২৮ এপ্রিল ২০১২, রবিবার, ০৬:৩৫:২৭ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
‘শেরে বাংলা আপাদমস্তক একজন পারফেক্ট বাঙালি ছিলেন’ বিএনপির বহিস্কৃতদের জন্য সুখবর! মে দিবসে নয়পল্টনে বিএনপির শ্রমিক সমাবেশ উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়ার জের, বিএনপির বহিস্কার ৭৬ থাইল্যান্ডের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আহ্বান ‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়


যথাযোগ্য মর্যাদায় ক্রিসমাস পালন
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৭-১২-২০২৩
যথাযোগ্য মর্যাদায় ক্রিসমাস পালন অনুষ্ঠানে উপস্থিতির একাংশ


খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীদের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব ‘শুভ বড়দিন’। এ ধর্মের প্রবর্তক যিশুখ্রিস্ট ২৫ ডিসেম্বর বেথলেহেমে জন্মগ্রহণ করেন। খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীরা দিনটিকে ‘শুভ বড়দিন’ হিসেবে উদযাপন করে থাকেন।

বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো আমেরিকান খ্রিস্টান ধর্মানুসারীরাও এই বিশেষ দিন যথাযথ ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও আচারাদি, আনন্দ-উৎসব এবং প্রার্থনার মধ্য দিয়ে উদযাপন করে। এর সাথে ছিলেন প্রবাসী খ্রিস্টান ধর্মবালম্বী বাংলাদেশীরাও। এ উপলক্ষে খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান গির্জাগুলোকে সাজানো হয়েছে নতুন-আঙ্গিকে। বাসা বাড়িতেও আলোকসজ্জা করা হয়। ঘরের ভিতরে সাজানো হয় ক্রিসমাস ট্রি ও শান্তাক্লজ। ম্যানহাটনের রকফল সেন্টারে ছিলো দৃষ্টিনন্দন ক্রিসমাস ট্রি এবং আলোকসজ্জা। যা দেখতে হাজার হাজার মানুষ ভিড় করেছিলো ম্যানহাটনে।

বড়দিন উপলক্ষ্যে ২৫ ডিসেম্বর ছিলো সরকারি ছুটি। বড় দিনে উপলক্ষে ছিলো বিভিন্ন বড় বড় স্টোরে বিশেষ সেল। রেস্টুরেন্টগুলো ছিলো ডিনারের আয়োজন। বাংলাদেশী খ্রীস্টান সম্প্রদায় বিভিন্ন গির্জা এবং অডিটোরিয়ামে নিয়েছিলেন বিশেষ কর্মসূচি।

খ্রিস্টন সম্প্রদায়ের মানুষরা বিশ্বাস করেন, সৃষ্টিকর্তার মহিমা প্রচারের মাধ্যমে মানবজাতিকে সত্য ও ন্যায়ের পথে পরিচালিত করতেই যিশুর পৃথিবীতে আগমন ঘটেছিল।

নিউইয়র্কে আন্তধর্মীয় সম্প্রীতির বন্ধনে ক্রিসমাস উদযাপন

ইমাম কাজী কায়্যূম : প্রিয় নবী হজরত ঈসা আলাইহিস সালামের পবিত্র জন্মদিন-মীলাদে ঈসা বা বড়দিন, যাকে বিশ্ববাপী ক্রিসমাস বলে থাকেন। নিউইয়র্ক এবার তা পালিত হলো তুষার পাত ছাড়াই। প্রবাদ আছে যে, স্নো এন্ড ক্রিসমাস কাম টুগেদার ইন নিউইয়র্ক। সাদা সাদা থোকা থোকা তুষারে আবৃত হবার কারণে যাকে হোয়াইট ক্রিসমাসও বলা হতো। মূলধারার সংবাদে এসেছে, ‘শান্তা সেইজ নো হোয়াইট ক্রিসমাস’। অর্থাৎ খ্রিস্টান ধর্মমতে ক্রিসমাস উদযাপনে শান্তার যে প্রভাব রয়েছে, সেই শান্তাই নাকি নিউইয়র্কে এবার হোয়াইট ক্রিসমাস চাননি, তাই তুষার পাত হয়নি। খ্রিস্টান বিশ্বাস মতে মধ্যপ্রাচ্যের জেরুজালেম শহরের ১০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত পবিত্র শহর বেথেলহেমে, আজ যেখানে চার্চ অব নেটিভিটি বিদ্যমান, সেখানেই শেষ নবী হজরত মোহাম্মদের (সা:) জন্মের অন্তত ৫৩৩ বছর পূর্বে নবী ঈসা আলাইহিস সালামের জন্ম হয়। নবী মোহাম্মদের (সা:) জন্ম যেভাবে হিজরী চন্দ্রমাস রবিউল আউয়ালের ১২ তারিখ বলে প্রসিদ্ধ ও বিশ্বব্যাপী পালিত হয়ে থাকে, তদ্রূপ ভাবে ২৫ ডিসেম্বরই নবী ঈসার জন্মদিন ছিল বলে মনে করা হয়ে থাকে ও ব্যাপক ধুম আয়োজনে তা পালিত হয়।

দুর্ভাগ্যবশত ও দু:খজনকভাবে যদিও নবীদের জন্মদিন পালনে অনীহা প্রকাশকারী কিছু চরমপন্থী ১২ই রবীউল আউয়াল কি সত্যি সত্যিই নবী মোহাম্মদের (সা:) জন্মদিন ছিল বলে বিভেদ ও ষড়যন্ত্র সৃষ্টি করতে চান, তদ্রুপ ভাবে তথাকথিত এসব অতি উৎসাহীরা ২৫ ডিসেম্বর কি সত্যিই ঈসা আঃ এ দুনিয়াতে আগমন করেছিলেন বলে সোসাল মিডিয়া ও বয়ান-বক্তৃতায় প্রশ্ন উত্থাপন করে বিবেদ সৃষ্টি করার পঁয়তারা করে থাকেন। আন্ত:ধর্মীয় বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ধর্মে ধর্মে এরাই ধর্মীয় লেবাসধারীরা বিভেদ সৃষ্টিকারীর দল। যাদের থেকে কেবলই সাবধান থাকা ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই। ক্রিসমাস পালনকারী খ্রিস্টান ও মীলাদুন্নবী উদযাপনকারী মুসলমান এদেরকে বয়কট করে চলা মানেই হলো শয়তানের ওয়াসওয়াসা থেকে মুক্ত থাকা। কেননা, নবী মোহাম্মদের জন্মের দিন শয়তান দু:খ করে যেভাবে কেঁদেছিল, ঈসা আলাইহিস সালামের জন্মের সময়ও ইবলীস তাঁর মা হজরত মারইয়ামের (আ) প্রতি অপবাদ রটিয়েছিল। ধর্মে বিভ্রান্তি ও লেবাসধারী ভদ্রবেশী বিবেদ সৃষ্টিকারীদের সকল ষড়যন্ত্রকে পিছনে ফেলে পবিত্র মাহে রবীউল আউয়াল আগমনের সাথে সাথে মাসটির ১২ই তারিখ সহ মাসব্যাপী নিজ নিজ সাধ্যানুযায়ী ও যুগোপযোগী ও উন্নত মানানুযায়ী বিবেকবান ও সত্যিকারের শান্তিপ্রিয় নবীর উম্মত দাবীদার মুসলমানরা যেভাবে মীলাদের আয়োজন করে থাকেন, হজরত ঈসার (আ) অনুসারী খ্রিস্টান জাতি ডিসেম্বরের ১লা তারিখ থেকেই নিজ নিজ বাড়িঘর ও গীর্জাগুলোতে মনোরম ও দৃষ্টি নন্দন আলোকসজ্জায় সজ্জিত করে থাকেন। কেননা এ মাসেই একদিন আসবে সেই আনন্দের ‘বড়দিন’ ২৫ ডিসেম্বর। যেভাবে মুসলমানদের কাছে আসে ‘মহাদিন’ ১২ই রবীউল আউয়াল। বড়দিন ও মহাদিনের আনন্দ উদযাপনের ধুম ছাড়া যেনো ধর্মদুটোর আধ্যাত্মিকতা সচলই থাকে না।

নিউইয়র্কে প্রতি বছরের ন্যায় এবারও শহরের উডসাইড-কুইন্সে অনুষ্ঠিত এখানের বাংলাদেশী-আমেরিকান খ্রিস্টান সম্প্রদায় কর্তৃক পরিচালিত ইউনাইটেড বেংগলী লুথারান চার্চ অব আমেরিকায় গত ২৫শে ডিসেম্বর, ‘২৩ সোমবার ব্যাপক আডম্বরে বড়দিনের অনুষ্ঠানটির আয়োজন করা হয়। চার্চের স্বনাম ধন্য পাদ্রী রেভা. জেমস রয় কমি্যুনিটির আন্ত:ধর্মীয় ইমাম, পন্ডিতসহ বিশিষ্টজনদের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানান। নিউইয়র্কে বাংলাদেশ কন্স্যুলেটের কন্সাল জেনারেল মোহাম্মদ নাজমুল হুদা কন্যা মেহজাবিনও বিশেষ অতিথি হিসেবে অনুষ্ঠানে যোগদান করেন।

ইমাম কায়্যূম বলেন, আমি নিউইয়র্কের বাংলাদেশী-আমেরিকান মুসলিম কম্যিউনিটির পক্ষ থেকে আমার বাংলাদেশী-আমেরিকান খ্রিস্টান ভাইবোনদের মীলাদে ঈসার (আ) শুভেচ্ছা জানাতে এসেছি। তিনি বলেন, ৫৭০ খ্রিস্টাব্দে মে মাসের ১ম সোমবার মক্কায় বিশ্ব শান্তির দূত হিসেবে শেষ নবী হজরত মোহাম্মদের (সা:) শুভাগমন ঘটেছিল। আজ ২৫শে ডিসেম্বর বডদিনে আমরা যাঁর জন্মদিন পালন করছি, তিনিই নবী মোহাম্মদের (সা:) আগমনের সুসংবাদ দিয়েছিলেন। ইমাম কাজী কায়্যূম বলেন, ইনশাল্লাহ, বড়দিনের মত করে আমরাও আমেরিকার ৩.৫ মিলিয়ন মুসলমান সরকারী ছুটিতে একদিন ঈদে মীলাদুন্নবী তথা ‘মহাদিন’ পালন করবো। তিনি বলেন, আমরা যারা মহানন্দে আমেরিকায় আজ ক্রিসমাস উদযাপন করছি, ঠিক এই সময়ে হজরত ঈসার (আ) জন্মভূমি পার্শ্ববর্তী শহর মুসলমানদের রক্তে হচ্ছে রঞ্জিত। আমরা সেসব হানাহানির অবসান চাই। নিউইয়র্কে বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল মোহাম্মদ নাজমুল হুদাও একই আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি সবাইকে দিনটির শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশে আজ এই দিন পালিত হচ্ছে মহা সমারোহে।

অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথির মধ্যে ড. থমাস দুলু রায় ও ব্রুকলিন সেন্ট পিটার্স চার্চের আমেরিকান পাদ্রী রেভা. বেংকী উপস্থিত ছিলেন। শিশুদের মধ্যে ক্রিসমাস গিফট বণ্টন করেন অনুষ্ঠানে শান্তা হয়ে আসা রোজারিও। বড়দিনের একটি বড় ক্রিসমাস কেক কাটার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘটে।

শেয়ার করুন