২৯ এপ্রিল ২০১২, সোমবার, ০৬:২৭:০২ পূর্বাহ্ন


স্বার্থ আদায়ে বাংলাদেশকে দিতে হবে নেতৃত্ব
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৭-১২-২০২২
স্বার্থ আদায়ে বাংলাদেশকে দিতে হবে নেতৃত্ব জলবায়ু নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে নেতৃবৃন্দ


আগামী বছর জলবায়ু আলোচনায় ক্ষয়ক্ষতি অর্থায়ন কাঠামো (লস অ্যান্ড ড্যামেজ ফিন্যান্সিং ফ্রেমওয়ার্ক-এলডিএফএফ) তৈরির ক্ষেত্রে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর পক্ষে জোরালো নেতৃত্ব প্রদানে বাংলাদেশকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের সুপারিশ করেছেন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিবৃন্দ। জলবায়ু সম্মেলনে স্বল্পোন্নত ও অতি বিপদাপন্ন দেশগুলোর স্বার্থ আদায়ে বাংলাদেশ তাঁর অভিজ্ঞতা ও নেতৃত্ব দিয়ে এই জোরালো ভূমিকা রাখতে পারে বলে তাঁরা অভিমত প্রকাশ করেন। 

কপ-২৭ ফলাফল এবং বাংলাদেশে করণীয়: 

ক্ষয়ক্ষতি অর্থায়নের পরবর্তী আলোচনায় বাংলাদেশকে অবশ্যই নেতৃত্বে থাকতে হবে’ শীর্ষক এই সংবাদ সম্মেলনে এদাবি করা হয়। অ্যাওসেড, কানসা-বিডি, কোস্টাল ডেভেলপমেন্ট পার্টনারশিপ (সিপিডি), কোস্ট ফাউন্ডেশন, সেন্টার ফর পার্টিসেপেটরি রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (সিপিআরডি), সেন্টার ফর সাসটেইনেবল রুরাল লাইভলিহুড (সিএসআরএল), ইক্যুইডিবিডি এবং লিডারস যৌথভাবে এ সংবাদ সম্মেলন করে গত ৫ ডিসেম্বর। কোস্ট ফাউন্ডেশনের রেজাউল করিম চৌধুরীর সঞ্চাললনায় সংবাদ সম্মেলনে সম্প্রতি মিসরে অনুষ্ঠিত কপ-২৭ এ অংশগ্রহণকারী অনেকেই বক্তৃতা করেন। অন্যদের মধ্যে এতে আরো বক্তৃতা করেন, সিএসআরএলের জিয়াউল হক মুক্তা, সিপিআরডির মো. শামসুদ্দোহা এবং কানসা-বিডির রাবেয়া বেগম। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইক্যুইটিবিডির আমিনুল হক। 

আমিনুল হক উল্লেখ করেন, লস অ্যান্ড ড্যামেজ ফিন্যান্স ফ্রেমওয়ার্ক (এলডিএফএফ) ঘোষণা কপ-২৭ এর একটি উল্লেখযোগ্য অর্জন। এটি নিয়ে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর পক্ষে আত্মতৃপ্ত হওয়ার সুযোগ নেই, যতোক্ষণ না এটিকে একটি দরিদ্রবান্ধব এবং ন্যায্যতাভিত্তিক ব্যবস্থা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা না যায়। তিনি সম্মেলনের চূড়ান্ত ঘোষণাপত্রে স্বল্পোন্নত দেশ ও দ্বীপদেশগুলোর কথা উল্লেখ না করার ধনী দেশগুলো এবং কপ সভাপতির সমালোচনা করেন। কারণ ক্ষয়ক্ষতি অর্থায়নের বিষয়ে এই দেশগুলো দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে আসছে। তিনি কয়েকটি সুনির্দিষ্ট দাবি তুলে ধরেন, (১) কার্যকর এলডিএফএফ প্রতিষ্ঠিত করতে আসন্ন সম্মেলনে ও আলোচনায় স্বল্পোন্নত দেশগুলির অবস্থান নির্ধারণে ও তা আদায়ে বাংলাদেশকে নেতৃত্বের ভূমিকা পালন করতে হবে, (২) এলডিএফএফের কাঠামো প্রণয়নের ক্ষেত্রে জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য ধনী দেশগুলোর ঐতিহাসিকভাবে দায়ের ব্যাপারটি বিবেচনা করতে হবে, (৩) ২০৩০ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণের মাত্রা অর্ধেকে নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করে জাতীয় পরিকল্পনা বা ন্যাশনাল ডিটারমাইন্ড কন্ট্রিবিউশন প্রণয়নে ধনী দেশগুলোকে বাংলাদেশের চাপ প্রয়োগ করতে হবে, (৪) New Collective & Quantified প্রক্রিয়ার অ্যাডহক কমিটিতে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে হবে, এটি সম্ভব হলে দরিদ্রবান্ধব জলবায়ু অর্থায়ন সম্ভব হবে। 

শামসুদ্দোহা বলেন, ক্ষয়ক্ষতি-বিষয়ক অর্থায়নের ঘোষণাটি কিছুটা জটিল এবং এর সঙ্গে জলবায়ু প্রশমনের শর্তজুড়ে দেয়া হয়েছে। সম্মেলনে গৃহীত সিদ্ধান্তে বিশ্বব্যাপী গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধিকে ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে রাখার ওপর জোর দেয়া হয়েছে, যার অর্থ হলো এলডিএফএফের আওতায় সহায়তা পেতে হলো সংশ্লিষ্ট দেশগুলোকে ভবিষ্যতে তাদের নির্গমন হ্রাস লক্ষ্যমাত্রা বাড়াতে হবে। এটি খুবই বিতর্কিত এবং বিপদাপন্নতার সংজ্ঞা নির্ধারণ করা, এলডিএফএফে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর জন্য অগ্রাধিকার দেয়া নিয়ে উন্নয়নশীল এবং স্বল্পোন্নত দেশগুলোর মধ্যে রাজনৈতিক মতপার্থক্য দেখা দিতে পারে। ধনী দেশগুলি বিভিন্ন ধরনের শর্তারোপ করে এই প্রক্রিয়াটিকে বিলম্বিত করে ফেলতে পারে। আমাদের এই বিষয়ে সতর্ক হতে হবে, সেই অনুযায়ী, পদক্ষেপ নিতে হবে।

জিয়াউল হক মুক্তা বৈশ্বিক উষ্ণায়নের হার ১.৫ ডিগ্রির মধ্যে সীমিত রাখার লক্ষ্য অর্জনে অর্থপূর্ণ কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে কপ ২৭-এর ব্যর্থতার সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, বৈশ্বিক তাপমাত্রা কমানোর বর্তমান আলোচনা বিজ্ঞানভিত্তিক দাবির চেয়ে ৪০ বছর পিছিয়ে। ১.৫ ডিগ্রি লক্ষ্য অর্জন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হওয়া সত্ত্বেও বড় দূষণকারীগুলোর এই বিষয়ে তেমন কোনো উদ্যোগই নয়। তথাকথিত ‘ফেজ ডাউন’ ধারণার সুযোগে অনেক ইউরোপীয় দেশ তাদের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো পুনরায় কার্বন নিঃসরণ শুরু করেছে। এই প্রবণতা অগ্রহণযোগ্য এবং UNFCCC থেকে চাপ সৃষ্টি করা বন্ধ করতে হবে।

রাবেয়া বেগম জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়ে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আরো উদ্যোগ গ্রহণের ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, অতি বিপদাপন্ন দেশগুলোর কথা তুলে ধরতে হবে, সরকার এবং নাগরিক সমাজ একসঙ্গে কাজ করলে তা আমাদের কণ্ঠস্বরকে শক্তিশালী করতে পারে।

রেজাউল করিম চৌধুরী পরবর্তী কপে স্বল্পোন্নত, অতি বিপদাপন্ন এবং ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামকে ঐক্যবদ্ধভাবে শক্তিশালী ভূমিকা রাখার পরামর্শ দেন।

শেয়ার করুন