১৯ এপ্রিল ২০১২, শুক্রবার, ১১:১৫:৫০ পূর্বাহ্ন


নির্বাচন নিয়ে অবশ্যই সরকার চাপে আছে
সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ০১-০৩-২০২৩
নির্বাচন নিয়ে অবশ্যই সরকার চাপে আছে


ঘনিয়ে আসছে পরবর্তী জাতীয় নির্বাচন। নির্বাচন নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে যতটা উষ্ণতা বা তোড়জোড়  দেশবাসীর মাঝে ততোটা নেই। প্রেসক্লাব, নয়াপল্টন, বারিধারায় তৎপরতা আছে, কিন্তু বাস, লঞ্চ, ট্রেনে বা চায়ের দোকানে এখনো নির্বাচন উষ্ণতা ছড়ায়নি। যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের তাগাদা দিচ্ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র রীতিমতো চাপ প্রয়োগ করছে বাংলাদেশকে চীন বিরোধী জোটে যোগদানের। চীন দূতাবাস এই ধরনের কিছু করার বিরুদ্ধে সতর্ক করেছে। 

সর্বশেষ খবর, মস্কো সে দেশে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতকে ডেকে রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রের যন্ত্রপাতি বহনকারী রাশিয়ান জাহাজকে বাংলাদেশের বন্দরে ভিড়তে না দেয়ার বিষয়ে ব্যাখ্যা চেয়েছে। ভারত বাংলাদেশের বর্তমান সরকার বিষয়ে মনোভাব পাল্টায়নি। রাজনীতি বা নির্বাচন নিয়ে ধোঁয়াশা। এরই মাঝে হঠাৎ করে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক জানালেন, রাজনীতি করতে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার কোনো আইনগত বাধা নেই। কিন্তু তিনি নির্বাচন করতে পারবেন না। আইনগত বিষয় নিয়ে চলছে বাহাস।

নির্বাচন নিয়ে অবশ্যই সরকার চাপে আছে। অনেকেই বলছেন, হয়তো শেষ মুহূর্তে কোনো সমঝোতা হতেও পারে। তবে নির্বাচন ২০১৮’র মতো বিতর্কিত হবে না, এটি বলাই যায়। প্রধান বিরোধীদল বিএনপি কি করবে সেটি এখন মুখ্য।  তবে নির্বাচন বিষয়ে জনগণ এখনো বীতশ্রদ্ধ। জনগণের জন্য জলে কুমির ডাঙায় বাঘ অবস্থা। 

নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির ঊর্ধ্বমূল্যের চাপে নিম্নবিত্ত কথাই নেই মধ্যবিত্তদের মাঝেও হা-হুতাশ শুরু হয়েছে। মাছ, মাংস, ডিম, দুধ-সবকিছুর দাম বাড়ন্ত। দফায় দফায় বাড়ছে দাম গ্যাস, বিদ্যুতের মূল্য। সরকার আছে চতুর্মুখী চাপে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের দুর্নীতির ফিরিস্তি মিডিয়ায় এলেও দুদক কাগুজে বাঘে পরিণত হয়েছে। এরই মাঝে নিবিড় সেচ শুরু হয়েছে, গরমকালে আসছে রমজান। সংশ্লিষ্ট মহল তীব্র জ্বালানি সংকট, বিদ্যুৎ সংকটের আশঙ্কা করছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ন্ত, সঞ্চালন ব্যবস্থাও উন্নত হচ্ছে, পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র পূর্ণ ক্ষমতায় চালু, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু হয়েছে। বাঁশখালী আর বরগুনায় আরো দুটি বিদ্যুৎকেন্দ্র চালুর অপেক্ষায়। ৩ হাজার ৫০০ থেকে ৪ হাজার মেগাওয়াট নতুন কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে এই গ্রীষ্মকালে বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব। কিন্তু সংকট জ্বালানি জোগাড়ে দেশে উৎপাদিত গ্যাস ক্রমাগত কমছে। দেশের কয়লা মাটির নিচে, গ্যাস উৎপাদনে দীর্ঘসূত্রতা, স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি আমদানির জন্য অর্থসংকটে পেট্রোবাংলা, সরকারের কাছে কয়লা কেনার মতো প্রয়োজনীয় ডলার নেই, জ্বালানি তেল কেনার ক্ষেত্রেও ডলার সংকট। গ্যাস সংকটে ধুঁকছে শিল্পখাত। অচিরে সমাধান না হলে বন্ধ হয়ে যেতে পারে অধিকাংশ ক্ষুদ্র মাঝারি শিল্প। চাকরি হারাতে পারে লক্ষ শ্রমিক। নির্বাচনের বছরে কতটুকু কাঙ্ক্ষিত হবে সেই অবস্থা। 

এরই মাঝে এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনকে পাশ কাটিয়ে তড়িঘড়ি করে নির্বাহী এদেশে গ্যাস বিদ্যুতের দাম বাড়ালো সরকার। অতি শিগগিরই জ্বালানিসংকট দূর না হলে বৃহৎ শিল্প বিশেষ করে রপ্তানিমুখী শিল্পগুলোতেও সংকট তীব্রতর হবে। নিজেদের সৃষ্ট সংকটে সরকার দিশেহারা।

অনেক মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের মাঝপথে। রাজনীতিতে সংঘাত এবং নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিলে মেগা প্রকল্পগুলো গলার কাঁটায় পরিণত হবে। বিপুল দেনার দায়ে অর্থনীতি ভেঙে পড়তে পারে। এমনি যখন অবস্থা, তখন সরকার এবং বিরোধীদল নির্বাচন বিষয়ে সমঝোতা না করলে সংঘাত অনিবার্য। জাতীয় স্বার্থে সুশীলসমাজ প্রধান দুই দলকে আলোচনার জন্য জোর তাগাদা দেয়া উচিত।

শেয়ার করুন