২৯ এপ্রিল ২০১২, সোমবার, ৬:৩৮:২০ পূর্বাহ্ন


নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে কার্যকর নিয়ন্ত্রণের আহ্বান
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৮-০৩-২০২৩
নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে কার্যকর নিয়ন্ত্রণের আহ্বান


জেন্ডার সমতা অর্জনের হাতিয়ার হিসেবে ডিজিটাল প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনের কৌশল প্রক্রিয়ার মূলধারায় নারীর সমঅধিকারভিত্তিক সক্রিয় অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিতে সুনির্দিষ্ট সময়াবদ্ধ পথরেখা নিরুপণ ও বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। পাশাপাশি প্রযুক্তির অগ্রযাত্রার উপজাত হিসেবে অনলাইনে সহিংসতা ও নির্যাতন থেকে নারীর সুরক্ষা নিশ্চিতে সংশ্লিষ্ট সকল প্রতিষ্ঠানের দক্ষতা ও সক্রিয়তা বৃদ্ধির পাশাপাশি সার্বিকভাবে নারী অধিকার সুরক্ষার অন্যতম প্রতিবন্ধক দুর্নীতি প্রতিরোধে কার্যকরতা বৃদ্ধির গুরুত্বের ওপর জোরারোপ করেছে সংস্থাটি। 

আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘জাতিসংঘ ও বাংলাদেশ সরকারের ঘোষিত প্রতিপাদ্যের সঙ্গে একাত্ম হয়ে আমরা বিশ্বাস করি, ডিজিটাল প্রযুক্তি ও উদ্ভাবন কৌশল প্রক্রিয়ার মূলধারায় নারীর সমঅধিকারভিত্তিক সক্রিয় অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিতে সুনির্দিষ্ট সময়াবদ্ধ পথরেখা নিরূপণ ও বাস্তবায়ন করতে হবে। অন্যথায় প্রযুক্তিনির্ভর ডিজিটাল বাংলাদেশে নারীর সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন সম্ভব হবে না, বরং নারীর আরো পিছিয়ে পড়ার ঝুঁকি রয়েছে। আমরা দেখেছি, করোনাকালে ও তার পরবর্তী সময়ে প্রযুক্তিনির্ভর অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে নারীর অংশগ্রহণ মূলত নারীর স্ব-উদ্যোগেই বেড়েছে আশাব্যঞ্জক হারে। অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে এখন অনেক নারী উদ্যোক্তা হয়ে উঠছেন। শত প্রতিকূলতা জয় করে প্রশংসনীয়ভাবে অনেক নারী স্বাবলম্বী হয়ে ওঠার পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করতেও প্রত্যক্ষ ভূমিকা রাখছেন। নির্ভরযোগ্য গবেষণা থেকে আমরা দেখতে পাচ্ছি, ফ্রিল্যাান্সিং বা অনলাইন শ্রমশক্তিতেও নারীর অংশগ্রহণ বাড়ছে। তবে বাংলাদেশের অনলাইন শ্রমশক্তির অংশগ্রহণ ২০১৪ সালে মাত্র ৯ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ১৬.৯ শতাংশ হলেও, প্রত্যাশিত মানের সমতা অর্জনে এখনও নারীরা অনেক পিছিয়ে রয়েছেন, বিশেষ করে প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনে নারীর অংশগ্রহণে লৈঙ্গিক বৈষম্য এখনও প্রকট। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) ব্যবহার জরিপ ২০২২ থেকে আমরা দেখছি দেশে স্মার্টফোন, কম্পিউটার, ইন্টারনেট ব্যবহারে নারীরা পুরুষের চেয়ে অনেক পিছিয়ে রয়েছেন। এর অন্যতম কারণ প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনে কৌশলগত প্রক্রিয়ার মূলধারায় নারীর অন্তর্ভুক্তির ঘাটতি, যা নিরসনের পাশাপাশি প্রযুক্তিতে নারীর অভিগম্যতার ব্যাপকতর ও গভীরতর সম্প্রসারণ নিশ্চিত করতে হবে; ইন্টারনেট ও প্রয়োজনীয় ইলেকট্রনিক ডিভাইস নারীর জন্য বিশেষভাবে অধিকতর সুলভ করতে হবে এবং বিশেষায়িত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।’ 

প্রযুক্তির বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে বেড়ে চলা অনলাইন সহিংসতাকে আতঙ্কজনক উল্লেখ করে ড. জামান বলেন, ‘অনলাইনে অশ্লীল, যৌন হয়রানিমূলক বার্তা ও ছবি পাঠানো, ভুয়া আইডি তৈরির মাধ্যমে সহিংসতার শিকার হওয়ার ঘটনা প্রতিনিয়ত গণমাধ্যমের মাধ্যমে সামনে আসছে। নির্ভরযোগ্য গবেষণা থেকে আমরা দেখছি, অনলাইনে প্রায় ৬৪ শতাংশ নারী সহিংসতার শিকার হচ্ছেন এবং তা ক্রমাগত বাড়ছে। অনলাইন সহিংসতার ফলে মানসিক আঘাত, হতাশা, উদ্বেগ, ট্রমার শিকার হচ্ছেন নারীরা। নারীকে অনলাইন সহিংসতা থেকে সুরক্ষিত রাখতে না পারলে নারী ক্ষমতায়ন বা সমতা অর্জনের স্বপ্ন বাস্তবে রূপান্তর করা সম্ভব হবে না।’ 

দুর্নীতির কারণে পুরুষের তুলনায় নারী অনেক বেশি ঝুঁকির সম্মুখীন হন উল্লেখ করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘দুর্নীতি নারীর প্রতি সহিংসতা রোধের বিপরীতে ন্যায়বিচারকে বাধাগ্রস্ত করার পাশাপাশি জেন্ডার সমতা ও নারীর ক্ষমতায়নের অঙ্গীকারকে ভূলুণ্ঠিত করে। টিআইবি পরিচালিত জাতীয় খানা জরিপ ২০২১ এ দেখা যায়, সেবাগ্রহণকারী হিসেবে ৪৩ দশমিক ২ শতাংশ নারী দুর্নীতির শিকার হয়েছেন। জরিপে আরও দেখা যায়, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান, স্বাস্থ্যসেবা ও অন্যান্য খাতগুলো থেকে সেবা নিতে গিয়ে পুরুষদের তুলনায় নারীরা বেশি হারে দুর্নীতির শিকার হয়েছেন।

তা ছাড়া আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতায়  দেখা যায়, যে সব দেশে জেন্ডার সমতা ও নারীর ক্ষময়তায়ন নিশ্চিত করা সম্ভব হয়েছে, সে সব দেশসমূহে দুর্নীতির ব্যাপকতা তুলনামূলকভাবে অনেক কম। অথচ, বাংলাদেশে দুর্নীতির কারণে নারীর ক্ষমতায়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে এবং সমতাভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা ও টেকসই উন্নয়ন সম্ভব হচ্ছে না। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, পুরুষের দুর্নীতিলব্ধ সম্পদ আড়াল করতে নারীকে ব্যবহার করা হয়। তাই দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধের জন্য অবিলম্বে সুনির্দিষ্ট জাতীয় রূপরেখা তৈরি করে বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিতে সরকারকে আহ্বান জানাচ্ছে টিআইবি।’

শেয়ার করুন