২৭ এপ্রিল ২০১২, শনিবার, ০১:১৯:৫২ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় ইউরোপে ভারতীয় ৫২৭ পণ্যে ক্যান্সার সৃষ্টিকারি উপাদন শনাক্ত বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশে কড়াকড়ি বিএনপির আন্দোলন ঠেকানোই ক্ষমতাসীনদের প্রধান চ্যালেঞ্জ বিএনপিকে মাঠে ফেরাচ্ছে আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন নিয়ে অদৃশ্য চাপে বিএনপি


গণতন্ত্র নেই বলে বিদেশীরা আসছে : মির্জা ফখরুল
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ১২-০৭-২০২৩
গণতন্ত্র নেই বলে বিদেশীরা আসছে : মির্জা ফখরুল মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর


বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আজকে কথা হচ্ছে কেনো বিদেশীরা আসছে? আজকে আমেরিকা থেকে একটা টিম এসেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে একটা টিম এসেছে। কেনো এসছে? বুঝা গেলো বাংলাদেশে গণতন্ত্র নেই। যে তারা (বিদেশীরা) এখানে মানবাধিকার, গণতন্ত্র ও নির্বাচন সম্পর্কে জানতে এসছে এবং তারা বুঝতে চায়। অন্য দেশে তো তারা যায় না। এখানে আসে কেনো? গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে বিএনপির ‘প্রশিক্ষন সেল’ এর উদ্যোগে এক কর্মশালা তিনি একথা বলেন। 

যুক্তরাষ্ট্র আন্তর্জাতিক সংস্থা ‘ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের (ডিআই)’ সহযোগিতায় নারী প্রতিনিধিদের দিনব্যাপী প্রশিক্ষণের এই কর্মশালা হয়। এই কর্মশালার উদ্বোধন করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এই কর্মশালায় ২৫ জন নারী নেত্রী অংশ নেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান, ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের ডেনা এল ওলস (উধহধ খ ঙষফং), মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন স্বপন, প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক এবিএম মোশাররফ হোসেন, রাশেদা বেগম হীরা। অনুষ্ঠানে শিক্ষক মাজহারুল হক, প্রশিক্ষণ সেলের সদস্য রেহানা আক্তার রানু ও নেওয়াজ হালিমা আরলি প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

এতে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আরো বলেন, দেখুন কি রকম প্রতারণা? কথা বলে যাচ্ছে আপনারা তো সবাই টেলিভিশন দেখেন, শুনেন, মনে হয় যেন একজন ধর্মপুত্র জ্যোতিষ আমরাই ভালো নির্বাচন করি, আমরাই সত্যিকারের নির্বাচন করি, আমরাই গণতন্ত্রের বিশ্বাস করি। আর যতবার দেখেন ওই আগে (নির্বাচনের আগে) গিয়ে সবার আগে আমাদেরকে অ্যারেস্ট করে তারপরে তারা নির্বাচন করে ফাঁকা মাঠে। একটা নির্বাচনের জন্য প্রথম যে জিনিসটা দরকার হয় সেটা হচ্ছে একটা লেভেল প্ল্যায়িং ফিল্ড সব রাজনৈতিক দলকে অবশ্যই সমান সুযোগ পেতে হবে। কিন্তু এখানে সেই পরিবেশ নেই। 

ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের মাধ্যমে গণমাধ্যম ও ভিন্নমতকে দাবিয়ে রাখা এবং বিচার বিভাগের দলীয়করণের বিষয়টি তুলে ধরেন বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, দেশে বিরোধী এখন যেসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছেন এতো বড় চ্যালেঞ্জ জাতি কখনো মোকাবিলা করেনি। সামনের নির্বাচনেই নির্ধারিত হবে দেশ গণতন্ত্র থাকবে কি থাকবে না, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব থাকবে কি থাকবে না, আর আপনারা চিরদিনের জন্য দাস হয়ে যাবেন কিনা। আমি কথাগুলো আবেগে বলছি। এটা আমার অনুভূতি। এ কেমন একটা দেশ হয়ে গেলো আমাদের? আমাদের সমস্ত সত্ত্বাগুলোকে বিলিয়ে দেয়া হচ্ছে, আমাদের আত্মাকে ধবংস করে দেয়া হচ্ছে এবং উই আর কিপিং ম্যাম। আজকে আমাদের সকলের দায়িত্ব রুখে দাঁড়াতে হবে।

‘বিরোধী দলের কর্মসূচিতে বাধা’

মির্জা ফখরুল বলেন, এই অবৈধ সরকার বার বার করে বলছে ইদানিংকালে যে, আমরা তো কোনো বাধা দেই না, আমরা তো রাজনৈতিক দলগুলোকে কাজ করতে দিচ্ছি। মির্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রের বিশ্বাস করে না। তারা একনায়কতন্ত্র, তাদের ফিউডালিজম অর্থাৎ তারাই একমাত্র, আর কেউ নেই, তারা দেশের মালিক এরকম একটা মানসিকতা কাজ করছে। অতীতেও করেছে- তারা সব দলগুলোকে নিষিদ্ধ করে দিয়ে একটি মাত্র দল বাকশাল করেছিলো এবং সমস্ত গণমাধ্যমে বন্ধ করে ৪টা পত্রিকা রেখেছিলো, মানুষের মৌলিক অধিকারগুলো তারা কেড়ে নিয়েছিলো। দুর্ভাগ্য আমাদের, আজকে এই মুহূর্তে যখন আমি আপনাদের সঙ্গে কথা বলছি তখন আমাদের দেশে গণতন্ত্র নেই, দেয়ার ইজ নো ডেমোক্রেসি। আজকে সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলোকে তাদের যে রাজনৈতিক স্পেস সেই স্পেসগুলোকে ধবংস করে দেয়া হয়েছে। আপনি (ডেনা এল ওলস) পৃথিবীর কোথাও কি আছে যে, এই গণতান্ত্রিক দলের ৪০ লক্ষ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা বানোয়াট মামলা দায়ের-দলের প্রধান নেত্রীকে মিথ্যা মামলায় আটক করে রাখা, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে মিথ্যা মামলায় বিদেশে নির্বাসিত করে রাখা, আমাদের ৬‘শ নেতা-কর্মীকে গুম করে ফেলা, সহ¯্রাধিক মানুষকে হত্যা করার ঘটনা নেই।  

‘আমরা অসম যুদ্ধের মধ্যে আছি’

মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে আমরা একটা অসম যুদ্ধের মধ্যে আছি। এই যুদ্ধটা হচ্ছে আমাদের গণতন্ত্রকে রক্ষা করার যুদ্ধ, এই লড়াইটা হচ্ছে আমাদের দেশটাকে রক্ষা করার লড়াই, এই লড়াইটা হচ্ছে আমাদেরকে সত্যিকার অর্থেই আমাদের অস্থিত্বের লড়াই। এখানে নারী নেত্রীরা আছে। আমি বলতে চাই, সময় খুব কম। এই সময়ের মধ্যে মানুষকে জাগিয়ে তুলতে হবে। মহিলারা সব সময় ত্যাগ স্বীকার করেছেন। এদেশের মানুষ ত্যাগের মধ্য দিয়ে কিন্তু তারা সব কিছু অর্জন করেছে। ১৯৫২ সাল বলেন, ৬৯ বলেন, ৭১ বলেন, মানুষ ত্যাগ স্বীকার করেছে এবং অর্জন করেছে। ইতিমধ্যে আমাদের ১৭ জন মানুষ রাজপথে প্রাণ দিয়েছে। তাই আসুন সবাই এই ফ্যাসিস্ট ও একনায়ক সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই করি

এটা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত

এদিকে মগবাজারের ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনাকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, ষড়যন্ত্রমূলক চক্রান্ত বলে অভিহিত করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। রাজধানীর মগবাজার ও বাংলামোটরের মধ্যবর্তী স্থানে গত ১০ জুলাই সোমবার হাত বোমা (ককটেল) বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে।  এতে একজন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। ১২ জুলাই বুধবার ঢাকার সমাবেশ থেকে সরকার পতনের একদফা আন্দোলন ও নতুন কর্মসূচির ঘোষণা দিতে যাচ্ছে বিএনপি। এমন সময়ে এধরনের ঘটনা জনমনে নানা ধরনের শংকা দেখা দিয়েছে। 

আর এ প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আরো বলেন, এটা করা হয়েছে যারা বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে ধবংস করতে চায় এবং করছে।  বিরোধী দলকে যারা সব সময় ম্যালাইন করতে চায়। দোষারোপ করতে চায় যে বিরোধী দল বিএনপি এসব কাজ করে তারা আজকে এই কাজগুলো করছে-মূলত সরকার তাদের যে বিভিন্ন সংস্থাগুলো আছে তাদেরকে নিয়ে এগুলো করাছে। তিনি বলেন, সরকার দেশে ‘সংঘাত সৃষ্টি’র পায়তারা করছে বলে।

১০ জুলাই সোমবার রাতে মগবাজারে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনার প্রসঙ্গ টেনে সকালে গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব এই অভিযোগ করেন। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, তারা (সরকার) চেষ্টা করছে আবারও, প্রোভোক করে যেটা আমরা বলি যে, ইচ্ছা করেই সংঘাতের দিকে গোটা দেশকে জাতিকে ঠেলে দেয়ার চেষ্টা করছে।  

মির্জা ফখরুল বলেন, এটার প্রমাণ কি দেখেন? আমরা প্রোগ্রাম দিচ্ছি, প্রোগ্রাম চলছে। এখন পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ প্রোগ্রাম। তার সাথে সাথেই ওই প্রোগ্রামের বিরুদ্ধে তাদের তথাকথিত ‘শান্তি সমাবেশ’ ‘শান্তিমিছিল’ নামে কাউন্টার প্রোগ্রাম দিচ্ছে তারা যা সংঘাতের দিতে ঠেলে দেয়া ছাড়া আর কিছু নয়। কিন্তু এভাবে যদি প্রভোগেশন করে, এভাবে যদি সংঘাতের দিকে ঠেলে দিয়ে দেশকে অন্য দিকে নিয়ে যাওয়া হয় তা কখনই জনগণ মেনে নেবে না এবং তার সমস্ত দায়-দায়িত্ব সরকারকে বহন করতে হবে। 

সরকারের উদ্দেশ্যে আবারও আহ্বান জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এখনো বলি এই অবৈধ সরকারকে, এই ভয়াবহ একটা উদ্যোগ থেকে, প্রচেষ্টা থেকে সরে আসুন। দেশে সত্যিকার অর্থে একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে কাজ করুন। অর্থাৎ আমরা যে দাবিগুলো করছি-একটা নির্দলীয় সরকারের ব্যাপারে সহায়তা করু, নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন এবং সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দিয়ে সমস্যার সমাধান করুন।

শেয়ার করুন