২৭ এপ্রিল ২০১২, শনিবার, ০১:০৯:০৮ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় ইউরোপে ভারতীয় ৫২৭ পণ্যে ক্যান্সার সৃষ্টিকারি উপাদন শনাক্ত বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশে কড়াকড়ি বিএনপির আন্দোলন ঠেকানোই ক্ষমতাসীনদের প্রধান চ্যালেঞ্জ বিএনপিকে মাঠে ফেরাচ্ছে আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন নিয়ে অদৃশ্য চাপে বিএনপি


ব্যবসায়ী-ছাত্রদের সংঘর্ষ কীসের আলামত?
সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৮-০৪-২০২২
ব্যবসায়ী-ছাত্রদের সংঘর্ষ কীসের আলামত?


ঢাকা নিউমার্কেটে দুটি ফাস্টফুড রেস্টুরেন্টের ইফতারের টেবিল সাজানোর মতো তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ছাত্র ব্যাবসায়ীদের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার নিষ্ক্রিয়তা (অনেকের মতে পক্ষপাতমূলক আচরণ) নাহিদ নামের একজন নিরীহ খেটে খাওয়া মানুষের জীবন অবসানের বিষয়টি এখন বাংলাদেশের সবচেয়ে আলোড়নকারী ঘটনা। 

ঘটনাস্থল ঢাকার অন্যতম কেন্দ্রবিন্ধু নিউমার্কেট এলাকা। ঘটনার প্রতিক্রিয়া শহরজুড়ে। এমনিতেই নিত্যদিনের যানজট দুঃসহ সংকট, ঢাকা কলেজের আগাম ছুটি, নিউমার্কেট দোকানপাট ঈদের সময়ে বন্ধ থাকা। ছাত্র এবং ব্যবসায়ীদের মুখোমুখি অবস্থান। ঢাকা কলেজ সরিয়ে নেয়ার মতো ঔদ্ধত্যমূলক উচ্চারণ।

ঘটনাটি যে দীর্ঘদিনের জমাট বাঁধা পারস্পরিক রেষারেষির ধূমায়িত রোষানলে স্ফুলিঙ্গ- অনুমান করতে কষ্ট হয় না। দেখলাম, একপক্ষ হেলমেট পরে কিরিজ নিয়ে আস্ফালন। যেটি দেখা যায় গ্রামাঞ্চলে চর দখলের মহড়ায়। দেশজুড়ে যখন নানা কারণে সংকট, তখন এই ঘটনাটি কীসের আলামত? নিঃসন্দেহে তৃতীয় পক্ষের ইন্ধন আছে। কেউ ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের পাঁয়তারা করতেই পারে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নিরপেক্ষ তদন্ত করে দোষী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনতে হবে। 

ঢাকা কলেজ, ঢাকা নিউমার্কেট দুটোরই ঐতিহ্য দীর্ঘদিনের। একটি যেমন দেশের মেধাবী ছাত্রদের পরিশীলিত করে আগামী দিনের সুনাগরিক করে গড়ে তোলার সূতিকাগার।অন্যটি বিশাল এলাকার নানা গোত্রের ক্রেতা সাধারণের নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদিসহ বিলাস পণ্য ক্রয়-বিক্রয়ের স্থান। 

১৯৬০ দশকের মাঝামাঝি থেকে অনিয়মিত এবং ১৯৭২ থেকে ১৯৭৭ নিয়মিত আজিমপুর কলোনির এবং পলাশীর বুয়েট ক্যাম্পাসের বাসিন্দা থাকায় নিউমার্কেট বলাকা ভবন এলাকায় অনেক সময় কেটেছে নানা কারণে। ঢাকা কলেজের ছাত্র না হয়েও ১৯৭০ থেকেই ঢাকা কলেজ যাতায়াত করেছি নানা কারণে। বন্ধুদের সাথে ছাত্ররাজনীতির সঙ্গে কিছুটা সম্পৃক্ত থাকার কারণে। তাই কেন কি কারণে সংঘর্ষ হতে পারে, এর সাময়িক এবং দীর্ঘস্থায়ী প্রতিক্রিয়া বা পরিণতি কি হতে পারে বিশেষভাবে আঁচ করতে পারি। যতটুকু দেখেছি ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় যা পড়েছি প্রিন্ট মিডিয়ায় ঘটনাটি দেখে লজ্জা, ক্ষোভ, দুঃখ লাগছে। 

অঞ্চলটি একসময় মহানগরীর অন্যতম বনেদি এলাকা ছিল। শুধু ঢাকা কলেজ নয়, এখানেই আছে আরো কিছু স্বনামধন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি স্কুল, টিচার্স ট্রেনিং কলেজ, অদূরে ইডেন মহাবিদ্যালয়, অগ্রণী স্কুল,আজিমপুর গার্লস স্কুল,ওয়েস্ট অ্যান্ড স্কুল। এমনকি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মেডিকেল কলেজ খুব দূরে নয়। স্বাধীনতাপূর্ব সময়ে আজিমপুর সরকারি কলোনি ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তাদের আবাসস্থল ছিল। নিউমার্কেট ছিল ঢাকার প্রধান বিপডুবিতান। বলাকা ভবন ছিল মুভি হাউস, চাইনিজে রেস্টুরেন্ট, ছাত্রলীগ অফিস। নীলক্ষেত এলাকার কথা সবাই জানে।কিছুদিন থেকেই ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের কিছু মানুষের অসৌজন্যমূলক আচরণের কথা শুনছিলাম। বর্তমান ঘটনাটি এটির বিস্ফোরণ হয়েছে। 

মনে আছে, ১৭ ডিসেম্বর ১৯৭১ আজিমপুর,পলাশী, লালবাগের মুক্তিযোদ্ধা বন্ধুদের সঙ্গে নিউমার্কেট প্রবেশ করে মিত্রবাহিনীর কিছু সৈন্যের সোনার দোকান, ইলেকট্রনিক্স যখন লুটপাট করতে দেখেছিলাম।সঙ্গে আজিমপুর কলোনির কিছু সম্ভ্রান্ত পরিবারের সদস্যদের সম্পৃক্ত দেখে মুক্তিযোদ্ধা মুরাদ, বাবুল, শামীম, রব্বানীর মতো আমিও বিচলিত হয়েছিলাম। যাহোক নিজেদের বহুকষ্টে নিবৃত্ত করেছিলাম। আমরা নিউমার্কেট যেতাম মূলত বেবি আইসক্রিম আর মোগলাই পরাটা খেতে। 

ঢাকা কলেজের সঙ্গে সংযোগ ছিল ক্রিকেটার বন্ধু হেলাল, মন্টু, জাহাঙ্গীর, বাবলাদের কারণে। ১৯৭০ আন্তঃকলেজ ক্রিকেট খেলতে রাজেন্দ্র কলেজ দলের সঙ্গে ঢাকা এসেছিলাম। আমাদের দল ময়মনসিংহ আনন্দমোহন কলেজের সঙ্গে হেরে যায়। ফাইনাল ছিল ঢাকা কলেজ বনাম আনন্দমোহন কলেজের মধ্যে। মনে আছে বর্তমান হকি স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত সেই খেলায় দ্বাদশ খেলোয়াড় হিসেবে ঢাকা কলেজের হয়ে বন্ধু হেলালের অনুরোধে কিছু সময় ফিল্ডিং করেছিলাম। স্বাধীনতার পর অনুজ মুরাদ, বাবুল, শামীমদের পরীক্ষার আগেই ১৯৭৩ কোচিং করতাম। পরীক্ষার সময় উপস্থিত ছিলাম। ঢাকা কলেজের সিনিয়র রকিবুল ভাই, আলী জাহেদ ভাই, শেখ কামাল ভাইদের, হিমু ভাই সঙ্গে ছিল। ১৯৭৩ একটি ঘটনায় এলিফ্যান্ট রোডের আওরঙ্গ,আর মুরগি মিলনের সঙ্গে আমাদের আজিমপুর পলাশীর মুরাদ, বাবুল,বাবুলাদের বচসা থেকে সংঘর্ষ হয়েছিল। মুরাদের হাতে প্রচণ্ড মার খেয়েছিল আওরঙ্গ।

বর্তমান ঘটনাটি নিয়ে পুলিশ বাহিনীর প্রাথমিক নিষ্ক্রিয়তা এবং এক পর্যায়ে বাড়াবাড়ির তদন্ত হয় জরুরি। এখানে সংশ্লিষ্ট এলাকার জাতীয় পরিষদ সদস্য এফবিসিসিআই প্রাক্তন সভাপতির ভূমিকা কি ছিল, সেটিও যাচাই করা জরুরি। মনে রাখতে হবে, ঢাকা কলেজ মেধাবীদের চারণ ভূমি। এখন থেকে অনেক প্রকৌশীলী, চিকিৎসক, বিজ্ঞানী, সমাজকর্মী দেশ-বিদেশে সুনামের সঙ্গে কাজ করছে। ওদের ওপর টোকাই বাহিনী নিয়ে ব্যাবসায়ীরা সংঘর্ষ করবে আর চেয়ে চেয়ে দেখবে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা মেনে নেয়া যায় না। 

আমি মনে করি, ঢাকার বিদ্যমান অবস্থায় সংশ্লিষ্ট অঞ্চলে যানজটের জন্য নিউমার্কেট, চাঁদনীচক,বলাকা ভবনের অবস্থান দায়ী। এলাকাটিতে যেহেতু অনেক ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। তাই পর্যায়ক্রমে নিউমার্কেটসহ অন্যান্য বাণিজ্য বিতানগুলো সরিয়ে নিয়ে এলাকাটি শিক্ষাকেন্দ্র হিসেবেই আরো বিকশিত হতে পারে। বিষয়টির দ্রুত নিষ্পত্তি না হলে সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহে অস্থিরতা সম্প্রসারিত হতে পারে, যা সরকারের জন্য শুভ হবে না।


শেয়ার করুন