৩০ এপ্রিল ২০১২, মঙ্গলবার, ০১:৫৮:০৪ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
‘বিশেষ চাহিদা সম্পন্নদের প্রতিভা বিকাশে কোন ধরনের প্রতিবন্ধকতা রাখা যাবে না’ সরকার ও বেসরকারি উদ্যোগে দরিদ্রমুক্ত দেশ গড়ে উঠবে - আসাদুজ্জামান খান কামাল ৭০ শতাংশ মৃত্যু অসংক্রামক রোগে, বাজেটে বরাদ্দ বৃদ্ধির দাবি ‘বিদেশে দেশবিরোধী অপপ্রচারকারীদের বিরুদ্ধে স্থানীয় আইনে ব্যবস্থা নিন’ ভূল স্বীকার করে সরে দাড়ানোয় একজনের বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহার বাফেলোতে সন্ত্রাসীদের গুলিতে দুই বাংলাদেশী নিহত ‘শেরে বাংলা আপাদমস্তক একজন পারফেক্ট বাঙালি ছিলেন’ বিএনপির বহিস্কৃতদের জন্য সুখবর! মে দিবসে নয়পল্টনে বিএনপির শ্রমিক সমাবেশ উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়ার জের, বিএনপির বহিস্কার ৭৬


কোন ভিতে দাঁড়িয়ে বিএনপি অনড়
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ২০-১২-২০২৩
কোন ভিতে দাঁড়িয়ে বিএনপি অনড়


কৃষিমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাকের বক্তব্য নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে চলছে নানান ধরনের চুলচেরা বিশ্লেষণ। সরকারের পাশাপাশি দলের অত্যন্ত আস্থাভাজন প্রভাবশালীর এমন বক্তব্যকে স্বাভাবিকভাবে নিচ্ছে না। রাজনৈতিক সঙ্কটকালীন সময়ে তার বক্তব্য রহস্যজনকও বলছেন বিশ্লেষকরা। এমন খোলামেলা বক্তব্য নিয়ে রাজনৈতিক মাঠ কোন পক্ষে সেটিও বিবেচনায় চলে এসেছে। প্রশ্ন দেখা দিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে এত্তোসব লোভনীয় প্রস্তাব পেয়েও কেনো বিএনপি এতোটা অনড় অবস্থানে রয়েছে? 

কি বললেন কৃষিমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাক

চ্যানেল টোয়েন্টিফোরকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, নির্বাচনে আনার জন্য বিএনপির নেতাদের কারাগার থেকে মুক্তির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। তবে বিএনপি সেই প্রস্তাব গ্রহণ করেনি। সাক্ষাৎকারটির ওপর ভিত্তি করে একটি প্রতিবেদন গত ১৭ ডিসেম্বর রোববার চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশ করা হয়। ওই প্রতিবেদনে দেখানো হয় আব্দুর রাজ্জাক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘২০ হাজার (বিএনপি নেতা-কর্মী) গ্রেপ্তার না করলে আজকে এই যে গাড়ি চলতেছে হরতালে, আপনি কি রাস্তায় গাড়ি দেখতেন? এ ছাড়া আমাদের জন্য কোনো গত্যান্তর ছিল না, কোনো অলটারনেটিভ (বিকল্প) ছিল না। তাদের গ্রেফতার না করলে তারা দেশ অচল করে দিতো। যেটা করেছি, আমরা চিন্তাভাবনা করে করেছি। তিনি বলেন, ‘বারবার বলা হয়েছে নির্বাচন কমিশন থেকে, তারা যদি নির্বাচনে আসে, নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়া হবে। এবং পিছিয়ে দেওয়া নয়, বলা হয়েছিল তাদের জেল থেকে ছেড়ে দেওয়া হবে।

বক্তব্য নিয়ে বিএনপি’র বক্তব্য

বিএনপি মামলা-গ্রেফতারের বিষয়টি যে পরিকল্পিত তা আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাকের বক্তব্যের মাধ্যমেই প্রমাণিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। সোমবার (১৮ ডিসেম্বর) ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে রিজভী আরো যা বলেন তার চুম্বক অংশ হচ্ছে এমন। রিজভী বলেন, বিএনপি নেতাকর্মীদের সম্পূর্ণ মিথ্যা সাজানো মামলায় জেলে পুরে এবং সারাদেশে বাড়ি-ঘর ছাড়া করে তাড়িয়ে বেড়ানোর গোমর ফাঁস করেছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক। সবকিছু পূর্বপরিকল্পিত দাবি করে তিনি বলেন, ড. আব্দুর রাজ্জাক সাহেব আরো বলেছেন যে বিএনপিকে প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল তারা নির্বাচনে আসলে নির্বাচন পিছিয়ে দেয়া হবে। শুধু পিছিয়ে দেয়া নয়, বলা হয়েছে, সবাইকে জেল থেকে ছেড়ে দেয়া হবে। এমনকি একরাতে সব নেতাকে জেল থেকে মুক্তির প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল। কিন্তু বিএনপি রাজি হয়নি। রিজভী এব্যাপারে মন্তব্য করেন, ‘এতক্ষণে-অরিন্দম কহিলা বিষাদের মতো কৃষিমন্ত্রীর এই হরষের স্বীকারোক্তি প্রমাণ করে গত ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশে হামলা করে পুলিশি তাণ্ডব-হত্যাকাণ্ড থেকে শুরু করে চলমান যত সহিংসতা, মিথ্যা মামলা, গ্রেফতার, হুলিয়া, হত্যা, বিএনপিসহ বিরোধী দলের বাড়ি-ঘরে হামলা-তল্লাশি, ভাঙচুর-গৃহছাড়া-আটক বাণিজ্য সবকিছু পূর্ব পরিকল্পিত।’

প্রতিক্রিয়া সরকারি মহলে

নির্বাচনে আনার জন্য বিএনপি নেতাদের কারাগার থেকে মুক্তির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল-কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাকের এমন বক্তব্য তার নিজস্ব বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। সোমবার বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে দেখা যায় ওবায়দুল কাদের বলেছেন, তিনি (কৃষিমন্ত্রী) যে বক্তব্য দিয়েছেন, সেটা তার ব্যক্তিগত। আওয়ামী লীগ কোনো দেউলিয়া দল নয় যে দলীয় নিয়মনীতি ভঙ্গ করে এ ধরনের উদ্ভট প্রস্তাব বিএনপিকে দেবে। এ ধরনের কোনো প্রস্তাব আমাদের সরকারও দেয়নি, আমাদের দলও দেয়নি। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক গ্রেফতার প্রসঙ্গে বলেন, ‘বিএনপির ২০ হাজার নেতাকর্মী জেলে আছে; আমরা তা স্বীকার করি না। প্রশ্ন তাহলে কৃষিমন্ত্রী কেনো তা স্বীকার করলেন?

আইনমন্ত্রী যা বললেন

বিএনপি নেতাদের জেলমুক্তি ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাকের বক্তব্যে বিষয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক যে মন্তব্য করেছেন এটা তার ব্যক্তিগত অভিমত। তিনি বলেন, এবিষয়ে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও বলেছেন এটা দলের কোন অভিমত নয়, বিএনপি নেতা যাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাদেরকে নির্দিষ্ট মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বিচার এবং তাদের জামিনের ব্যাপারে শুধু আদালতই কথা বলতে পারবে, আর কেউ নয়। 

বক্তব্য কোন পক্ষে গেলো? 

রাজনৈতিক অঙ্গনে পর্যবেক্ষকমহল মনে করেন দেশের এমন সময়ে কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাকের মত আস্থাভাজন প্রভাবশালীর এমন বক্তব্যকে স্বাভাবিকভাবে নিচ্ছে না খোদ তার দলের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। তারা মনে করেন, মন্ত্রীর এমন বক্তব্য পর্দার আড়ালে ঘটে যাওয়া অনেক ঘটনার ইঙ্গিত দিচ্ছে। প্রকাশ্যে বিএনপি’কে পাত্তা না দেয়া কথা বললেও গোপনে দলটির রাজনৈতিক কর্মসূচি ও বিপুল জনসমর্থনকে যে ক্ষমতাসীনরা বেশ আমলে নিয়েছেন তা স্পষ্ট। দেখা যাচ্ছে এমনভাবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিএনপি’কে নিয়েই করতে নানান ধরনের আপোষ প্রস্তাব দেয়া হয়েছে সরকারের পক্ষে। কেউ কেউ বলছেন এখনো দেয়া হচ্ছে এমন আপোষ-রফার নানান ধরনের প্রক্রিয়া। খোদ আওয়ামী লীগে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে এমন ধরপাকড় গ্রেফতার করে বিএনপি’র নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করে তাদের মুক্তি বিনিময়ে আপোষ রফা করতে চায়? তাহলে ২৮ অক্টোবরের ঘটনা কি পূর্বপরিকল্পিত? কারা ছিল এর পেছেনে? এমন নানান প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে রাজনৈতিক মহলে। তাহলে কি জাতিসংঘের দেয়া বক্তব্য ঠিক? গত ২৮শে অক্টোবরের সহিংসতা নিয়ে জাতিসংঘের উদ্বেগ নিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে বলা হয়, ‘জাতিসংঘের সন্দেহে ক্ষমতাসীনরাও’। এতে বলা হচ্ছে, শনিবার ঢাকায় রাজনৈতিক সহিংসতা, প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা ও সাংবাদিক লাঞ্ছিতের ঘটনায় রাজপথের বিরোধী দল এবং ক্ষমতাসীনদের সম্পৃক্ততা ইঙ্গিত করেছে জাতিসংঘ। জেনেভা থেকে পাঠানো জাতিসংঘ মানবাধিকার হাইকমিশনের এক বিবৃতিতে সংস্থাটির মুখপাত্র লিজ থ্রোসেল এ ইঙ্গিত করেন।

প্রশ্নবিদ্ধ হলো বিচার বিভাগ

এদিকে কৃষিমন্ত্রীর এমন বক্তব্য নিয়ে বিচার বিভাগ নিয়েও প্রশ্ন তোলা হলো বলেই মনে করেন অনেকে। বিএনপি নেতা রিজভী তো বলেই ফেলেছেন যে, বিচার বিভাগ আইনের গতিতে নয়, চলছে গণভবনের গতিতে। মানুষের শেষ আশ্রয়স্থল বিচার বিভাগকে কার্যত: আওয়ামী লীগের একটি ইউনিটে পরিণত করা হয়েছে। পরীক্ষিত আওয়ামী লীগের নেতাদেরকে, খুন-সন্ত্রাসের আসামীদেরকে বেছে বেছে সেখানে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এ কারণে গত ১৫ বছর ধরে বিচারের বাণী নিভৃতে কাঁদছে। স্বাধীন বিচার বিভাগ ও আইনের শাসনের আওয়ামী নমুনা কৃষিমন্ত্রীর কথায় স্পষ্ট হয়েছে। ২০ হাজার নির্দোষ নেতাকর্মীকে নির্বিগ্নে নির্বাচন করতে পুরোপুরি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে। সারাদেশের নির্দোষ নেতাকর্মীদেরকে কারাগারে গাদাগাদি করে রাখা হচ্ছে। জামিনের অধিকারও খর্ব করা হয়েছে। এপ্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন বিএনপি নেতা যাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাদেরকে নির্দিষ্ট মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বিচার এবং তাদের জামিনের ব্যাপারে শুধু আদালতই কথা বলতে পারবে, আর কেউ নয়।

প্রশ্ন কিসের ভিত্তিতে বিএনপি অনড়?

কৃষিমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাকের বক্তব্য নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে নানান ধরনের বাক-বিতণ্ডার মধ্যে একটি প্রশ্ন বড়ো হয়ে দেখা দিয়েছে। সরকারি দলের এমন নানান ধরনের লোভ লালসার প্রস্তাবে কেনো বিএনপি’র একটু টললো না? কেনো দলটি চুল পরিমাণ ছাড় দিচ্ছে না? শোনা যায়, এবারে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিলে বিএনপি’কে বড়ো ধরনের আসন দিয়ে বিরোধী দলের প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল। প্রস্তাব দেয়া হয় বিএনপি যে সব আসন চাইবে সেসব আসনের প্রাথীদেরই বিজয়ী করে আনা হবে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে বিএনপি কেনো রাজি হলো না। তা-র বিপরীতে দলের কোনো হাজার হাজার নেতাকমী পালিয়ে বেড়াচ্ছে? আশ্রয় নিচ্ছে মেঘ বৃষ্টি কুয়াশা শীত উপেক্ষা করে ধানক্ষেত বা বনে জংগলে? কেনো রাতের আধারে শারীরিক এবং বয়সের ভারেও ন্যুজ এসব নেতাদের গ্রেফতার বা ভয়ভীতি দেখিয়েও আপোষ করানো যাচ্ছে না? কার কথায় কোন নেতৃত্বের জোরে? কিসের স্বার্থে দলের লাখ লাখ নেতাকর্মী এখন পর্যন্ত আওয়ামী নির্বাচনী প্রচারণাতেও গোপনেও পর্যন্ত অংশ নিচ্ছে না? রাজনৈতিক মহলই নয় খোদ সরকারের বিভিন্ন মহলে এনিয়ে জল্পনা কল্পনার শেষ নেই। খোদ এই দেশ প্রতিনিধির সাথে আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী বিষয়টি শেয়ার করেন। বলেন, এভাবে এমন শক্তিকে দাবিয়ে রাখার খেসারত আওয়ামী লীগকে হয়তো অনেকদিন ধরে দিতে হবে-এমনটাই তাদের আশঙ্কা। তবে এর পাশাপাশি কৃষি মন্ত্রীর এধরনের বক্তব্যও জাতীয় আর্ন্তজাতিক পর্যায়ে সরকারের অনেক দুর্বলতা, গোপন তথ্য প্রকাশিত হয়ে গেছে বলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকমহল মনে করেন।

শেয়ার করুন