০২ মে ২০১২, বৃহস্পতিবার, ০২:১৭:০৪ পূর্বাহ্ন


সমঝোতা না হয় পরিণতি অশুভ
সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ০১-১১-২০২৩
সমঝোতা না হয় পরিণতি অশুভ


সরকারপ্রধানের পদত্যাগ দাবিতে রাজপথে দুই প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক শক্তির মুখোমুখি অবস্থানে পুলিশ সদস্য, সাংবাদিক, রাজনৈতিক অ্যাকটিভিস্ট মৃত্যুবরণ করেছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো প্রধান বিচারপতির বাসভবনে আক্রমণ করা হয়েছে। সচেতন মহল সরকার এবং বিরোধীদলের একগুঁয়েমির কারণে যে কোনো সময় সংঘাত হওয়ার শঙ্কা প্রকাশ করে আসছিল দীর্ঘদিন থেকেই। অবশেষে দুটি প্রতিদ্বন্দ্বী পক্ষ নিজেদের অবস্থানে অনড় থাকায় আবারও জ্বালাও-পোড়াও ধ্বংসাত্মক পরিস্থিতি সৃষ্টি হলো। এভাবে সরকার পতন হবে না। চূড়ান্ত পরিণতি হতে পারে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাসমূহের সহায়তায় সরকার নির্বাচন করে ফেলবে অথবা জরুরি অবস্থা জারি হবে। দুটির কোনোটিই দেশের স্বার্থে কারোই মঙ্গল বয়ে আনবে না। যারা বাংলাদেশের শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অব্যাহত অর্থনৈতিক অগ্রগতি চায় না। দুর্বৃত্ত, দুর্নীতিপরায়ণ গোষ্ঠী ফায়দা লুটবে। দেশের স্বার্থে শান্তির স্বার্থে অবিলম্বে বর্তমান অবস্থার অবসান প্রয়োজন। বর্তমান অস্থিরতার পেছনে বিদেশি শক্তির সক্রিয় মদত আছে সেটি এখন দিনের আলোর মতোই পরিষ্কার। আর এই পরিণতির জন্য সরকারি দল এবং বিরোধীদল উভয় পক্ষ সমান ভাবে দায়ী। 

রাজনীতি সহিষ্ণুতা, পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ হারিয়েছে। জনতার শক্তির প্রতি সরকারি দল বা বিরোধীদলগুলোর বিন্দুমাত্র আস্থা নেই। যেই কোনো মূল্যে ক্ষমতা ধরে রাখা বা ক্ষমতা অর্জন এখন একমাত্র লক্ষ। কেননা দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনীতি এখন সবচেয়ে লাভজনক ব্যবসায় পরিণত। 

বিরোধীদল মরিয়া হয়ে দেশব্যাপী হরতাল অবরোধ পালন করছে। সরকার প্রতিহত করার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এমনিতেই ক্ষয়িষ্ণু অর্থনীতি সামাল দিতে নাভিশ্বাস। অবনতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতি সমঝোতার সম্ভাবনা শেষ করে সংকটকে নিয়ন্ত্রণের বাইরে নিয়ে যাচ্ছে। এদিকে কিছু হঠকারী ঘটনায় বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বিশ্ব সভায় ম্লান হয়ে পড়ছে। একটি রাজনৈতিক দলের কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে কীভাবে একজন মার্কিন নাগরিক মার্কিন প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা পরিচয় দিয়ে আবার পরে নিজেই বিষয়টি সাজানো বলে স্বীকার করে? দেখলাম আমেরিকার দূতাবাস থেকেও বিষয়টি অস্বীকার করে বিবৃতি দেওয়া হয়েছে। র‌্যাব, পুলিশের পোশাক পরে যান বাহনে আগুন দেওয়া হচ্ছে। দেখে মনে হচ্ছে দুইপক্ষকে মাঠে নামিয়ে করা যেন রেফারির ভূমিকা নিয়েছে। বিদেশি মিশনগুলো কেন অতি উৎসাহী বাংলাদেশ নিয়ে? 

হরতাল, অবরোধের মতো রাজনৈতিক আন্দোলন অব্যাহত থাকলে নিত্যপণ্যের সরবরাহ চেইন ভেঙে পড়বে।  জান মালের ক্ষয় ক্ষতির পাশাপাশি অর্থনীতি ভেঙে পড়বে। অবর্ণনীয় কষ্টে আছে সীমিত আয়ের দেশবাসী। এমন হরতাল অবরোধে দ্রব্যমুল্যের আরো ঊর্ধ্বমুখী ছুটলে নুন আন্তে পান্তা ফুরানো অবস্থায় মানুষ এক সময় গণবিক্ষোভে ফেটে পড়লে দেশব্যাপী অরাজকতা সৃষ্টি হতে পারে। এমন অবস্থায় অগণতান্ত্রিক শক্তি, তৃতীয় পক্ষ সুযোগ নিতে পারে। বিষয়টি সরকারি দল বা বিরোধীদল কারো জন্যই মঙ্গল বয়ে আনবে না। জেল, জুলুম, পুলিশ অভিযান দিয়ে পরিস্থিতি কখনো সামাল দেওয়া যায় না। এখনো সময় আছে রাজনৈতিক দল গুলো আলোচনার টেবিলে বসে নির্বাচন বিষয়ে ন্যূনতম সমঝোতা করার। না হলে সংঘাত এবং সংঘর্ষে আম ছালা দুটি হারাবে বিরোধী পক্ষ, সরকারি দলের জন্য পরিণতি শুভ হবে না।

শেয়ার করুন