২৭ এপ্রিল ২০১২, শনিবার, ০১:০১:০৬ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় ইউরোপে ভারতীয় ৫২৭ পণ্যে ক্যান্সার সৃষ্টিকারি উপাদন শনাক্ত বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশে কড়াকড়ি বিএনপির আন্দোলন ঠেকানোই ক্ষমতাসীনদের প্রধান চ্যালেঞ্জ বিএনপিকে মাঠে ফেরাচ্ছে আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন নিয়ে অদৃশ্য চাপে বিএনপি


সরকারের বোধগম্য হবে কি
  • আপডেট করা হয়েছে : ২২-০৪-২০২২
সরকারের বোধগম্য হবে কি


২০২১ সালে বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের বার্ষিক প্রতিবেদন গত ১২ এপ্রিল প্রকাশ করা হয়েছে। বাংলাদেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিচারবহিভর্‚ত হত্যা ও গুমসহ নানাধরনের নিপীড়নে জড়িত থাকলেও এর জন্য তাদের জবাবদিহি করা হয় না বলে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রাকারী বাহিনী নিপীড়ন ও দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত থাকলেও ব্যাপকভাবে দায়মুক্তি ভোগ করে আসছে বলে খবর রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিপীড়ন, হত্যা ও দুর্নীতির খুব কম সংখ্যক ঘটনাতেই তদন্ত ও বিচারের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ সরকার।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতর বলছে, বাংলাদেশের সংবিধানে সংসদীয় গণতন্ত্র রয়েছে, যেখানে অধিকাংশ মতা প্রধানমন্ত্রীর দফতরে ন্যস্ত। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়ে টানা তৃতীয় মেয়াদে পাঁচ বছরের জন্য মতায় আসেন শেখ হাসিনা ও তাঁর দল আওয়ামী লীগ। তবে ওই নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে। বাংলাদেশে আইনশৃঙ্খলা রায় পুলিশ ও র‌্যাব ছাড়াও সীমান্তরী বাহিনী (বিজিবি) দায়িত্ব পালন করে থাকে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে রয়েছে। এই বাহিনীর ওপরে বেসামরিক কর্তৃপ ব্যাপকভাবে নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা নানাধরনের নিপীড়ন চালিয়ে থাকে।

বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের যেসব বিষয়ের গ্রহণযোগ্য খবর রয়েছে সেগুলো হলো- বিচারবহিভর্‚ত হত্যাসহ বেআইনি হত্যাকাণ্ড, গুম, সরকারের পে নাগরিকদের নির্যাতন বা নিষ্ঠুর, অমানবিক ও অপমানজনক আচরণ, কারাগারে জীবনের জন্য হুমকি সৃষ্টিকারী পরিবেশ, নিবর্তনমূলক গ্রেফতার বা আটক, রাজনৈতিক কারণে গ্রেফতার, অন্য দেশে অবস্থানরত ব্যক্তির ওপর রাজনৈতিক প্রতিহিংসামূলক পদপে, বিচার বিভাগের স্বাধীনতার জন্য বাধা, ব্যক্তিগত গোপনীয়তার ওপর বেআইনি হস্তপে, কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগ উঠলে তাঁর পরিবারের সদস্যদের শাস্তি দেয়া, বাকস্বাধীনতা ও সংবাদমাধ্যমের ওপর গুরুতর বিধিনিষেধ, যার মধ্যে রয়েছে- সাংবাদিকদের ওপর সহিংসতা ও হুমকি, অন্যায়ভাবে গ্রেফতার বা বিচারের মুখোমুখি করা, ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের স্বাধীনতার ওপর গুরুতর বিধিনিষেধ, শান্তিপূর্ণ সমাবেশ ও সমিতির স্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপ, যার মধ্যে রয়েছে সংগঠন, তহবিল বা বেসরকারি সংস্থা ও সুশীল সমাজ সংগঠনের ওপর বিধিনিষেধমূলক আইন।

এ ছাড়া শরণার্থীদের চলাচলের স্বাধীনতার ওপর বিধিনিষেধ, শরণার্থীদের নিপীড়ন, ব্যক্তির রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার ওপর গুরুতর ও অযৌক্তিক বিধিনিষেধ, সরকারি পর্যায়ে ব্যাপকভাবে দুর্নীতি, দেশীয় মানবাধিকার সংগঠনগুলোকে হয়রানি বা সেগুলোর ওপর বিধিনিষেধ, লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার তদন্ত ও জবাবদিহির ক্ষেত্রে ঘাটতি, যার মধ্যে গৃহনির্যাতন, যৌন নির্যাতন, শিশু নিপীড়ন, বাল্য ও জোরপূর্বক বিয়েসহ অন্যান্য তিকর চর্চা রয়েছে। ক্ষুদ্র নৃতাত্তি¡ক গোষ্ঠীর সদস্যদের ওপর সহিংসতা ও হুমকি, হিজড়াসহ ভিন্ন লৈঙ্গিক আচরণের মানুষের ওপর সহিংসতা, ট্রেড ইউনিয়ন ও শ্রমিকদের সমিতি করার স্বাধীনতার ওপর বিধিনিষেধ এবং ব্যাপক মাত্রায় শিশুশ্রম।

সত্যি কথা ভারতে কী যুক্তরাষ্ট্রের এই রিপোর্টে বাংলাদেশের বাস্তব চিত্র ফুটে উঠেছে। কিন্তু প্রশ্ন তুলেছে সরকার এবং তার মন্ত্রীরা। তারা বলছেন, এই প্রতিবেদন সঠিক নয়। আবার কোনো কোনো মন্ত্রী বলেছেন, আমাদের গুয়ামতামা বে’র মতো জেলখানা নেই। মন্ত্রীর কথাটি পুরোপুরি সত্য। বাংলাদেশে গুয়ামতামা বে’র মতো জেলখানা নেই, তবে পুরো বাংলাদেশটাই একটা জেলখানায় পরিণত হয়েছে। এই জেলখানা কারো কারো জন্য গুয়ামতামা বে’র চেয়েও জঘন্য। কারণ গুয়ামতামা বে জেলখানায় সন্ত্রাসীদের অমানুষিত নির্যাতন করা হয়। আর বাংলাদেশে বিরোধী মতাবলম্বীদের শুধু নির্যাতন নয়, জীবন প্রদীপ নিভিয়ে দেয়া হয়। এই সরকারের আমলে মানুষ হত্যার হাজার হাজার নজির রয়েছে। আমরা সেই বিতর্কে যেতে চাই না- তবে এটা পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, স্টেট ডিপার্টমেন্টের এই প্রতিবেদনকে সরকারের আমলে নিতে হবে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। শুধু শুধু বিরোধিতার জন্য বিরোধিতা নয়, এখনো সময় আছে বাস্তবতায় ফিরে আসুন। তা না হলে বাংলাদেশের কপালে দুর্ভোগ আছে। ইতিমধ্যেই আমেরিকার বিরোধিতার কারণে দক্ষিণ এশিয়ায় ক্ষমতার পটপরিবর্তন শুরু হয়েছে। ভরসার জায়গা দিল্লিই রয়েছে সমস্যার মধ্যে। সুতরাং ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত।


শেয়ার করুন