২৯ এপ্রিল ২০১২, সোমবার, ০৩:৫১:৩৯ পূর্বাহ্ন


সবার অংশগ্রহণে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দেখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৮-১০-২০২৩
সবার অংশগ্রহণে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দেখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র গণমাধ্যমের সাথে কথা বলছেন মার্কিন উপমন্ত্রী আফরিন আখতার


দীর্ঘসময় ধরেই কখনও বাংলাদেশে এসে কখনও বা যুক্তরাষ্ট্রে বসে একটা কথাই বলে আসছে মার্কিনিরা। ‘অবাধ, সুষ্ঠু ও সবার অংশগ্রহণে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে হবে।’ প্রতিবারই বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকেও একই উত্তর অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে বাংলাদেশ সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এরপরও মার্কিনিদের সেই প্রত্যাশা ও চাওয়া যেন শেষই হচ্ছে না। সর্বশেষ বাংলাদেশে সফর করেছেন মার্কিন ডেপুটি অ্যাসিসট্যান্ট সেক্রেটারি আফরিন আখতার। তিনিও ওই একই ধরনের বক্তব্য দিয়েছেন। 

গত ১৭ অক্টোবর মঙ্গলবার বিকেলে কক্সবাজারের উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন শেষে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন। আফরিন আখতার বলেছেন, ‘সবার অংশগ্রহণে বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দেখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। একই সঙ্গে অবাধ-সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্র মনে করে তিনি তা বাস্তবায়ন করবেন।’

এ সময় তিনি বলেন, ‘ঢাকা এবং কক্সবাজারে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে ব্যস্ত সময় কেটেছে আমার। ১৬ অক্টোবর সোমবার আমি পররাষ্ট্র সচিব মোমেন এবং আরও কয়েকজন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছি। আমাদের মধ্যে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে কথা হয়েছে, যেগুলোর মধ্যে দুদেশের সম্পর্ক, অর্থনৈতিক সুসম্পর্ক, নারীর ক্ষমতায়ণ সম্পর্কিত নানা ইস্যু ছিল। পাশাপাশি গ্রহণযোগ্য, শান্তিপূর্ণ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন ইস্যুতেও আমাদের কথা হয়েছে যেটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’

আফরিন আখতার বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছায় নিরাপদ এবং মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসন চায় যুক্তরাষ্ট্র। একইসঙ্গে রোহিঙ্গা সংকটের টেকসই ও স্থায়ী সমাধান চাই আমরা। কিন্তু মিয়ানমারে এখনও রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের পরিবেশ সৃষ্টি হয়নি। মিয়ানমার সরকার সেখানে কোনো মানবাধিকার সংগঠনকে প্রবেশ করতে দেয় না। ফলে সেখানকার আসল পরিস্থিতি জানা যাচ্ছে না।’ এর আগে সকালে ছয় সদস্যের প্রতিনিধি দল নিয়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে যান আফরিন আক্তার। পরিদর্শন শেষে বিকেলে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান ও অন্যান্য সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি।

ওই সময় বিভিন্ন রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন ছাড়াও ইউএনএইচসিআর, ইউনিসেফ, ডব্লিউওএফপি ও আইওএমসহ বিভিন্ন এনজিও সংস্থার কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করেন এই প্রতিনিধি দল।

পররাষ্ট্র সচিবকে মার্কিন মন্ত্রী : সংলাপসহ পর্যবেক্ষক টিমের ৫ দফার দ্রুত বাস্তবায়ন চায় বাইডেন প্রশাসন 

আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু এবং শান্তিপূর্ণ করার তাগিদ পুনর্ব্যক্ত করেছেন ঢাকা সফররত মার্কিন উপ-সহকারী মন্ত্রী আফরিন আখতার। সেই সঙ্গে দু’দিন আগে দেয়া যুক্তরাষ্ট্রের খ্যাতনামা পর্যবেক্ষক প্রতিষ্ঠান এনডিআই এবং আইআরআই’র যৌথ সুপারিশ বাস্তবায়নে জোর দিলেন তিনি। পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনসহ মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের সঙ্গে ১৬ অক্টোবর সোমবার একাধিক বৈঠকে প্রায় অভিন্ন বার্তা দেন তিনি। সেখানে প্রাক-নির্বাচন পর্যবেক্ষক দলের ৫ দফা সুপারিশে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে জানিয়ে মার্কিন মন্ত্রী বলেন, নির্বাচনে জনমতের প্রতিফলন তথা ভোট প্রয়োগ নিশ্চিত এবং নির্বিঘ্ন করার জন্য দ্রুত সুপারিশগুলোর বাস্তবায়ন দেখতে চায় ওয়াশিংটন। বৈঠক শেষে মার্কিন দূতাবাসের অফিসিয়াল ফেসবুকে প্রচারিত বিবৃতিতে জানানো হয়, বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠান তথা নির্বাচনে জনগণের ভোট প্রয়োগ নিশ্চিত করতে সরকারের প্রচেষ্টা নিয়ে আফরিন আখতারের সঙ্গে বিস্তৃত আলোচনা হয়েছে। পররাষ্ট্র সচিবও সেই আলোচনা এবং নির্বাটন প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করার বিষয়টি স্বীকার করেন। বলেন, তারা বারবার এটি বলছেন, আমরাও তাদের চাওয়া মাফিক নির্বাচন হবে আশ্বস্ত করে চলেছি। 

অবাধ, সুষ্ঠু, এবং শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানে সরকারের তরফে দফায় দফায় অঙ্গীকার ব্যক্ত করা হলেও যুক্তরাষ্ট্র কেন আশ্বস্ত হতে পারছে না? এমন প্রশ্নে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, এটা যুক্তরাষ্ট্রই ভালো বলতে পারবে। এ বিষয়ে মার্কিন প্রতিনিধিদের সরাসরি জিজ্ঞাসা করতে পরামর্শ দেন সচিব। স্মরণ করা যায়, দু’দিন আগে নির্বাচন ও বিদ্যমান রাজনৈতিক সংকট সমাধানে গঠনমূলক ও উন্মুক্ত সংলাপের পরামর্শ দেয় সদ্য ঢাকা সফর করে যাওয়া যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক-নির্বাচন পর্যবেক্ষক দল। যুক্তরাষ্ট্রের দুই প্রধান রাজনৈতিক দল রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট পার্টির থিঙ্ক ট্যাঙ্ক হিসেবে পরিচিত ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট (আইআরআই) এবং  ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ইনস্টিটিউটের (এনডিআই) ৬ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল গত ৮ থেকে ১১ অক্টোবর ঢাকায় ছিল।

ওয়শিংটনে ফিরে তারা তাদের সফরের ফাইন্ডিংস বা পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে। বাংলাদেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় জরুরি সংলাপ আয়োজনসহ ৫ দফা সুপারিশ সংবলিত যৌথ ওই রিপের্টে বলা হয়, এদেশে শক্তিশালী গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের রীতি রয়েছে। আছে গতিশীল মিডিয়া, সক্রিয় নাগরিক সমাজ, রাজনীতিতে যুক্ত নাগরিকরা। বাংলাদেশ কয়েক দশকে শক্তিশালী অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। ২০৪১ সালের মধ্যে এ দেশের উন্নত হওয়ার ভিশন রয়েছে। তা সত্ত্বেও বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক যাত্রা চ্যালেঞ্জের মুখে। বিশেষত বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিবেশ নির্বাচনী সততার প্রতি বড় রকমের বাধা সৃষ্টি করছে। এর মধ্যে আছে আপসহীন এবং জিরো-সাম (সবকিছু অথবা কিছুই না) রাজনীতি। উচ্চমাত্রায় বাগাড়ম্বরতা, রাজনৈতিক সহিংসতা, অনিশ্চয়তা ও ভীতির বিস্তৃত আবহ, নাগরিক সমাজ ও স্বাধীনভাবে মত প্রকাশের স্থান সংকুচিত হয়ে আসা। এ ছাড়া আছে নাগরিক, রাজনৈতিক নেতা এবং এর অংশীদারদের মধ্যে আস্থার সংকট। নারী, যুবশ্রেণি ও অন্য প্রান্তিক গ্রুপগুলো অংশগ্রহণের উল্লেখযোগ্য বাধাও বর্তমান, যা গণতান্ত্রিক মূলনীতির প্রতি চ্যালেঞ্জ বা হুমকি। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্র মনে করে নির্বাচনের গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হতে পারে পরিমিত কথাবার্তা, উন্মুক্ত এবং গঠনমূলক সংলাপ। বলা হয়, মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং নাগরিক সমাজের কথা বলার স্থান নিশ্চিত করতে হবে, যেখানে ভিন্নমতাবলম্বীদের প্রতি সম্মান দেখানো হবে। সবাইকে অহিংস থাকার প্রতিশ্রুতি দিতে হবে এবং রাজনৈতিক সহিংসতাকারীদের জবাবদিহিতায় আনতে হবে। সব দলকে অর্থবহ রাজনৈতিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। এর মধ্যে থাকবে স্বাধীন নির্বাচন ব্যবস্থাপনাকে শক্তিশালী করা। 

পর্যবেক্ষক দলের বিস্তৃত ওই রিপোর্ট বিষয়ে সোমবার পররাষ্ট্র সচিবসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপে মার্কিন উপ-সহকারী মন্ত্রী আফরিন আখতার জানান, বাইডেন প্রশাসন রিপোর্টটি ‘এনডোর্স’ করেছে। এটি বাংলাদেশ সরকার এনডোর্স করে কি-না? এমন প্রশ্নে সিনিয়র সচিব সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, আমরা তা এখানো বিচার বিশ্লেষণ করছি। নির্বাচন কমিশনও এটা দেখছে। 

উল্লেখ্য, বৈঠক শেষে মার্কিন দূতাবাস যে বিবৃতি দিয়েছে তাতে জানানো হয়, বাংলাদেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু এবং শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের তাগিদ পুনর্ব্যক্ত করেছেন ঢাকা সফররত যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক ব্যুরোর অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি আফরিন আখতার। সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র উভয়েই শান্তিপূর্ণভাবে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন ও মহাপরিচালক খন্দকার মাসুদুল আলমের সঙ্গে বৈঠক করে আমরা (মার্কিন প্রতিনিধিদল) আনন্দিত। বৈঠকে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার শক্তিশালী বহুমুখী দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক এবং এর অনেক দিক নিয়ে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে বিবৃতিতে আরও বলা হয়, মার্কিন প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ ও বাণিজ্য, দুই দেশের দীর্ঘস্থায়ী উন্নয়ন অংশীদারিত্ব, মধ্যপ্রাচ্য, মার্কিন নির্বাচনী পর্যবেক্ষক দলের সাম্প্রতিক সফর, রোহিঙ্গা শরণার্থী ইত্যাদি ইস্যু আলোচনায় স্থান পেয়েছে। দূতাবাসের অফিসিয়াল ফেসবুকে প্রচারিত ওই পোস্টে বৈঠকের বেশ কয়েকটি ছবি যুক্ত করেছে মার্কিন দূতাবাস। বৈঠকে ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস্ উপস্থিত ছিলেন।

শেয়ার করুন