২৯ এপ্রিল ২০১২, সোমবার, ০৪:২৩:১০ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
সরকার ও বেসরকারি উদ্যোগে দরিদ্রমুক্ত দেশ গড়ে উঠবে - আসাদুজ্জামান খান কামাল ৭০ শতাংশ মৃত্যু অসংক্রামক রোগে, বাজেটে বরাদ্দ বৃদ্ধির দাবি ‘বিদেশে দেশবিরোধী অপপ্রচারকারীদের বিরুদ্ধে স্থানীয় আইনে ব্যবস্থা নিন’ ভূল স্বীকার করে সরে দাড়ানোয় একজনের বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহার বাফেলোতে সন্ত্রাসীদের গুলিতে দুই বাংলাদেশী নিহত ‘শেরে বাংলা আপাদমস্তক একজন পারফেক্ট বাঙালি ছিলেন’ বিএনপির বহিস্কৃতদের জন্য সুখবর! মে দিবসে নয়পল্টনে বিএনপির শ্রমিক সমাবেশ উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়ার জের, বিএনপির বহিস্কার ৭৬ থাইল্যান্ডের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আহ্বান


আবু জাফর মাহমুদকে সম্মাননা প্রদান
নিউইয়র্ক স্টেট সিনেট অ্যাসেম্বলিতে বাংলাদেশি আমেরিকান অ্যাডভোকেসি গ্রুপ
সালাহউদ্দিন আহমেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ৩১-০৫-২০২৩
নিউইয়র্ক স্টেট সিনেট অ্যাসেম্বলিতে বাংলাদেশি আমেরিকান অ্যাডভোকেসি গ্রুপ আলবেনিতে বাংলাদেশি আমেরিকান অ্যাডভোকোসি গ্রুপের নেতৃবৃন্দ


বাংলাদেশি আমেরিকান অ্যাডভোকেসি গ্রুপ (বাগ)-এর নবম লেজিসলেটিভ ডেতে নতুন মুখ আর নতুন প্রজন্মের অংশগ্রহণে তাদের নতুন অভিজ্ঞতার সৃষ্টি হয়েছে। মূলধারার রাজনীতি তথা আমেরিকান রাজনীতি কীভাবে পরিচালিত হয়, স্টেটের অ্যাসেম্বলি ও সিনেট অধিবেশনে কি হয়, জনপ্রতিনিধিদের কাজ কি, প্রবাসে দেশের রাজনীতির আদৌ প্রয়োজন আছে কি নেই, কমিউনিটির কল্যাণে কমিউনিটি নেতৃবৃন্দ কি ভূমিকা রাখতে পারেন-এমন নানা প্রশ্নের উত্তর পেয়ে লেজিসলেটিভ ডেতে অংশগ্রহণকারী নতুন মুখ আর নতুন প্রজন্ম উৎসাহিত, পাশাপাশি বাগের উদ্যোগের প্রশংসায় পঞ্চমুখ তারা। অন্যদিকে লেজিসলেটিভ ডের মূল কর্মসূচি স্টেট অ্যাসেম্বলি ও সিনেট সদস্যদের সঙ্গে বাগ প্রতিনিধিদের সরাসরি দাবি-দাওয়া নিয়ে আলোচনা এবং দাবির সপক্ষে যুক্তি শুনে জনপ্রতিনিধিরা তাদের সমর্থন ব্যক্ত করেছেন। বলেছেন, দাবি-দাওয়াগুলো বাস্তবায়নের দাবি রাখে এবং এসব বাস্তবায়নের জন্য সময় প্রয়োজন। তবে তারা সংশ্লিষ্ট বিভাগের চেয়ার আর সহকর্মী জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার আশ্বাস ব্যক্ত করেছেন। উল্লেখ্য, নিউইয়র্ক স্টেট জুড়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দুই ঈদে ও দিওয়ালিতে ছুটি এবং হালাল খাবার সরবরাহ, ট্যাক্সি প্রটেকশন অ্যাক্টসহ ৯টি দাবির বিষয়ে জনপ্রতিনিধিদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়।

যেভাবে শুরু হলো কর্মসূচি

নিউইয়র্কের রাজধানী আলবেনীর ক্যাপিটাল ভবনে মঙ্গলবার (২৩ মে) দিনব্যাপী লেজিসলেটিভ ডের কর্মসূচি নিয়ে সরগরম ছিলেন বাগ প্রতিনিধিরা। এতে প্রায় ১০০ প্রতিনিধি যোগ দেন। নিউইয়র্ক সিটি থেকে দুটি বাসযোগে তারা আলবেনীতে যাতায়াত করেন। বেলা ১১টায় প্রেস কনফারেন্সের মাধ্যমে কর্মসূচি শুরু হয়। এতে সিনেটর রবার্ট জ্যাকসন ও সিনেটর নাটালিনা ফারনান্দেজ বক্তব্য রাখেন। এছাড়া বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু জাফর মাহমুদ ছাড়াও বাগ প্রতিনিধিদের মধ্যে সভাপতি জয়নাল আবেদীন, সাধারণ সম্পাদক শাহানা মাসুম, কেয়ার নিউইয়র্কের সিস্টার আফাফ এবং নতুন প্রজন্মের প্রতিনিধি মাহতাব খান বক্তব্য রাখেন। পরবর্তী সময়ে বাগ প্রতিনিধিরা বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত হয়ে জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে তাদের অফিসে গিয়ে সরাসরি দাবি-দাওয়া নিয়ে কথা বলেন।

অ্যাসেম্বলি ও সিনেট হাউজে দাবি উত্থাপন

বেলা আড়াইটার দিকে অ্যাসেম্বলি হাউজে অ্যাসেম্বলিম্যান জোহরান কে মামদানী এবং বিকেল ৪টার দিকে সিনেট হাউজে সিনেটর রবার্ট জ্যাকসন বাগ প্রতিনিধি ও প্রবাসী বাংলাদেশিদের উপস্থিতিতে দাবি-দাওয়ার পক্ষে প্রস্তাব উত্থাপন করেন।

দাবি-দাওয়া 

এবারের দাবি-দাওয়াগুলোর মধ্যে যে বিষয়গুলো সিনেট ও অ্যাসেম্বলিতে বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরা হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে- মুসলিমসহ দক্ষিণ এশিয়ার সব ধর্মীয় জনগোষ্ঠীর প্রধান প্রধান ধর্মীয় উৎসবে স্কুল ছুটি ঘোষণা, পাবলিক স্কুলগুলোতে হালাল খাবারের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা, ট্যাক্সি চালকদের নিরাপত্তা বিধান করা, ক্ষুদ্র শিল্পপ্রতিষ্ঠানের কর্মীদের মজুরি বাড়ানো, মুসলিম আমেরিকান অ্যাডভাইজারি কাউন্সিল গঠন, বিভিন্ন পেশার কর্মীদের ন্যূনতম মজুরি বাড়ানো, নির্বাচনের ভোটগ্রহণের দিন গোটা স্টেটে ছুটি ঘোষণা। 

সমাপনী অনুষ্ঠান

বিকেলে ক্যাপিটাল ভবনের ১০৪এ হলে অনুষ্ঠিত সমাপনী পর্বে কমিউনিটির বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রাখার জন্য বিভিন্ন জন ও প্রতিষ্ঠানকে অ্যাওয়ার্ড ও প্রশংসাপত্র বিতরণ করা হয়। এর আগে সিনেটর জেসিকা রামোস, জেসিকা স্কারসালা স্প্যানটন, অ্যাসেম্বলিম্যান ও ডেমোক্র্যাট দলীয় অ্যাসিস্ট্যান্ট মেজরিটি লুডার চার্লেস ডি ফল, অ্যাসেম্বলিম্যান ডেভিড আই ওয়েপ্রিন, নাদের জে সায়েজ এবং অ্যাসেম্বলিওম্যান ক্যাটেলিনা ক্রজ, জেসিকা গঞ্জালেস রোহাসসহ একাধিক সিনেটর ও অ্যাসেম্বলি সদস্যের প্রতিনিধি এবং গভর্নরের প্রতিনিধিরা এই হলে এসে তাদের সমর্থন ব্যক্ত করেন। এসময় অন্যদের মধ্যে আমন্ত্রিত অতিথি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু জাফর মাহমুদ ও ইকনা’র সভাপতি মোহাম্মদ তারিকুর রহমানসহ বাগের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য মোহাম্মদ সাবুল উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক শাহানা মাসুম প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। সমাপনী পর্ব পরিচালনা করেন বাগ-এর সভাপতি জয়নাল আবেদীন।

এসময় নিউইয়র্ক স্টেট সিনেটের পক্ষ থেকে সিনেটর রবার্ট জ্যাকসন বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু জাফর মাহমুদকে বিশেষ সম্মাননা প্রদান করেন। এছাড়াও সম্মাননা পান আমেরিকা বাংলাদেশ অ্যাডভোকেসি গ্রুপের সভাপতি জয়নাল আবেদীনসহ কেয়ার নিউইয়র্ক, এনওয়াই ম্যান, টাইম টেলিভিশন এবং দিলরুবা চৌধুরী ও মাহতাব খান।

সমাপনী অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধের মাউন্টেন ব্যাটালিয়ন কমান্ডার, নিউইয়র্কে বাংলাদেশি কমিউনিটির প্রিয় ব্যক্তিত্ব, ডেমোক্র্যাট রাজনীতিক, বাংলা সিডিপ্যাপ ও আলাগ্রা হোম কেয়ারের প্রেসিডেন্ট, মানব সেবার যুক্তরাষ্ট্র প্রেসিডেন্টের  আজীবন সম্মাননা স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত আবু জাফর মাহমুদ তার বক্তব্যে দিনব্যাপী সফল কার্যক্রম শেষে আবেগে উচ্ছ্বসিত অনুভূতি প্রকাশ করেন বলেন, গভীর ভালোবাসার ঢেউ যখন সব সীমানা ছাড়িয়ে যায় তখনই তা চিরন্তন এক অর্থময়তা  তৈরি করে, সেখানেই জন্ম নেয় অসাধারণ শক্তি। আজ অসাধারণ এক সাফল্য অর্জনের দিনে আমি ভারাক্রান্ত হয়ে উঠেছি। মনে হয়েছে আমাদের বাংলাদেশি সমাজে এক শিক্ষিত মানুষ, অনেক তরুণ গড়ে উঠেছে কিন্তু দেশের জন্য এতো বড় কাজটি কেউ করেনি। এই একটিমাত্র টিম আমি দেখলাম, সত্যিকার অর্থে আমার জাতির জন্য কাজ করছে।

আবু জাফর মাহমুদ বলেন, আল্লাহ আমাকে ছোটবেলা থেকে নেতৃত্বের এক শক্তি দান করেছেন। পূর্ব পাকিস্তান সময়ে স্কুল জীবন থেকে নেতৃত্ব আমার ভালোবাসা। আজ যে নেতৃত্বের সঙ্গে যুক্ত হয়েছি সেটি আমাদের গোটা জাতির নেতৃত্ব করছে। জাতি, ধর্ম ও সংস্কৃতির জন্য এই কল্যাণমুখী কাজগুলোর সঙ্গে সব সময়ই আমার একাত্মতা রয়েছে।  

আবু জাফর মাহমুদ বলেন, গত এক বছরে প্রায় অর্ধশত অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে আমার নিজস্ব পর্যবেক্ষণ থেকে একটিই আহ্বান জানিয়েছি। একই জয়গান গেয়েছি। সেটি হচ্ছে ভালোবাসা। আমাদের ভেতরে এই ভালোবাসাটিই কমে যাচ্ছে। এদেশে যারা ভালোবাসাহীন জীবনযাপন করে, আমরা তাদের দিকে চলে যাচ্ছি। আমরা পরিবার রক্ষা করতে পারছি না। বিষয়টি আমাকে খুব স্পর্শ করে। তাই আমি আমার হোম কেয়ার থেকেই ভালোবাসার এক অভিযান শুরু করেছি। আমরা আমাদের পারিবারিক জীবনে ভালোবাসাসহই যত্ন শিখেছি। ভালোবাসা আর যত্ন নিয়েই বড় হয়েছি এই সত্যটিই সবার কাছে পৌঁছে দিচ্ছি মাত্র। তিনি বলেন, আজ এখানে সিনেট ও অ্যাসেম্বলি আমাকে নতুন করে শিখিয়েছে, সভ্যতা কাকে বলে। আজ আমরা সবাই নিউইয়র্ক স্টেট পরিচালনার এই কেন্দ্রীয় ভবনে এসে নিশ্চিত হয়েছি, এখানে ইসলাম নিয়ে কোনো বৈষম্য নেই। বাছবিচার নেই। এখানে ইসলামের সুমহান আদর্শের প্রতি যথাযথ মর্যাদা আছে। সবাই আমাদেরকে ভালোবেসেছেন। আমরা সিনেট অ্যাসেম্বলিতে গিয়ে অভিভূত হয়েছি, সেখানে দায়িত্বশীলরা আমাদেরকে জিজ্ঞাসা করেছেন নামাজের কথা। তারা জায়গা করে দিয়েছেন, নামাজের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। এটি অনেক বড় দৃষ্টান্ত।  

উল্লেখ্য, দিনব্যাপী কর্মসূচির বাস্তবায়নে শীর্ষ কর্মকর্তা ছাড়াও বিশেষ ভূমিকা পালনকারীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যরা হলেন-বাগের উপদেষ্টা জুয়েল ভুইয়া, বোর্ড অব ডিরেক্টর মাহাতাব খান, পার্লামেন্টারিয়ান দিলরুবা চৌধুরী, সহকারী সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সাত্তার, কোষাধ্যক্ষ এমডি রহিম, সেলিনা খাতুন, মিসবাহ মাহমুদ, সামিয়া নাজনীন, কো স্পন্সর কেয়ার নিউইয়র্কের সিস্টার আফাফ ও এনওইম্যানের মীর মাসুম আলী, আতিয়া কাজী, মোহাম্মদ নূর দেওয়ান, কুইন্স বাংলাদেশ সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক, মফিজুল ইসলাম ভূইয়া রুমি, চট্টগ্রাম ইউনিভার্সিটি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আশিক মাহমুদ, কমিউনিটি অ্যাকটিভিস্ট রহমত উল্লাহ প্রমুখ। 

এছাড়াও নিউইয়র্কের বাংলাদেশি কমিউনিটিতে হোম কেয়ার সেবার পথিকৃৎ প্রতিষ্ঠান বাংলা সিডিপ্যাপ ও অ্যালেগ্রা হোম কেয়ার পরিবার থেকে ছিলেন সৈয়দ আলম, সৈয়দ আজিজুর রহমান তারিফ, আদিত্য শাহীন, মাঈনউদ্দিন ও নোমান আহমেদ। এবারের লেজিসলেটিভ ডের স্পন্সর ছিল কেয়ার নিউইয়র্ক ও এনওয়াই মুসলিম অ্যাকশন নেটওয়ার্ক।

শেয়ার করুন