২০ এপ্রিল ২০১২, শনিবার, ০৯:১৫:৪৩ পূর্বাহ্ন


দক্ষিণ বাংলাদেশের সবুজ উন্নয়ন
সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ২২-০২-২০২৩
দক্ষিণ বাংলাদেশের সবুজ উন্নয়ন দক্ষিণ বাংলাদেশের ছবি


এটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না যে প্রমত্তা পদ্মা নদীর ওপর নির্মিত বহুমুখী সেতু দক্ষিণ বাংলাদেশের মহাউন্নয়নের বাতায়ন খুলে দিয়েছে। এতে করে বড় ধরনের এক সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে পটুয়াখালীর কুয়াকাটা থেকে খুলনার সাতক্ষীরা পর্যন্ত বিস্তীর্ণ অঞ্চলকে পরিকল্পিত উন্নয়নে উপকূল অঞ্চলকে জাগিয়ে তোলার। সরাসরি সড়ক যোগাযোগ দক্ষিণ অঞ্চলের বৃহত্তর খুলনা, বরিশাল বিভাগ এবং বৃহত্তর ফরিদপুর অঞ্চলকে সবুজ উন্নয়নের আওতায় নিয়ে আসার। দক্ষিণ অঞ্চল বাংলাদেশের শস্য ভাণ্ডার। আছে শিল্পের জন্য অতি প্রয়োজনীয় কাঁচামালের সহজ প্রাপ্তি। পায়রা এবং রামপালে দুইটি প্রতিটি ১৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্র এতদাঞ্চলে সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ সরবরাহ প্রাপ্তির সুযোগ সৃষ্টি করেছে। অপেক্ষা শুধু শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় গ্যাস সরবরাহ। পায়রা এবং মংলা বন্দর আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের দুয়ার খুলে দিয়েছে। কুয়াকাটা সাগর তীর, সুন্দরবন বিশ্ব হেরিটেজ দুই হাত প্রসারিত করে ডাকছে সৌন্দর্যপিয়াসী পর্যটকদের। চ্যালেঞ্জ শুধু দক্ষিণ বাংলার সমন্বিত সবুজ উন্নয়ন। প্রকৃতি প্রদত্ত উন্নয়ন সুবিধাগুলো সুপরিকল্পিত আর সুসমন্বিত উপায়ে বাস্তবায়ন। 

সম্প্রতি প্রতিবেদকের সুযোগ হয়েছে পটুয়াখালীর চর মোন্তাজ, কুয়াকাটা বালুকাবেলা, পায়েরা বিদ্যুৎকেন্দ্র, মোংলা শিল্পাঞ্চল এবং সম্ভাবনাময় সাতক্ষীরা পরিদর্শনের। সুযোগ হয়েছে বিভিন্ন পর্যায়ের মানুষের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে মতবিনিময়ের।

বলতে দ্বিধা নেই, বিস্তীর্ণ অঞ্চলের সাধারণ মানুষের কাছে সরকারের উন্নয়ন দর্শন নিয়ে সুস্পষ্ট ধারণা নেই। তবে প্রশ্ন আছে ভোলা অঞ্চলের আবিষ্কৃত গ্যাসসম্পদ সঠিক ব্যাবহারে কেন এতো দ্বিধা দ্বন্দ্ব? কেন এক দশকেও ঈশ্বরদী থেকে কুষ্টিয়া-যশোর হয়ে খুলনা পর্যন্ত নির্মিত গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন থেকে এমনকি ক্ষুদ্র শিল্পগুলো গ্যাস পাচ্ছে না? দেশের গ্যাস ফ্রাঞ্চাইজগুলোতে সিস্টেম লসের আড়ালে গ্যাস চুরি হচ্ছে অবারিত। সেগুলো কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হলে সেই গ্যাস দিয়ে দক্ষিণ বাংলাদেশের কুষ্টিয়া, যশোর, খুলনায় অন্তত ক্ষুদ্র শিল্পে গ্যাস সরবরাহ করার সুযোগ ছিল। কেন সুন্দরবন গ্যাসকে সক্রিয় করা হচ্ছে না? 

১৬ ফেব্রুয়ারি মতবিনিময় করলাম খুলনা প্রেস ক্লাবে অগ্রজ প্রতিম হুমায়ুন কবির বালু ভাই স্মরণে নির্মিত মিলনায়তনে। ১৫ ফেব্রুয়ারি মোংলা শিল্পাঞ্চলে শিল্পায়নের ব্যাপক সুযোগ দেখলাম সরেজমিনে পরিদর্শন করে। কেন জানি মনে হলো শিল্প উদ্যোক্তাদের সঠিকভাবে দিকনির্দেশ দেয়া হচ্ছে না। প্রয়োজনের অতিরিক্ত এলপিজি প্ল্যান্ট গড়ে তুলে সম্ভাবনাময় খাতকে চ্যালেঞ্জের মুখে ঠেলে দেয়া হয়েছে। অথচ এখানে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনের ব্যাপক সুযোগ রয়েছে। সুযোগ রয়েছে বায়ু বিদ্যুৎ সম্ভাবনা নিয়ে কাজ করার। পরীক্ষা করে দেখা যায় ফ্লোটিং সোলার সম্ভাবনার। স্মরণে রাখতে হবে বিশ্ব সমঝোতার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে সংশ্লিষ্ট অঞ্চলে জীবাশ্ম জ্বালানির পরিবর্তে নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহার করতেই হবে।  দেখেছি, রামপালে আমদানিকৃত কয়লা ব্যবহার করে ১৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার ভারত বাংলাদেশ মৈত্রী বিদ্যুৎকেন্দ্রের ৬৬০ মেগাওয়াট ক্ষমতার প্রথম ইউনিট চালু হয়েছে। এখানে পরিকল্পিত দ্বিতীয় ইউনিটের জন্য উন্নয়নকৃত ভূমিতে সৌরবিদ্যুৎ প্ল্যান্ট নির্মাণের পরিকল্পনাকে সাধুবাদ জানাই। দেখতে হবে গ্রিড সংযুক্ত পরিকল্পিত এই সৌর বিদ্যুৎ প্ল্যান্ট থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ গ্রিডে সরবরাহের সুবিধা যথাসময়ে বাস্তবায়িত হয় কিনা? শুনছি খুলনা অঞ্চলে ভারত থেকে বেসরকারি পর্যায়ে আরএলএনজি আমদানির পরিকল্পনা চলছে। আমি অবিলম্বে ভোলা থেকে বরিশাল হয়ে খুলে পর্যন্ত গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণের দাবি পুনর্ব্যক্ত করছি। 

১৯৯৯-২০০০ তৎকালীন উনোকোল প্রস্তাবিত রিপ প্রকল্পের আওতায় ভোলার শাহবাজপুর থেকে খুলনার দিঘলিয়া পর্যন্ত পাইপলাইন নির্মাণ বিষয়ে প্রাথমিক কাজে সম্পৃক্ত ছিলাম। এমনকি ঈশ্বরদী থেকে খুলনা পর্যন্ত নির্মিত পাইপলাইন নির্মাণ উদ্যোগের সাথী ছিলাম। জানি না কাদের স্বার্থরক্ষায় দক্ষিণ অঞ্চল এখনো গ্যাস পেলো না? 

আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি দক্ষিণ অঞ্চলে সৌর বিদ্যুৎ, বায়ু বিদ্যুৎ উৎপাদনের ব্যাপক সুযোগ রয়েছে। বিদ্যুৎ জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত হলে দক্ষিণ অঞ্চল দেশের উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখতে পারবে। একই সঙ্গে পায়েরা এবং মোংলাকে অচিরে পদ্মা সেতুর সঙ্গে আধুনিক সড়ক এবং সরাসরি রেল যোগাযোগের আওতায় আনতে হবে। 

খুলনায় একটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নির্মাণ সময়ের দাবি। এগুলো করা হলে সুন্দরবন ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলের পর্যটন সুবিধা বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের দুয়ার খুলে দিবে। 

প্রতিটি উন্নয়নশীল দেশে জ্বালানি বিদ্যুৎ খাতকে রাজনীতির ঊর্ধ্বে রাখা হয়। আশা করি দক্ষিণ অঞ্চলের মানুষ রাজনৈতিক বিভেদ ভুলে অঞ্চলের সবুজ উন্নয়নে মেধা মনোন এবং শ্রম নিবেদন করবেন।

শেয়ার করুন