২৬ এপ্রিল ২০১২, শুক্রবার, ০৪:০৭:২৮ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :


জেসমিনের মৃত্যু প্রসঙ্গে এমএসএফ
‘র‌্যাবের বর্ণনা বিশ্বাসযোগ্য নয়’
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৯-০৩-২০২৩
‘র‌্যাবের বর্ণনা বিশ্বাসযোগ্য নয়’


নওগাঁ শহরের মুক্তির মোড় থেকে সুলতানা জেসমিন (৪৫) নামের এক নারীর মৃত্যু প্রসঙ্গে মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ) অভিযোগ করেছে যে, র‌্যাব কর্তৃপক্ষ ঘটনার যে বর্ণনা দিয়েছেন তা গ্রহণযোগ্য ও বিশ্বাসযোগ্য না। কারণ সুলতানা জেসমিনের বিরুদ্ধে আর্থিক প্রতারণার ও তার ব্যাংক হিসাবে অস্বাভাবিক লেনদেনের যে সুনির্দষ্ট অভিযোগ তোলা হয়েছে, সে ক্ষেত্রে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য একজন নারীকে রাস্তা থেকে তুলে নিতে হবে কেন? সংবিধান ও বিদ্যমান আইন রাষ্ট্রের সব নাগরিকের জন্য সমান। তাছাড়া কোনো অপরাধ আদালত কর্তৃক প্রমাণিত হওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি নিরপরাধ এবং সব মানুষ সমান মর্যাদা লাভের অধিকারী। 

এমএসএফ এর তীব্র ক্ষোভ, উৎকণ্ঠা ও গভীর উদ্বেগ করে বলেছে আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে আটক ব্যক্তির মৃত্যু একটি ভয়াবহ ঘটনা বলেই এমএসএফ একে অভিহিত করেছে। এর পাশাপাশি বলেছে এই ঘটনা আবারও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপব্যবহারের একটি নজির স্থাপন করলো। এমএসএফ এই আইনের বাতিল দাবি করছে। মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন এমএসএফের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল। 

গণমাধ্যম সূত্র উল্লেখ করে এমএসএফের তাদের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে যে  জানা যায়, ২২ মার্চ সকালে নওগাঁ শহরের মুক্তির মোড় থেকে সুলতানা জেসমিন (৪৫) নামের এক নারীকে র‌্যাব আটক করে এবং ২৪ মার্চ শুক্রবার সকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। র‌্যাবের দাবি প্রতারণার অভিযোগে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সুলতানা জেসমিনকে আটক করা হয়। আটকের পর অসুস্থ হয়ে তিনি মারা যান। স্বজনদের অভিযোগ, হেফাজতে নির্যাতনের কারণে তার মৃত্যু হয়েছে। 

আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে সরকারি কর্মজীবী নারীর মৃত্যুর এ ঘটনায় মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশান (এমএসএফ) তীব্র ক্ষোভ, উৎকণ্ঠা ও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে। পাশাপাশি ঘটনাটির নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু তদন্ত নিশ্চিত করে র‌্যাবের বিরুদ্ধে উত্থাপিত নির্যাতনের  অভিযোগের বিষয়ে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জোর দাবি জানাচ্ছে। 

সংবাদ সূত্রে জানা যায়, ২২ মার্চ সকালে সুলতানা জেসমিন তার কর্মস্থল নওগাঁ সদর উপজেলার চন্ডীপুর ইউনিয়ন ভূমি কার্যালয়ে যাওয়ার পথে সাড়ে ১০টার দিকে মুক্তির মোড় এলাকা থেকে একটি সাদা মাইক্রোবাসে র‌্যাবের সদস্যরা তাকে ধরে নিয়ে যায়। সুলতানা জেসমিন নওগাঁ সদর উপজেলার চন্ডীপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসে অফিস সহকারী পদে চাকরি করতেন। তাকে কোথায় বা র‌্যাবের কোন ক্যাম্পে নেয়া হয়েছে তা স্বজনদের জানানো হয়নি। দুপুর ১২টার পর তারা জানতে পারেন, সুলতানা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। সেখানে র‌্যাব সদস্যরা উপস্থিত ছিল কিন্তু সুলতানা কোনো কথা বলতে পারছিলেন না। এরপরই তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার সকালে তার মৃত্যু হয়। শনিবার দুপুরে লাশ হস্তান্তর করা হয়।  সুলতানার সন্তান শাহেদ হোসেন সৈকত জানান, র‌্যাব হেফাজতে থাকা অবস্থায় তার মায়ের ওপর নির্যাতন চালানো হয়েছে। যার ফলে তার মৃত্যু হয়েছে।

এ বিষয়ে র‌্যাব ৫-এর কোম্পানি কমান্ডার মেজর নাজমুস সাকিব সংবাদমাধ্যমকে জানান, সুলতানার বিরুদ্ধে আর্থিক প্রতারণার অভিযোগ ও তার ব্যাংক হিসাবে অস্বাভাবিক লেনদেনের অভিযোগের ভিত্তিতে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মুক্তির মোড় এলাকা থেকে র‌্যাব হেফাজতে নেওয়া হয়। আটকের পরপরই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। নওগাঁ সদর হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসার পর চিকিৎসকদের পরামর্শে তাকে রাজশাহীতে নেওয়া হয়। সেখানে তার অবস্থা আরো খারাপ হয়। শুক্রবার রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্ট্রোক করে তিনি মারা যান। 

এ দিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক এফ এম শামীম আহাম্মদ জানান, তিনি যতটুকু জানতে পেরেছেন, র‌্যাবের জিজ্ঞাসাবাদের সময় সুলতানা পড়ে গিয়ে মাথায় আঘাত পান। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনার পর সিটি স্ক্যান করে জানা যায়, মস্তিষ্কে ব্যাপক রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হয়। তার মাথায় আঘাতের একটি লাল দাগ ছিল। 

এমএসএফ এ ধরনের ঘটনার সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করতে এবং জবাবদিহি প্রতিষ্ঠায় আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর বাইরে থেকে বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে নিরপেক্ষ তদন্ত সংস্থা গঠন করা আবশ্যক বলে মনে করে। পাশাপাশি সুলতানা জেসমিনের মৃত্যু যেভাবেই হোক না কেন প্রকৃত ঘটনা উদঘাটনে অনতিবিলম্বে নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু তদন্ত নিশ্চিত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জোর দাবি জানাচ্ছে।  

নওগাঁয় র‌্যাবের হেফাজতে থাকাকালীন সুলতানা জেসমিন (৪৫) নামে এক সরকারি কর্মচারী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। পরিবারের অভিযোগ, চিকিৎসকের বক্তব্য এবং গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ থেকে সুস্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হচ্ছে যে, তাকে আটক ও জিজ্ঞাসাবাদের ক্ষেত্রে সংবিধান, বিদ্যমান আইন ও যথাযথ প্রক্রিয়ার ব্যত্যয় ঘটেছে। আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার নিশ্চিত করার জোর দাবি জানাচ্ছে।

বিভিন্ন গণমাধ্যমসূত্রে জানা গেছে, নওগাঁ সদর উপজেলার চন্ডীপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের অফিস সহকারী সুলতানা জেসমিনকে নওগাঁ শহরের মুক্তির মোড় থেকে ২২ মার্চ ২০২৩ সকালে র‌্যাব প্রতারণার অভিযোগে আটক করে। পরে জানা যায়, ২৩ মার্চ বৃহস্পতিবার বিকালে তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা হয়েছে। গণমাধ্যম থেকে আরো জানা যায়, তার এ আটকের বিষয়ে স্থানীয় পুলিশকে র‌্যাব কোনো তথ্য জানায়নি। র‌্যাবের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আটকের পরপর সুলতানা জেসমিন অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে প্রথমে নওগাঁ হাসপাতাল এবং পরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয় যেখানে ২৪ মার্চ, শুক্রবার, তিনি মৃত্যুবরণ করেন। নির্যাতনের কারণে অসুস্থ হয়ে জেসমিনের মৃত্যু হয়েছে বলে পরিবার দাবি করলেও র‌্যাব তা অস্বীকার করেছে। তবে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের চিকিৎসক জানিয়েছেন, হাসপাতালে ভর্তির সময় জেসমিনের মাথার ডানপাশে আঘাত ছিল। ব্রেনের ভেতর রক্তক্ষরণ হয়েছে বলে সিটিস্ক্যান রিপোর্টে উঠে আসে।

এদিকে আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) এ ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে।  আসক মনে করে, পরিবারের অভিযোগ অত্যন্ত গুরুতর। তবে এবারই প্রথম এমন অভিযোগ উঠলো তা নয়, আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রায়শ নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যুর অভিযোগ উঠছে। অভিযোগগুলো যথাযথ গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে প্রয়োজনীয় আইনি পদক্ষেপ গ্রহণের মধ্য দিয়ে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়ায় এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটছে। পূর্বের ঘটনাগুলোর আইনগত প্রতিকার না পাওয়ার মধ্য দিয়ে বিচার না হওয়ার যে অপচর্চা বিদ্যমান রয়েছে, তা দূর করা অতীব জরুরি। তাই দ্রুততার সঙ্গে নিরপেক্ষভাবে এ অভিযোগ খতিয়ে দেখে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ ও ন্যায় বিচার নিশ্চিত করা জরুরি। হিউম্যান রাইটস ফোরাম বাংলাদেশের (এইচআরএফবি) তীব্র ক্ষোভ এবং সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত, আইনানুগ ব্যবস্থা এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিতের জোর দাবি জানিয়েছে।

শেয়ার করুন