২৯ মার্চ ২০১২, শুক্রবার, ০৩:২৯:২৭ পূর্বাহ্ন


নিশ্চিত ২০১৪ বা ২০১৮ আমলা পুলিশ নির্ভর অস্বচ্ছ নির্বাচন হবে না
সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ২২-০২-২০২৩
নিশ্চিত ২০১৪ বা ২০১৮ আমলা পুলিশ নির্ভর অস্বচ্ছ নির্বাচন হবে না


সর্বগ্রাসী বৈষয়িক সংকটে উন্নত, উন্নয়নশীল দেশগুলোর অর্থনীতি টালমাটাল। ধেয়ে আসছে মহাসংকট বাংলাদেশেও। ক্রমান্বয়ে তিন টার্ম ক্ষমতায় থেকে অনেক অপ্রিয় কিছু ব্যাতিক্রমধর্মী কাজ করেছে আওয়ামী লীগ সরকার। অর্থনীতির আকার বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে দুর্নীতি। তাই তথাকথিত উন্নয়নের জোয়ার সৃষ্টি করলেও স্বস্তিতে নেই দেশবাসী। অভিযোগ আছে ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান শূন্য করে কিছু সুবিধাভোগী মানুষ প্রবাসে সম্পদের পাহাড় গড়েছে। 

সামাজিক বৈষম্য প্রকট। অনেকের অভিযোগ সরকারি দলের বিভিন্ন স্তরের ক্যাডার, সুবিধাভোগী সামরিক, বেসামরিক আমলা এবং দুর্নীতিবাজ ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত করেছে। দেশের ভবিষ্যৎ যে মেধা, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তায় তারা দেশে অবস্থান করতে এখন আর চাচ্ছে না। এ সেব মেধাবী অধিকাংশ তরুণ দেশ ছেড়ে প্রবাসে পাড়ি জমাচ্ছে। সেখানে স্থায়ী ঠিকানা করছে। মেধা পাচার নিয়ে কারো মাথা ব্যাথা নেই। অথচ এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়। দেশে হুহু করে বাড়ছে দ্রব্য মূল্য। সাধারণ মানুষের গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানির বিল বেড়েই চলেছে। মানসম্মত বিদ্যুৎ, জ্বালানি সরবরাহ করতে পারছে না সরকার। ভুল নীতি, অদক্ষ ব্যবস্থাপনা আর সর্বগ্রাসী দুর্নীতির কারণে জ্বালানি নিরাপত্তা অনিশ্চিত। ডলার সংকটে এলএনজি, কয়লা বা জ্বালানি তেল কেনার সামর্থ্য সীমিত। জ্বালানি নির্ভর শিল্প খাত টিকে থাকার সংগ্রামে। এক কথায় দেশের পরিস্থিতির একটা ক্রান্তিলগ্ন অতিক্রম করছে। অসহায় মানুষ। এরই মাঝে ঘনিয়ে আসছে জাতীয় নির্বাচন। শঙ্কা আছে নির্বাচন ঘিরে রাজনৈতিক সংঘাত আর অনিশ্চয়তার। 

দেশে গণতন্ত্র কতটুকু আছে বিশ্ববাসি জানে। প্রভাবশালী দেশের সরকারগুলো প্রতিনিয়ত নসিহত করছে স্বচ্ছ নির্বাচনের। এটি নিশ্চিত ২০১৪ বা ২০১৮ আমলা পুলিশ নির্ভর অস্বচ্ছ নির্বাচন হবে না। সরকারের সাফল্যগুলো ঢেকে গেছে দুর্নীতির কারণে। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, জ্বালানি কোথায় নেই দুর্নীতি। অনেকের মতে দুর্নীতি দমন কমিশন দুর্নীতির পৃষ্ঠপোষক হয়েছে। বেশকিছু সাড়া জাগানো হত্যাকাণ্ডের বিচার হয়নি। ক্যাসিনো কাণ্ডের মূল হোতাদের বিচার হয়নি। এমনকি ফুটবল ক্রিকেটে দুর্নীতির কথা ফলাও করে প্রচার হচ্ছে।

বিরোধীগুলোতেও মৌলিক বিষয়ে ঐকমত্য নেই। নেতৃত্বহীন মূল বিরোধী দলে আছে আস্থার সংকট। জনগণ আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টির শাসন দেখেছে। বিকল্প রাজনীতির সুযোগ সীমিত। রাজনীতি থেকে রাজনীতিকরা নির্বাসিত। অর্থ, পেশী রাজনীতির ভিত্তি। নোবেল লরিয়েট অমর্ত্য সেনের কথা কানে বাজছে। ‘গণতন্ত্র থাকলে দেশে দুর্ভিক্ষ হয় না’। বাংলাদেশকে প্রমাণ করতে হবে গণতন্ত্র আছে। প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক সরকারি দল বা বিরোধীদলে কি গণতন্ত্র আছে? যদি নিজেদের দলেই অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্র না থাকে তাহলে কীভাবে সেই পরিবেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে। 

সরকারি দল স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকে সরে গেছে বলেই মনে হচ্ছে। জ্বালানি বিদ্যুতের কথায় ধরা যাক। কেন বঙ্গবন্ধু পেট্রোবাংলা, বিএমডিসি সৃষ্টি করেছিলেন? উদ্দেশ্যে ছিল স্বনির্ভর জ্বালানি নিরাপত্তা। বর্তমান সরকার দেশীয় জ্বালানি সম্পদ মাটির নিচে রেখে আমদানির দিকে ছুটে এখন সংকটে। বিএমডিসি অস্তিত্বহীন, পেট্রোবাংলা পঙ্গু। ডলার সংকটে কয়লা,  গ্যাস কেনার সামর্থ্য সীমিত। সরকারি দল যে কোনোভাবে ক্ষমতা আঁকড়ে রাখতে কৃতকল্প, একইভাবে বিরোধীদলের খায়েশ যেনতেন প্রকারে ক্ষমতা দখল। জানি না ভঙ্গুর অর্থনীতি নিয়ে কীভাবে নতুন সরকার জ্বালানি নিরাপত্তা অর্জন করবে? কীভাবে বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চয় বাড়াবে? কীভাবে পাচার হয়ে যাওয়া মুদ্রা ফেরত আনবে? কীভাবে বিদেশি আর্থিক সহায়তানির্ভর মেগাপ্রকল্পগুলো শেষ হবে? কথা থেকে ঋণ পরিষদ হবে? 

জানি দেশপ্রেমিক বিশাল গোষ্ঠী দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে উৎকণ্ঠায়। নিরপেক্ষ জনেরা আশা করে স্বচ্ছ নির্বাচন হবে। সরকার যদি নিজেদের ভেবেই থাকে জনকল্যাণে কাজ করেছে স্বচ্ছ নির্বাচনে সহায়তা করতে দ্বিধা কেন? বাংলাদেশে ভারতীয় প্রভাবের বাইরে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, চীন, জাপান, আরব দেশগুলোর প্রভাব আছে। রাশিয়াও প্রচ্ছন্নভাবে প্রভাব বিস্তার করছে। দেশের সমস্যা সমাধানে বিদেশমুখী হলে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা হবে। আশা করি দেশপ্রেমিক শক্তিগুলো দেশের কল্যাণে সঠিক সময়ে সঠিক কাজ করবে। না হলে ঘনায়মান বৈশিক সঙ্গে তীরহারা ঢেউয়ের সাগরে নৌকা ডুবি হওয়ার আশঙ্কা আছে। 

শেয়ার করুন