২৩ এপ্রিল ২০১২, মঙ্গলবার, ০৯:৪০:০২ অপরাহ্ন


গাজীপুর সিটি নির্বাচনে নৌকাডুবি
খন্দকার সালেক
  • আপডেট করা হয়েছে : ৩১-০৫-২০২৩
গাজীপুর সিটি নির্বাচনে নৌকাডুবি গাজীপুরের নগরমাতা জায়েদা খাতুন


জাতীয় নির্বাচন নিয়ে দেশে প্রবাসে নানা আলোচনা-সমালোচনার প্রেক্ষাপটে বহুল আলোচিত গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সরকারি দলের শক্তিশালী প্রার্থীর পরাজয় নিঃসন্দেহে নানা সমীকরণ নানা বিশ্লেষণের সৃষ্টি করেছে। নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করা আওয়ামী লীগের হ্যাভিওয়েট প্রার্থী আজমাত উল্লা খান ১৬ হাজারের বেশি ভোটে হেরে গেছেন ঘড়ি প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করা স্বতন্ত্র প্রার্থী গৃহবধূ জায়েদা খাতুনের কাছে। নির্বাচনে আনুমানিক ৫০ শতাংশ ভোট পড়ে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন ব্যবহার করা এই নির্বাচনে। সাধারণভাবে বলা যায় নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ আবহে অনুষ্ঠিত হয়েছে। কোনো প্রার্থী, কোনো মহল নির্বাচন বিষয়ে কোনো ধরনের বিরূপ মন্তব্য করেননি। 

অন্যদিকে নির্বাচনের পর নতুন নগর মাতা জায়েদা খাতুন বলেছেন, তিনি তার ছেলে (জাহাঙ্গীর)কে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে চান। প্রধানমন্ত্রীকে তার ছেলের ব্যাপারে ভুলগুলো বলবেন। ইতিমধ্যে তিনি তার দলবল নিয়ে টুঙ্গিপাড়া বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে ফুল দিয়ে দোয়া মোনাজাত করে এসেছেন। সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের বক্তব্য, গাজীপুরের ভোটে আওয়ামী লীগেরই জয় হয়েছে। শুধু একজন ব্যক্তির (আজমত উল্লা খান) পরাজয় ঘটেছে। যদিও জাহাঙ্গীর আলমের কথা কিন্তু আওয়ামী লীগের নীতির সঙ্গে এক নয়। কারণ আজমত উল্লা খানকে মনোনয়ন দিয়েছে আওয়ামী লীগ। ফলে তার পরাজয় মানেই আওয়ামী লীগের পরাজয়। দৃশ্যত একজন স্বতন্ত্র প্রার্থীর নিকট আওয়ামী লীগ হেরে গেছে এবং যেখানে বিএনপির মতো বড় একটি রাজনৈতিক দল যেখানে অংশই নেয়নি। 

যদিও জায়েদার জয়ের পেছনে বিএনপির ভূমিকা রয়েছে বলে অনেকে মনে করছেন। কেউ কেউ বলেছেন, বিএনপি জায়েদাকে ভোট দিয়ে নৌকার পরাজয় ঘটাতে তৎপর ছিল। কারো অভিমত নির্বাচনের ঠিক অগের দিন বাংলাদেশের নির্বাচন-সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যে ভিসা-নীতি প্রকাশ করেছে, তাতে গাজীপুরে সুষ্ঠু ও  সঠিক ভোট অনুষ্ঠান বা আওয়ামী লীগ তার প্রার্থীকে হারানোর মধ্য দিয়ে নির্বাচন কমিশনের স্বচ্ছতা প্রমাণের চেষ্টা করেছেন। এ সংক্রান্ত বক্তব্য আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যেও শোনা গেছে।  

সবাই জানেন, বিজয়ী জায়েদা সরকারি দলের বহিষ্কৃত এবং গাজীপুর সিটি কাউন্সিলের বরখাস্ত কৃত প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলমগীরের মাতা। জাহাঙ্গীর আলম আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসাবে নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন। বকেয়া ঋণ পরিশোধ না করার যুক্তিতে জাহাঙ্গীরের প্রার্থিতা বাতিল করা হয়। এক পর্যায়ে জাহাঙ্গীরকে আওয়ামী লীগ থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়। হয়তো এমনি পরিস্থিতি বিষয় আগাম উপলব্ধি করে নিজের মমতাময়ী মাকে নির্বাচনে প্রার্থী করেছিলেন। নির্বাচনকালে নানা বিরূপ পরিস্থিতিতে জাহাঙ্গীর সারাক্ষণ মায়ের পাশে থাকেন।  

মূলত বলা চলে নির্বাচন হয়েছে সরকারি দলের (আওয়ামী লীগ) মনোনীত প্রার্থী এবং বহিষ্কৃত প্রাক্তন মেয়রের মধ্যে। যেহেতু মূল বিরোধীদল প্রকাশ্যে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেনি, তাদের সমর্থকদের ভোট নির্বাচনে জয়-পরাজয় নির্ধারণে ভূমিকা পালন করেছে। মোদ্দাকথা, হলো নির্বাচন কমিশন অ্যাসিড টেস্ট ভালোভাবে উতরে গেছে। প্রমাণ হয়েছে সরকারসহ সব পক্ষের সদিচ্ছা থাকলে এখনো বাংলাদেশে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করা সম্ভব। এখন দেখতে হবে এই সফল নির্বাচন প্রতীকী নির্বাচন হিসেবে নিয়ে অন্যান্য নির্বাচন একইভাবে হয় কি না? 

এই নির্বাচন থেকে সরকারি দল এবং বিরোধীদলগুলো কি শিক্ষা নেয়। বিশেষ করে নির্বাচনটি সরকারি দলের জন্য ঘুম ভাঙার সংকেত হিসেবে বিবেচনা করা উচিত হবে। জানি, জয়-পরাজয়ের নানা আঙ্গিকে বিশ্লেষণ হবে।  প্রার্থী নির্বাচন থেকে শুরু করে, আন্তঃদলীয় দলীয় দ্বন্দ্ব, প্রচারণা কৌশল, বিরোধীদের কোণঠাসা করার প্রচেষ্টা, বিজয়ী প্রার্থীর প্রতি ভোটারদের সহানুভূতি, নির্বাচন কমিশনের মডেল নির্বাচন করার সার্বিক প্রয়াস এবং সর্বোপরি নির্বাচনের শেষ মুহূর্তে মার্কিন দূতাবাসের ভিসা নিয়ন্ত্রণবিষয়ক বিশেষ ঘোষণা নির্বাচনে ভূমিকা পালন করেছে। বাংলাদেশের বৃহত্তম এবং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সিটি কাউন্সিলে নির্বাচিত মহিলা মেয়রের জন্য শুভেচ্ছা শুভ কামনা।

শেয়ার করুন