২০ এপ্রিল ২০১২, শনিবার, ৬:১১:২১ অপরাহ্ন


মির্জা ফখরুলের উদ্বেগ প্রকাশ
ঠাকুরগাঁওয়ে ১২টি মন্দিরের ১৪টি প্রতিমা ভাংচুর
বিবিসি
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৭-০২-২০২৩
ঠাকুরগাঁওয়ে ১২টি মন্দিরের ১৪টি প্রতিমা ভাংচুর বাংলাদেশে হিন্দু ধর্মালম্বিদের একটি মন্দির/ফাইল ছবি


বাংলাদেশের ঠাকুরগাঁও জেলার বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার তিনটি ইউনিয়নের সড়কের পাশে অবস্থিত ১২টি মন্দিরের ১৪টি প্রতিমা রাতের আঁধারে ভাংচুর করা হয়েছে। পুলিশ বলছে, এ ঘটনায় অজ্ঞাতদের আসামী করে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।

বালিয়াডাঙ্গী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা খায়রুল আনাম বলেন, গত ৪ঠা ফেব্রুয়ারি রাতে অজ্ঞাতরা এসব প্রতিমা ভাংচুর করেছে। এ ঘটনায় তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। জানা গেছে, বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা বিপুল কুমার জানান, ৬-৭ কিলোমিটার লম্বা একটি সড়ক যেটি মোট তিনটি ইউনিয়নের উপর দিয়ে গেছে এমন একটি সড়কের পাশে থাকা ছোট ছোট মন্দিরে প্রতিমা ভাংচুর করা হয়েছে। এসব মন্দির অরক্ষিত ছিল বলে উল্লেখ করেন তিনি। মন্দিরগুলো আকারেও বেশ ছোট বলে উল্লেখ করেন মি. কুমার।

পুলিশ কর্মকর্তা খায়রুল আনাম বলেন, মন্দিরগুলো উল্লেখযোগ্য তেমন কোন বড় মন্দির নয়। বরং রাস্তার পাশে যেখানে বড় গাছ কিংবা বাঁশ ঝাড় বা পরিত্যক্ত জায়গায় এসব ছোট ছোট মন্দির ছিল।

রাতের আঁধারে কে বা কারা এগুলো ভেঙেছে। “কোনটার হাত, কোনটার মাথা ভেঙেছে,” বলেন তিনি। এসব মন্দিরে তেমন কোন পূঁজা হয় না বলেও জানানো হয়। সবচেয়ে বেশি ধনতলা ইউনিয়নে মোট আটটি মন্দিরের প্রতিমা ভাংচুর করা হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মি. কুমার জানান, তারা ধারণা করছেন যে, রাতের বেলা হয়তো মোটর সাইকেলে করে কেউ এ ধরণের ভাংচুর চালিয়ে থাকতে পারে। তিনি বলেন, “মোটরসাইকেল নিয়ে একটা রড দিয়ে খোঁচা মেরে মেরে গেছে আরকি।”


তিনি আরো বলেন, “ওই ধরণের ত্রাস বা সদলবলে লোক এসে.. এরকম কিছু না। ”

তার মতে, গত প্রায় একশ বছরের মধ্যে ওই এলাকায় এ ধরণের ঘটনা এই প্রথম ঘটলো। স্থানীয়রা মনে করছেন, বাইরের কোন লোক এই ঘটনার সাথে জড়িত থাকতে পারে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিপুল কুমার জানিয়েছেন এসব মন্দির যাতে আর অরক্ষিত না থাকে তার জন্য অবকাঠামো নির্মাণের উদ্যোগ নেবেন তারা।

সবচেয়ে বেশি যে ইউনিয়নে প্রতিমা ভাঙা হয়েছে সেই ধনতলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সমর কুমার চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, প্রতিমা ভাংচুরের ঘটনা এলাকায় বাসিন্দাদের মধ্যে কোন আতঙ্ক নেই। তার ইউনিয়নে সনাতন ধর্মাবলম্বীরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ উল্লেখ করে তিনি বলেন, মানুষ স্বাভাবিক আছে। সোমবারও ওই এলাকায় টহল দিয়েছে পুলিশ। কারা মন্দির ভাঙতে পারে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন নির্দিষ্ট করে কিছু বলা না গেলেও আন্দাজ করতে পারেন তিনি। তার মতে এটা অনেকটা “ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের মতো”।

অনেকটা একই ধরণের মত দিয়েছেন চারোল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান দিলীপ কুমার চ্যাটার্জিও। তিনি জানান তার ইউনিয়নে একটি মন্দিরের প্রতিমা ভাংচুর করা হয়েছে। তবে বিষয়টি যেহেতু রাতের আঁধারে হয়েছে তাই কারা এর সাথে জড়িত তা তারা ধারণা করতে পারছেন না। এনিয়ে তার এলাকার মানুষ চিন্তিত নয় বলেও জানান তিনি। 

 
মির্জা ফখরুলের 

উদ্বেগ প্রকাশ

এদিকে আমাদের প্রতিনিধি জানিয়েছেন,   ঠাকুরগাঁওর বালিয়াডাঙ্গী উপজেলায় হিন্দু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় উপাসনালয়ে প্রতিমা ভাংচুরের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে নিরপেক্ষ তদন্তে অবিলম্বে দোষীদের খুঁজে বের করার দাবি জানিয়েছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

সোমবার এক বিবৃতিতে বিএনপি মহাসচিব এই দাবি জানান।

তিনি বলেন, ‘‘ এই ঘটনা শুধু ন্যাক্কার জনকই নয়, তা রহস্যজনক, পূর্ব পরিকল্পিত এবং কলঙ্কজনক। এর নিন্দা জানানোর ভাষা নেই। বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির উজ্জল দৃষ্টান্ত। হিন্দু ধর্মালম্বীদের মন্দির, প্রতিমা ভাংচুর করে যারা সাম্প্রদায়িক ও সামাজিক সম্প্রীতি বিনষ্ট করতে চায় তারা নরকের কীট।” 

‘‘ বালিয়ডাঙ্গির ঘটনার সাথে কারা জড়িত, নিরপেক্ষ তদন্ত করে তা খুঁজে বের করতে হবে। আমি অবিলম্বে বালিয়াডাঙ্গীর মন্দির ও প্রতিমা ভাংচুরের ঘটনার সাথে জড়িতদের নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে খুঁজে বের করে আইনের আওতায় এনে শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।”

একই সঙ্গে এই ঘটনায় ‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বশত নিরীহ মানুষকে যেন হয়রানি না করা হয় সে দিকে প্রশাসনকে সতর্ক থাকা’র আহবানও জানান বিএনপি মহাসচিব।

গত শনিবার রাত থেকে রোববার ভোর রাত পর্যন্ত জেলার বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার তিনটি ইউনিয়নের ১৪টি মন্দিরে প্রতিমা ভাংচুরের ঘটনা ঘটে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অনুপস্থিতির কথা উল্লেখ করে বিবৃতিতে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ এই ন্যাক্কারজনক ঘটনায় সমগ্র এলাকায় হিন্দু, মুসলমানদের মধ্যে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে যা সামাজিক সম্প্রীতির অন্তরায়। যে সকল মন্দির ও প্রতিমা ভাংচুর করা হয়েছে বলে গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে, তার বেশিরভাগই সড়কের পাশে স্থাপিত ছিল। রাতে সাধারণত টহল পুলিশ থাকে।”

‘‘কিন্তু সেখানে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অনুপস্থিতিও রহস্যজনক। তাদের গাফিলতিতে দুর্বৃত্তরা অনায়াসে এত বিপুল সংখ্যক মন্দির ও প্রতিমা ভাংচুরের ঘটনা ঘটাতে পেরেছে বলে সাধারণের ধারণা। সরকার এর দায় এড়াতে পারে না।”

বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘‘ দেশে চলমান দুঃশাসনে এমন এক অস্বাভাবিক ও নিরাপত্তাহীন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে যেখানে অপরাধ করলেও দলীয় বিবেচনায় প্রকৃত অপরাধীরা পার পেয়ে যায়। যার ফলে অপরাধীরা দ্বিগুণ উতসাহ নিয়ে নতুন নতুন অপরাধ করতেই থাকে। দেশ আজ যেন অপরাধীদের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে। জনগণ আজ চরম নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়েছে। রাজনৈতিক কর্মকান্ড বটেই, সামাজিক ও ধর্মীয় কাজও নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে সম্পন্ন করতে হচ্ছে। এর আগেও মসজিদ-মন্দির-গির্জা-প্যাগোডাসহ অন্যান্য ধর্মীয়ও উপাসনালয়েও হামলা হয়েছে। 


শেয়ার করুন