৩০ এপ্রিল ২০১২, মঙ্গলবার, ০৮:৩৮:৫১ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
‘বিশেষ চাহিদা সম্পন্নদের প্রতিভা বিকাশে কোন ধরনের প্রতিবন্ধকতা রাখা যাবে না’ সরকার ও বেসরকারি উদ্যোগে দরিদ্রমুক্ত দেশ গড়ে উঠবে - আসাদুজ্জামান খান কামাল ৭০ শতাংশ মৃত্যু অসংক্রামক রোগে, বাজেটে বরাদ্দ বৃদ্ধির দাবি ‘বিদেশে দেশবিরোধী অপপ্রচারকারীদের বিরুদ্ধে স্থানীয় আইনে ব্যবস্থা নিন’ ভূল স্বীকার করে সরে দাড়ানোয় একজনের বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহার বাফেলোতে সন্ত্রাসীদের গুলিতে দুই বাংলাদেশী নিহত ‘শেরে বাংলা আপাদমস্তক একজন পারফেক্ট বাঙালি ছিলেন’ বিএনপির বহিস্কৃতদের জন্য সুখবর! মে দিবসে নয়পল্টনে বিএনপির শ্রমিক সমাবেশ উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়ার জের, বিএনপির বহিস্কার ৭৬


কথার কথকতা
মাইন উদ্দিন আহমেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৮-০৭-২০২২
কথার কথকতা


এই কলামে কোনো অতি ভারী বিষয় নিয়ে না লেখার চেষ্টা করবো, এ-রকম একটা কথা বলেছিলাম., কিন্তু কথাটা রাখা যাবে কিনা সে বিষয়ে সন্দেহ দেখা দিচ্ছে। হাইড্রোজেন আর অক্সিজেনে মিলে পানিই হবে, এ নিয়ে কোনো বিতর্ক নেই, কিন্তু যদি দেখা যায়, পানি হচ্ছে কিন্তু তা ময়লাযুক্ত অথবা সুগন্ধিযুক্ত হচ্ছে, তাহলে তো আর কিছু না বলে থাকা যায় না! রাষ্ট্রীয় কোনো বিষয় নিয়ে লেখার ক্ষেত্রে আমি কখনো অগ্রণী নই কারণে এতে হিতে বিপরীত হয়- তা এই দেশ সেই দেশ যেটাই হোক। কিন্তু কি দেখছি এসব! ভেবেছিলাম, আমেরিকা বড় দেশ, নেতৃস্থানীয় দেশ, আইনের অনুশাসনওয়ালা দেশ, পরিশীলিত মানুষদের দেশ, এদের নিয়ে তেমন কিছু লেখা লাগবে না। এখন দেখছি, যা টাঙানো তা-ই লটকানো। যাকে ভাবি স্পেশাল, সেও দেখি বেহাল! তারপরও দেখি, চেষ্টা করে দেখি, কতটুকু না লিখে পারা যায়।

আপনারা জানেন, প্রেম-ভালোবাসা এমন এক বিষয় যা স্রষ্টা হিউম্যান কম্পিউটারের প্রোগ্রামিং চিপসের মধ্যে স্থায়ীভাবে অন্তর্ভুক্ত করে দিয়েছেন। নারী ও পুরুষ পরস্পরের প্রতি আকৃষ্ট না হয়ে পারে না। এই আকর্ষণ প্রক্রিয়ার চরম আবেগের পর্বে পুরুষ বিশেষ ভঙ্গিমায় চার থেকে আট লক্ষ উপহার অর্পণ করেন সংশ্লিষ্ট নারীকে। এই ভাগ্যবতী রমণী এক বা কদাচিত একাধিক উপহারের সদ্ব্যবহার করতে পারেন। তখন তিনি মাতৃত্ব লাভ করেন। মানববৃক্ষের শাখা-প্রশাখা বিস্তৃত হয়। কিন্তু এই প্রক্রিয়ার একটা নেতিবাচক দিক হচ্ছে অ্যাবরশন অর্থাৎ ইচ্ছাকৃতভাবে জরায়ুতে বাড়তে থাকা শিশুটিকে ডাক্তারি প্রক্রিয়ায় মেরে ফেলে দেয়া। যেই দম্পতি অনেক চেষ্টার পরও মাতা-পিতা হতে পারেন না। তিনি জানেন সন্তান কাকে বলে।

এভাবে জরায়ুর সন্তান নিধনের বিরুদ্ধে আমেরিকার সুপ্রিম কোর্ট যখন রায় দিলো তখন অনেকের মধ্যেই কি যেন কি হয়ে গেলো। এক উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কংগ্রেসওম্যান এই রায়ের বিরুদ্ধে ওয়াশিংটনে প্রতিবাদ সমাবেশ করলেন। এই প্রতিক্রিয়ায় দুটো বিষয় লক্ষণীয়, এক নম্বরে হচ্ছে ওনারা প্রাণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিলেন, দ্বিতীয়ত. স্বীয় দলীয় সরকারের বিচার বিভাগের রায়ের প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করলেন। সব মিলিয়ে এটা কি মানবতা এবং নিজের পায়ে কুড়াল মারার মতো হয়ে গেলো না! বাইডেন স্যার কি বলবেন? তিনিও দেখলাম, আদালতের রায়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন! বিস্ময়কর বটে!

আরেকটা বিষয় নিয়ে আজ না লিখলেই নয়। এটি নিউইয়র্ক তথা, যুক্তরাষ্ট্রের জন্য অবিলম্বে ভালোভাবে মনোযোগ দেয়ার মতো বিষয়। আমেরিকার বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার নিয়ে বিভিন্ন বিতর্ক, আইন প্রণয়ন, কথাবার্তা ইত্যাদির পর দেখা গেলো নিউইয়র্কে এক নির্দিষ্ট শ্রেণির মানুষ গুলি করে এশিয়ান অরিজিন আমেরিকানদের মারছে। পত্র-পত্রিকায় বেশ কতগুলো ঘটনার নিউজ দেখা গেলো। সেদিন নিউজ পড়লাম, ম্যানহাটনে আমাদের মেয়র সাহেবের এক সহকারীও আক্রান্ত হয়েছেন। আহত ও নিহত হবার বেশকিছু নিউজ গত দু-তিন মাসে আমাদের পড়তে হয়েছে। সাবওয়েতে পুলিশ টহল বাড়ানো হয়েছে। এতে সুফল দেখা যাচ্ছে। অন্যান্য ক্ষেত্রসমূহেও নজরদারি বাড়াতে হবে। এই ঘটনাগুলো সরকারি দফতরে নথিভুক্ত আছে। আমি এখন দু’জন আহত মানুষের কথা উল্লেখ করে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি উন্মিলনের চেষ্টা করবো।

যে দু’জন মানুষের কথা বলবো, উভয়ে নেহায়েতই ভদ্রলোক। একজনের নাম ফারুক হোসেন, পেশায় সাংবাদিক। ওনার কর্মস্থল লং আইল্যান্ড সিটিতে, বাস করেন জ্যামাইকার সাবওয়ে স্টেশন সাটপিনের কাছাকাছি। অল্প সময়ের ব্যবধানে দুবার আক্রান্ত হয়েছেন কৃষ্ণবর্ণীয় ভাই-বেরাদরদের দ্বারা। প্রথমবার সুকৌশলে অন্য মানুষদের ভেতর দৌড়ে গিয়ে ঢুকে যাবার কারণে তেমন কোনো ক্ষতি ছাড়াই রক্ষা পেয়েছেন, কিন্তু অতি সম্প্রতি তিনি আবার আক্রান্ত হয়েছেন দু’জন বিশেষ বর্ণীয় মানুষদের দ্বারা। ওদের একজন এলোপাথারি ঘুসি মেরে ফারুক সাহেবের নাক ফাটিয়ে ফেলে। সৌভাগ্য যে আশপাশের লোকজন উদ্ধারে এগিয়ে এসে পুলিশ কল করেছে এবং পুলিশ ওনাকে হাসপাতালে নিয়ে গেছে। ফারুক সাহেবের নাকে আটটা সেলাই দিতে হয়েছে। ওনার সাথে কথা বলে মনে হলো, প্যানিক ওনাকে আঁকড়ে ধরে আছে। এই ভীতি থেকে তিনি কবে মুক্তি পাবেন কে জানে!

আরেক ভদ্রলোকের কথা বলবো সংক্ষেপে। ওনার নাম আলাউদ্দিন, থাকেন নস্ট্র্যান্ড অ্যাভিনিউয়ের কাছাকাছি এলাকায়। ভাগ্যের অন্বেষণে বাংলাদেশ থেকে এখন আমেরিকায়। অল্প সময়ের মধ্যে দুবার আক্রান্ত হয়েছেন আমাদের কৃষ্ণবর্ণীয় ভাইদের দ্বারা। জীবিকা নির্বাহের জন্য ফুড সাপ্লাইয়ের কাজ ধরেছিলেন। কয়েকজন কৃষ্ণাঙ্গ যুবক মিলে ওনাকে ধরে লাঠি, ইট, হাত সবকিছু ব্যবহার করে এমনভাবে মেরেছে, যা ভাষা বা যুক্তি কোনোটা দিয়ে ব্যাখ্যা দেয়া যাবে না। তার ই-বাইক, ফোন ও ফুডপ্যাক সব কেড়ে নেয়। হেলমেটের বেল্ট গলায় পেঁচিয়ে ওরা আলাউদ্দিন সাহেবকে মারার চেষ্টা করে। একপর্যায়ে বাইক এবং ফোন ফেরত দিয়ে ফুড প্যাকেটগুলো নিয়ে ওরা চলে যায়।

কিছুদিন আগে আবার তিনি এক কৃষ্ণাঙ্গ দ্বারা আক্রান্ত হন। এবার আক্রমণকারী তাকে সারা শরীরে ঘুসি মারতে থাকে। কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েন আলাউদ্দিন। অনেকটা অর্ধচেতন অবস্থায়ই তিনি পুলিশ কল করেন। পুলিশ এসে তাকে হাসপাতালে নেয়, একসময় আক্রমণকারীকে ধরতেও সক্ষম হয়। হাসপাতাল থেকে বাসায় আসার পর সপ্তা দুয়েকের বেশি হয়ে গেলেও এখনো আলাউদ্দিন ঠিকমতো নড়াচড়া করতে বা কথা বলতে পারছেন না।

এর মধ্যে আবার গতকাল নিউজে পড়লাম, দক্ষিণ আফ্রিকায় এক দোকানে ঢুকে কৃষ্ণাঙ্গ যুবকরা ক্যাশ লুণ্ঠন করে দু’জন বাংলাদেশি সেলসম্যানকে গুলি করে ও কুপিয়ে হত্যা করেছে!

এখন আমি সংক্ষেপে একটু স্মৃতিচারণ করবো। কৃষ্ণাঙ্গদের স্বাধিকার আন্দোলনের ইতিহাস সবার জানা আছে। এশিয়ার মানুষেরা বিশেষ করে বাংলাদেশের মানুষেরা নেলসন ম্যান্ডেলাকে সীমাহীন সম্মানের সাথে সমর্থন জানিয়েছিলো। সেই সমর্থনের ইতিহাস অর্ধশতকেরও বেশি সময়ের কাহিনি। বাংলার মানুষ নেলসন ম্যান্ডেলাকে স্থানীয় নেতাদের চেয়েও বেশি ভালোবাসতো। তাছাড়া নিউইয়র্কের বর্তমান মেয়র সাহেবের নির্বাচনের সময়ও এশিয়ান মানুষেরা ওনাকে সার্বিক সমর্থন জানিয়েছিলো।

সাদা, কালো, বাদামি বিষয়গুলো মানব সভ্যতায় আবার যেন সমস্যা হয়ে না আসে, সেদিকে সবার খেয়াল রাখা উচিত। না হয় বিশ্বমানব সম্প্রদায়কে কি পরিমাণ খেসারত দিতে হবে তা আপনারা ভাবতেও পারবেন না!

নিউইয়র্কের মেয়র সাহেবের উচিত প্রশাসনিক দিক থেকে কার্যকর উদ্যোগের পাশাপাশি কমিউনিটি লিডারদের সহযোগিতা নিয়ে এগুলো ঠিক করার জন্য দ্রæত সক্রিয় হওয়া। আমার বিশ্বাস, বাংলাদেশের মানুষ নেলসন ম্যান্ডেলাকে কত ভালোবাসতো তা তিনি অবগত আছেন।

আর একটা বিষয় আমার মাথায় কখনো ধরে না যে, ইসরায়েলের সাথে মুসলিম বিশ্বের সুসম্পর্ক গড়ে উঠতে পারে না কেন! হিটলার তো মুসলমান ছিলেন না। প্রিয় পাঠক, কি বললেন- ও হ্যাঁ, ভারী বিষয় নিয়ে না লেখার কথা বলছেন? আপনারা সবাই সঠিক রাস্তায় চললে আমাকে তো লিখতেই হয় না! ঠিক আছে, আজ এখানেই ইতিরেখা টানছি।


শেয়ার করুন