২৫ এপ্রিল ২০১২, বৃহস্পতিবার, ০৬:৫৬:১২ পূর্বাহ্ন


পবিত্র রমাজান আল-কুর’আনের মাস, আল্লাহ তা’আলার সর্বশেষ্ঠ নিয়ামত
ড. মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম খান
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৫-০৪-২০২২
পবিত্র রমাজান আল-কুর’আনের মাস, আল্লাহ তা’আলার সর্বশেষ্ঠ নিয়ামত


আল-কুর’আন মানবজাতির জন্য আল্লাহ তা’আলার সর্বশ্রেষ্ঠ নিয়ামত। আল্লাহ তা’আলা বলেছেন, ১০৩: আর তোমরা সকলে আল্লাহর রজ্জুকে [আল-কুর’আন] সুদৃঢ় হস্তে ধারণ কর; পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না। আর তোমরা সে নিয়ামতের [আল-কুর’আনের] কথা স্মরণ কর, যা আল্লাহ তোমাদেরকে দান করেছেন। তোমরা পরস্পর শত্রু ছিলে। অতঃপর আল্লাহ তোমাদের মনে সম্প্রীতি দান করেছেন। ফলে, এখন তোমরা তার অনুগ্রহে পরস্পর ভাই ভাই হয়েছে।{সূরা আলে-ইমরান}। এই আয়াত থেকে সুস্পষ্ট যে, আল-কুর’আনে বর্ণিত জীবনাদর্শ পরিপূর্ণরূপে ধারণ কওে আরবীয় গোএভিত্তিক অজ্ঞ সমাজ পূর্ববর্তীতে লালিত হিংসা-বিদ্বেষ, ঈর্ষান্বিত হৃদয়, বংশ-মর্যাদায় ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ, ধন-সম্পদের গর্ব এবং সাম্প্রদায়িক নীতি পরিহার করে এক ভ্রাতৃত্ববন্ধনে ঐক্যতায় সুষম সমাজ গড়ে তুলেছিলেন। যে সমাজের সমতূল্য আর কোন সমাজই মানব ইতিহাসে পূর্বেও ছিল না আজও নাই। এই সমাজের বাসিন্দারা ইহলৌকিক জ্ঞানে ও ধন-সম্পদে সমৃদ্ধ ছিল অথচ তাদের মধ্যে ভ্রাতৃবন্ধনের ঐক্যতার পরিবর্তে ছিল গোএভিত্তিক ভেদাভেদ, সাম্প্রদায়িকতা, বংশমর্যাদার বড়াই এবং সামান্য কারণে রক্তক্ষয়ী মারামারি। অথচ আল্লাহ তা’আলার অনুগ্রহে রাসূলের (সা.) নেতৃত্বে আল-কুর’আনের ঐশ্ববাণীর পরশে আল্লাহ তা’আলার কাছে পরিপূর্ণভাবে আত্মসমপর্ণ ও আত্মসংশোধনই তাদেরকে করেছিল প্রশংসনীয় চারিএিক বৈশিষ্ট্যে অধিষ্ঠিত। এটা নিঃসন্দেহে অলৌকিক বিষয়। একারণেই আল-কুর’আন সর্বশ্রেষ্ঠ নিয়ামত। পৃথিবীর অন্য কোন নিয়ামত দিয়ে মানুষের হৃদয়ে পরস্পরের প্রতি প্রীতি ও ভালোবাসা সৃষ্টি করা যায় না। এরকম উদাহরণ দিয়ে আল্লাহ তা’আলা বলেছেন, ৬৩: এবং তিনি তাদের [তত্কালীন মুসলিম উম্মাহর] পরস্পরের হৃদয়ের মধ্যে প্রীতির অনুভূতি সৃষ্টি করেছেন। পৃথিবীতে যা কিছু আছে সব খরচ করেও তুমি তাদের অন্তরে সেই প্রীতির অনুভূমি সৃষ্টি করতে পারতে না, কিন্তু আল্লাহ তাদের মধ্যে প্রীতি দান করেছেন। নিশ্চয়ই তিনি সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী, প্রজ্ঞাবান।{সূরা আনফাল}।  একমাএ আল-কুর’আনে বর্ণিত জীবনাদর্শই এই অসাধ্য সাধন করতে পারে। বর্তমানে মুসলিম উম্মাহ যে বিভিন্ন মতাদর্শেও পূজাঁরী হয়ে শতধাবিভক্ত হয়েছে তার কারণ তারা আল-কুর’আনের বর্ণিত জীবনাদর্শকে বর্জন করেছেন। তাই এ বিভেদ দূর করতে হলে অবশ্যই আল্লাহ তা’আলার রজ্জু আল-কুর’আনের জীবনাদর্শকে ধারণ করতে হবে। আল-কুর’আন [নিয়ামত] শুধুমাএ দুনিয়ার জীবনের জন্যই নয় বরং পরজীবনের জন্য আরও বেশী গুরুত্বপূর্ণ। এই নিয়ামতের জন্যই মানবজাতির উচিত আল্লাহ তা’আলাকে ভালোবাসা এবং তার প্রেরিত বিধানে আত্মসমপর্ণ করে শুকরিয়া আদায় করা। এই নিয়ামতের সাহায্যেই মানব সম্প্রদায় আল্লাহ তা’আলার আসল পরিচয় সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করতে পারে। 

রমজান মাস আল-কুর’আনের মাস। রমজান মাসেই আল্লাহ তা’আলা আল-কুর’আন নাযিল করেছেন। এজন্যই রমজান মাসে কৃত ইবাদতের কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে আল-কুর’আন। মুসলিম বিশ্ব সারা মাস দিনে-রাতে আল-কুর’আনের পবিত্রবাণীর সুমধুর আওয়াজ শ্রবণ এবং সুরেলা কন্ঠে পাঠ করেন। তারা আধ্যাত্মিকভাবে শিহরিত ও অনুপ্রাণিত হয়ে থাকেন। আয়াতের ভাবার্থ এবং তাতে বর্ণিত তাত্পর্য বুঝে জীবন-যাপনে তা প্রতিীষ্ঠত করার গুরুত্ব নিয়ে চিন্তা-ভাবনা ও আলোচনা করেন। আল-কুর’আন সত্য-মিথ্যা ও ভালো-মন্দ যাচাই করার মানদন্ড [২৫/১ দ্রষ্টব্য]। তাই বলা বাহুল্য যে, অনেকেই আল-কুর’আন থেকে ভালো-মন্দ যাচাইয়ের জ্ঞান অর্জন করে জীবন-যাপনে তা প্রয়োগ করার মানসিক শক্তি সঞ্চার করেন। আরবী ভাষার আল-কুর’আন যারা পাঠ করতে পারেন না তারাও তারাবির নামাযে হাফেজের সুমধুর কন্ঠে আল-কুর’আন শ্রবণ করে হৃদয়ে প্রশান্তি লাভ করেন। তাই মুসলিম বিশ্বে সৃষ্টি হয় আল-কুর’আন পাঠের সুমধুর আওয়াজে ছন্দিত স্পন্দ। তাতে মুসলিমদের অন্তরে সৃষ্টি হয় প্রতিপালকের পবিত্রবাণী আল-কুর’আনের প্রতি অনিন্দ্য ভালোবাসা এবং আল-কুর’আনের সাথে সুগভীর সম্পর্ক। আশা করা যায়, আল-কুর’আন এবং এতে বর্ণিত ধর্মীয় মূল্যবোধের প্রতি অর্জিত ভালোবাসা এবং আসক্তি আগামী রমজান পর্যন্ত ইনশা আল্লাহ সজীব থাকবে। কারণ আল-কুর’আন মু’মিনদের জন্যে আরোগ্যের [শিফা] কিতাব। এপ্রসংগে আল্লাহ তা’আলা এরশাদ করেছেন, ৮২: আমি আল-কুর’আনে এমন বিষয় নাযিল করি যা রোগের সুচিকিত্সা এবং মু’মিনদের জন্য রহমত। গোনাহগারদের তো এতে শুধু ক্ষতিই বৃদ্ধি পায়।{সূরা বনী ইসরাইল}। অর্থাত আল-কুর’আন অন্তরের শিরক, কুফর, কুচরিএ ও আত্মিক রোগসমূহ থেকে মুক্ত করে থাকে। উপরন্তু মু’মিনদের জন্যে প্রদর্শন করে আল্লাহ তা’আলার মহা অনুগ্রহ জান্নাতে দাখিল হওয়ার সুস্পষ্ট রাস্তা, এজন্যই আল-কুর’আন তাদের জন্য রহমত। বস্তুতঃ আল-কুর’আনের মাধ্যমেই মুসলিম বিশ্ব পায় আল্লাহ তা’আলা ও তার হাবীব (সা.)-কে ভালোবাসার অনুপ্রেরণা এবং হৃদয়কে পরিশোধন করার সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা। স্মতর্ব্য যে, শেষ বিচার দিবসে বিশুদ্ধ হৃদয়ের ভিত্তিতেই বিচার হবে। এব্যাপারে আল্লাহ তা’আলা এরশাদ করেছেন, ৮৮: যে দিবসে ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্তুতি কোনো উপকারে আসবে না; ৮৯: কিন্তু যে বিশুদ্ধ হৃদয় নিয়ে আল্লাহর কাছে আসবে। ৯০: জান্নাত আল্লাহভীরুদের নিকটবর্তী করা হবে।{সূরা আশ-শূ’আরা}। একারণেই যাবতীয় অবৈধ ও নিন্দনীয় চাহিদা এবং নিষিদ্ধ বস্তুর প্রতি  আকর্ষণ কমিয়ে অন্তরকে পরিশোধন করার জন্যই পবিত্র রমজানে আল্লাহ-সচেতন অন্তর অর্জন করা হয় মুখ্য উদ্দেশ্য।  

পবিত্র রমজান মাস, মানব জাতিকে উপহার দিয়েছে আল্লাহ তা’আলার সর্বশ্রেষ্ঠ নিয়ামত এবং অলৌকিক ক্ষমতাসম্পন্ন সর্বশেষে নাযিলকৃত আসমানী কিতাব আল-কুর’আন। সব আসমানী কিতাবই রমজান মাসে নাযিল হয়েছে , এসম্পর্কে হাদিস থেকে জানা যায় যে, রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘ইব্রাহীমের কাছে সুহুফ নাযিল হয়েছিল রমজানের প্রথম রাতে। তাওরাত নাযিল হয়েছিল রমজানের ষষ্ঠ রাতে। ইঞ্জীল নাযিল হয়েছিল রমজানের তের রাতে। আল্লাহ তা’আলা আল-কুর’আন নাযিল করেন রমজানের চব্বিশ রাতে।’{আহমদ ৪: ১০৭}। অন্যান্য নির্ভরযোগ্য হাদিসে আল-কুর’আন নাযিল সম্পর্কে বিভিন্ন তারিখের কথা উল্লেখ রয়েছে। তবে শেষ আসমানী কিতাব আল-কুর’আনের বিশুদ্ধতা সংরক্ষণ করে হিদায়াতের জন্য সঠিক পথনির্দেশ হিসেবে আল-কুর’আনকে এবং পবিত্র রমজানকে করেছেন আল্লাহ তা’আলার সান্নিধ্যলাভে বিশেষভাবে মর্যাদাসম্পন্ন। এজন্যই পবিত্র রমজান মাসকে বলা হয় আল-কুর’আনের মাস, হিদায়াতের মাস। এই মাসেই দেশ-জাতি-বর্ণ নির্বিশেষে সকল আদম সন্তানের হিদায়াতের জন্য আল্লাহ তা’আলার সীমাহীন রহমত আল-কুর’আনের জ্যোতির রশ্মি প্রদ্যোতিত হয়েছিল মক্কার অন্যতম হেরা পর্বতের র্নিজন গুহায়। একারণেই এই পর্বতের নামকরণ হয়েছে জিবালে নূর অর্থাত জ্যোতির পর্বত। এই জ্যোতির পরশে তাওহীদের ঐশ্বরিক শক্তির কাছে আত্মসমপর্ণ করে জেগে উঠেছিল আল্লাহ তা’আলা সম্পর্কে অবিশ্বাসের অন্ধকারে ডুবে থাকা জাহেলী আরব এবং আত্মদানে অনুপ্রাণিত হয়েছিল মুরুভ‚মিতে বসবাসকারী আধ্যাত্মিকভাবে মৃত অগণিত হৃদয়। যাদের আল্লাহপ্রেমী হৃদয় স্বার্থত্যাগের ও আত্মত্যাগের মাধ্যমে সৃষ্টি করেছিল সমস্ত আরবীয়দের হৃদয়ে তাওহীদের ডাকে ভ‚মিকম্প। অতি স্বল্প সময়ে এই ভ‚মিকম্পের স্পন্দন ছড়িয়ে পড়েছিল আরবের প্রতিটা ঘরে। যে স্পন্দনের কম্পন গত প্রায় ১৫ শতাব্দী যাবাত আদম সন্তানের হৃদয়ে সৃষ্টি করে যাচ্ছে আল্লাহ তা’আলার প্রতি বিশুদ্ধ ভালোবাসার জোয়াড় এবং আত্মসমপর্ণের স্বতঃর্স্ফূত ইচ্ছা। অনুরূপ পবিত্র রমজানের আগমনে মুসলিম উম্মতের জন্য সৃষ্টি হয় আত্মশুদ্ধির, আত্মসংযমের, আত্মসমপর্ণের, আত্মসমালোচার অনবদ্য সুযোগ। আল্লাহ অভিমুখী হওয়ার প্রতিযোগিতা এবং হৃদয়ের প্রতিটা শিরায় আল্লাহ-সচেতনতায় শিহরণ।এগুলো নিঃসন্দেহে পবিত্র রমজানের উল্লেখ্য উপহার। আল্লাহ তা’আলার পবিত্রবাণী আল-কুর’আন যেমন আধ্যাত্মিকভাবে মৃত আদম সন্তানকে বের করে আনে অন্ধকার জীবন থেকে মুক্তির আলোতে, উপহার দেয় আল্লাহ তা’আলার সন্তুষ্টি অর্জনে দৃঢ়চিত্ত, পবিত্র রমজান তেমন অবচেতন, উদাসীন অর্ধমৃত হৃদয়ে সৃষ্টি করে আল্লাহ তা’আলার ভালোবাসায় ধন-সম্পদ উত্স্বর্গ এবং প্রবৃত্তির অবৈধ চাহিদা পরিত্যাগ করার স্বতঃস্ফূত উত্সাহ। আল-কুর’আন নাযিলের কারণ সম্পর্কে আল্লাহ বলেছেন, ‘১: আলিম-লাম-রাা; এটা একটা গ্রন্থ, যা আমি তোমার প্রতি নাযিল করেছি- যাতে তুমি মানুষকে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে বের করে আন-পরাক্রান্ত, প্রশংসার যোগ্য প্রতিপালকের র্নিদেশে তারই পখের দিকে।’{সূরা ইব্রাহীম}। পবিত্র রমজান মাসে আল-কুর’আন নাযিল করার উদ্দেশ্য সম্পর্কে আল্লাহ তা’আলা আরও বলেছেন, ‘১৮৫: রমজান মাসই হল সে মাস, যাতে নাযিল করা হয়েছে কুর’আন, যা মানুষের জন্য হিদায়াত এবং সত্যপথ যাএীদের জন্য সুস্পষ্ট পথনির্দেশ আর ন্যায় ও অন্যায়ের মাঝে পাথর্ক্য বিধানকারী। কাজেই তোমাদের যে লোক এ মাসটি পাবে, সে এ মাসে রোযা রাখবে।--{ সূরা আল-বাকারাহ}। অতএব আল-কুর’আনের পবিত্রবাণী এবং তাতে বর্ণিত পথনির্দেশ এবং তাওহীদের সুস্পষ্ট বর্ণনা যেমন আদম সন্তানকে সামাজিক কুসংস্কার এবং আল্লাহ তা’আলার সঠিক পরিচয় সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা দিয়ে অবিশ্বাসের অন্ধকার থেকে সার্বিকভাবে মুক্তি পাওয়ার সুযোগ দেয় তেমন রমজান মাসে রোযা পালন মুসলিম উম্মতকে দেয় আধ্যাত্মিকভাবে পরিশুদ্ধ হয়ে আত্ম-সচেতনতায় আল্লাহ তা’আলা অভিমুখী হয়ে জীবন যাপন করার অনুপ্রেরণা। আল-কুর’আন যেমন মানব সন্তানকে ধর্মান্ধতা, সামাজিক শোষন, চরমপন্থী চিন্তা-চেতনা, আল্লাহ তা’আলা সম্পর্কে অযৌত্তিক ধারণা থেকে উদ্ধার করে আত্মসমপর্ণী ইবাদীতে পরিণত করে, পবিত্র রমজানের রোযা তেমন নিজের উপর জুলুমকারী, পাপিতাপী, অনাচারী ও নৈতিকতাবিরোধী মুসলিমদের উপহার দেয় পাপ থেকে মুক্তির আশা-ভরষা। মুসলিম উম্মত পবিত্র রমজানের রোযা পালন করে ধর্মীয় মূল্যবোধের সরল রেখার সাথে বিন্যাস বা আলাইন্ড হয়ে নিয়ন্ত্রনহীন জীবনকে নিয়ন্ত্রনাধীন করতে পারেন। অতএব প্রতিবছর রমজানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপহার উম্মাহর জীবন ধারাকে আল্লাহ তা’আলা প্রদত্ত স্বর্গীয় বিধিনিষেধের সাথে আলাইন্ড করতে সাহায্য করে। সারা বছর পার্থিব জীবনের আকর্ষণে প্রবৃত্তির চাহিদায় তারা অন্যদের মতই স্বর্গীয় বিধিনিষেধ থেকে ক্রমশঃ দূরে সরে যায় তাই ধর্মীয় মূল্যবোধকে উপেক্ষা করে তারা বিভিন্ন পাপকর্মে জড়িত হয়ে পড়েন তাই তাদের প্রয়োজন হয় আলাইনমেন্ট করার। উম্মতের এই আচরণকে উদাহরণস্বরূপ মোটর গাড়ীর সাথে তুলনা করা যায়, নতুন গাড়ী কিছুদিন ব্যবহার করার পর অথবা টায়ার বদলালে গাড়ীর যখন ফ্যাক্টরীর নির্ধারিত আলাইনমেন্ড থেকে বিচ‚্যত হয়, তখন সোজা-সরলভাবে ড্রাইভ করা কঠিন হয়ে পড়ে। কারণ আলাইন্ডমেন্ট নষ্ট হওয়ায় গাড়ী রাস্তার লেইন থেকে যে কোনো দিকে সরে যেতে চায়। এই অবস্থায় বেশি দিন গাড়ী ড্রাইভ করলে টায়ারের জীবনায়ু অনেক কমে যায়। একারণেই মাঝে মধ্যে হুইল আলাইনমেন্ট করার প্রয়োজন হয়, যাকে বলা হয় অটোমোবিল ম্যানটেইনমেন্ট। অনুরূপ মুসলিম উম্মতের জীবন ধারাকে প্রতি বছরই রমজান মাসের পবিত্রতায় স্বর্গীয় মূল্যবোধের সাথে আলাইন্ড করতে হয় যাতে পরবর্তী বছর তারা ইসলামী সরল পথে জীবন যাপন করায় অভ্যস্থ হয়। একমাস রোযা পালন এবং সবাই একএে রাত জেগে অতিরিক্ত ইবাদত করায় মুসলিমদের মধ্যে আল্লাহ-সচেতনতা এবং ভ্রাতৃত্ববন্ধনের যে জাগরণ সৃষ্টি হয় তার প্রভাব রোযার পরেও মুসলিমদের আচরণে বহুদিন বিদ্যমান থাকে, এটাকেই বলা যায় স্বর্গীয় বিধিনিষেধের সাথে আলাইন্ড করা। যারা পরহেজগারীর মর্যাদায় উর্ত্তীণ হতে পারেন তারা পরবর্তী রমজান পর্যন্ত আলাইনমেন্টকে সংরক্ষণ করতে পারেন, এটা নিঃসন্দেহে উম্মতের জন্য রমজান মাসের এবং পবিত্র রোযার উল্লেখ্য উপহার।

তদুপরি উপরোক্ত উল্লিখিত আয়াত থেকে আরও স্পষ্ট যে, পবিত্র রমজানের অন্যতম উপহার, আল-কুর’আন এবং পরহেজগারীর মর্যদায় উর্ত্তীণ হওয়ার মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। কারণ আল-মুত্তাকীর পদমর্যাদায় উন্নীত হতে না পারলে বস্তুতঃ আল-কুর’আনে বর্ণিত জীবনার্দশের গুরুত্ব এবং তাত্পর্য সঠিকভাবে বুঝা এবং পার্থিব জীবনকে সরল রেখায় আলাইন্ড করা যাবে না। অর্থাত আল্লাহ তা’আলার সন্তুষ্টি অর্জন এবং আল-কুর’আনে বর্ণিত সহজ-সরল পথে প্রতিষ্ঠিত থাকা হবে অত্যন্ত কঠিন, ঠিক আলাইনমেন্ট বিকল গাড়ীর মত। তাই তারা লাভবান হতে পারবেন না। বর্তমানে মুসলিম উম্মতের সার্বিক অবস্থা ও বিভিন্ন ক্ষেএে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে এটা প্রামান করে যে, মুসলিম উম্মতের আচরণ ও জীবন-যাপন সরল পথের আলাইনমেন্ট থেকে লক্ষ্যণীয়ভাবে বিচ্যুত হয়েছে। তাই উম্মতের উচিত আগত রমজানের পবিত্রতায় নিজের প্রবৃত্তিকে পরিশোধ করা যাতে ব্যক্তি জীবনের, পরিবারের, দেশের সমস্যার সমাধান সঠিকভাবে করতে আল্লাহ-সচেতন অন্তর অর্জন করতে পারেন। বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, দেশ শাসনে যে সমস্ত রাজনৈতিক নেতাকর্মী এবং আমলারা জড়িত রয়েছেন, তাদের কর্তব্য পবিত্র রমজান মাসে তাওবাহর মাধ্যমে নিজের দূর্বল বৈশিষ্ট্যকে ন্যায়নীেিত প্রতিষ্ঠিত করার প্রয়াসে ধর্মীয় মূল্যবোধের সাথে আলাইন্ড করে আল্লাহ-সচেতন হওয়া। একাজে অবহেলা করলে আল-কুর’আনে বর্ণিত সরল পথের দিকর্নিদেশনা এবং রমজানের পবিত্র মুহূর্তগুলো থেকে কেউ লাভবান হতে পারবেন না। আল-কুর’আনে বর্ণিত মূল্যবোধ থেকে করা লাভবান হবেন, সে সম্পর্কে আল্লাহ তা’আলা বলেছেন, ‘২: এ সেই কিতাব যাতে কোনই সন্দেহ নেই। পথ প্রদর্শনকারী পরহেজগারদের জন্য। ৩: যারা অদেখা বিষয়ের উপর বিশ্বাস স্থাপন করে এবং নামায প্রতিষ্ঠা করে। আর আমি তাদেরকে যে রুযী দান করেছি তা থেকে ব্যয় করে।’{সূরা আল-বাকারাহ}। অর্থাত পরহেজগারী অর্জন ব্যতিরেকে আল-কুর’আনের পবিত্র বিধিনিষেধ থেকে লাভবান হওয়া যাবে না এবং আল্লাহ-সচেতনতায় প্রতিষ্ঠিত হওয়া সম্ভব হবে না। অনুরূপ আল্লাহ-সচেতন না হলে যেমন ভালো-মন্দ যাচাই করার ধীশক্তি অর্জন করা যায় না তেমন ভালো-মন্দের সংমিশ্রণ থেকে ভালো বেছে গ্রহণ করার শক্তি ব্যতিরেকে মুত্তাকী পদমর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত হওয়া যায় না। ভালো-মন্দ যাচাই করে ভালো গ্রহণ করতে অথবা ভালোর অগ্রগতি সাধনে প্রয়োজন হয় ধৈর্য, আত্মসংযম, স্বার্থত্যাগ এবং পার্থিব জীবনের প্রতি আকর্ষণ কমানোর ইচ্ছা এবং ধন-সম্পদের ক্ষতি গ্রহণ করার মানসিক শক্তি। এগুলো রমজান মাসে রোযা পালনের মাধ্যমে অর্জন করা সম্ভব অতএব রমজান মাসে সত্যনিষ্ঠ অন্তরে ইবাদত করলে পরহেজগারীর বৈশিষ্ট্যে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। ইনশা আল্লাহ চলবে।

শেয়ার করুন