুতের মূল্য সমন্বয় নির্বাচনের বছরে করা সুবিবেচনা প্রসূত হবে না। বিদ্যুৎ বিভাগ নবায়নযোগ্য জ্বালানির ক্ষেত্রে সৌরবিদ্যুৎ প্যানেল, ইনভার্টার আমদানি শুল্ক, ভ্যাট রহিত করার সুপারিশ করেছিল। বাজেটে সেই অনুরোধ উপেক্ষিত রয়েছে। 

বিশ্বে ডলারে কেনাবেচাই সবচেয়ে বেশি হয়। ফলে বাড়তে থাকে ডলারের দাম, দেখা দেয় মূল্যস্ফীতি। মূল্যস্ফীতি কমাতে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংকব্যবস্থা দ্য ফেডারেল রিজার্ভ বা ফেড আগ্রাসীভাবে সুদহার বাড়াতে থাকে। ফলে ডলারের দর আরো বেড়ে যায়। এতে যাদের রপ্তানি পণ্যের তালিকায় জ্বালানি তেল নেই, তারা সবচেয়ে সংকটে পড়ে যায়। 

ডলারের বিনিময় মূল্য এখন ১০৮ টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবেই ২০২১-২২ অর্থবছরে টাকার অবমূল্যায়ন করা হয়েছে ৯ দশমিক ২৫ শতাংশ এবং ২০২২-২৩ অর্থবছরে এখন পর্যন্ত ১২ দশমিক ৬৬ শতাংশ। একই সময়ে রুপির অবমূল্যায়ন হয়েছে যথাক্রমে-৫ দশমিক ৮২ শতাংশ এবং ৩ দশমিক ৪৭ শতাংশ। ফলে ভারতকে ডলারের দর ও মূল্যস্ফীতি নিয়ে বড় সংকটে পড়তে হয়নি। এরপরও বিনিময়ের হারের অসংগতি দূর হয়নি। দেশে এখন বিনিময় হারের চারটি দর রয়েছে। এতে সমস্যার কিছু সমাধান হয়েছে, পুরোটা না। ফলে হুন্ডি কমছে না, আমদানি-রপ্তানির মাধ্যমে অর্থপাচারও কমেনি।

বাংলাদেশের সুযোগ ছিল রাশিয়া থেকে পেট্রোলিয়ামজাত দ্রব্যাদি এবং এলএনজি সুলভ মূল্যে কেনার। হয়তো বিকল্প মুদ্রায় কেনা যেত। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার আশঙ্কায় বাংলাদেশ রাশিয়ার প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছে। প্রতিবেশী ভারত কিন্তু খনিজ তেলসহ সব জ্বালানি আমদানি করে উপকৃত হয়েছে। বাংলাদেশের জন্য এখন মূল মাথাব্যথা জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।  

বাংলাদেশকে জ্বালানি বিদ্যুতের দক্ষ এবং সাশ্রয়ী ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য কিছু দৃঢ় ব্যবস্থা গ্রহণ করে সেগুলো প্রয়োগ করতে হবে। নবায়নযোগ্য জ্বালানির অবদান বাড়ানোর জন্য প্রণোদনা বাড়াতে হবে। কর কাঠামো, ট্যারিফ কাঠামো পুনর্বিন্যাস করতে হবে। সরকারকে নিজেদের জ্বালানি কয়লা উত্তোলনের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে, তেল-গ্যাস অনুসন্ধান জোরালো করতে হবে।

যা হোক বাংলাদেশ নিজেদের ভুল কৌশলের কারণে সৃষ্ট বর্তমান অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য সুচিন্তিত পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।

শেয়ার করুন