২৮ মার্চ ২০১২, বৃহস্পতিবার, ০২:২১:১০ অপরাহ্ন


আইএমএফের শর্ত মানতে সরকার গ্যাস-বিদ্যুত-সারের দাম বাড়াচ্ছে - মির্জা ফখরুল
নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট করা হয়েছে : ১২-০৪-২০২৩
আইএমএফের শর্ত মানতে সরকার গ্যাস-বিদ্যুত-সারের দাম বাড়াচ্ছে - মির্জা ফখরুল


আইএমএফের শর্ত মানতে সরকার গ্যাস-বিদ্যুত-সারের দাম বাড়াচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন মির্জা ফখলরুল ইসলাম আলমগীর। বুধবার দুপুরে এক অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব এ অভিযোগ করেন।  



তিনি বলেন, ‘‘ আজকে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য আইএমএফের শর্ত মেনে নিয়ে একদিকে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হচ্ছে, গ্যাসের দাম বাড়ানো হচ্ছে এবং সেই বাড়ানোর পরে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। এখন আবার কৃষকদের যে সার সেই সারের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি করা হচ্ছে এবং সেখানে বলা হয়েছে যে, কৃষকদের কষ্ট হবে কিন্তু উন্নয়নের স্বার্খে তাকে এটা মেনে নিতে হবে।”


মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ কোন উন্নয়ন, কার উন্নয়ন? এই উন্নয়ন হচ্ছে এই শাসকগোষ্ঠি তাদের নিজেদের উন্নয়ন। আজকে এই যে বৈষম্যটা সৃষ্টি করেছে বাংলাদেশে। একদিকে সেই বিশাল বিশাল অংকের মালিক – তারা বাড়ি-গাড়ি তাদের সমস্ত বিলাস-বৈভব নিয়ে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যাংক থেকে লোপাট করে তারা বিদেশে পাচার করছে এবং বাড়ি ঘর কিনছে থাকছে। অন্যদিকে আমাদের সাধারণ মানুষেরা তারা দুই বেলা দুই মুঠো খাওয়ার জন্যে তাদেরকে সংগ্রাম করতে হচ্ছে, লড়াই করতে হচ্ছে।তাও সে পুরোপুরি পাচ্ছে না।


কারণ জিনিসপত্রের দাম তাদের আয়ত্বের বাইরে চলে গেছে।”

গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে নিহত, গুম ও নির্যাতনের শিকার নেতা-কর্মীদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ঈদ উপহার বিতরণ উপলক্ষে এই অনুষ্ঠান হয়। অনুষ্ঠানে গুম হওয়া ছাত্র দলের নুরুল আলম নুরু, নুরুজ্জামান জনি, মাহমুদুর রহমান বাপ্পী, পারভেজ রেজা, তরিকুল ইসলাম তারা, মো. সোহেল, মফিজুল ইসলাম রাশেদ, জাকির হোসেন, জাকির হোসেন মিলন, স্বেচ্ছাসেবক দলের কাওসার, জাসাসের আমিরুল ইসলাম মিন্টুর পরিবারের সদস্যদের কাছে তারেকের ঈদ উপহার তুলে দেন বিএনপি মহাসচিব।


বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়, এবার সারাদেশে গুম-খুন-নির্যাতিত হওয়া এক হাজার পরিবারের কাছে তারেক রহমানের ঈদ উপহার পৌঁছানো  হবে যা আজ থেকে শুরু হলো।

‘ওরা দেশকে বদ্ধভূমি করেছে’


মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ সারাদেশে আমার মনে হয় যে, কমপক্ষে ৭‘শ উপরে আছেন যারা গুম হয়ে গেছেন, সহাস্রাধিক গণতান্ত্রিক কর্মী আছেন যারা খুন হয়ে গেছেন। এই একটা ভয়াবহ অবস্থা বিরাজ করছে গত ১৪/১৫ বছর ধরে। এখানে কিছুক্ষন আগে বলেছেন, ১০ বছর/১১ বছর তারা তাদের পিতাকে, ভাইকে দেখতে পারেনি। আমরা প্রতিবছর এভাবে চেষ্টা করি আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে তাদেরকে এই কথাটা মনে করিয়ে দেয়ার জন্য যে, আমরা তাদের ভুলি যায়নি, আমরা তাদের সঙ্গে আছি। যদিও এখানে উপহারের ব্যাপারটা একেবারেই গৌণ।”


তিনি বলেন, ‘‘ আওয়ামী লীগ যে সরকার তারা জনগন থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন এবং এই অত্যাচার-নির্যাতন-গুম-খুন করেই তাদেরকে ক্ষমতায় টিকে থাকতে হচ্ছে। আজকে সমগ্র দেশ বলতে কি একটা বদ্ধভূমিতে পরিণত হয়েছে। আপনি খবরের কাগজ খুললেই দেখবেন হত্যা-খুন-গুম চলছে। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ থেকে একেবারে নির্মূল করে দেয়ার জন্য, নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার জন্য এই গুম কথাটা আগে বাংলাদেশের মানুষ জানতো না। এটা ল্যাটিন আমেরিকায় আমরা শুনেছি যে, এনফোর্স ডিজএপিয়ারেন্স, তুলে নিয়ে গিয়ে নাই হয়ে যাওয়া-এটা বাংলাদেশে নতুন করে আওয়ামী লীগ ইন্ট্রিডিউজ করেছে।যদিও আমাদের মনে আছে, স্বাধীনতার পরে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ছিলো তখনও এরকম গুমের অনেক ঘটনা ঘটেছিল, প্রকাশ্যে ঘটেছে, এভাবে সাদা পোষাকে গোয়েন্দারা তুলে নিয়ে গেছে। আওয়ামী লীগের গঠনটাই এরকম। একদিকে সন্ত্রাস আরেকদিকে দুর্নীতি। এই দুটার মাধ্যমে তারা ক্ষমতায় টিকে থাকে।”


ফখরুল বলেন, ‘‘ আজকে বাংলাদেশের মানুষ তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছে এ্ভাবে গুম-খুন হয়ে, নির্যাতিত হয়ে আর মুখ থুবড়ে পড়ে থাকবে না। মানুষ জেগে উঠতে শুরু করেছে। আপনারা জানেন, আরো ১৭জন যুক্ত হয়েছে তারা প্রকাশ্যে আন্দোলন করতে গিয়ে রাজপথে প্রাণ দিয়েছে। এই রক্তস্রোত ও বাচ্চাদের কান্না এটা কখনো বৃথা যেতে পারে না।বিজয় আমাদের হবেই্, আমরা অবশ্যই নির্যাতকারীদের, ফ্যাসিবাদী সরকারকে সরিয়ে আমরা জনগনে সরকার প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হবো।”


তিনি বলেন, ‘‘ আমাদেরকে রুখে দাঁড়াতে হবে। গুম হওয়া পরিবারের এই ছোট্ট মেয়ের কান্না সেই কান্নাকে সঙ্গে নিয়ে সেটাকে ক্রোধে পরিণত করে আমাদেরকে অবশ্যই এই ভয়াবহ দানবকে সরিয়ে ফেলতে হবে। বাংলাদেশকে সত্যিকার অর্থে একটা মুক্ত স্বাধীন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র নির্মাণ করতে হবে। যেখানে এই ধরনের গুমের ঘটনা পুনরাবৃত্তি ঘটবে না, যেখানে মানুষ নিরাপত্তা নিয়ে স্বাধীনভাবে থাকতে পারবে। আসুন এই বেদনাবিদুর একটি এই অনুষ্ঠান থেকে আমরা শপথ নেই ভবিষ্যতে আমাদের কোনো মেয়েকে কাঁদতে না হয় যে, সে তার বাবাকে দেখতে পাচ্ছে না ১০ বছর ধরে, এই কথা যেন তার বলতে না হয় যে, আমার স্বামীকে পাইনি-এই ধরনের পরিস্থিতি থেকে আামাদের বেরিয়ে আসতে হবে। জনগনের কল্যাণমূলক একটা রাষ্ট্র আমাদের নির্মাণ করতে হবে যার নেতৃত্ব দিচ্ছেন আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।”


বিএনপি মহাসচিবের সভাপতিত্বে ও মিডিয়া সেলের সদস্য আতিকুর রহমান রুমনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান ও সেলিমা রহমান, গুম হওয়া ছাত্রদলের মাহমুদুর রহমান বাপ্পীর বোন ঝুমুর ও সোহেলের মেয়ে সাদিকা সরকার সাফা বক্তব্য রাখেন।

অনুষ্ঠানে দলের চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারি শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, ভারপ্রাপ্ত দফতর সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন স্বপন, সদস্য শাম্মী আখতার প্রমূখ মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।

এছাড়া বিএনপির তাইফুল ইসলাম টিপু, যুব দলের মামুন হাসান, কামরুজ্জামান দুলাল, স্বেচ্ছাসেবক দলের এসএম জিলানি, নাজমুল আহসান, চেয়ারপারসনের একান্ত সচিব এবিএম আবদুস সাত্তারও অনুষ্ঠানে ছিলেন। 


শেয়ার করুন