২৯ এপ্রিল ২০১২, সোমবার, ১১:৩২:৩৮ পূর্বাহ্ন


পদ্মা সেতু নিয়ে যা না বললেই নয়
সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ৩০-০৬-২০২২
পদ্মা সেতু নিয়ে যা না বললেই নয়


অবশেষে বহুল প্রতীক্ষিত, দেশে, প্রবাসে বিপুলভাবে আলোচিত পদ্মা বহুমুখী সেতু দিয়ে সড়ক পথে যোগাযোগ উন্মুক্ত করলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই, সেতুটি দক্ষিণ অঞ্চলের ২১ জেলা শহরের ৬ কোটি মানুষের জীবনে বহুমুখী আশীর্বাদ হয়ে এসেছে। অনেকের ২৫ জুন ২০২২ বাংলদেশি জাতির জীবনে ১৯৭১-এর ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসের মতোই বাঁধভাঙা আনন্দ বিলিয়ে দিয়েছে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অনেকের মাঝে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী এবং মুক্তিযোদ্ধা গ্রামীণ স্বাস্থকেন্দ্র প্রধান ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর উপস্থিতি দেখে ভালো লেগেছে। 

গণতান্ত্রিক দেশে ভিন্নমত থাকবেই। কিন্তু একটি বিশাল জাতীয় অর্জনের মাহেন্দ্রক্ষণে আমন্ত্রিত হয়ে যারা আসেননি, তারা সুযোগ হারিয়েছেন। সব কিছু সব সময় বর্জন শুভ ফল বহন করে না। হয়তো বিএনপি আসলে সেতুমন্ত্রী বা প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ ভিন্নরকম হতে পারতো। সরকারি দলের অর্জন কেউ কেড়ে নিতে পারবেনা। সেতুমন্ত্রীর ভাষণের কিছু অংশ দলীয় অনুষ্ঠানের জন্য যথার্থ ছিল। এগুলো উনি জাতীয় ভাষণে উল্লেখ না করলেও পারতেন।

 প্রধানমন্ত্রী সেতু নির্মাণের বিভিন্ন পর্যায়ের ঘটনার কথা বলেছেন,পরামর্শক দলের প্রয়াত চেয়ারম্যান শ্রদ্ধেয় জামিলুর রেজা চৌধুরীসহ সবাইকে স্মরণ করেছেন। নিজের পরিবারকে হেয় করার বলেছেন ঠিক আছে। তবে জাতীয় অনুষ্ঠানে সরাসরি ডক্টর ইউনূসের কথা বলা ওনার মুখে আনন্দঘন মুহূর্তে শোভা পায়না। বিষয়টি বিতর্কিত। এটি দলের অন্যান্য নেতারা বলতে পারেন। বরং উনি এই উপলক্ষে জাতীয় ঐক্যের আহ্বান জানাতে পারতেন।   

আয়োজনে কেবিনেট সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামের উদ্বোধনী ভাষণ ভালো লেগেছে। বিশেষত তিনি মেগা প্রকল্পের মাঠ পর্যায়ের কাজে সরাসরি জড়িত ব্যবস্থাপকদের প্রচিত করার উদ্যোগ নেয়া থেকে অন্যান্য আমলারা  শিখতে পারেন। 

সাধারণ সমীক্ষায় আছে সেতু জিডিপিতে সরাসরি ১.৫ শতাংশ জোগান দিবে। সেতুর সকল স্থাপনা আজ থেকে সেতুর ডিজাইন জীবনে সুসংরক্ষিত করা হবে প্রথম কাজ। সোশ্যাল মিডিয়ায় কিন্তু কিছু ছবি দেখলাম সেতুর সংযোগ সড়কের পাশের কাটা তারের বেষ্টনী উঁচিয়ে দর্শক অনুপ্রবেশ করছে। রেলিংয়ের নাট হাত দিয়ে খুলে ফেলা, কেন এমন হলো? তাহলে কী নিরাপত্তার ঘাটতি? 

আমি নিজে বঙ্গবন্ধু যমুনা সেতুর বাস্তবায়ন সময়ে এবং উদ্বোধনকালে সম্পৃক্ত ছিলাম। সেতুর বাস্তবায়নের লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য কিন্তু এখনো বাস্তবায়িত হয়নি। সেতুর দুইপাড়ে এখনো বিশাল যানজট হয় নানা কারণে। সেতুর পশ্চিম পাড়ের সড়ক মৃত্যুফাঁদ। সেতু সংলগ্ন শেখ রাসেল শিল্প পার্ক কিন্তু এখনো ঘুমিয়ে আছে। গ্যাস সংকটের কারণে অন্যান্য এলাকায় এবং গ্যাস সরবরাহ করা সত্ত্বেও ঈশ্বরদী ইপিজেডে কিন্তু কাক্সিক্ষত শিল্পায়ন হয়নি। 

যাক সেই কথা, পদ্মা সেতুর অনন্য স্থাপনাশৈলী, রাতের আলোর বিচ্ছুরণ কিন্তু দেশ-বিদেশের অনেক পর্যটক আকর্ষণ করবে। পদ্মার দুইপাড়ে যথাযথ নিরাপত্তা ব্যবস্থা ব্যবস্থাসহ আন্তর্জাতিক মানের হোটেল, রেস্টুরেন্ট, খেলাধুলা, বিনোদনের ব্যবস্থা করা হলে অচিরেই পর্যটন খাত থেকে অনেক উপার্জন হবে। দুইপাড়ে দুটি পৃথক থাকা এবং অচিরে দুটি রেলস্টেশন গড়ে ওঠা কাজে লাগবে।

আমি মনে করি, নদীর উভয় পারে আধুনিক শপিংমল, ক্রীড়া কমপ্লেক্স, কিছু সরকারি অফিস গড়ে তোলা যায়। জানি, আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, অলিম্পিক ভিলেজ, কনভেনশন সেন্টারে গড়ে তোলার পরিকল্পনা আছে। বিশেষত সেতুর পশ্চিমপাড় থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত অংশটিতে যথেষ্ট মুখ্য এলাকা রেখে অস্ট্রেলিয়ার গোল্ড কোস্টের মতো পরিবেশ সম্মত উপায়ে গড়ে তোলা যায়।

একটি প্রভাব কিন্তু সহজেই পরিলক্ষিত হবে দক্ষিণ অঞ্চল থেকে প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ যানবাহন ঢাকায় দ্রুত চলে এসে অসহনীয় যানজটের পরিস্থিতি আরো নাজুক করবে। বিশেষত সায়েদাবাদ,গুলিস্তান এলাকায় বিশাল যানজট হতে পারে। যত শিগগিরই সম্ভব বাস টার্মিনাল বুড়িগঙ্গার ওপারে সরিয়ে নিতে হবে। কাজটি আগেই করা উচিত ছিল। ঢাকা সিটি সার্কুলার রোড, এলিভেটেড এক্সপ্রেস হাইওয়ের কাজ দ্রুত শেষ না করলে অনেকেই অচিরে সমালোচনা করতে শুরু করবে। 

আমি ভাঙ্গার অপুরূপ সড়ক মিলন মোহনায় মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর শহিদের স্মরণে শিখা অনির্বাণ নির্মাণের সুপারিশ করছি। কিছু দূরে ভাঙ্গা এলাকায় একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ জাদুঘর, একটি প্লানেটোরিয়াম স্থাপন করা যেতে পারে। পদ্মা সেতু নির্মাণের ফলে যারা উপার্জন হারিয়েছে তাদের তালিকা করে প্রশিক্ষণ দিয়ে অন্যদের সাথে নিয়োগের সুযোগ করে দিতে হবে। আমি শুধু মাওয়া আর জাজিরা প্রান্তে আর সন্নিহিত এলাকার কথা বললাম। একই মডেল একদিকে পায়রা, অন্যদিকে বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, যশোর, কুষ্টিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত হতে পারে। 

বড় কথা, দক্ষিণ বাংলা ডেভেলপমেন্ট তরসূট নামের একটি পৃথক অথরিটি করে সমন্বিতভাবে উন্নয়নকাজ করতে হবে। অর্জনের উচ্ছ্বাসে সেতুর আদর্শ এবং উদ্দেশ্য যেন হারিয়ে না যায়। সেই সঙ্গে সেতুর রেল অংশ নির্মাণকাজ কিন্তু দ্বিগুণ সতর্কতার সঙ্গে করতে হবে। জানিনা সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলতে পারেন, সড়ক সেতুতে যান চলাচল রেলসংযোগ স্থাপনে কোনো প্রভাব ফেলবে কিনা? পরিশেষে বলি, পদ্মা সেতু যদি রাজনীতিকদের মনোজগতে জাতীয় স্বার্থে সহমর্মিতার সৃষ্টি করে সেটি হবে বিশাল অর্জন। সুযোগ ছিল প্রধানমন্ত্রীর ঐক্যের আহ্বান জানানো। ইতিমধ্যে এ আলোচনা উঠছে। তাছাড়া ইতিমধ্যে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী কিন্তু ইতিমধ্যেই প্রধানমন্ত্রীকে তাঁর বাবার মতো উদার হতে অনুরোধ করেছেন।

 

শেয়ার করুন