২৭ এপ্রিল ২০১২, শনিবার, ০২:৪৩:২০ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় ইউরোপে ভারতীয় ৫২৭ পণ্যে ক্যান্সার সৃষ্টিকারি উপাদন শনাক্ত বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশে কড়াকড়ি বিএনপির আন্দোলন ঠেকানোই ক্ষমতাসীনদের প্রধান চ্যালেঞ্জ বিএনপিকে মাঠে ফেরাচ্ছে আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন নিয়ে অদৃশ্য চাপে বিএনপি


বিয়ানীবাজার সমিতির নির্বাচন : ১৬ বনাম ৩
হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে সভাপতি মান্নান, সেক্রেটারি অপু
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৫-১০-২০২৩
হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে সভাপতি মান্নান, সেক্রেটারি অপু নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং (ইনসেটে) মান্নান ও অপু


হাড্ডাহাড্ডি লাড়াইয়ের মধ্যদিয়ে গত ২২ অক্টোবর প্রবাসের অন্যতম আঞ্চলিক সংগঠন বিয়ানীবাজার সমিতির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ এই নির্বাচনে সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন বর্তমান সভাপতি আব্দুল মান্নান এবং সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন রেজাউল আলম অপু। দুই প্যানেল থেকে দুইজন নির্বাচিত হয়েছে। বিয়ানীবাজারের আলোচিত এই নির্বাচনে ১৯টি পদের মধ্যে মিছবাহ-অপু প্যানেলে জয়ী হয়েছেন ১৬ জন এবং মান্নান-জুয়েল প্যানেল থেকে নির্বাচিত হয়েছেন মাত্র ৩ জন। নির্বাচনের ফলাফল এমন হবে তা অনেকেই ধারণা করেননি। তবে যুবসমাজের একটি অংশ এই বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। তারা সভাপতি হিসাবে আব্দুল মান্নানকে এবং সাধারণ সম্পাদক রেজাউল আলম অপুকে ভোট দিয়েছেন। যা ছিলো তাদের নিজস্ব প্যানেল। সাথে ছিলো সহ সাধারণ সম্পাদক ও কোষাধ্যক্ষ।

উৎসবমুখর পরিবেশে ভোটারদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ, নিউইয়র্কের বাইরের স্টেট থেকে আগত ও স্থানীয় ভোটাররা বাইরে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। বিয়ানীবাজার সমিতির এবারের নির্বাচনে নতুন ইতিহাস তৈরি হয়েছিলো ভোটার করার মধ্যদিয়ে। এবারই সর্বাধিক ৭৬৭৯ জন ভোটারের মধ্যে ৩৯২৩ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। কনকনে ঠান্ডার মধ্যে দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দিতে যেন কারো মধ্যে ক্লান্তি ছিলো না। তাদের মধ্যে ছিলো প্রতিযোগিতার স্পৃহা। কড়া পুলিশি নিরাপত্তায় ভোটাররা দিনব্যাপী ১৬টি মেশিনে ভোট প্রদান করেন। সকাল ৯টা থেকে রাত ৮ টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ এবং গণনা শেষে প্রধান নির্বাচন কমিশনার মহিউদ্দিন নির্বাচনের বেসরকারি ফলাফল ঘোষণা করেন। এ সময় নির্বাচন কমিশনের সদস্য মোহাম্মদ আব্দুন নূর, ছালেহ আহমদ মনিয়া, হেলাল আহমদ, নূরুল ইসলাম, উভয় প্যানেলের প্রার্থী, সমর্থক, এজেন্ট এবং কম্যুনিটি নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

গত ২২ অক্টোবর বিয়ানীবাজার সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সমিতির ২ বছর মেয়াদের কার্যকরি কমিটির (২০২৪- ২০২৫) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ওজনপার্কের একটি অডিটোরিয়ামে। ভোট শেষে নির্বাচনী ফলাফল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার মহিউদ্দিন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার ফলাফল ঘোষণার পূর্বে শুভেচ্ছা বক্তব্যে সকল প্রার্থী, সমর্থক স্বেচ্ছায় নির্বাচনে সহযোগিতা করার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে বলেন, সকলের সাহায্য ও সহযোগিতা না হলে এই নির্বাচন সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব হতো না। অন্যান্যের মধ্যে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন  বিয়ানীবাজার সমিতির সাবেক নির্বাচন কমিশনার আনোয়ার হোসেন, নির্বাচন কমিশনের সদস্য আব্দুন নুর, নুরুল ইসলাম, উপদেষ্টা বুরহান উদ্দীন কপিল। নির্বাচন কমিশনের ফলাফল ঘোষণার পূর্বে  মিছবাহ- অপু প্যানেলের সদস্য সচিব ও মকবুল রহিমচুনই ফলাফলের উপর আপত্তি উত্থাপন করে বলেন, নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পূর্বে নির্বাচন কমিশন উভয় প্যানেলের নির্বাচন পরিচালনার কমিটির আহ্বায়ক অথবা সভাপতি-সেক্রেটারি প্রার্থীদের নেয়া উচিত ছিলো। সেটা নির্বাচন কমিশন করেনি। তারা আরো বলেন, আমরা এ মুহূর্তে এই ফলাফল প্রত্যাখ্যান করবো না। আমরা পরে এ নিয়ে বৈঠক করে সিদ্ধান্ত জানাবো। জানা গেছে, আগামী ৩০ অক্টোবর সংবাদ সম্মেলন এবং প্রতিবাদ সভা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তার পরই ফলাফল নিয়ে মতামত জানানো হবে। তারা নির্বাচন কমিশনকে বারবার উভয় পক্ষের প্রতিনিধি  নিয়ে পুনরায় নির্বাচন ফলাফলের কাগজ বের করার জন্য অনুরোধ করলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার মহিউদ্দিন বলেন, মেশিনে ভোটগ্রহণ বন্ধ করার পূর্বে আমি সবার অনুমতি নিয়ে বন্ধ করি। আমরা সেখানে  যাইনি। অপারেটর ফলাফলের কাগজ বের করে দিয়েছে। এর পরেও ভুল হয়ে থাকলে আমরা দুঃখিত।

কমিশনের ফলাফল ঘোষণা মোতাবেক মান্নান-জুয়েল প্যানেল থেকে সভাপতি আব্দুল মান্নান ১৩ ভোটের ব্যবধানে নির্বাচিত হয়েছেন। তার প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যা ১৯৩৭। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মিসবাহ আহমদ ভোট পেয়েছেন ১৯২৪ ভোট। মান্নান-জুয়েল প্যানেল থেকে জয়ী অন্য ২ জন হলেন সহ সাধারণ সম্পাদক রাজু আহমদ ও কোষাধ্যক্ষ আব্দুল হান্নান দুখু। ১৯টি পদের মধ্যে মিসবাহ-অপু প্যানেলের ১৬ জন নির্বাচিত হয়েছেন। মিছবাহ-অপু প্যানেল থেকে সাধারণ সম্পাদক পদে রেজাউল আলম অপু সবচেয়ে বেশি ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার প্রাপ্ত ভোট ২০৮৬। অপুর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জহির উদ্দীন জুয়েল থেকে তিনি ৩৩৯ ভোট বেশি পেয়েছেন। জুয়েলের প্রাপ্ত ভোট ১৭৪৭।

১৯টি পদের  মধ্যে মিছবাহ-অপু প্যানেলের ১৬ জন নির্বাচিত হয়েছেন। যারা বিজয়ী হয়েছেন তারা হলেন- সহ সভাপতি মুহিবুর রহমান রুহুল পেয়েছেন ১৯৩৫ ভোট। প্রতিদ্বন্দ্বী নিজাম উদ্দীন পেয়েছেন ১৮৫৩ ভোট। সহ সাধারণ সম্পাদক রাজু আহমদ পেয়েছেন ২৯৪০ ভোট। প্রতিদ্বন্দ্বী আব্দুল ফাত্তাহ পেয়েছেন ১৮৬৫ ভোট। কোষাধ্যক্ষ পদে আব্দুল হান্নান দুখু পেয়েছেন ১৯৪৮ ভোট। তার প্রতিদ্বন্দ্বী মোহাম্মদদ আবু হামিদ পয়েছেন ১৮৪৪ ভোট। সাংগঠনিক সম্পাদক মাহমুদুল কবির ১৯১৭ ভোট পেয়েছেন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী আবু তৈয়ব মোহাম্মদ তালহা পেয়েছেন ১৮৭৭ ভোট। সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে ছিদ্দিক আহমদ পেয়েছেন ১৯৩৪ ভোট। তার প্রতিদ্বন্দ্বী মোস্তফা অনিক রাজ পেয়েছেন ১৮৩৩ ভোট। দপ্তর সম্পাদক পদে শামসুল আলম পেয়েছেন ১৯০৬ ভোট। তার প্রতিদ্বন্দ্বী আব্দুল হামিদ পেয়েছেন ১৮৭৬ ভোট। প্রচার সম্পাদক পদে আবু রাসেল পেয়েছেন ১৮৭৪ ভোট। তার প্রতিদ্বন্দ্বী শামসুল ইসলাম পেয়েছেন ১৮৬০ ভোট। ক্রীড়া সম্পাদক পদে জামিল আহমদ পেয়েছেন ১৯৬০ ভোট। তার প্রতিদ্বন্দ্বী কিবরিয়া আহমদ শাহিদ পেয়েছেন ১৮৪৮ ভোট। সমাজকল্যাণ সম্পাদক পদে ফয়েজ আহমদ পেয়েছেন ১৮৬৮ ভোট। তার প্রতিদ্বন্দ্বী মোহাম্মদ এফ এইচ সোনার বলাই পেয়েছেন ১৯৬৫ ভোট। মহিলা সম্পাদক পদে হাফসা ফেরদৌস হেলেন পেয়েছেন ১৮৯৯ ভোট। তার প্রতিদ্বন্দ্বী ফাতেমা শীলা পেয়েছেন ১৮৭৫ ভোট। সদস্য পেদে ফারহাদ হোসেন পেয়েছেন ১৮১৮ ভোট। তার প্রতিদ্বন্দ্বী আবু জাফর পেয়েছেন ১৭৭০ ভোট। শরীফ আহমদ পেয়েছেন ১৯০১ ভোট। আব্দুল খান পেয়েছেন ১৮৩৩ ভোট। মাসুদুর রহমান পেয়েছেন ১৯০২ ভোট। সামাদ আহমদ পেয়েছেন ১৮৫২ ভোট। রেজওয়ান আহমদ পেয়েছেন ১৯১০ ভোট। হুসেন আহমদ পেয়েছেন ১৮৪৭ ভোট। ইকবাল হোসেইন পেয়েছেন ১৯৫৬ ভোট। বদরুল উদ্দীন পেয়েছেন ১৮৪৮ ভোট। মোহাম্মদ আমিন উদ্দীন পেয়েছেন ১৯২১ ভোট। নুর উদ্দিন পেয়েছেন ১৮৫৪ ভোট। মাহবুব উদ্দীন আলম পেয়েছেন ১৯১২ ভোট। ফখরুল হক ১৮২২ ভোট। তবে সবচেয়ে বেশি প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছে সভাপতি পদে।

সকাল থেকেই প্যানেল সমর্থকদের তৎপরতা এবং সাধারণ  ভোটারদের লম্বা  লাইন পথচারিদের তাক লাগিয়ে দেয়। অনেককে বলতে শোনা যায়, বিয়ানীবাজার সমিতির ইতিহাসে এ রকম ভোটার লাইন আগে কখনো পরিলক্ষিত হয়নি। ভোটারদের শৃঙ্খলা, প্যানেল সমর্থিত উৎসুকদের ভিড়ের  জটলা দূর করার জন্য সিকিউরিটি গার্ড ও পুলিশের ভূমিকা ছিল প্রশংসনীয়। নির্বাচন চলাকালীন সময়ে কার্যকরি কমিটির সদস্য নিবাচনী কার্যক্রমে গঠনতান্ত্রিক দায়িত্ব উল্লেখ না থাকলেও বর্তমান কমিটির সেক্রেটারি উপস্থিত  ভোটারদের সদস্য নিবন্ধনে সমস্যা নিরসনে ভূমিকা ছিল প্রশংসার দাবিদার। ভোট চলাকালীন সময়ে ডাবল ভোটার বিশেষ করে আজীবন সদস্যের বেলায়  বিভ্রাট-বিড়ম্বনা থাকলেও দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের নিষ্ঠা ও একাগ্রতায় সমস্যার দ্রুত সমাধান করা হয়। একটা বিষয় লক্ষ্যণীয়  ছিল, কমিশন নির্বাচন পরিচালনা করার জন্য যতটুকু দায়িত্বপূর্ণ ছিল, তার চেয়ে প্রার্থী ও সমর্থকরা ছিল আরো বেশি সহযোগিতাপূর্ণ। যে কারণে এই বিশাল নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব হয়েছে। এতেই প্রমাণিত হয় নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতার মধ্যেও সমিতির স্বার্থে কারো আপোষ নেই।

ফলাফল ঘোষণার পর নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে কেন্দ্রের ভিতর-বাইরে বিক্ষোভ প্রদর্শিত হয়। কমিশনের কারসাজী, ভুয়া ভুয়া বলে স্লোগান দিয়ে পুরো এলাকা সরগরম করে তোলা হয়। পরে  মিছিল সহকারে তারা মিসবাহ-অপু প্যানেলের নির্বাচনী কার্যালয়ে এসে জমায়েত হন। সমাবেশে  বলা হয়, ভোট  চলাকালীন সময়ে অনিয়ম, ফলাফল ঘোষণার পূর্বে নির্বাচনী টোকেন ও মেশিনে ভোটের সাথে গণনার হিসাব, ফলাফল ঘোষণার সময় উভয় প্যানেলের কাউকে  না নিয়ে ফলাফলের প্রিন্ট নিয়ে আসা, ঘোষণার পূর্বে কমিশন যেন পুনরায়  সবাইকে নিয়ে চূড়ান্ত ফলাফলের কাগজ নিয়ে আসার অনুরোধকে কর্ণপাত না করার বিষয়ে আলোচনা করা হয়।

সভাপতিদ্বয়ের বক্তব্য : নির্বাচন চলাকালীন সময়ে সভাপতি পদপ্রার্থী আব্দুল মান্নান ও মিছবাহ আহমদকে নির্বাচনী ফলাফল নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তারা নির্বাচন  সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে  হচ্ছে। নির্বাচনী  ফলাফল যাই হোক, ফলাফল তারা  মেনে  নিবেন।

শেয়ার করুন