০৩ মে ২০১২, শুক্রবার, ১০:১০:৫৫ অপরাহ্ন


স্মার্ট বাংলাদেশ তুলে ধরলেন শেখ হাসিনা
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৩-০৫-২০২৩
স্মার্ট বাংলাদেশ তুলে ধরলেন শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী পদ্মাসেতুর ছবির উপহার দিচ্ছেন বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্টকে


বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যস্ততম যুক্তরাষ্ট্র সফরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছেন। তিনি আইএমএফ, বিশ্বব্যাংক এবং নাগরিক সংবর্ধনায় যোগ দিয়েছেন। ২ মে সকালে প্রধানমন্ত্রী ইউএস-বাংলাদেশ কাউন্সিলের ঊর্ধ্বতন নির্বাহী কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক করেন। সেই সাথে ইউএস চেম্বারের প্রেসিডেন্ট সুজানে পি ক্লার্কের সাথে সৌজন্য সাক্ষাত করেন এবং ইউএস বিজনেস কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট নিশা বিসওয়ালের আমন্ত্রণে ব্যবসায়ীক প্রতিনিধি দলের সাথে গোলটেবিল বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন। এ ছাড়াও প্রধানমন্ত্রী বিশ্বব্যাংকের নতুন প্রেসিডেন্ট আজয় বাঙ্গার সাথেও বৈঠক করেন। এই সব বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী স্মার্ট বাংলাদেশ, বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি তুলে ধরেন। এ ছাড়া নিশা বিসওয়ালের সাথে বৈঠকটি ছিলো নানা কারণে গুরুত্বপূর্ণ। সেই বৈঠকে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। প্রধানমন্ত্রী ৪ মে সকালে যুক্তরাজ্যের উদ্দেশ্যে ওয়াশিংটন ত্যাগ করেন। অন্য একটি সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সর্বত্র স্মার্ট বাংলাদেশ তুলে ধরলেও অর্জনের ক্ষেত্র ছিলো শুণ্য। যে উদ্দেশ্যে তিনি এসেছেন তা সফল হয়নি বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা জানিয়েছেন।

মার্কিন ব্যবসায়ীদের কাছে বাংলাদেশে বড় বিনিয়োগ চান প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ২ মে মার্কিন ব্যবসায়ী সম্প্রদায়কে বাংলাদেশের নবায়নযোগ্য জ্বালানি, জাহাজ নির্মাণ, অটোমোবাইল এবং ফার্মাসিউটিক্যালে ব্যাপকভাবে বিনিয়োগ করার আহ্বান জানিয়েছেন এবং শুধুমাত্র মার্কিন বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি নিবেদিত ’বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল’ রাখার প্রস্তাব পুনর্ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেন, আমি আপনাদেরকে আমাদের নবায়নযোগ্যযোগ্য জ্বালানি, জাহাজ নির্মাণ, অটোমোবাইল, ফার্মাসিউটিক্যালস, হালকা ও ভারী যন্ত্রপাতি, রাসায়নিক সার, আইসিটি, সামুদ্রিক সম্পদ এবং চিকিৎসা সরঞ্জাম ইত্যাদিসহ  অনেক গতিশীল ও সম্ভাবনাময় খাতগুলোতে বিনিয়োগ করার জন্য আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। 

বাংলাদেশে সুযোগ অন্বেষণ ও বিনিয়োগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ী নেতাদের প্রতিও আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি “ইউএস-বাংলাদেশ ইকোনমিক পার্টনারশিপ: শেয়ার্ড ভিশন ফর স্মার্ট গ্রোথ” শীর্ষক উচ্চ পর্যায়ের এক্সিকিউটিভ বিজনেস গোলটেবিলের মূল বক্তব্য উপস্থাপনের সময় একথা বলেন।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে ইউএস বাংলাদেশ আইটি কানেক্ট পোর্টাল (us.itconnect.gov.bd) উদ্বোধন করেন। ইউএস-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিল এখানে ইউএস চেম্বার অব কমার্স ওয়াশিংটন, ডিসির গ্রেট হলে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন যে, যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিল আমাদের দুই বন্ধুপ্রতিম দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতা এগিয়ে নিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। তিনি বলেন, ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত, সমৃদ্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে আমাদের যাত্রায় অংশীদার হিসেবে আমাদের সাথে থাকার জন্য আমি আজকে এখানে আপনাদের আহ্বান জানাচ্ছি। তিনি বলেন, বাংলাদেশ বর্তমানে দেশের বিভিন্ন স্থানে ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (এসইজেড) এবং ২৯টি হাই-টেক পার্ক স্থাপন করছে। প্রধানমন্ত্রী এ অঞ্চলে বাংলাদেশের সবচেয়ে উদার বিনিয়োগ নীতির কথা আবারও স্মরণ করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশে আইন দ্বারা বিদেশী বিনিয়োগ সুরক্ষা, ট্যাক্স হলিডে, রয়্যালটি রেমিটেন্স, বাধাহীন প্রস্থান নীতি, লভ্যাংশ ও মূলধন সম্পূর্ণ প্রত্যাবর্তন সুবিধা রয়েছে।  তিনি আশ্বাস ব্যক্ত করে বলেন যে, আমরা আমাদের বিনিয়োগের পরিবেশ উন্নত করতে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছি। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ‘বাংলাদেশ বিনিয়োগ জলবায়ু উন্নয়ন কর্মসূচি’ বাস্তবায়ন করছে। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সবচেয়ে শক্তিশালী অংশীদার হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র বর্তমানে আমাদের একক বৃহত্তম রপ্তানি গন্তব্য, বিদেশী প্রত্যক্ষ বিনিয়োগের বৃহত্তম উৎস, দীর্ঘস্থায়ী উন্নয়ন অংশীদার এবং প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তির একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস। তিনি বলেন, তিনি আশাবাদী যে, যুক্তরাষ্ট্র এই চ্যালেঞ্জিং উদ্যোগে বাণিজ্য, বিনিয়োগ, প্রযুক্তি স্থানান্তর এবং পারস্পরিক সুবিধার জন্য একটি মসৃণ ও অনুমানযোগ্য সরবরাহ শৃঙ্খল তৈরির মাধ্যমে আমাদের দীর্ঘমেয়াদী উৎপাদনশীল অংশীদার হবে।

যুক্তরাষ্ট্রকে বাংলাদেশের একটি প্রধান অর্থনৈতিক ও উন্নয়ন সহযোগী উল্লেখ করে তিনি বলেন, উভয় দেশের বাণিজ্য ও বিনিয়োগসহ অনেক ক্ষেত্রে নিবিড় সম্পৃক্ততা রয়েছে। তিনি বলেন, আমাদের অভিন্ন লক্ষ্য হল আমাদের জনগণের জন্য পারস্পরিক সুবিধা ও সমৃদ্ধি অর্জন করা। আমাদের ক্রমবর্ধমান দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য এবং জনগণের সঙ্গে জনগণের মধ্যে সম্পর্কের তা প্রতিফলিত হচ্ছে। ২০২১-২০২২ সালে বাংলাদেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ১০.৪২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য রপ্তানি করেছে এবং ২.৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য আমদানি করেছে।

উপকূলীয় অঞ্চলে বাংলাদেশে একটি শিল্প কেন্দ্র গড়ে তোলার লক্ষ্যে জাপানের প্রস্তাবের উদাহরণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, তাই আমাদের লক্ষ্য এখন যুক্তরাষ্ট্রসহ আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক অংশীদারদের সঙ্গে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক উন্নীত করা। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকারের প্রচেষ্টায় গত ১৪ বছরে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য আর্থ-সামাজিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ এখন সর্বজনীনভাবে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের রোল মডেল হিসাবে স্বীকৃত। তিনি বলেন, সুশাসনের ধারাবাহিকতা, আইনের শাসন ও স্থিতিশীলতা, গ্রাামীণ অর্থনীতিতে বিনিয়োগ, নারীর ক্ষমতায়ন এবং আইসিটি খাতে অগ্রগতির কারণে এটা সম্ভব হয়েছে যা আমাদেরকে ’ডিজিটাল বাংলাদেশ’ অর্জনের পথে এগিয়ে নিয়ে গেছে। তিনি বলেন, এ কারণেই ইদানীং বাংলাদেশের ব্র্যান্ড ভ্যালু দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ব্র্যান্ড ফাইন্যান্স ইউকে জানিয়েছে, বাংলাদেশের ব্র্যান্ড ভ্যালু গত বছর ৩৭% বৃদ্ধি পেয়েছে যা বিশ্বে সর্বোচ্চ এবং গ্লোবাল সফট পাওয়ার ইনডেক্স ২০২৩ অনুযায়ী দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ভারতের পরেই বাংলাদেশের অবস্থান।

তিনি বলেন, আমাদের লক্ষ্য ২০৪১ সালের মধ্যে একটি স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলা। এই রূপকল্প ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি উচ্চ আয়ের উন্নত দেশে পরিণত করবে। তিনি আরও বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশ মানে অন্তর্ভুক্তিমূলক হওয়া এবং স্মার্ট নাগরিক, স্মার্ট অর্থনীতি, স্মার্ট সরকার এবং স্মার্ট সমাজের উপর এ ধারণা প্রতিষ্ঠিত।

প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, ইউএস-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিল পরিচালনা পর্ষদের পরিচালক এবং চেয়ারম্যান এক্সেলরেট এনার্জি স্টিভেন কোবোস, বোস্টন কনসাল্টিং গ্রুপের গ্লোবাল চেয়ার ইমেরিটাস (বিসিজি) হ্যান্স-পল বার্কনার, মাস্টারকার্ডের গ্লোবাল পাবলিক পলিসি অ্যান্ড ইন্দো-প্যাসিফিক পলিসি অপারেশনের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট রবি অরোরা, বিকাশের প্রষ্ঠিাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কামাল কাদির, শেভরন বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর এরিক ওয়াকার এবং গ্লোবাল হেড অব এক্সপ্রোরেশন অ্যান্ড নিউজ এক্সনমোবিলের ভেঞ্চার ড. জন আর্ডিল উচ্চ-স্তরের গোলটেবিলে বক্তৃতা করেন।

ইউএস-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট এবং ইউএস চেম্বার অব কমার্সের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট-সাউথ এশিয়া অ্যাম্বাসেডর অতুল কেশপ স্বাগত বক্তব্য রাখেন। এ ছাড়া পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন, পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান এবং প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান, বোয়িং ইন্ডিয়া ও দক্ষিণ এশিয়ার প্রেসিডেন্ট শাইল গুপ্ত, ইউএস সয়াবিন এক্সপোর্ট কাউন্সিলের দক্ষিণ এশিয়ার প্রধান কেভিন রোপেকে, প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। 

উপস্থিত ছিলেন উবার-এর পাবলিক পলিসি অ্যান্ড গভর্নমেন্ট অ্যাফেয়ার্স-এশিয়া প্যাসিফিক মাইক অরগিল, ইউএস চেম্বার অফ কমার্সের দক্ষিণ এশিয়ার ভাইস প্রেসিডেন্ট রায়ান মিলার, ইউএস চেম্বার অফ কমার্সের নির্বাহী পরিচালক সন্দীপ মাইনি এবং ইউএস-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিলের পরিচালক সিদ্ধান্ত মেহরা। প্রানমন্ত্রী এর আগে ইউএস চেম্বার অব কমার্সের ব্রিফিং সেন্টারে ইউএসবিবিসি’র সিনিয়র এক্সিকিউটিভদের সঙ্গে দুটি পৃথক বৈঠকে এবং ইউএস চেম্বার অ্যান্ড কমার্সের প্রেসিডেন্ট ও সিইওদের সঙ্গে আরেকটি বৈঠকে যোগ দেন। শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ একটি গর্বিত নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে ২০২১ সালে স্বাধীনতার ৫০তম বার্ষিকী উদযাপন করেছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ আজ দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে দ্রুত বিকাশমান অর্থনীতি এবং বিশ্বের ৩৫তম বৃহত্তম অর্থনীতি। অনুমান করা হচ্ছে এই অর্থনীতি ২০৩০ সালের মধ্যে ২৫তম বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত হবে। তিনি বলেন, ক্রয়ক্ষমতার দিক থেকে বাংলাদেশ ইতিমধ্যেই ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতি। এটি প্রকৃত মূল্যে কয়েক বছরের মধ্যে ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতি হতে চলেছে। তিনি বলেন, আমাদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন নীতিগুলো অনেক ক্ষেত্রেই বাংলাদেশকে আমাদের দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিবেশীদের থেকে এগিয়ে নিয়ে গেছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় বৃহত্তর প্রতিবেশীদের তুলনায় বেশি। তিনি আরো বলেন, ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম বাংলাদেশকে নারীর ক্ষমতায়নে শীর্ষ দক্ষিণ এশিয়ার শীর্ষ দেশ হিসেবে এবং বিশ্বব্যাপী নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে শীর্ষ দশটি দেশের মধ্যে স্থান দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ১৭ কোটি জনসংখ্যার বাজার এবং এর ভৌগোলিক অবস্থান ৩ বিলিয়ন জনসংখ্যার বাজারের কেন্দ্রে রয়েছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ এখন এই অঞ্চলে ও এর বাইরেও বাণিজ্য ও বিনিয়োগের জন্য একটি আদর্শ জায়গা হিসাবে আবির্ভূত হয়েছে। আমাদের ভৌত, আইনি এবং আর্থিক অবকাঠামো উন্নত করা হচ্ছে।  প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেছেন যে, অবকাঠামোতে বিনিয়োগের মাধ্যমে সামগ্রিক প্রবৃদ্ধি ধরে রাখার জন্য সরকারের প্রচেষ্টা সারা দেশে দৃশ্যমান। তিনি বলেন, বৃহৎ পদ্মা নদীর উপর গত বছর আমরা নিজস্ব অর্থায়নে আমাদের দীর্ঘতম সেতুর নির্মাণ সম্পন্ন করেছি, যা এখন আঞ্চলিক উন্নয়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ নজির। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার মেট্রোরেলও নির্মাণ করেছে, গভীর সমুদ্রবন্দরসহ বন্দরের অবকাঠামো উন্নত করেছে। এগুলো অভ্যন্তরীণ ও আঞ্চলিক সংযোগ বাড়িয়েছে। তিনি আরো বলেন, আমাদের জলবায়ু দায়িত্বশীল প্রবৃদ্ধি নীতি, শ্রম সংস্কার, এবং শ্রম নিরাপত্তা মান উন্নয়ন প্রশংসার দাবিদার। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ গর্বিত যে ইউএস গ্রীন বিল্ডিং কাউন্সিল (ইউএসজিবিসি) দ্বারা প্রত্যায়িত বিশ্বের শীর্ষ ১০০টি সবুজ পোশাক কারখানার মধ্যে ৫৩টি বাংলাদেশে। তিনি আরও বলেন যে, বাংলাদেশ ২০২৬ সালে ’স্বল্পোন্নত’ থেকে ’উন্নয়নশীল’ দেশে পরিণত হবে। তিনি বলেন, ’এর জন্য, আমাদের বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা বাড়াতে এবং রপ্তানি ভিত্তি প্রসারিত করতে আমাদের সমর্থন প্রয়োজন হবে।’

বিশ্বব্যাংক

গত ২ মে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে একটি ঋণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। আঞ্চলিক বাণিজ্য ও যোগাযোগ, দুর্যোগ প্রস্তুতি ও পরিবেশ ব্যবস্থাপনার পাঁচটি উন্নয়ন প্রকল্পে বাংলাদেশকে ২২৫ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ দেবে বিশ্বব্যাংক। এ সময়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ডেভিড মালপাস উপস্থিত ছিলেন। পাঁচটি প্রকল্প হলো: রেজিলিয়েন্ট ইনফ্রাস্ট্রাকচার বিল্ডিং প্রজেক্ট (আরআইভিইআর), বাংলাদেশ এনভায়রনমেন্ট সাসটেইনেবলিটি এন্ড ট্রান্সফরমেশান (বিইএসটি), অ্যাকসেলারেটিং ট্রান্সপোর্ট এন্ড ট্রেড কানেক্টিভিটি ইন ইস্টার্ন সাউথ এশিয়া (এসিসিইএসএস)-বাংলাদেশ ফেজ-১, ফার্স্ট বাংলাদেশ গ্রিন এন্ড ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্ট ডেভেলপমেন্ট (জিসিআরডি) এবং সাসটেইনেবল মাইক্রোএন্টারপ্রাইজ এন্ড রেজিলিয়েন্ট ট্রান্সফরমেশনান (এসএমএআরটি)। এসব প্রকল্পের মধ্যে অভিযোজন ও ঝুঁকি হ্রাসের জন্যে পাঁচশ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের ‘রেজিলিয়েন্ট ইনফ্রাস্ট্রাকচার বিল্ডিং প্রজেক্ট রয়েছে যা ‘ডেল্টা প্ল্যান ২১০০’ বাস্তবায়নে প্রথম বড় বিনিয়োগ প্রকল্প। এটি আভ্যন্তরীণ বন্যার বিরুদ্ধে দুর্যোগ প্রস্তুতির উন্নয়নে সহায়তা করবে।

দ্বিতীয় প্রকল্প ২৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয়ে বাংলাদেশ এনভায়রনমেন্টাল সাসটেইনেবল এন্ড ট্রান্সফরমেশান (বিইএসটি)। এটি বাংলাদেশে পরিবেশ ব্যবস্থাপনা শক্তিশালী করতে এবং সবুজ বিনিয়োগে বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণকে উৎসাহিত করতে সহায়তা করবে।

তৃতীয় প্রকল্পটি হলো ৭৫৩.৪৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয়ে অ্যাকসেলারেটিং ট্রান্সপোর্ট এন্ড ট্রেড কানেক্টিভিটি ইন ইস্টার্ন সাউথ এশিয়া (এসিসিইএসএস)-বাংলাদেশ ফেজ-১ যা ঢাকাকে আঞ্চলিক বাণিজ্য ও সংযোগ বাড়াতে সাহায্য করবে। চতুর্থ প্রকল্প ৫শ’ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের ফার্স্ট বাংলাদেশ গ্রিন এন্ড ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্ট ডেভেলপমেন্ট (জিসিআরডি) যা দেশকে সবুজ ও জলবায়ু সহনশীল উন্নয়নে সহায়তা করবে।  

আর পঞ্চম ও সর্বশেষ প্রকল্প ২৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের সাসটেইনেবল মাইক্রোএন্টারপ্রাইজ এন্ড রেজিলিয়েন্ট ট্রান্সফরমেশনান (এসএমএআরটি)। এটি ক্ষুদ্র শিল্প খাতকে আরও গতিশীল, কম দূষণকারী, দক্ষ এবং জলবায়ু সহনশীল প্রবৃদ্ধির খাতে রূপান্তরে সহায়তা করবে।

এদিকে প্রধানমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্রে ব্যস্ততম সময় কাটান। এ সময় তিনি বিভিন্ন প্রগ্রামে ও আলোচনায় অংশ নেন। এর আগে তিনি গত ২৮ এপ্রিল টোকিও থেকে সরাসরি যেয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছান। বিশেষ করে ১ মে বাংলাদেশ ও বিশ্বব্যাংকের মধ্যে অংশীদারিত্বের ৫০ বছর উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে যোগ দিতেই মূলত তার ওয়াশিংটন ডিসিতে পৌঁছানো। বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানিয়েছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মুহাম্মদ ইমরান এবং বিশ্ব ব্যাংকের বিকল্প নির্বাহী পরিচালক ড. আহমেদ কায়কাউস।

আইএমএফ এর সঙ্গে বৈঠক 

গত ২৯ এপ্রিল শনিবার বিকেলে দ্য রিজ-কার্লটন হোটেলের সভাকক্ষে আইএমএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিভার নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত করেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ কিছুটা স্বস্তির জন্য আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছ থেকে ঋণ নিয়েছে। এদিকে, বৈশ্বিক ঋণ দাতা সংস্থাটি ভবিষ্যতেও এই ধরনের সহযোগিতা অব্যাহত রাখার আশ্বাস দিয়েছে।

অনুষ্ঠান শেষে পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য উদ্ধৃত করে বলেন, ‘আমরা কিছুটা স্বস্তির জন্য আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছ থেকে ঋণ নিয়েছি।’ আইএমএফ সম্প্রতি বাংলাদেশের জন্যে ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ অনুমোদন করেছে।

এ সময় পররাষ্ট্র মন্ত্রী আরো বলেন, শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে বিভিন্ন খাতে বাংলাদেশের অভূতপূর্ব অগ্রগতির ব্যাপক প্রশংসা করেছেন আইএমএফের এমডি যা কোভিড-১৯ মহামারির পরে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করে তুলেছে। মোমেন আইএমএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে উদ্ধৃত করে বলেন, “বিশ্বে বাংলাদেশ একটি রোলমডেল (সামগ্রিক উন্নয়নের পরিপ্রেক্ষিতে) কারণ, দেশটি এমনকি করোনা মহামারির পরও অর্থনীতিকে স্থিতিশীল রাখতে পেরেছে।”  আইএমএফ প্রধান বলেন, সকল প্রতিবন্ধকতা মোকাবেলা করে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যেতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর মতো নেতৃত্ব প্রয়োজন। অবকাঠামোগত ব্যাপক উন্নয়ন ও দক্ষ যোগাযোগ এবং আইন শৃঙ্খলা বজায় রাখার মাধ্যমে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। এছাড়া, ক্রিস্টালিনা কোভিড-১৯ মহামারিকালে সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা বজায় রাখারও প্রশংসা করেছেন।

বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে বৈঠক 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ১লা মে বিশ্বব্যাংক প্রাঙ্গণে আয়োজিত আলোকচিত্র প্রদর্শনীকে কেন্দ্র করে বলেন, এ প্রদর্শনী বাংলাদেশের উন্নয়নের সাফল্য তুলে ধরেছে। এ সময় তিনি উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য বৈশ্বিক ঋণদাতার সাথে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছে।

তিনি বলেন, ‘আমি আশা করি ’স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার জন্য আমাদের উৎসাহব্যঞ্জক যাত্রায় বিশ্বব্যাংক আমাদের সাথে থাকবে। আসুন আমরা একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য যৌথ আস্থার চেতনায় একসাথে কাজ করি।’ তিনি বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ডেভিড ম্যালপাসের সাথে যৌথভাবে ৫০ বছরের বাংলাদেশ-বিশ্বব্যাংক অংশীদারিত্ব উপলক্ষ্যে আয়োজিত আলোকচিত্র প্রদর্শনী উদ্বোধন করেন। তারা প্রদর্শনীর কিছু অংশ ঘুরে দেখেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এটি বাংলাদেশকে একটি সহনশীল ও সমৃদ্ধ ভূমিতে পরিণত করার জন্য আমাদের সরকারের সংকল্পের প্রতিফলন। আমাদের অভিন্ন শত্রু হচ্ছে দারিদ্র্য ও ক্ষুধা এবং আমরা এগুলো কাটিয়ে না ওঠা পর্যন্ত বিশ্রাম নেব না। আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের দুস্থ মানুষের মধ্যে যে ধরনের হাসি দেখতে চেয়েছিলেন এ প্রদর্শনীতে তা প্রতিফলিত হচ্ছে।’   

শেখ হাসিনা মনে করেন- এ ফটো প্রদর্শনী একসঙ্গে কী অর্জিত হয়েছে এবং কি কাজ রয়ে গেছে তা স্মরণ করিয়ে দেবে। প্রদর্শনীটি সঠিক রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নেয়ার গুরুত্বও তুলে ধরেছে। ওয়াশিংটন ডিসিতে বিশ্বব্যাংকের সদর দফতরে পৌঁছালে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে বাংলাদেশে বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদৌলায়ে সেক এবং তার এসএআর ভিপি মার্টিন রাইসার ফুলের তোড়া দিয়ে স্বাগত জানান। এ সময় প্রধানমন্ত্রী একটি নাচের অনুষ্ঠানও প্রত্যক্ষ করেন।

বিশ্বব্যাংকের সদর দফতরে মতবিনিময় 

ওয়াশিংটন ডিসিতে ১ মে সোমবার সকালে বিশ্বব্যাংকের সদর দফতরের শিহাতা সম্মেলন কক্ষে নির্বাহী পরিচালক পর্ষদের সঙ্গে বাংলাদেশ ও বিশ্বব্যাংকের মধ্যে ৫০ বছরের অংশীদারিত্ব উপলক্ষ্যে অনানুষ্ঠানিক মতবিনিময়কালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ ঋণ পরিশোধে কখনও খেলাপি হয়নি এবং ’ঋণের ফাঁদে’ পড়েনি। তিনি বাংলাদেশকে ২০৪১ সালের মধ্যে একটি স্মার্ট বাংলাদেশে রূপান্তরিত করার লক্ষ্যে ডিজিটাল ও ভৌত অবকাঠামোতে বিশ্বব্যাংকসহ বৈশ্বিক উন্নয়ন সহযোগীদের বিনিয়োগ অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রী  বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতি আমাদের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির সুযোগ এবং খাপ খাইয়ে নেয়ার সক্ষমতার ইঙ্গিত দেয় এবং বাংলাদেশ কখনই তার ঋণ পরিশোধে খেলাপি হয়নি বা তথাকথিত ’ঋণের ফাঁদে’ পড়েনি। এখন আমাদের অংশীদারিত্বের ভবিষ্যতের দিকে তাকাতে চাই। বিশ্বব্যাংককে অবশ্যই দারিদ্র্য বিমোচন এবং উন্নয়ন অর্থায়নের মূল লক্ষ্যের বিষয়ে মনোযোগী থাকতে হবে। বিশ্বব্যাংক সক্রিয়ভাবে আমাদের ডিজিটাল রূপান্তরে সম্পৃক্ত রয়েছে। আমাদের সরকার ২০২১ সালের মধ্যে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়ে তোলার মাধ্যমে আমাদের জনগণের কাছে তার কথা রেখেছে। আমরা ২০৪১ সালের মধ্যে জ্ঞানভিত্তিক ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ হওয়ার জন্য আমাদের পরবর্তী লক্ষ্য নির্ধারণ করেছি।’ 

এ সময় প্রধানমন্ত্রী দু:খ প্রকাশ করে বলেন যে, বাইরের চাপের কারণে বিশ্বব্যাংক সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে (পদ্মা বহুমুখী সেতু) অর্থায়ন থেকে সরে গিয়েছিল। আমরা বাণিজ্য বহুমুখীকরণ, বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং অভ্যন্তরীণ সম্পদ উৎপাদনের জন্য আন্তর্জাতিক সহযোগিতা চাই।’ তিনি আরো বলেন, ‘মানব পুঁজি গঠনে আমাদের কর্মক্ষমতা অবকাঠামো মেগা-প্রকল্পে আমাদের বিনিয়োগের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। বাংলাদেশের নিজস্ব আর্থিক ও কারিগরি সংস্থান দিয়ে ৬.১ কিলোমিটার পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ আমাদের অর্থনৈতিক পরিপক্কতার লক্ষণ। বাংলাদেশ খাদ্য নিরাপত্তা, বিনামূল্যে ও সাশ্রয়ী মূল্যের আবাসন, কমিউনিটি স্বাস্থ্যসেবা, বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা, নারীর ক্ষমতায়ন, আর্থিক অন্তর্ভুক্তি, বিদ্যুৎ সুবিধা এবং দুর্যোগ প্রস্তুতিতে ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেছে জানিয়ে বলেন, ‘আমরা সার্বজনীন স্বাস্থ সেবা, মানসম্পন্ন শিক্ষা, শিশু কল্যাণ, দক্ষতা বৃদ্ধি, নগর উন্নয়ন, টেকসই শিল্পায়ন, পরিবেশ সুরক্ষা এবং কার্যকর প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার ক্ষেত্রে আমাদের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে চাই।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, উন্নয়নশীল দেশগুলোকে জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনের সুযোগ দেওয়ার জন্য বিশ্বব্যাংককে অর্থায়ন বাড়াতে হবে। বিশ্বব্যাংকের বোর্ড অব গভর্নরদের সঙ্গে এই বৈঠক অনুষ্ঠানের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা চলতি বছর ভূ-অর্থনীতিতে কিছু বড় পরিবর্তন প্রত্যক্ষ করছি। উত্তরণকালে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এগুলোর প্রভাব রয়েছে। আমি বিশ্বাস করি বিশ্বব্যাংকও ভবিষ্যতের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করছে। বিশ্বের বৃহত্তম উপসাগর বঙ্গোপসাগরের কাছে অবস্থিত বাংলাদেশ বিশ্বের বৃহত্তম ব-দ্বীপ। এটি ইন্দো-প্যাসিফিকের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত একটি অবস্থান।’ 

আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে প্রভাবশালী কিছু অর্থনীতির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা এখন ৪৬০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের জিডিপি সহ বিশ্বের ৩৫তম বৃহত্তম অর্থনীতি। দক্ষিণ এশিয়ায় আমরা দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি এবং একটি উদীয়মান প্রবৃদ্ধির চালিকাশক্তি। তিনটি মানদন্ডেই যোগ্যতা অর্জন করে আমরা জাতিসংঘের স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) মর্যাদা থেকে উত্তরণ লাভ করেছি। ২০২২ সালে, আমাদের দারিদ্র্য হার ১৮.৭%-এ নেমে এসেছে, চরম দারিদ্র্যের দ্রুত হ্রাস পেয়ে ৫.৬%-এ নেমে এসেছে। কোভিড-১৯ মহামারী, ইউরোপে যুদ্ধ এবং জলবায়ু সংকটের কারণে সৃষ্ট বহু-মাত্রিক চ্যালেঞ্জ থাকা সত্ত্বেও এই সব সাফল্য এসেছে।’ তিনি বলেন, বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সম্পদ হল সহিষ্ণুতা। আমরা গণহত্যার পর আমাদের স্বাধীনতা অর্জন করেছি এবং ১৯৭১ সালে ধ্বংসের মুখে থাকা একটি অর্থনীতি নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিলাম। ‘গুলি ধর্ম, জাতি বা লিঙ্গের ভিত্তিতে বৈষম্য ছাড়াই সমান আচরণ নিশ্চিত করে। সুশাসনের জন্য জনপ্রতিনিধিরা বিভিন্ন স্তরে দায়বদ্ধ। ’ 

রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে বিশ্বব্যাংকের সহায়তা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাংলাদেশে মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত ১২ লাখ রোহিঙ্গার জন্য বিশ্বব্যাংক অনুদান সহায়তা বাড়িয়েছে। তাদের দীর্ঘায়িত উপস্থিতি আমাদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন যে, বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অংশীদাররা আমাদের অগ্রযাত্রার ইতিবাচক দিকগুলির বিষয়ে দৃষ্টি নিবদ্ধ করবে এবং ভবিষ্যতে একটি প্রতিশ্রুতিশীল উন্নয়ন যাত্রায় আমাদের সাথে যোগ দেবে। 

বিশ্বব্যাংকের সহযোগিতা বৃদ্ধির আহ্বান

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১ মে সোমবার এক অনুষ্ঠানে উন্নয়নশীল দেশ হয়ে ওঠার পথে বাংলাদেশের মসৃণ উত্তরণ, পরবর্তীতে উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে উত্তরণ লাভ এবং এর ডেল্টা প্ল্যান-২১০০ বাস্তবায়নের জন্য বিশ্বব্যাংকের সহযোগিতা বৃদ্ধি করার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘বাংলাদেশ ২০২৬ সালে জাতিসংঘের এলডিসি মর্যাদা থেকে মসৃণ ও টেকসই উত্তরণ লাভের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। আমি বিশ্বব্যাংককে আমাদের মানব পুঁজি ও প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা উন্নয়ন কর্মসূচিগুলিকে একটি মসৃণ উত্তরণের জন্য সহায়তা দেয়ার জন্য অনুরোধ করছি। সে লক্ষ্যে গুরুত্বপূর্ণ আইডিএ উইন্ডোটি সংরক্ষণ ও অব্যাহত রাখা প্রয়োজন।’ 

ওয়াশিংটনে বিশ্বব্যাংক সদর দপ্তরের প্রিস্টন অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত ‘বিশ্বব্যাংক-বাংলাদেশ অংশীদারিত্বের ৫০ বছরের প্রতিফলন’ শীর্ষক পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে ভাষণ দেওয়ার সময় প্রধানমন্ত্রী বিশ্বব্যাংকের সামনে পাঁচটি সুনির্দিষ্ট পরামর্শ রেখেছেন যা বিশ্বব্যাংক ঋণদাতাদের বিবেচনায় নেয়া উচিত। অনুষ্ঠানে পাঁচটি প্রকল্প বাস্তবায়নে বাংলাদেশ ও বিশ্বব্যাংকের মধ্যে ২ দশমিক ৫ বিলিয়ন (আড়াই বিলিয়ন) ডলারের একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এ সময় প্রধানমন্ত্রী বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্টের কাছে পদ্মা বহুমুখী সেতুর একটি ছবি তুলে দেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০৪১ সালের মধ্যে উচ্চ আয়ের অর্থনীতিতে পরিণত হওয়ার লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য বাংলাদেশ অবকাঠামো ও লজিস্টিকসে বিনিয়োগ অব্যাহত রাখবে। আমি আশা করব বিশ্বব্যাংক আগামী বছরগুলোতে আমাদের ভৌত ও সামাজিক উভয় খাতে মেগা-প্রকল্পগুলোতে সম্পৃক্ত হবে। এসডিজি বাস্তবায়নের জন্য বিশ্বব্যাংক ও অন্যান্য উন্নয়ন সহযোগীদের বর্ধিত, ছাড় দেয়া এবং উদ্ভাবনী অর্থায়নের জরুরি প্রত্যাশা রয়েছে।’ তিনি উল্লেখ করেছেন যে, মহামারী, সশস্ত্র সংঘাত এবং জলবায়ু জরুরি অবস্থার কারণে চলমান বৈশ্বিক একাধিক সংকট বেশিরভাগ উন্নয়নশীল অর্থনীতিগুলোকে  গুরুতর চাপের মধ্যে ফেলেছে। মহামারি ও সশস্ত্র সংঘাত থেকে উদ্ভূত একাধিক সংকট সত্ত্বেও, কিছু উন্নয়ন অংশীদার তাদের ঋণের খরচ এবং সুদের হার বাড়িয়েছে।  

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি বিশ্বব্যাংক ও অন্যান্য উন্নয়ন অংশীদারদেরকে কার্যকর বিকল্প খুঁজে বের করার আহ্বান জানাচ্ছি যাতে আমাদের অর্থনীতিগুলো উদ্ভুত চ্যালেঞ্জগুলি আরও ভালভাবে মোকাবেলা করতে পারে। আমরা জলবায়ু প্রশমন ও অভিযোজনের মধ্যে অর্থায়নের সমান বণ্টনের ওপর জোর দেব।’ শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও প্রস্তুতিতে বিশ্বব্যাপী রোল-মডেল হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে এবং আগাম সতর্কতা ব্যবস্থা, দুর্যোগ-সহিষ্ণু অবকাঠামো এবং সম্প্রদায় ভিত্তিক পদক্ষেপের ক্ষেত্রে প্রচুর বিনিয়োগ করেছে।

রোহিঙ্গা ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মিয়ানমারে তাদের নিরাপদ, মর্যাদাপূর্ণ ও স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে তারা জাতিসংঘ ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে, কিন্তু আজ পর্যন্ত একজন রোহিঙ্গাও ফিরে যায়নি। ‘বিস্তৃত অঞ্চলের জন্য ক্রমবর্ধমান নিরাপত্তার প্রভাবের পাশাপাশি পরিস্থিতি আমাদের জন্য ক্রমেই কঠিন হয়ে উঠছে। আমি বিশ্বব্যাংককে আমাদের মানবিক প্রচেষ্টায় যোগদানের জন্য এবং রোহিঙ্গা ও তাদের সম্প্রদায়ের জন্য ৫৯০ মিলিয়ন ডলার অনুদানের জন্য ধন্যবাদ জানাই যোগ করেন প্রধানমন্ত্রী। শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ গত চার দশকে মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছে এবং ২০১৭ সালের আগস্ট মাসে ব্যাপক নৃশংসতার পর থেকে তাদের সংখ্যা ১.২ মিলিয়নে পৌঁছেছে। শেখ হাসিনা বলেন, পদ্মা সেতু নির্মাণ নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মিথ্যা অভিযোগ আনা হয়েছিলো। নিজের ভাগ্য গড়তে নয়, দুঃস্থ মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য তিনি ক্ষমতা গ্রহণ করেছেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বাবা-মা এবং তিন ভাইসহ সবকিছু হারিয়ে দেশবাসীকে পাশে পেয়ে তিনি দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানান। প্রধানমন্ত্রী বলেন যে, তাঁকে তাঁর জীবনের অনেক ঝুঁকির মুখোমুখি হতে হয়েছে, তবে তিনি কখনই মাথা নত করেননি। ‘আমি কখনো মাথা নিচু করে দেশবাসীকে অসম্মান করতে চাই না।’ প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীকে স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, বাঙালি একটি বিজয়ী জাতি, আমরা বিজয়ী জাতি হিসেবে মাথা উঁচু করে এগিয়ে যেতে চাই। তিনি বলেন, বাংলাদেশের অব্যাহত ও অভূতপূর্ব উন্নয়ন সাধিত হয়েছে, কারণ তার আশেপাশে থাকা লোকদের কঠোর পরিশ্রম, আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করার কারণে এবং সে সাথে রয়েছে দেশের জনগণের অটুট সমর্থন।

প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব আহমেদ ওয়াজেদ, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন, পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান এবং প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমানসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।

বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ডেভিড ম্যালপাস এবং এর প্রাক্তন প্রধান অর্থনীতিবিদ কৌসিক বসু অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন এবং বৈশ্বিক ঋণদাতা ভিপি মার্টিন সমাপনী বক্তব্য রাখেন।

শেখ হাসিনা বলেন, তিনি বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে বাংলাদেশের অংশীদারিত্বের ৫০ বছর উপলক্ষ্যে সবার সাথে যোগ দিতে পেরে আনন্দিত। ‘আমি প্রেসিডেন্ট মালপাসকে তার আমন্ত্রণ ও আতিথেয়তার জন্য ধন্যবাদ জানাই। বিশ্বব্যাংকে অনেক বাংলাদেশীকে নিয়োজিত দেখে আমি আনন্দিত।’ তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ নির্বিঘ্নে এগিয়ে যেতে থাকবে।

তথ্যসূত্র: বাসস

শেয়ার করুন