২৬ এপ্রিল ২০১২, শুক্রবার, ০৪:৪৮:২২ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় ইউরোপে ভারতীয় ৫২৭ পণ্যে ক্যান্সার সৃষ্টিকারি উপাদন শনাক্ত বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশে কড়াকড়ি বিএনপির আন্দোলন ঠেকানোই ক্ষমতাসীনদের প্রধান চ্যালেঞ্জ বিএনপিকে মাঠে ফেরাচ্ছে আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন নিয়ে অদৃশ্য চাপে বিএনপি


টেকনাফ থেকে তেতুলিয়ায় আনন্দ জোয়াড়
আনন্দের ঝর্ণাধারায় নারীদের সাফ ফুটবল জয় উৎযাপন
সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ২২-০৯-২০২২
আনন্দের ঝর্ণাধারায় নারীদের সাফ ফুটবল জয় উৎযাপন


২১ সেপ্টেম্বর ২০২২ হিমালয় দুহিতা নেপাল থেকে বিজয়ীর বেশে দেশে ফেরা বাংলাদেশের নারী ফুটবলারদের হৃদয়ের সবটুকু আকুলতা ব্যাকুলতা, ভালোবাসা দিয়ে জয় করে নিয়েছে বাংলাদেশকে। হযরত শাহজালাল (র:) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে মতিঝিল বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন ভবন পর্যন্ত ছাদ খোলা বাসে চড়ে যাত্রা কালে হাজার হাজর মানুষ ওদের দেখে উল্লাসে ফেটে পড়েছে। 

১৯৯৯ এই নেপাল থেকেই সাফ ফুটবল জয়ের পর অদ্যবদি, বাংলাদেশ ফুটবলে উল্লেখ করার মতো কোনো অর্জন ছিল না। আন্তর্জাতিক মানদন্ডে ক্রমশ পিছিয়ে যাচ্ছিলো বাংলাদেশ। বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ফুটবলের ব্যাপক জনপ্রিয়তা থাকা সত্ত্বেও জাতীয় ফুটবল দলের পারফরম্যান্সের সমীকরণ মিলছিলো না। কালসিন্দুর স্কুলের মেয়েদের দুরন্ত শুরুর পথ ধরে বয়স ভিত্তিক ফুটবলে কিন্তু সঠিক কক্ষ পথে ছিল মেয়েদের ফুটবল। মূলত কালসিন্ধুর সেই সকল মেয়েদের সঙ্গে রাঙামাটি, বান্দরবান, সাতক্ষীরা আর রংপুরের কিশোরীদের নিয়ে গড়া আর ছোটনের কুশলী হাতে তৈরী দলটি ইতিহাস গড়ে দিলো দক্ষিণ এশিয়ার শ্রেষ্টত্বের শিরোপা জয় করে। সন্দেহ নেই এই জয় মৃত সঞ্জীবনী সুধা হয়ে জাগিয়ে তুলবে বাংলাদেশ ফুটবল অঙ্গন, ক্রীড়াঙ্গনকে। আলোয় আলোয় উদ্ভাসিত হবে কিশোরীদের আধার ঘরের আংগিনা।  বাংলাদেশের মেয়েদের আত্মবিশ্বাস বেড়ে যাবে বহুগুন।  

সাবিনা -কৃষ্ণা -মারিয়া -সানজিদা -রূপনাদের দুর্দান্ত প্রতাপে উবে গাছে মালদ্বীপ , পাকিস্তান, ভারত ,ভুটান, নেপাল।  কোনো ম্যাচে কেউ দাঁড়াতেই পারেনি বঙ্গ  ললনাদের তুখোড় ফুটবল দক্ষতার সামনে। ফাইনালে যাত্রা পথে বাংলাদেশ হারিয়েছে মালদ্বীপকে (৩-০) , পাকিস্তান ( ৬-০) , ভারত (৩-০) , ভুটান (৮-০) । ফাইনাল পর্যন্ত বাংলাদেশের জালে বল ছোয়াতে পারেনি কেউই। রুপন চাকমা অপূর্ব দক্ষতায় গোল বার রক্ষা করেছে। বাংলাদেশের দুর্গম রক্ষণ দুর্গে চির ধরাতে পারেনি এমনকি কুশলী ভারত দলও।  অবশেষে স্বাগতিক নেপালের বিরুদ্ধে ওদের মাঠে বৈরী পরিবেশে খেলতে হয়েছে ফাইনাল। একেতো মাঠে উচ্ছাসিত নেপালি দর্শক অন্যদিকে বর্ষণে কর্দমাক্ত ভারী মাঠ।  এর পরেও কৌশলী ফুটবল খেলে শামসুন্নাহার ( ১) আর কৃষ্ণা রানীর ( ২ ) গোলের সুবাদে ৩-১ গোলের দাপুটে জয় দিয়েই প্রথম বারের মতো শিরোপা জিতেছে বাঘিনীরা। 


বিমানবন্দরে রিসিভ করতে কারা গেছেন,কাদেরকে? ছবি যাদের উদ্দেশ্য করে,তাদেরকে কী দেখতে পাওয়া যায়? যাচ্ছে কিন্তু কষ্ট হচ্ছে। জোর করে সামনে দাড়িয়ে যাওয়াদের এ ফুটবল সাফল্যে কী ভুমিকা এটা নিয়ে এখন নেট দুনিয়ায় হাজারো প্রশ্ন/ছবি সংগৃহীত 

দুটি হাটট্রিক সহ ৮ গোল করা অধিনায়ক সাতক্ষিরার গৌরব কন্যা সাবিনা খাতুন অর্জন করেছে টুর্নামেন্ট সেরা গোল্ডেন বুট। সাবিনা এখন ছেলে মেয়ে মিলিয়ে আন্তর্জাতিক ম্যাচে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ গোল দাতা।  রাঙামাটির জীর্ণ কুটিরে থাকা রুপন চাকমা গোটা টুর্নামেন্টে গোল পোস্টে ছিল দুর্ভেদ্য। একমাত্র ফাইনালে একটি গোল ছাড়া গোল বার রেখেছিলো সুরক্ষিত। তাই টুর্নামেন্টে সেরা গোল রক্ষক হয়েছে সার্বিক বিচারে। ফাইনালে দুটি গোল করেছে ওপর তুখোড় গোল দাতা কৃষ্ণা রানী। 

বাংলাদেশ দলটি ছিল অনেকটা একান্নবর্তী পরিবার। দলে  ছিল কালসিন্দুর স্কুলের ৮ জন খেলোয়াড়। যারা সেই স্কুল বিএফএফ জীবন থেকে ঝড় তুলেছিল। হিন্দু , মুসলমান ,বৌদ্ধ মেয়েগুলো বাংলার লাল সবুজ পতাকা বুকে নিয়ে লড়াই করেছে অবিরত। এক দিকে দারিদ্রের কশাঘাত ,অন্যদিকে সমাজের এক শ্রেণীর মানুষের রক্ত চক্ষু উপেক্ষা করে বেড়ে ওঠা সোনার মেয়েগুলো জিয়ন কাঠির পরশে জাগিয়ে তুলেছে বাংলাদেশকে। এতো আনন্দ এত খুশি হতে দেখিনি বাংলাদেশিদের বহুদিন। দল ,মোট , শিশু ,বৃদ্ধ , মেয়ে ,পুরুষ নির্বিশেষে সবাই উপভোগ করেছে বিজয়। খুশির জোয়ারে ভেসেছে টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া। করোনা আক্রান্ত হয়ে শয্যাশায়ী থেকেও বাংলাদেশের অর্জন উপভোগ করেছি। আমি ওদের খেলায় আরো বড় কিছু অর্জনের সম্ভাবনা দেখিছি। একটি পুরো টুর্নামেন্ট ওরা ধারবাহিকতা বজায় রেখেই উন্নত মানের ফুটবল খেলেছে। সময়ের থেকে ওরা অনেক আগুয়ান মনে হয়েছে। 

সানজিদার ফেসবুক পোস্ট দেখেছিলাম। কি সাহসী উচ্চারণ, জয়ের নেশায় মুষ্টিবদ্ধ সংকল্প। আবেগ মিশ্রিত উচ্চারণে ছিল ছাদ খোলা বাহনে করে বিজয় উল্লাহ করার বাসনা। সেটি সফল করার কতিৃত্ব দাবি করতে পারে কর্তৃপক্ষ। কিন্তু বিমান বন্দরে খেলোয়াড়দের পেছনে ঠেলে যেভাবে কর্মকর্তারা লাইম লাইটে আসার মল্ল যুদ্ধ করলো, সেটি দেখে বিস্মিত হয়েছে। ওই মুহূর্তে খেলোয়াড় আর কোচিং স্টাফ ছাড়া অন্যদের কেন ফুল দিয়ে বরণ করার প্রয়োজন হলো। লজ্জাহীন ভাবে কিছু বিএফএফ কর্মকর্তা এমন অভিব্যাক্তি করলেন যেন ওনারাই ট্রফি জিতেছেন। 


সাংবাদ সম্মেলনের সামনের সারিতে বসার কথা কাদের বসেছেন কারা?/ছবি সংগৃহীত 

পথে ৪ ঘন্টার আনন্দ বিলিয়ে যখন ওরা বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বিএফএফ) ভবনে এলো তখন সাঁঝের বেলা। লোকে লোকারণ্য চত্বর।  বিএফএফ সাংবাদিক সম্মেলনে দেখলাম কাজী সালাউদ্দিনের চারপাশে বসে আছে তার বিতর্কিত পরিষদ। মন্ত্রী ,সচিব ছিলেন। বসার জায়গা হয়নি বিজয়ী বীরদের।  উপলক্ষটা ছিল কিন্তু বিজয়ী দলের সাফল্যের অবতারণা। খেলোয়াড়দের সেই পেছনের সারিতে রেখে উপেক্ষা করা হলো। জাতি সাবিনা আরো বেশি, কৃষ্ণা , রূপনা ,সানজিদাদের রূপ কথার গল্প শুনতে চেয়েছিলো। মন্ত্রী ,সচিব, বিএফএফ কর্মকর্তাদের গাল ভরা কথা প্রতিদিন শুনে জাতি। কষ্ট লাগলো এতো বড় অর্জনের পরেও খেলোয়াড়দের সেই পেছনের সারিতেই রেখে দেয়ায়। 

যাই হোক জাতিকে অনাবিল আনন্দের উপলক্ষ করে দেয়ায় নারী ফুটবল বীরদের হৃদয় নিংড়ানো অভিনন্দন।


শেয়ার করুন