০৯ মে ২০১২, বৃহস্পতিবার, ০১:৪৬:৫০ পূর্বাহ্ন


স্বাধীনতা দিবসের প্রত্যাশা
  • আপডেট করা হয়েছে : ০২-০৪-২০২২
স্বাধীনতা দিবসের প্রত্যাশা


২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবস। এই দিন বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের জন্মের দিন। পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়। এর জন্য চরম মূল্য দিতে হয়েছে বাংলাদেশের মানুষকে। এই যুদ্ধ ৩০ লাখ মানুষ শহিদ হয়েছিলো, ২ লাখ মা-বোন তাদের সম্ভ্রম হারিয়েছেন। পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন অনেকেই। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম একদিনে শুরু হয়নি। এর রয়েছে দীর্ঘপ্রেক্ষাপট। মূলত ভাষা আন্দোলন থেকে যার শুরু, যা পর্যায়ক্রমে চ‚ড়ান্ত রূপ লাভ করে।

১৯৭০ সালের ৭ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তানের ১৬২টি আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ ১৬০টি আসনে জয়লাভ করে। নির্বাচনে এককভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করা সত্তে¡ও আওয়ামী লীগের নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সরকার গঠনে আহŸান করার পরিবর্তে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ১৯৭১ সালের ১ মার্চ জাতীয় পরিষদ অধিবেশন অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত ঘোষণা করেন। এর প্রতিবাদে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে পূর্ব পাকিস্তানে অসহযোগ আন্দোলন শুরু হয়। ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণে বঙ্গবন্ধু জাতিকে মুক্তিযুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হবার ডাক দেন এবং ঘোষণা করেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রম, এবারের সংগ্রম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ মধ্যরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ঘুমন্ত নিরস্ত্র বাঙালির ওপর আধুনিক যুদ্ধাস্ত্র নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। বাংলার মানুষের স্বাধিকার আন্দোলন, এমনকি জাতীয় নির্বাচনের ফলাফলের আইনসঙ্গত অধিকারকেও রক্তের বন্যায় ডুবিয়ে দিতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী সারা দেশে গণহত্যা শুরু করে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেফতার করা হয়।

বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতারের পর বাংলাদেশের মানুষ কিছুটা বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে। ওই সময়ে শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। বাংলাদেশের পক্ষে দাঁড়ায় ভারত। সব মিলিয়ে ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধর পর বাংলাদেশ স্বাধীন হয়। বিশ্বের বুকে নতুন একটি দেশের জন্ম হয়।

বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে ৫১ বছর। গত বছর বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করা হয়। বছরব্যাপী এই উত্সব এই বছর শেষ হবে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫১ বছরে বাংলাদেশের মানুষের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির অমিল এখনো রয়েছে। যে গণতন্ত্রের জন্য বাংলাদেশের মানুষ জীবন দিয়েছিলো, সেই গণতন্ত্র এখনো নেই। জুলুম, নির্যাতন, শোষণ মুক্ত হয়নি জাতি। এখনো বিচারের বাণী নীরবে কাঁদে। স্বাধীনতার ৫১ বছরে এসে যেখানে দারিদ্র্য কমার কথা ছিল, বৈষম্য দূর হওয়ার কথা ছিল, তা হয়নি। আজ দেশে ধনী-গরিবের বৈষম্য বেড়েছে উদ্বেগজনক হারে। ফলে দেশে দারিদ্র্য বাড়ছে। এটা আমাদের কথা নয়। দেশি-বিদেশি গবেষণা প্রতিষ্ঠান এসব কথা বলছে। বাড়ছে শহরকেন্দ্রিক দারিদ্র্য। ভিয়েতনাম ২৬ বছর আন্দোলন করে স্বাধীনতা লাভ করেছে। কিন্তু স্বাধীনতা লাভের পর অল্পসময়ে ভিয়েতনাম যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, আমরা দীর্ঘ ৫১ বছরেও তা পারিনি। অথচ একটি জাতির আত্মনির্ভর হওয়ার জন্য ৫১ বছর কম সময় নয়। কিন্তু দুর্ভাগ্য বাংলাদেশের মানুষের। আজ পর্যন্ত বাংলাদেশের মানুষ সুশাসন পায়নি। ’৯০-এর গণআন্দোলনের পর শিশু গণতন্ত্র এলেও তা এখন নেই।

রাজনীতির বিষয়ে বলতে গেলে বলতে হয় দেশে কোনো রাজনীতি নেই। দেশে এখন পুরোপুরি একদলীয় শাসন চলছে। শুধুমাত্র গুটিকয়েক লোকের কাছে সব জিম্মি। তাদের নানা অপকর্মে উত্সাহ দেয়া হচ্ছে। তাদের ছাড় দেয়া হচ্ছে। সরকারের বিরুদ্ধে কেউ কথা বলতে পারে না। রাজপথে কর্মসূচি পালন করতে পারে না। সরকারের বিরুদ্ধে কথা বললেই খুন, গুম, হামলা-মামলা, নির্যাতন করে স্তব্ধ করে দেয়া হচ্ছে। যেসব মুক্তিযোদ্ধা যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছিলেন, তারা সরকারের তোয়াজ না করলে তাদেরও রেহাই দেয়া হচ্ছে না। কোনো শ্রেণি-পেশার মানুষই আজ রা পাচ্ছে না। বিচারবহির্ভ‚ত হত্যাকাণ্ডের কারণে স্বাধীনতার ৫১ বছর পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক বাংলাদেশের র‌্যাব এবং র‌্যাবের ৭ সদস্যের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেয়া সত্যিই লজ্জার। এ ছাড়া আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের গণতান্ত্রিক সম্মেলনে বাংলাদেশকে না ডাকাও একটি জাতির জন্য অপমানজনক। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর পর সবার প্রত্যাশা বাংলাদেশে গণতন্ত্র ফিরে আসবে এবং স্বাধীনতার সুফল বাংলাদেশের মানুষ ভোগ করবে।

শেয়ার করুন