৩০ লক্ষ মানুষের রক্তের মূল্যে অর্জিত বাংলাদেশ স্বাধীনতার অর্ধশত বছর পেরিয়ে কেন দ্রুত বিবর্ণ হয়ে পড়ছে? অস্বীকার করবো না, দেশ কৃষিতে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে, ঘরে ঘরে বিদ্যুত পৌঁছে গেছে। অনুন্নত দেশের কাতার থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে পৌঁছতে যাচ্ছে। দেশ শাসনে আছে ক্রমাগত ১৩ বছর স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামী লীগ।
কিন্তু দেশ-বিদেশে বাংলাদেশকে নিয়ে কেন এখন প্রশ্ন উঠছে সর্বগ্রাসী দুর্নীতির করালগ্রাস নিয়ে? কেন জ্বালানি সংকটে কাঁপছে দেশ? কেন বাংলাদেশ থেকে কোটি কোটি টাকা পাচার হয়ে যাচ্ছে বিদেশে? কারা, কীভাবে এতো সহজে কৃষক, শ্রমিকের ঘামের বিনিময়ে অর্জিত অর্থ লুটেরা বাহিনী অনিয়ন্ত্রিতভাবে বিদেশে নিয়ে যাবে? কেন রাজনৈতিক সরকারকে আমলাদের হাতে দেশের নিয়ন্ত্রণ ছেড়ে দিতে হবে?
আমি বঙ্গবন্ধুকন্যার সাহস, দেশপ্রেম নিয়ে প্রশ্ন করবো না। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তিনি একাই বৈরী পরিবেশের সঙ্গে লড়াই করছেন। কিন্তু প্রশ্ন আছে, তাকে ঘিরে থাকা কিছু উপদেষ্টা, মন্ত্রী, আমলাদের দুর্নীতি নিয়ে। বিশ্ব মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কি প্রতিবেদন দিলো সেটি বড় কথা নয়। গুম খুন নিয়েও কথা বলবো না। বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে কেন সেই যুক্তরাষ্ট্রের দুয়ারে যেতে হবে?
সেই যুক্তরাষ্ট্রের কাছে যে দেশের সরকার ১৯৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় হানাদার পাকিস্তান সরকারকে সমর্থন দিয়েছিলো? যুক্তরাষ্ট্র মানব অধিকার নিয়ে কি প্রতিবেদন দিলো সেটিও আমি বিবেচনায় আনবো না। যুক্তরাষ্ট্র বিশ্ব জুড়ে কতুটুকু মানব অধিকার রক্ষা করেছে, বিশ্ব দেখেছে। ভূতের মুখে রাম নাম শোভা পায় না।
জানি, ১৯৭২ এর বাংলাদেশ, ২০০৬-এর বাংলাদেশ আর ২০২২ বাংলাদেশ কিন্তু এক জায়গায় দাঁড়িয়ে নেই। অর্থনীতির আকার এখন বিশাল, অনেক মেগা প্রকল্পের সফল বাস্তবায়নের কারণে দেশ দক্ষিণ এশিয়া-দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার মিলন মোহনায় পরিণত হয়েছে। এতো কিছুর পরেও বলতেই হয়, শুধু মাত্র দুর্নীতি আর কুশাসনের কারণে সরকারের স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা প্রশ্নবিদ্ধ। ২০১৪ এবং ২০১৮ জাতীয় নির্বাচন নিয়ে অনেক প্রশ্ন আছে।
একই গণতান্ত্রিক দেশ পরিচালনা করবেন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি। কিন্তু বর্তমান বাস্তবতা হলো দেশ চালাচ্ছেন আমলারা। তবে কি প্রধানমন্ত্রী নিজেই জন প্রতিনিধিদের ওপর আস্থা রাখতে পারছেন না?
প্রশ্ন উঠছে, প্রধানমন্ত্রীর দুর্নীতির বিরুদ্ধে জেহাদ বা জিরো টলারেন্স নিয়েও। সকল মন্ত্রণালয়, সকল সরকারি অফিসের ব্যাপক দুর্নীতির তথ্য মিডিয়ায় প্রতিনিয়ত প্রকাশিত হচ্ছে। অনেকেই বলছেন, নখ-দাঁতবিহীন দুর্নীতি দমন, মোমের পুতুলে পরিণত হয়ে গেছে। কেন এই দেশে দুর্নীতিবাজদের মুখোশ উন্মুক্ত করে চাকরি হারাতে হবে? কেন ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে কাজ করা সরওয়ার পদোন্নতি পাবে না?
সরকারপ্রধান বিরোধীদলগুলোর বৈধতা, রাজনৈতিক দলগুলোর জনপ্রিয়তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। এতো জনপ্রিয় একটি দলের প্রধান কেন নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে দেশ বিদেশে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনে সাহস পাচ্ছে না? সরকার প্রধানের কথা খাঁটি হলে সরকারি দল নিরপেক্ষ ব্যবস্থার অধীনে আবারো নির্বাচন দিলে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হলেই সকল সমস্যা মিঠে যায়।