২৮ এপ্রিল ২০১২, রবিবার, ০৮:০১:০০ অপরাহ্ন
শিরোনাম :


বিএনপির কর্মসূচিতে বেকায়দায় আ.লীগ
মাসউদুর রহমান
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৮-০৯-২০২২
বিএনপির কর্মসূচিতে বেকায়দায় আ.লীগ


বিএনপির আন্দোলন নিয়ে তটস্থ এখন আওয়ামী লীগ সরকার। ধীরে, রয়ে সয়ে বিএনপি ক্রমশই বড় ধরনের আন্দোলনের দিকে যাচ্ছে- এটা এখন দিবালোকের মতোই স্পষ্ট সবার কাছে। কর্মসূচি তাদের ছোটখাটো, কিন্তু এতেই অস্থিরতা বিরাজ করতে শুরু করেছে ক্ষমতাসীনদের মধ্যে। এখনো ১৪ মাসের মতো সরকারের বাকি। কিন্তু এরই মধ্যে বিএনপি এভাবে আন্দোলন জোরদার করে ফেলবে এটা কল্পনাতীত। বিএনপি নেতৃবৃন্দও ভাবেনি সম্ভবত এমনটা। কিন্তু মানুষ প্রতিনিয়ত মাঠে নামছে। খোদ বিএনপিও ছোটখাটো যে কর্মসূচি দিচ্ছে, তাতে বিশাল উপস্থিতিতে খোদ বিএনপির শীর্ষনেতারাই বিস্মিত। এভাবে আন্দোলনের গতিপথ নির্ধারিত হবে সেটা কল্পনা করেনি বিএনপিও। চেয়েছিল, তৃণমূলের নেতৃত্বকে একটু চাঙ্গা করতে, কিন্তু সেটা এখন বড় আকারে রূপ নিচ্ছে, চলে যাচ্ছে বড় কোনো কিছুর দিকে। 

অবশ্য সর্বস্তরের মানুষের উপস্থিতিটা বিএনপি নেতৃবৃন্দকেও বেশ উৎসাহ জোগাচ্ছে। তাছাড়া একটু চোখ খুললেই দেখা যাবে বিএনপির কর্মসূচিতে কারা অংশ নিচ্ছে। যে চারজন নিহত হয়েছেন, তারা তরুণ। তাদের কর্মস্থল বলতে অটোচালক, সাধারণ দিনমজুর টাইপের। এসব সাধারণ মানুষ আন্দোলনেও নামবে। কিন্তু এতোটা আগে নয়। এরশাদবিরোধী আন্দোলনেও দেখা গেছে সাধারণ মানুষ মাঠে নামে শেষ মুহূর্তে। এর আগে পরীক্ষিত রাজনৈতিক কর্মীরা মাঠে নামেন, মার খান, মামলা খান। তবু আড়ালে আবডালে থেকে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েন, কিন্তু এবার সূচনা থেকেই সাধারণ মানুষের উপস্থিতি। যেখানে নেতাকর্মীদের উপস্থিতি বা তাদের কর্মতৎপরতা তুলনামূলক কম। এটাই এখন ভাবনার বিষয়।  

হঠাৎ কেন সাধারণ মানুষের এমন উপস্থিতি 

দীর্ঘ ১৪ বছর ক্ষমতায় আওয়ামী লীগ সরকার। এর মধ্যে ২০১৪ ও ২০১৮ সনের নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে সরকার গঠন করা সরকারে আসলে সাধারণ মানুষের ভোটের অধিকার বা সুযোগ ছিল না। ২০১৪ সনে বিরোধীদলসমূহ অংশই নেয়নি। ফলে ভোটের সে প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিল অনুপস্থিত। আর ২০১৮ সনে তো ভোটই হয়নি। বিএনপিসহ বিরোধীদের অভিযোগ দিনের ভোট রাতে সম্পাদনের। ফলে সেখানেও মানুষ উপেক্ষিত। কেন্দ্রেই তো যেতে হয়নি, ভোট শেষ। বাংলাদেশের মানুষ নির্বাচনমুখী। এটাকে তারা একধরনের আনন্দ-উৎসব হিসেবেও মনে করে। ফলে সাধারণ মানুষ চায় একটা ব্যালেট বাক্সে ভোটের প্রতিযোগিতা। আগে থেকে নিজের পছন্দের দল, প্রার্থী নিয়ে নিজ ঘরেও বিতর্ক করবে, ছুটি রাখবে দিনটা, কেন্দ্রে যাবে, ভোট দেবে, রেজাল্টের অপেক্ষা করবে, এটা একটা উৎসবও। একজন পছন্দের প্রার্থী জিতে আসুক সেটাও তারা চান, কিন্তু সে সুযোগ হয়নি। এটা সাধারণ মানুষের পছন্দ নয়। 

তাছাড়া দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকলে ক্ষমতাসীন নেতাকর্মীদের অনেকেই সাধারণ মানুষের সুখ-দুঃখের কথা মনে রাখে না, কাছে যায় না, কষ্ট শুনতে চায় না, এটা সাধারণ মানুষের একটা বড় ক্ষোভ। ঠিক এরশাদের আমলেও এমনটা ছিল। ফলে মানুষ এখন স্বতঃস্ফূর্ত মাঠে নেমে আসছে, দেশে একটা ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে। তারা চান, তারা যাতে সুষ্ঠু ভোট দিতে পারেন। জনপ্রতিনিধি নির্বাচনে তার অধিকার যাতে প্রতিষ্ঠা পায়। এজন্য বিএনপি বা সরকারবিরোধী আন্দোলনে তারা নেমে পরছেন মাঠে, শুধু তাই নয়। এ সম্পৃক্ততা আরো বাড়বে ক্রমশ। 

আন্দোলনে পুলিশ ও সরকারি দলের নেতা-কর্মীদের বাধা 

বিএনপি খুব বড় কর্মসূচি দেয়নি। সরকার পতনের আন্দোলনও তাদের এটা নয়। লোডশেডিং, জ্বালানি তেল ও দ্রব্যমূল্যের ক্রমাগত ঊর্ধ্বগতির কারণেই বিএনপির দেয়া কর্মসূচিতে মাঠে নেমেছে মানুষ। বিএনপি মানুষের  মধ্যে চেতনা বৃদ্ধির জন্য, সজাগ করার লক্ষ্যে পাশাপাশি নেতাকর্মীদের উৎসাহ বাড়াতেই মূলত এমন কর্মসূচি। এটাতে বাধাদানের কিছু নেই, কিন্তু ক্ষমতাসীনরা এটাকে ভয়ের চোখে দেখে বাধাদানের চেষ্টা করেছে, মারপিট করেছে, পুলিশ মামলা করেছে। এগুলো ভালো চোখে দেখেনি সাধারণ মানুষ। তাছাড়া এমন আন্দোলনের সূচনায় ভোলায় দু’জন নিহত, নারায়ণগঞ্জে বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর শোভাযাত্রাতে বাধা ও সংঘর্ষ ও গুলি, একজন নিহত। এরপর এ তিন-তিনটি তাজাপ্রাণ ঝরে যাবার প্রতিবাদ ও সাথে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধিসহ অন্যান্য কর্মসূচিতে মুন্সীগঞ্জের মুক্তারপুরে বিক্ষোভ কর্মসূচিতে বাধা প্রদান, সংঘর্ষ, গুলি, শাওন নামে একজন যুবদলকর্মীর মাথায় আঘাত পেয়ে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে অবশেষে হার মেনে মৃত্যুবরণ। একইসঙ্গে রাজধানীর বনানীতে শান্তিপূর্ণ মোমবাতি প্রজ্বলন কর্মসূচি পালন করতে গেলে শীর্ষনেতাদের ওপর হামলা হয়। এতে ঢাকা উত্তরের মেয়রপ্রার্থী তাবিথ আউয়াল রক্তাক্ত হন। একইভাবে নোয়াখালী থেকে ঢাকায় ফিরতে পথিমধ্যে বরকতুল্লাহ বুলুর ওপরও সন্ত্রাসীদের হামলা হয়। তবে অভিযোগ দুটির হামলাতেই যুবলীগ, ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগের লোকজন অংশ নিয়েছিল। এটাতে সর্বশেষ পল্টনে ক্ষোভে ফেটে পড়েন নেতাকর্মীরা। দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ সমাবেশ পালিত হয়েছে। 

আওয়ামী লীগ আগে কী বলতো, এখন কী বলছে 

খুব বেশিদিন আগের কথা না। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী গত ১৮ আগস্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে টিএসসি মিলনায়তনে শোক দিবসের আলোচনা সভায় বিএনপির আন্দোলনের কঠোর সমালোচনা করে পূর্বধারা অনুসারেই বলেছিলেন, ‘১৩ বছর ধরে কত শুনলাম, রোজার ঈদের পরে, কোরবানির ঈদের পরে- দেখতে দেখতে ১৩ বছর। দিন যায়, সপ্তাহ যায়, মাস যায়, পদ্মা-মেঘনা নদীতে কত পানি গড়িয়ে যায়। কিন্তু ফখরুল সাহেবদের আন্দোলনের সোনার হরিণ দেখা যায় না। ক্ষমতার ময়ূর সিংহাসন দিল্লি দূর-অস্ত।’ এ সময় সেতুমন্ত্রী বিএনপিকে লক্ষ করে আরো বলেন, আন্দোলন করবেন? ব্যর্থ হলে নন্দ ঘোষ আওয়ামী লীগ। কোথায় আন্দোলন? সোনার হরিণ দেখা তো দিলো না আজো। আন্দোলনের সোনার হরিণ দেখা না দিলে ক্ষমতার ময়ূর সিংহাসন কোনোদিন দেখা দেবে না।’ 

ইদানীং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বিএনপির আন্দোলন প্রসঙ্গে বলছেন, ‘পানি ঘোলা করে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ করতে চায় বিএনপি।’ ‘আওয়ামী লীগ কেন পদত্যাগ করবে। কার কাছে পদত্যাগ করবে।’ ‘লাশ ফেলে আন্দোলন জমাতে চায় বিএনপি’। ‘বিএনপি দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বিদেশিদের হস্তক্ষেপ চায়।’ ‘বাংলাদেশ ভারত বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক হলে বিএনপির গাত্রদাহ।’ বিএনপির মিছিলে বাধা ও হামলা প্রসঙ্গে পুলিশের ওপর হামলা হলে কী পুলিশ বসে থাকবে।’ এমন বহু কথা শিরোনামে বহু বক্তব্য দিচ্ছেন আওয়ামী লীগের নেতারা। একইসঙ্গে হঠাৎ রাজপথ দখল রাখারও ঘোষণা আসে দলটি থেকে। যার অর্থ রাজপথ যদি বিএনপি দখল করে নিয়ে নেয়? 

ফলে এ দুশ্চিন্তা এখন পেয়ে বসেছে আওয়ামী লীগকে। এতে করে কিছুদিন আগে রাজনীতির মাঠে, আন্দোলনের মাঠে আসার আহ্বান করা বিএনপি এখন রীতিমতো চক্ষুশূল হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভয়ে তটস্থ, যদি বড় আন্দোলনে যেয়ে সরকার উৎখাতের আন্দোলনটা করে বসে? 

রাজপথে বিএনপিকে প্রতিরোধের কর্মসূচি

বিএনপির তৃণমূলের আন্দোলনটাকে ভালো চোখে দেখেনি আওয়ামী লীগ। যদিও জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদ। কিন্তু এর আড়ালে প্রায় দুই যুগ মাঠের বাইরে থাকা বিএনপি যে মাঠে নামার উপলক্ষ পেলো। কর্মীরা যে আবারো প্রাণ খুঁজে পেলো বিএনপির এ রাজনীতিটা টের পেয়ে যায় ক্ষমতাসীনরা। এতে শুরু হয় বাধাদান। 

প্রায় প্রতিটা স্থানেই বিএনপির কর্মসূচিতে বাধাদান শুরু। বিএনপি যেখানে সমাবেশ বিক্ষোভের কর্মসূচি দিচ্ছিল, আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগও সেখানে কর্মসূচি দেয়া শুরু করে। এতে সংঘর্ষ হয়। পুলিশ আইনশৃঙ্খলা রক্ষার্থে এসে জড়িয়ে যায় সংঘর্ষে। কারণ বিএনপিকে বাধা দিলে পুলিশের প্রতি ক্ষিপ্ত হন তারা। তাছাড়া অনেক স্থানে পুলিশের আড়ালে থেকে যখন বিএনপির কর্মসূচির ওপর আক্রমণ আসে, তখন পুলিশের দিকেই যায় আঙুল। এমন সংঘর্ষে বহু মানুষ আহত হন, পুুলিশও আহত হয়। এতে করে শুরু হয় সেই মামলা। কোনো কোনো স্থানে শত শত লোকের বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হয়। সেখানে অজ্ঞাত দেখানো হয় হাজার হাজার। এতে করে বিএনপির নাম উচ্চারণ বা সমার্থকও যারা তারাও এলাকায় চলাফেরা করতে ব্যর্থ হন। পুলিশ ওই ঘরানার লোকদের ধরে আইনের আওতায় আনার চেষ্টা করে। খবরে প্রকাশ নোয়াখালীতে একজন বিএনপিকর্মী আগাম জামিন নিয়ে ফেরার পথেও ভয়ে তটস্থ ছিলেন বলে সাংবাদিকদের জানান। কেননা পুলিশ যদি আবার ধরে বসে। অন্য মামলায় গ্রেফতার দেখায়? 

হঠাৎ পরিস্থিতি হয়ে ওঠে উত্তপ্ত রাজনীতির মাঠ  

বিএনপির তৃণমূলের ওই আন্দোলনে বাধা দেয়ায় এটা ক্রমশ বড় আকারের দিকে যেতে থাকে। বিষয়টা সরকারের নীতিনির্ধারকদের কাছে অস্বস্তির কারণ হয়ে যায়। এরপর থেকেই নিজেদের কর্মীদের এ সকল কর্মকা-ে নিবৃত্ত থাকার নির্দেশনা দেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। ওবায়দুল কাদের বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর হামলার বিভিন্ন ঘটনার পর গত ১৯ সেপ্টেম্বর বলেন, ‘নেত্রীর নির্দেশনার বাইরে কেউ যদি এসব হামলায় জড়িয়ে পড়েন, আমরা কিন্তু শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেবো। আমরা কাউকে ছাড় দেবো না। এখানে (বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর হামলা বা আন্দোলনে হামলা বা বাধা দেয়া) কেন্দ্রের কোনো নির্দেশ নেই।’ তবে ওবায়দুল কাদের দাবি করেন, বিএনপি অনেক স্থানে নিজেরা নিজেদের মধ্যেই মারামারি করে। তারা সে দায়ও আওয়ামী লীগের ওপর চাপাতে চায়। 

আওয়ামী লীগের কর্মীদের নিবৃত্ত করার নেপথ্যে 

বাংলাদেশে সব দলের অংশগ্রহণ ও একটা গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের প্রত্যাশা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, অস্ট্রেলিয়া, কানাডাসহ প্রমুখ দাতা বা উন্নয়নসহযোগী দেশসমূহ। বারবার তারা আলাদা ও  একজোট হয়েও বর্তমান সরকারকে বিষয়টা অবহিত করে আসছেন। তারা বলে দিয়েছেন আগামী অর্থাৎ দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন কোনোভাবেই পূর্বের নির্বাচনের মতো হলে তারা মেনে নেবেন না। অবশ্যই নির্বাচন হতে হবে সব দলের অংশগ্রহণে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। এর অর্থ সব দলকেই রাজনীতির মাঠে আন্দোলন, প্রচার প্রচারণা অর্থাৎ গণতান্ত্রিক অধিকার দিতে হবে। মার্কিন রাষ্ট্রদুত অন্তত চারমাস আগেই বলেছিলেন যে, বাংলাদেশে পরবর্তী জাতীয় নির্বাচনের কার্যক্রম শুরু হয়ে গেছে। ফলে বিএনপিসহ বিরোধীদলসমূহ যে আন্দোলন সংগ্রাম করছে মাঠে নেমে এগুলোতে মূলত পশ্চিমাদের (উন্নয়ন সহযোগী) সায় রয়েছে। 

এরই মধ্যে গত মাসে সফর করে গেছেন জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল ব্যাচেলেট। তিনিও বাংলাদেশের মানবাধিকার প্রশ্নে ঘুম খুন নিয়ে তার উদ্বেগ প্রকাশ করে গেছেন। তিনি বলেছেন, গুম খুনের অধিক তদন্তের জন্য জাতিসংঘ মানবাধিকার সংস্থা আলাদা তদন্ত সংস্থা গঠন করে দিতে প্রস্তুত। যেহেতু গুম খুন নিয়ে গুম খুনের শিকার হওয়াদের পরিবার ও সরকারবিরোধী ও মানবাধিকার সংস্থাগুলোর গুরুতর অভিযোগ ও সরকারের অস্বীকার রয়েছে। সেখানে চাইলে জাতিসংঘ স্বাধীন তদন্ত সংস্থা দিয়ে তদন্ত করতে ইচ্ছুক। একইসঙ্গে আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনীতির মাঠে সংহিসতা হওয়ার পূর্বাভাস তিনি পেয়েছেন বলেও দেশ ছেড়ে যাবার প্রাক্কালে সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন। এমতাবস্থায় বিরোধী মতকে সঠিক প্রক্রিয়ায় রাজনীতি ও তাদের অধিকার ও মতপ্রকাশের ওপর সরকার যাতে সহযোগিতা করে, সে বিষয়ে অনুরোধ জানিয়েছেন। বিষয়গুলোতে তারা কঠোর নজরদারিতে রাখবেন বলেও ইঙ্গিত দেন। 

এমতাবস্থায় সরকারের ভিন্নমতের আন্দোলন সংগ্রাম ও বিক্ষোভ যেটা প্রতিটা রাজনৈতিক দল ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের গণতান্ত্রিক অধিকার সেটা পালনে বাধাদানের অর্থ আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রচ- চাপে পড়ে যাওয়া। বিষয়টি উপলব্ধি করেই আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক মহল নিজেদের কর্মীদের নিবৃত্ত করার উদ্যোগ নিয়েছেন এবং সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের প্রকাশ্যে ওই ঘোষণা দিয়েছেন। 

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগে এখন অস্বস্তি 

বিএনপি ও তাদের সমমনা দল যেভাবে আন্দোলনমুখী হয়ে রাজনীতির মাঠ উত্তপ্ত করছে এটাতে ক্ষমতাসীনদের মধ্যে অস্বস্তি বিরাজ করছে। কারণ এমন ছোট ছোট আন্দোলনে বিএনপি ক্রমশ বড় আকারে চলে যাবে। গত ১৪-১৫ বছর যে বিএনপির অস্তিত্ব ছিল না বলে মনে করতো ক্ষমতাসীনরা, তাদের হঠাৎ ‘ইউ টার্ন’ এ বিশ্বাসযোগ্য মনে হচ্ছে না। বিএনপি যদি এভাবে এগোতে থাকে, তাহলে ক্ষমতাসীনদের আগামী ১৪ মাসে বেগতিক অবস্থায় পড়তে হবে। যেটা আগামী নির্বাচনে বড় প্রভাব পড়বে। 

তাছাড়া বিএনপি নেতাকর্মীদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে যাওয়া। দীর্ঘ ১৫ বছর বিএনপির অভিযোগ মোতাবেক অন্তত ৩৫ লাখের অধিক মামলার শিকার বিএনপি নেতাকর্মীরা। ব্যবসা-বাণিজ্য, ক্ষেত্রবিশেষ চাকরি থেকে শুরু করে অনেক কিছুতেই তারা বঞ্চিত। পালিয়ে বেড়াচ্ছেন লক্ষ লক্ষ নেতাকর্মী। যারা পেরেছেন দেশ ছেড়েছেন। যারা পারেননি তারা গা ডাকা দিয়ে বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছেন। ছেলে সন্তান বা বাবা-মা’র সঠিক দায়িত্ব তারা পালনে ব্যর্থ। অনেকে পেটের দায়ে রিকশা, ভ্যান, অটো চালিয়ে সংসার চালান বলে বক্তব্য দিয়ে জানান দিয়েছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। 

ফলে আন্তর্জাতিক মহল তথা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র  ও ইউরোপীয়ান ইউনিয়নসহ দাতা দেশসমূহের কঠোর নজরদারি ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থার সব খবর রাখা, র‌্যাবের বিভিন্ন সময়ের ৭ কর্মকর্তাসহ গোটা র‌্যাবের ওপর মার্কিন স্যাঙ্কশন ও  স্যাঙ্কশনের পর বাংলাদেশে হঠাৎ গুম-খুন জিরোতে নেমে আসাসহ বিভিন্ন পরিস্থিতিতে বিএনপির ওই সকল নেতাকর্মী সাহসী হয়ে উঠেছেন এবং তারা ইউটার্ন হয়ে আন্দোলনের মাঠে জড়ো হচ্ছেন। 

এটা ক্রমশ বাড়বে এবং এর সঙ্গে যুক্ত হয়ে যাবে জ্বালানি ও দ্রব্যমূল্যের কষাঘাতে মানবতার জীবনযাপন করা সাধারণ মানুষ- এ শঙ্কা এখন ক্ষমতাসীনদের। ফলে না পারছেন তারা বাধা দিতে, না পারছেন কর্মসূচি করতে দিতে। বিএনপি তো বড় আন্দোলনে যাচ্ছে না। ছোটখাটো দিয়ে মাঠ দখল ও কর্মীদের মনোবল ফিরিয়ে আনা এবং এভাবে খুব বেশি দেরি নেই যে, তারা ভয়ংকর শক্তিশালী হয়ে উঠবে আন্দোলনের মাঠে। তখন নির্বাচনের ইস্যুতে মাঠে নেমে প্রতিরোধও অসম্ভব হয়ে যাবে। কিন্তু এখন তো আওয়ামী লীগ বা তাদের সংগঠনগুলোর মাঠে নামার কোনো ইস্যু বা কর্মসূচিও নেই। তাহলে কী করবে? এ শঙ্কা পেয়ে বসেছে তাদের।

শেয়ার করুন