২৮ এপ্রিল ২০১২, রবিবার, ০১:১৫:৬ অপরাহ্ন
শিরোনাম :


মওলানা ভাসানী সম্মেলনে আসিফ নজরুল
বাংলাদেশকে টুকরো টুকরো করে অন্য দেশের প্লেটে তুলে দেওয়া হচ্ছে
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৩-০৯-২০২৩
বাংলাদেশকে টুকরো টুকরো করে অন্য দেশের প্লেটে তুলে দেওয়া হচ্ছে মওলানা ভাসানী সম্মেলনে আসিফ নজরুল


বাংলাদেশকে টুকরো টুকরো করে ভারতের প্লেটে দেওয়া হচ্ছে, আমেরিকার প্লেটে দেওয়া হচ্ছে, রাশিয়ার প্লেটে দেওয়া হচ্ছে, চীনের প্লেটে দেওয়া হচ্ছে, আবার অন্য সরকার ক্ষমতায় থাকলে পাকিস্তানের প্লেটে দেওয়া হয়, সৌদী আরবের প্লেটে দেওয়া হয়-তখন মনে হয় মওলানা ভাসানীকে এই সময় প্রয়োজন ছিল। যারা ভোট চোর তারা তো মওলানা ভাসানীকে মুছে ফেলার চেষ্টা করবে। আর আমাদের মওলানা ভাসানীকে আরো জোরালোভাবে তুলে ধরতে হবে। গত ১০ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় উডসাইডের কুইন্স প্যালেসে মাওলানা অব্দুল হামিদ খান ভাসানী ফাউন্ডেশন নিউইয়র্ক আয়োজিত চতুর্থ ভাসানী সম্মেলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের চেয়ারম্যান আসিফ নজরুল এই সব কথা বলেন।

মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী ফাউন্ডেশনের সভাপতি আলী ইমাম শিকদারের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক মঈনুদ্দীন নাসেরের পরিচালনায় সম্মেলনে মূল বক্তা ছিলেন প্রফেসর আসিফ নজরুল। আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কানাডা থেকে আগত ভাসানী গবেষক ড. আবিদ বাহার, লন্ডন থেকে আগম মওলানা ভাসানী গবেষক ড. লাইলী উদ্দিন, বাংলাদেশ সোসাইটির সাবেক সভাপতি ডা. ওয়াদুদ ভুইয়া, মওলানা ভাসানী ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি প্রফেসর দেওয়ান শামসুল আরেফীন, কলকাতা ভাসানী চর্চা কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও গবেষক সৌমিত্র দস্তিদার, ভাইস চেয়ারম্যান ড. আসিফ আক্রাম, ভাসাই ফাউন্ডেশনের সাবেক সভাপতি সৈয়দ টিপু সুলতান, বাংলাদেশ সোসাইটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ হোসেন খান, বিশিষ্ট রাজনীতিক নাহিদুল এইচ খান।

সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন আহ্বায়ক কমিটির আহ্বায়ক কাজী শাখাওয়াত হোসেন আজম, সদস্য সচিব আবুল কাশেম, মওলানা ভাসানীর ভাতিজা আব্দুর রশিদ, সংগঠনের সহ-সভাপতি কাজী ফৌজিয়া, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক ইমরান আনসারী, বাংলাদেশ সোসাইটির ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য কাজী আজহারুল হক মিলন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফখরুল ইসলাম, লেখক মাহমুদ রেজা চৌধুরী, লেখক সাঈদ তারেক, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির অন্যতম সদস্য গিয়াস আহমেদ, জিল্লুর রহমান জিল্লু, বাংলাদেশ সোসাইটির সাবেক কোষাধ্যক্ষ মোহাম্মদ আলী, কমিউনিটি অ্যাকটিভিস্ট মাহতাব উদ্দিন, অ্যাটর্র্নি সামতলী হক, ডা. ওয়াজেদ এ খান, কাজী শামসুল হক, আবু তাহের, রতন তালুকদার, মনোয়রুল ইসলাম, পার্থ ব্যানার্জি, মোহাম্মদ সাঈদ, ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল খালেক, অ্যাডভোকেট মজিবর রহমান, অ্যাডভোকেট মুজিবুর রহমান, আনোয়ার হোসেন লিটন, আমিন মেহেদী, যুক্তরাষ্ট্র জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক আবু তালেব চৌধুরী চান্দু, প্রফেসর সৈয়দ আজাদ, হাসান আলী, দারাদ আহমেদ, দেলোয়ার হোসেন শিপন প্রমুখ।

আলোচনা মূল বক্তা ড. আসিফ নজরুল বলেন, আজকে আমরা যখন দেখি বাংলাদেশের স্বার্থ অন্য দেশের কাছে বিকিয়ে দেওয়া হয়, বাংলাদেশকে টুকরো টুকরো করে ভারতের প্লেটে দেওয়া হচ্ছে, আমেরিকার প্লেটে দেওয়া হচ্ছে, রাশিয়ার প্লেটে দেওয়া হচ্ছে, চীনের প্লেটে দেওয়া হচ্ছে, আবার অন্য সরকার ক্ষমতায় থাকলে পাকিস্তানের প্লেটে দেওয়া হয়, সৌদি আরবের প্লেটে দেওয়া হয় তখন মনে হয় মওলানা ভাসানীকে এই সময় প্রয়োজন ছিল। তিনি লংমার্চ করেছিলেন দেশকে ভালোবেসে। ভাসানীই একমাত্র নেতা ছিলেন তিনি সবচেয়ে আগে স্থান দিতেন বাংলাদেশকে। তিনি বাংলাদেশের স্বার্থের সঙ্গে কোনো আপস করেননি। এগুলো আমাদের তরুণ প্রজন্ম ভুলতে বসেছে। এখন ক্ষমতায় থাকার জন্য বাংলাদেশের স্বার্থকে বিকিয়ে দেওয়া হয়। আমরা বারবার মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলি, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা হচ্ছে দেশপ্রেম, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা হচ্ছে মওলানা ভাসানী। সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে দেশপ্রেম। আপনারা জানেন, বাংলাদেশে দীর্ঘদিন থেকে বিভেদের রাজনীতি চলছে। মওলানা ভাসানী প্রমাণ করেছেন সেক্যুলার হতে হলে ইসলামের বদনাম করতে হবে না। ধর্মের বিরুদ্ধে আজেবাজে কথা বলতে হবে-এটার কোন যৌক্তিকতা নেই। ভাসানী প্রমাণ করেছিলেন সেক্যুলারিজম এবং ইসলাম একসঙ্গে চলতে পারে। যে কারণে তার ভক্তদের মধ্যে সব ধর্মের মানুষ ছিলেন। তিনিই ঐ নেতা ছিলেন যিনি আওয়ামী মুসলিম লীগকে আওয়ামী লীগে রূপান্তরিত করেছিলেন। আজকে বাংলাদেশের সংকটটা কোথায় দেখেন, আজকে একশ্রেণির মানুষ আছেন যারা সেক্যুলারিজমের নামে ইসলাম ধর্মকে গালাগাল করেন, মাদ্রাসায় যারা পড়েন, তাদের দমন করার চেষ্টা করেন। আজকে যে বিভেদের রাজনীতি চলছে, সেখানে আমাদের ভাসানীর রাজনীতি তুলে ধরা উচিত। বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের বিশুদ্ধ চেতনার পরিচয় বহন করেন।  মওলানা ভাসানী ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছেন, পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছেন। বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর যে দুঃশাসন ছিল তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিলেন। উনি সারা জীবন গণতন্ত্র এবং মানুষের জন্য সংগ্রাম করেছিলেন। আজকের এই দুঃসময়ে আমাদের কী প্রয়োজন? ভাসানীর আদর্শ। কারণ আমাদের দেশে গণতন্ত্র নেই, কোটি কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে, আমাদের দেশের একজন সাধারণ বাস ব্যবসায়ী ছয়টি ইসলামি ব্যাংক খালি করে বিলিয়ন ডলারের মালিক, একন সাধারণ ব্যবসায়ী সিঙ্গাপুরে অন্যতম ধনী। এই রকম দুঃশাসন অতীতে বাংলাদেশের মানুষ আর দেখেনি। বাংলাদেশের চোর সিঙ্গাপুরে বড় লোক হয়নি। এতো লোক গুম হয়নি, অন্য আমলে তো অন্যদেশকে স্বামী বলে পরিচয় দেয়নি। এই ভয়াবহ সময়ে মওলানা ভাসানী আদর্শ তুলে ধরা প্রয়োজন। তিনি বলেন, যারা ভোট চুরি করে, দুর্নীতি করে, বিদেশে অর্থ পাচার করে তা কী ভাসানীর নাম বলবে? তারা তো মওলানা ভাসানীর নামকে মুছে ফেলার চেষ্টা করবে। তারা মওলানা ভাসানীর রাজনীতি করে না, তারা তো বাংলাদেশের রাজনীতি করে না, তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার শক্তি না। তারা কথায় কথায় বলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। ভোট চুরি কী মুক্তিযুদ্ধের চেতনা? আগের রাতে ভোটের বাক্স ভর্তি করা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা? লক্ষ-কোটি টাকা বিদেশে পাচার করা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা? মানুষ গুম এবং হত্যা করা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা? লাখ লাখ গায়েবি মামলা কী মুক্তিযুদ্ধের চেতনা? তিনি আরো বলেন, মওলানা ভাসানীকে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে হবে। তিনি ভাসানীর ওপর রিচার্স করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।

সৌমিত্র দস্তিদার বলেন, আমরা এমন এক দেশে থাকি, যেখানে মওলানা ভাসানীর কোনো চর্চা নেই। আমি তাকে নেতা মেনেই তার ওপর গবেষণা এবং তার ওপর চলচ্চিত্র নির্মাণ করছি। এই চলচ্চিত্র নির্মাণ করার জন্য বাংলাদেশ এবং কলকাতায় আমি অনেকে সহযোগিতা চেয়েছি, কিন্তু পাইনি। তবু নিজের প্রচেষ্টাতে চলচ্চিত্র নির্মাণ করছি এবং কলকাতায় ভাসানী চর্চাকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করে কাজ চালিয়ে যাচ্ছি।

ড. আবিদ বাহার বলেন, শেখ মুজিব বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষক নন। তাকে তাজউদ্দীন আহমদ বলেছিলেন কিন্তু তিনি ঘোষণা দেননি। তাজউদ্দীনের মেয়ের বইতেই তার প্রমাণ রয়েছে। তিনি আরো বলেন, ১৯৭০ সালে মুজিব-ইয়াহিয়া এবং ভুট্টো যে চুক্তি স্বাক্ষর করেছিলেন, সেই চুক্তি অনুযায়ী শেখ মুজিব স্বাধীনতার ঘোষণা দিতে পারেন না। তিনি স্বেচ্ছায় পাকিস্তানিদের কাছে আত্মসমর্পণ করেছিলেন। কিন্তু আওয়ামী লীগ মিথ্যার ওপর ভর করে ইতিহাস রচনা করছে।

ড. আসিফ আক্রাম বলেন, ভাসানীই প্রমাণ করেছেন ইসলাম এবং সমাজতন্ত্র একসঙ্গে চলতে পারে। যে কারণে সব ধর্মের মানুষ মওলানা ভাসানীর অনুসারি ছিলেন এবং আছেন। তিনি আরো বলেন, হিন্দু, মুসলিম, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ সব ধর্মের মানুষের নেতা ছিলেন মওলানা ভাসানী। তিনি বলেন, মওলানা ভাসানীকে নতুন প্রজন্মের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে হলে অবশ্যই ভাসানীর জীবনীকে পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত হবে।

অনুষ্ঠানে অতিথিদের ফুল দিয়ে অভ্যর্থনা জানানো হয় এবং তাদের ভাসানী ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে ক্রেস্ট প্রদান করা হয়। এতে ঘোষণাপত্র পাঠ করেন সংগঠনের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক ইমরান আনসারী।

অনুষ্ঠানের শেষ পর্বে সংগীত পরিবেশন করেন বাংলাদেশের জনপ্রিয় শিল্পী রিজিয়া পারভীনসহ প্রবাসের জনপ্রিয় শিল্পীরা।

শেয়ার করুন