২৯ এপ্রিল ২০১২, সোমবার, ১০:৩২:১৯ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
সরকার ও বেসরকারি উদ্যোগে দরিদ্রমুক্ত দেশ গড়ে উঠবে - আসাদুজ্জামান খান কামাল ৭০ শতাংশ মৃত্যু অসংক্রামক রোগে, বাজেটে বরাদ্দ বৃদ্ধির দাবি ‘বিদেশে দেশবিরোধী অপপ্রচারকারীদের বিরুদ্ধে স্থানীয় আইনে ব্যবস্থা নিন’ ভূল স্বীকার করে সরে দাড়ানোয় একজনের বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহার বাফেলোতে সন্ত্রাসীদের গুলিতে দুই বাংলাদেশী নিহত ‘শেরে বাংলা আপাদমস্তক একজন পারফেক্ট বাঙালি ছিলেন’ বিএনপির বহিস্কৃতদের জন্য সুখবর! মে দিবসে নয়পল্টনে বিএনপির শ্রমিক সমাবেশ উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়ার জের, বিএনপির বহিস্কার ৭৬ থাইল্যান্ডের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আহ্বান


ভারত বাংলাদেশে গণতন্ত্র চায় না : বিএনপি
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৩-০১-২০২৪
ভারত বাংলাদেশে গণতন্ত্র চায় না : বিএনপি


টানা তিনবার ক্ষমতার বাইরে থাকার পর চতুর্থবারও সেই ক্ষমতার বাইরে বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ জনপ্রিয় দল বিএনপি। আসন্ন এ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগও তারা পায়নি। যদিও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে বিএনপিকে নির্বাচনে আসতে। কিন্তু সে পরিবেশ বিএনপি পায়নি। বেশ কিছুদিন ধরেই কিছু দাবিদাওয়া ছিল। সেগুলো শোনা তো দূরের কথা, বিএনপির সঙ্গে বৈঠকে বসারও বিন্দুমাত্র আগ্রহ দেখায়নি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।

এরপর গত ২৮ অক্টোবর মহাসমাবেশ প- হওয়ার পর থেকে যে ধরপাকড়, তাতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ একাধিক ফ্রন্টলাইনের নেতা রয়েছেন। রয়েছেন মির্জা আব্বাস, আমান উল্লাহ আমান, মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী প্রমুখ। যারা নীতি নির্ধারকসহ রাজপথের আন্দোলনটা সফলভাবে অনুষ্ঠানের জন্য ব্যাপক ভূমিকা রেখে আসতেন। এছাড়াও দলের চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া কারাগারে (যদিও বিশেষ ব্যাবস্থায় বাসাতে থাকার অনুমতিপ্রাপ্ত) ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বিদেশে। এ মুহূর্তে বিএনপিকে নির্বাচনের আসার আহ্বান কতটা স্বেচ্ছার বহিঃপ্রকাশ সেটা সহজেই অনুমেয়। এর বাইরেও ২৮ অক্টোবরের পর কেন্দ্রীয় ছাড়াও সারা দেশের বিভিন্ন জেলা উপজেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রায় ২০ হাজার নেতাকর্মীকে আটক করে কারাগারে নেওয়ার পর বিএনপি কার্যত নেতৃত্বশূন্য। এমতাবস্থায় কে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কাজগুলো করবে বিএনপির।

অথচ দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনটা একটা অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করার পাশাপাশি অংশগ্রহণমূলক করার প্রত্যাশা সে বছরখানেক আগ থেকে করে আসছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তাদের মিত্র ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, জাপান প্রভৃতি দেশ। এই এক স্থানে টুশব্দ করেনি ভারত। অথচ ভারত বাংলাদেশের সবচেয়ে কাছের বন্ধু। বাংলাদেশের জনগণের সবচেয়ে প্রিয় ও ভালোবাসারও বন্ধুপ্রতিম দেশ। 

বাংলাদেশে বিগত সময়ে গুম, খুন নিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি সংস্থার ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা প্রদান। ওই নিষেধাজ্ঞার এক বছরের মাথায় দেওয়া রিপোর্টে গুম খুনের ব্যাপক উন্নতিতে মার্কিনি সন্তুষ্টি প্রকাশ করে। কিন্তু এমন সব প্রক্রিয়ায় ইয়েস, নো-কিছুই বলেনি দেশটি। না পক্ষে, না বিপক্ষে। এমনকি গুম-খুনের যে দীর্ঘদিনের অভিযোগ বিএনপিসহ সমমনা দলসমূহের, সেগুলো নিয়ে পশ্চিমাদের ব্যাপক উদ্বেগ দেখা গেলেও ভারত এক্ষেত্রে ছিল নিশ্চুপ। এছাড়াও গত দুই নির্বাচন ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচন নিয়েও দেশ-বিদেশে বহু প্রশ্ন উঠেছে। এমনকি ২০১৮-এর নির্বাচনে দিনের ভোট রাতে অনুষ্ঠিত হওয়ার যে অভিযোগ, সেসব কারণেই দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য এবং অংশগ্রহলমূলক নির্বাচনের প্রত্যাশা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ মিত্রদের। ভারত এখানে যে বক্তব্য দিয়েছে সেটা হলো, বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে দেশের জনগণ, তাদের সংবিধান মোতাবেক হবে সব। 

এখানেই প্রশ্ন দাঁড়িয়ে গেছে, জনগণ। কোন সে জনগণ। ভোটের সে অধিকার প্রতিষ্ঠায় তো সব দলের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কথা। কিন্তু সেটা হচ্ছে কী। বিএনপি এখানেই ক্ষুব্ধ। 

গত ২৬ নভেম্বর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বেশ জোরেশোরেই ভারতের অবস্থানের কড়া সমালোচনা করেন। সেদিন প্রকাশ্যে তিনি বলেন, ‘ভারত সরকার ও তাদের দেশের রাজনীতিবিদদের বোঝা উচিত, বাংলাদেশের জনগণ কেন তাদের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছে। একটি কর্তৃত্ববাদী সরকারকে সমর্থন দিয়ে তারা (ভারত) বাংলাদেশের জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে।’ ঢাকার বনানী এলাকায় অবরোধের সমর্থনে মিছিল ও সমাবেশে বক্তব্যে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আরো বলেন, ‘তাদের (ভারত) উচিত বাংলাদেশের জনগণ যা চান, সেটিকে সমর্থন দেওয়া।’ 

ভারতের একটি গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনের কথা উল্লেখ করে বিএনপির এই নেতা মূলত সমালোচনা করেন বাংলাদেশ নিয়ে ভারতের অবস্থানের। বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে গুলিতে বাংলাদেশিদের মৃত্যুর ঘটনা, দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যে ভারসাম্য না থাকাসহ দ্বিপক্ষীয় বিভিন্ন বিষয়ে ভারতের ভূমিকার সমালোচনা করেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম-মহাসচিব। রুহুল কবির বলেন, ‘পৃথিবীর সবচেয়ে রক্তাক্ত সীমান্ত এখন বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত। প্রায় প্রতিদিন বিএসএফ সেখানে বাংলাদেশিদের গুলি করে হত্যা করছে।’ বাণিজ্যে ভারসাম্য না থাকার বিষয় উল্লেখ করে রুহুল কবির বলেন, তারা (ভারত) বাংলাদেশে একতরফা বাণিজ্য করলেও বাংলাদেশকে কোনো ব্যবসা করার সুযোগ দিচ্ছে না। বাংলাদেশ থেকে তারা নানা উপায়ে হাজারো কোটি টাকা রেমিট্যান্স নিয়ে যাচ্ছে। বিএনপির সিনিয়র মহাসচিব বলেন, বাংলাদেশের বর্তমান সরকার তাদের সবকিছু উজাড় করে দিলেও প্রাপ্তির খাতা শুধুই শূন্য। 

এর বাইরেও রিজভী বহুবার প্রকাশ্যে ভারতের নীতির সমালোচনা করেছেন। বলেছেন, ভারত তাদের নিজেদের স্বার্থে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে সমর্থন জানাচ্ছে। অথচ জনগণ চায় একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। যার মাধ্যমে মানুষ তাদের সঠিক নেতৃত্ব বেছে নিতে পারবে। বিএনপির এ নেতা অর্থাৎ সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী সম্প্রতি বিবিসি বাংলাকে বলছেন, ভারত যা করছে সেটি গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে তাদের কাছ থেকে বাংলাদেশের মানুষ আশা করেনি। 

‘আরো একটি ভোটারবিহীন নির্বাচনের জন্য সরকারকে তারা যে একতরফা সমর্থন দিচ্ছে সেটি তো দৃশ্যমান। ২০১৪ সালে তাদের পররাষ্ট্র সচিব এসেছিল ঢাকায়। এবার তা না হলেও স্থানীয়ভাবে এমন অনেক কিছু আমাদের চোখে পড়েছে, যাতে মনে হচ্ছে তারা এই অনির্বাচিত সরকারকে সমর্থন দিচ্ছে।’ 

একই সঙ্গে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খানও প্রকাশ্যে ভারত সরকারের নীতির সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশে গণতন্ত্রের পুনরুজ্জীবন স্পষ্টতই বাধাগ্রস্ত করছে ‘বন্ধু রাষ্ট্র ভারতের সরকার’। বিবিসি বাংলাকে তিনি বলেছেন, “তারা কি আজ পুনরায় বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ের অজুহাতে একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনে বাধা সৃষ্টি করে ২০১৪ সালের মতো আরেকটি ভুল করতে যাচ্ছে না?” 

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ তাদের মিত্ররা যেভাবে বাংলাদেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে ভূমিকা পালন করছে, সেটা প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের বিশ্বব্যাপী সব দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার যে নির্বচনী অঙ্গীকার তার বাস্তবায়নের অংশবিশেষ। ইতিমধ্যে দুইবার গণতান্ত্রিক সম্মেলন করেছেন বাইডেন। যাতে শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তানের মতো দেশ আমন্ত্রণ পেলেও বাংলাদেশ পায়নি। উত্তর কোরিয়ার মতো যেসব দেশ গণতন্ত্রবিমুখ সেসব দেশের কাতারে পড়ে গেছে বাংলাদেশ। এটা বাংলাদেশের গণতন্ত্রের জন্য অত্যন্ত লজ্জার। 

মার্কিনিরা যেসব রোডম্যাপ দিয়েছে গণতন্ত্র পুনুরুজ্জীবিত করার, তার প্রধানটি ছিল ২০২৪ সালের দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে তাদের প্রেসক্রিপশন। কিন্তু সেগুলো উড়িয়ে বরং ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ব্যাপক সমালোচনা করে যাচ্ছে মার্কিনিদের। বাইডেন প্রশাসনের। বিএনপি ও তাদের মিত্রদের চাওয়া-পাওয়া মূলত কাকতালীয়ভাবেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তাদের মিত্রদের প্রত্যাশার সঙ্গে মিলে গেছে।

ভারত বাংলাদেশের নীতিতে কী করবে না করবে, এটা নিতান্ত তাদের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। বাংলাদেশে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগে যদি কল্যাণ বা সুফল নিমজ্জিত থাকে, তাহলে সেটাই তারা করবে এটা তাদের নীতি। 

ফলে একটা সাপোর্ট করতে গিয়ে তার ওই সাপোর্ট অন্য কারো বিরুদ্ধে যেতেই পারে, এটা তারা তোয়াক্কা করবেই-বা কেন। কিন্তু দিন শেষে বাংলাদেশের গণতন্ত্রমনা মানুষ যে প্রত্যাশা করেছিল, তাহলো একটি সঠিক নির্বাচন, যা হবে অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক। একটি উন্নত গণতন্ত্র চর্চাকারী দেশ ভারত এমন নীতিতে সাপোর্ট করবে এটাই বাংলাদেশের মানুষের প্রত্যাশা। কারণ দিনশেষে বিএনপি আওয়ামী লীগ বলে কথা নয়, প্রতিবেশী হিসেবে বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষের প্রতিবেশী ভারতের জনগণ এটাই বাস্তব সত্য। আর এ প্রতিবেশী সারা জীবনের সুখ-দুঃখের সঙ্গী এটাও অবাস্তব নয়।

শেয়ার করুন