২৮ এপ্রিল ২০১২, রবিবার, ০২:৩২:৪৫ অপরাহ্ন
শিরোনাম :


শিতাংশু গুহের দুটি বইয়ের প্রকাশনা
সকল মানুষের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৯-০৬-২০২২
সকল মানুষের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে


এই দেশ সকলের। মহান মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল, সেই চেতনার ভিত্তিতেই। এখানে কেউ দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক নয়। এমন অনেক কথাই উঠে এসেছে বই দুটির প্রকাশনা অনুষ্ঠানে।

সাংবাদিক ও লেখক শিতাংশু গুহ রচিত “করোনার কথা” ও “জন্ম থেকে জ্বলছি” প্রকাশনা উৎসব হয়ে গেল গত ৫ জুন রোববার। নিউইয়র্কের জুইশ সেন্টারে বিপুল সংখ্যক অভিবাসীদের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত এ উৎসবে প্রধান অতিথি ছিলেন একুশে পদক বিজয়ী লেখক ও মুক্তিযোদ্ধা ড: নুরুন নবী। সভাপতিত্ব করেন লেখক ও বুদ্ধিজীবী বেলাল বেগ এবং উপস্থাপনায় ছিলেন কবি ফকির ইলিয়াস।

 অনুষ্ঠানের শুরুতেই জাতির পিতা, জাতীয় চার নেতা, ভাষা-শহিদ, মহান মুক্তিযুদ্ধে শহিদ ও সম্ভ্রমহারা নারীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। একই সাথে সীতাকুন্ডের ডিপোতে আগুনে নিহত-আহতদেরও শ্রদ্ধা ও সমবেদনা জানানো হয়। এরপর বই দু’টির মোড়ক উন্মোচন করা হয়। ঢাকার বই মেলা ২০২১ এ “করোনার কথা” ও  ২০২২ এ “জন্ম থেকে জ্বলছি” বই দুটি প্রকাশ করেছে ঢাকার অভিজাত আগামী প্রকাশনী।

লেখক শিতাংশু গুহ সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে বই দু’টি প্রকাশের পটভূমি ব্যাখ্যা করেন। তিনি জানান, ‘করোনার কথা’ মূলত: করোনাকালীন নিউইয়র্কে যে ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি বিরাজ করছিলো এতে তা বিধৃত আছে। আছে বহু মৃত্যু ও বেঁচে থাকার কাহিনী। বাংলাদেশ ও অন্যান্য দেশের ঘটনা এবং অতীত মহামারির ইতিহাস আছে। এতে বেশ ক’জন ডাক্তারের কথাবার্তা এবং তাদের অভিজ্ঞতা বর্ণিত হয়েছে। লেখকের মতে বইটি ট্রাজেডীময় এবং একটি প্রামাণ্য দলিল।

‘জন্ম থেকে জ্বলছি’ নামটি দেয়ার ঘটনাটি লেখক প্রকাশ করে জানান, সম্ভবত আশির দশকের শুরুতে ঢাকার ফার্মগেট সংলগ্ন গ্রিনরোডে একদিন একটি ট্রাক যাচ্ছিলো। ট্রাকের বিশাল পেট্রল ট্যাঙ্কির ওপর লেখা ছিলো ‘জন্ম থেকে জ্বলছি’। এতদিন বাদেও লেখক তা ভুলেননি, তারমতে তিনি জন্ম থেকেই জ্বলছেন। বইয়ের শুরু বঙ্গবন্ধু’র ওপর প্রবন্ধ দিয়ে। লেখক প্রশ্ন রেখেছেন, আজকের বাংলাদেশ কি বঙ্গবন্ধু’র বাংলাদেশ? এই বাংলাদেশ কি আমরা চেয়েছিলাম?

প্রধান অতিথি ড: নূরন নবী শারীরিক অসুস্থতার কারণে টেলিফোনে তাঁর মূল্যবান বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন, শিতাংশু গুহ একটি আদর্শ নিয়ে গণমানুষের পে কাজ করছেন। তিনি মানুষের অধিকার নিয়ে সোচ্চার। ডঃ নবী বলেন, আমরা মানুষ হিসেবে অনেকেই সঠিক সামাজিক-রাষ্ট্রিক দায়িত্ব পালন করি না। শিতাংশু গুহ সাহস নিয়ে এই কাজগুলো করে যাচ্ছেন। আমাদের সকলের তার মতের সাথে মতের মিল না হতে পারে। কিন্তু তিনি যে মৌলিক আদর্শের জন্য সংগ্রাম করছেন- এতে কারও দ্বিমত থাকার কথা নয়।

অনুষ্ঠানে ‘জন্ম থেকে জ্বলছি’ বইটি’র ওপর মূল আলোচনা করেন সুনি ওল্ড ওয়েস্টবেরী ইউনিভার্সিটি নিউইয়র্ক’র এমিরেটস সার্ভিস প্রফেসর ড: সব্যসাচী ঘোষ দস্তিদার। তিনি বলেন, আমি নিজেই একজন উদ্বাস্তু। তাই আমি দেশহীন মানুষের বেদনা বুঝি। তিনি বলেন, বাংলাদেশের মিডিয়াগুলো নির্যাতিতদের কথা যতোটা লিখতে পারে- কলকাতার মিডিয়াগুলো ততটা পারে না, পারছে না। বরং তারা অনেক কিছুই চেপে যায়। তিনি বলেন, শিতাংশু গুহ যেন আমার কথাগুলোই বলেছেন। ড: দস্তিদার বলেন, লেখক যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছেন, তা কেউ করতে চান না, বা শুনতে চান না, অথবা মানতে চান না। অথচ ঘটনা ঘটছে। বুঝতে হবে লেখক কেন জন্ম থেকে জ্বলছেন।

‘করোনার কথা’ বইয়ের মূল আলোচক ছিলেন লেখক ডাক্তার সুভাষ শিকদার। তিনি চিকিৎসক হিসেবে তার অভিজ্ঞতার কথা বর্ণনা করেন। বলেন, এই দাগচিহ্নটি শিতাংশু গুহ লিখে রেখেছেন আগামী প্রজন্মের জন্য। বইটি ইংরেজিতে অনুবাদের উপর গুরুত্ব আরোপ করেন তিনি। ডাক্তার সুভাষ শিকদার বলেন, করোনা নিয়ে ঘটনাবলী লেখক সুন্দরভাবে ফুটিয়েছেন, যা হয়তো ভবিষ্যতে গবেষণায় সাহায্য করবে। তিনি বলেন, ডাক্তারদের যে কাজটি করার কথা, তা করেছেন শিতাংশু গুহ, তাঁকে ধন্যবাদ।

সাবেক উপাচার্য ড: দুর্গাদাস ভট্টাচার্য্য একটি লিখিত বক্তব্যটি  পড়ে শোনান ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সাধারণ সম্পাদক স্বীকৃতি বড়ুয়া। লিখিত বক্তব্যে ড: দুর্গাদাস ভট্টাচার্য্য ‘করোনার কথা’ বইয়ের ভূয়সী প্রশংসা করেন।

সভাপতির বক্তব্যে বেলাল বেগ বলেন, আমাদের বড় পরিচয় আমরা মানুষ। আর

এই পরিচয় ধরে রাখতে না পারলে আমরা পরাজিত হবো। দেশে বিদেশে আমাদের সাম্প্রদায়িক ঐক্য ধরে রাখতে হবে। একই যাথে যারা মানুষের উপর হামলে পড়ে- তাদের প্রতিরোধ করতে হবে। মনে রাখতে হবে, আমাদের মূল চেতনা সেই একাত্তর সাল।

 অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন, একুশে পদকপ্রাপ্ত কণ্ঠযোদ্ধা রথীন্দ্রনাথ রায়, সাংবাদিক হাকিকুল ইসলাম খোকন, আবৃত্তিকার মিথুন আহমদ, ডাক্তার মাসুদুল হাসান, সেক্টর কমান্ডার ফোরামের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল বারী, ডাক্তার মিতা গোপ, ব্রঙ্কস কমিউনিটি বোর্ডের সহ-সভাপতি শাজাহান শেখ, সুশীল সাহা, রীনা সাহা প্রমুখ।

অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সাপ্তাহিক বাঙ্গালী সম্পাদক কৌশিক আহমদ, বাংলাদেশ প্রতিদিন নিউইয়র্ক সংস্করণের নির্বাহী সম্পাদক লাভলু আনসার, সাপ্তাহিক দেশ’র সম্পাদক মিজানুর রহমান, সাপ্তাহিক জন্মভূমি সম্পাদক রতন তালুকদার, সাপ্তাহিক প্রবাস সম্পাদক মোহাম্মদ সাঈদ, সময় টিভি’র হাসানুজ্জান সাকী, প্রথম আলোর মনজুরুল হক, এটিএন’র কানু দত্ত, সাপ্তাহিক আজকাল’র সাংবাদিক সঞ্জীবন সরকার, কবি ফারহানা ইলিয়াস তুলি, লেখক ও সংগঠক মিশুক সেলিম, শব্দজন মনজুর কাদের, কবি সৈয়দ আহমদ জুয়েদ, ব্যবসায়ী চন্দন ও সুবর্ণা সেনগুপ্ত, পরেশ সাহা, ডা. প্রভাত দাস ও শিল্পী সবিতা দাস সুতার, কবি নিখিল রায়, ভজন সরকার, ড: শেফালী দস্তিদার, সংগঠক উত্তম সাহা, রামদাস ঘরামী, গোপাল সান্যাল, অসীম  সাহা ও রীনা সাহা, কুমার বাবুল সাহা, বিষ্ণু গোপ, সুশীল সিনহা, বিভাস মল্লিক প্রমুখ।

প্রায় তিনঘন্টা ব্যাপি অনুষ্ঠানের বাইরে হলরুমে বই দুটির বিপণনের ব্যবস্থা ছিল।


শেয়ার করুন