২৫ এপ্রিল ২০১২, বৃহস্পতিবার, ০৮:২৯:৩২ পূর্বাহ্ন


দেশকে ফরিদা পারভীন
ফিউশনের নামে যা হচ্ছে তা কনফিউশন
আলমগীর কবির
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৫-০২-২০২৩
ফিউশনের নামে যা হচ্ছে তা কনফিউশন ফরিদা পারভীন


বরেণ্য কণ্ঠশিল্পী ফরিদা পারভীন। বিশ্বজুড়ে লালনগীতির প্রসারে যাঁরা নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন, তিনি তাঁদের অন্যতম। স্টেজ ও টিভি আয়োজনের পাশাপাশি গানের স্বরলিপি তৈরি নিয়ে কাটছে তাঁর ব্যস্ত সময়। সংগীতাঙ্গনের বর্তমান প্রেক্ষাপট ও অন্যান্য প্রসঙ্গে তিনি কথা বলেছেন নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত পাঠকপ্রিয় দেশ পত্রিকার সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আলমগীর কবির 

প্রশ্ন: বাংলাদেশের সাথে লালনের সম্পর্ক অনেক গভীরের। কিন্তু ইদানিং এই গানের আসল নকল নিয়ে প্রশ্ন উঠে। এর কারণ কী?

ফরিদা পারভীন: দুদ্দু শাহ, পান্থ শাহদের আমলে অনেক মরমি কবি ছিলেন, যাঁরা লালনের গান নিজেদের বলে চালিয়ে দিয়েছেন। আমাদের বের করতে হবে, কোনটি লালনের গান। এ ক্ষেত্রে উপেন্দ্র ভট্টাচার্যের বাংলার বাউল ও মনির উদ্দিন শাহর লালনগীতির সংকলনকে রেফারেন্স হিসেবে নেওয়া যেতে পারে।

প্রশ্ন: শীত-বসন্তের মাঝামাঝি সময়ে শিল্পী বেশ ভয়ে থাকেন, আপনার সময়টা কেমন কাটছে?

ফরিদা পারভীন: ঠিকই শুনেছেন, এই সময়ের আবহাওয়া শিল্পীদের জন্য ভীতিকর। জ্বর-সর্দি নিয়ে খুব সতর্ক থাকতে হয়। দু’দিন আমারও একটু ঠান্ডা লেগেছিল, তারপর থেকে সতর্ক হয়ে গেছি। 

প্রশ্ন: শ্রোতার প্রত্যাশা থাকার পরও অনেকদিন কোনো অ্যালবাম বা একক গান প্রকাশ করেননি, কারণ কী?

ফরিদা পারভীন: গান প্রকাশ নিয়ে একদমই ভাবছি না। ইচ্ছা দমে গেছে, কোটি কোটি ভিউ পাওয়া গায়ক-গায়িকাকে নিয়ে শোরগোল আর আদিখ্যেতা দেখে। তাছাড়া যে কোনো সংগীতায়োজকের সঙ্গে কাজ করার ইচ্ছাও নেই। ভক্তদের প্রত্যাশা পূরণের জন্য তাই টিভি আর মঞ্চে গাইছি।

প্রশ্ন: নতুনদের সঙ্গে কাজ করার বিষয়ে আপনার আপত্তি কেন?

ফরিদা পারভীন: নতুনদের মধ্যে দু’একজন যে ভালো করছে না, তা নয়। কিন্তু সেই সংখ্যা তো হাতেগোনা। বেশিরভাগ গায়ক-গায়িকা আর সংগীতায়োজকের লক্ষ্য চমক সৃষ্টি করা। শ্রোতাকে অনেকটা হিপনোটাইজ করে চলছে তারা। যে কারণে তাদের কাজের মান নিয়ে খুব একটা প্রশ্ন তুলছে না কেউ। অথচ দেখুন, আমাদের সময়ের শিল্পীদের এ বিষয়গুলোয় কতটা নজরদারি থাকে। আমিও কোনো অনুষ্ঠানে গাওয়ার আগে নিশ্চিত করে নেই, বাঁশি শিল্পী আবদুল হাকিম আমার সঙ্গে থাকছেন কিনা। একইভাবে সেতার শিল্পী ফিরোজ খানসহ গুণী বাদ্যশিল্পীদের নিয়েই সবসময় মঞ্চে ওঠার চেষ্টা করেছি। গান রেকর্ডিংয়ের সময়ও আমি গুণী বাদ্যশিল্পী ও সংগীত পরিচালকদের সঙ্গেই কাজ করেছি। ভালো মিউজিশিয়ানদের হাত ধরেই অনেক শিল্পী নিজেকে অনেক উঁচু অবস্থানে নিয়ে গেছেন, যা বহুবার প্রমাণিত।

প্রশ্ন: আপনার কি মনে হয় না, ভালো কাজের জন্য অগ্রজ শিল্পী ও মিউজিশিয়ানদের নতুনের পাশে থাকা উচিত?

ফরিদা পারভীন: পুরোনোদের হাত ধরেই তো নতুন প্রজন্ম উঠে আসবে, এটাই রীতি। কিন্তু নতুনরা কি সেটা মানছেন। তাঁরা নিজেরাই তো প্রমাণ করছেন, একেকজন বহু কাজে পারদর্শী। গান লেখা, সুর করা, সংগীতায়োজন থেকে শুরু করে মিউজিক ভিডিও নির্মাতা ও মডেল হিসেবেও নিজেদের উপস্থাপন করছেন। একজন মানুষ এত মাধ্যমে একসঙ্গে সমানভাবে পারদর্শী হয়ে ওঠে- মুখের কথা নয়! যে কোনো একটি বিষয়ে পারদর্শী হয়ে উঠতে বহু বছর সাধনা করতে হয়। কিন্তু সেটা ক’জন করছেন? পরামর্শ ক’জন কানে নিচ্ছেন? এসব প্রশ্ন তাই ঘুরেফিরে থেকেই যাচ্ছে।

প্রশ্ন: আপনার গাওয়া অনেক গান নতুনরা রিমেক করেছে, কেমন লেগেছে?

ফরিদা পারভীন: গান আমার নয়, ফকির লালন সাঁইয়ের। যেগুলো বিভিন্ন সময়ে গেয়ে শ্রোতাদের ভালোবাসা পেয়েছি। এখন সেইগুলো দেখছি, রিমেকের নামে যাচ্ছেতাইভাবে প্রকাশ করা হচ্ছে। ফিউশনের নামে যা হচ্ছে, তা কনফিউশন। মনে রাখতে হবে, লালন সাঁই, হাছন রাজা, রাধারমণসহ যেসব মহাজন আছেন, তাঁদের গান এমনি এমনি কালজয়ী হয়ে ওঠেনি। তাঁদের সৃষ্টির মাহাত্ম্য আগে বুঝতে হবে, এরপর গাওয়ার চেষ্টা করতে হবে। মানছি, একেক জনের কণ্ঠ একেক রকম, তাই প্রতিটি গান একেক জনের কণ্ঠে একই রকম শোনাবে না। একটু হলেও পরিবর্তন কানে আসবে। তাই বলে কোনো কিছুর খোলনলচে বদলে দেওয়া আমি সমর্থন করি না।

প্রশ্ন: গানের স্বরলিপির কাজের কথা বলেছিলেন, কতটুকু এগোল?

ফরিদা পারভীন: কাজ চলছে। আমার গুরু মোকসেদ আলী সাঁইয়ের ঘরানা নিয়ে আরও কিছুদিন খাটাখাটনি করতে হবে।

শেয়ার করুন