০২ মে ২০১২, বৃহস্পতিবার, ১১:০৪:৫১ পূর্বাহ্ন


ডেট লাইন ২৭ জুলাই : শঙ্কা সতর্কতা সর্বত্র
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৬-০৭-২০২৩
ডেট লাইন ২৭ জুলাই : শঙ্কা সতর্কতা সর্বত্র


১২ জুলাইয়ে রাজধানী ঢাকায় বিএনপি ও আওয়ামী লীগের মহাসমাবেশ পাশাপাশি অনুষ্ঠিত হতে দেখে প্রশংসা করে গেছেন মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারী উজরা জেয়া ও ডোনাল্ড লু’রা। চলমান ওই মাসের শেষ প্রান্তে এসে আরো একটা ওইরকম শো ডাউন দুই দলের। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে তারুণ্যের বিশাল জনসমুদ্রে মির্জা ফখরুলের পরবর্তি কর্মসূচি ছিল ২৭ জুলাইয়ের মহাসমাবেশ। বিএনপি তাদের এক দফা কর্মসূচি সফল করতে ডেকেছে ওই মহাসমাবেশ। কিন্তু বরাবরের মত বিএনপির সমাবেশের দিনে শান্তি ও উন্নয়ন মহাসমাবেশ এবারও ডেকেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগের সভা অনুষ্ঠান করার স্থান বায়তুল মোকাররম দক্ষিণগেট। বিএনপির স্থান ঠিক হয়নি এখনও। তবে বিএনপি ডিএমপির কাছে নয়া পল্টন তাদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সম্মুখে অথবা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করার অনুমতি চেয়েছে। 

হঠাৎ এ সমাবেশ ঘিরে শঙ্কা

১২ জুলাইয়ের দুই পক্ষের সমাবেশ নিয়ে তেমন কোনো উৎকণ্ঠা না থাকলেও হঠাৎ করেই ২৭ জুলাইয়ের সমাবেশ নিয়ে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। কথা বলছে এ নিয়ে দুই পক্ষই। আওয়ামী লীগ প্রতিবারই বিএনপির সমাবেশ বা কর্মসূচির দিনে শান্তি সমাবেশ করে আসছে। এবার তার সঙ্গে যোগ হয়েছে শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশ। উন্নয়ন বলতে সরকারের দীর্ঘ ১৪ বছরের বেশি সময় ধরে যে উন্নয়ন কর্মকান্ড করে এসেছে, সেগুলোর ফিরিস্তি বা বর্ণনা মানুষের কাছে তুলে ধরা। এবং একই সঙ্গে বিএনপি যেন কোনো রকম নাশকতামূলক কর্মকান্ড না করতে পারে সে জন্য জনগণের জান ও মালের দোহাই দিয়ে রাজপথে অবস্থান নেয়া। এর মূল উদ্দেশ্য বিএনপিকে ফাঁকা মাঠে কর্মসূচি পালন করতে না দেয়া একই সঙ্গে রাজপথ বিএনপির কাছে ছেড়ে না দেয়া। 

বিএনপির অভিযোগ 

২৪ জুলাই সোমবার বিএনপি এ নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছে। এতে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, সরকার পতনের এক দফা দাবিতে ডাকা ২৭ জুলাইয়ের মহা সমাবেশ ঘিরে নাশকতার অশঙ্কা করেছেন। মির্জা ফখরুল বলেন, ‘যুবলীগের কর্মসূচি ছিল ২৪ জুলাই। আমাদের কর্মসূচি ঘোষণা করার পর যুবলীগ তাদের কর্মসূচি ২৭ জুলাইয়ে নিয়ে গেছে। সংঘাতপূর্ণ অবস্থা সৃষ্টি করতে তারা এটা করেছে, তা পরিষ্কার। কোনো ধরনের সহিংস ঘটনা ঘটলে তার দায় সরকারকেই নিতে হবে।’

বিএনপি মহাসচিব আরো বলেন, আপনারা নিশ্চয়ই লক্ষ্য করেছেন, কয়েক দিন ধরে সরকারের মন্ত্রীরা হুমকি দিচ্ছেন। তাঁরা এমন কথাও বলছেন, ছেঁকে ছেঁকে তোলা হবে। তাঁদের যে ভাষা, তা সন্ত্রাসী ভাষা। সরকারের বিশেষ বিশেষ ব্যক্তি উসকানিমূলক কথা বলছেন, একই সঙ্গে তাঁরা উসকানিমূলক কাজও করছেন বলে দাবি করেন বিএনপির মহাসচিব। তিনি এ সময় যুবলীগের ২৪ জুলাইয়ের কর্মসূচি ২৭ জুলাইয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রসঙ্গ আনেন।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘এটা কোনোমতেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। আমরা এখন পর্যন্ত যতগুলো আন্দোলন করেছি, প্রতিটি আন্দোলন শান্তিপূর্ণ ছিল। আপনারা দেখেছেন, আমাদের দুজন লোক নিহত হয়েছেন, নয় হাজার মিথ্যা মামলা করেছে, তারপরও আমরা শান্তিপূর্ণভাবে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি। আমরা আশা করব, ভয়াবহ সংঘাতপূর্ণ পরিস্থিতি পরিহার করবে আওয়ামী লীগ ও যুবলীগ এবং সরকার এটা নিশ্চিত করবে।’

তারুণ্যের জয়যাত্রা ব্যানারে সমাবেশ করবে যুবলীগ 

বিএনপির তারুণ্যের সমাবেশের দিনই শনিবার (২২ জুলাই) ‘তারুণ্যের জয়যাত্রা’ ব্যানারে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছিল যুবলীগ। বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ আয়োজিত ‘শান্তি সমাবেশ’ থেকে যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল এ ঘোষণা দিয়েছিলেন।

দেশব্যাপী বিএনপি-জামায়াতের ‘হত্যা, ষড়যন্ত্র, নৈরাজ্য ও তা-বের’ প্রতিবাদে এই সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে বলে সংগঠনটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। ‘তরুণ প্রজন্ম দেব ভোট, ভোটের জন্য যুদ্ধ হোক’ স্লোগানে বিএনপির তিন যুব-ছাত্রসংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল রাজধানী ঢাকাসহ ছয়টি বড় শহরে ‘তারুণ্যের সমাবেশ’ করে। এর প্রতিবাদে ‘তারুণ্যের জয়যাত্রা’ ব্যানারে সমাবেশের ঘোষণা দিল আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুবলীগ।

যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান বলেন, ‘বিএনপি সন্ত্রাসীদের নিয়ে সমাবেশ করছে। এর প্রতিবাদে নতুন করে কর্মসূচি ঘোষণা করছি। আগামী ২৪ জুলাই (সোমবার) বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে তারুণ্যের জয়যাত্রা ব্যানারে সমাবেশ করব।’ 

যুবলীগের সমাবেশের তারিখে পরিবর্তন 

শনিবার ২৪ জুলাই তারুন্যের সমাবেশ ঘোষণার পর ওইদিন (শনিবার) রাতে যুবলীগের কেন্দ্রীয় দপ্তর থেকে সাংবাদিকদের জানানো হয় ‘তারুণ্যের জয়যাত্রা’ সমাবেশ ২৪ জুলাইয়ের পরিবর্তে ২৭ জুলাই নির্ধারণ করা হয়েছে। এটা দেয়া হয় ২৭ জুলাই বিএনপির মহাসমাবেশ ঘোষণার পরই। 

এরপর ২৪ জুলাই যুবলীগের ওই সমাবেশের আকারে আবারও পরিবর্তন আনা হয়। এবার তারুণ্যের সমাবেশ থেকে বেড়ে তিন সংগঠনের সমাবেশের ডাক দেয়া হয়। ২৪ জুলাই সোমবার  ঘোষণা দেয়া সে সমাবেশের নামকরণ হয় শান্তি সমাবেশ। বলা হয়েছে, বিএনপি-জামায়াতের ‘নৈরাজ্যের প্রতিবাদে’ এই সমাবেশ করবে যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগ। ওইদিন সোমবার দুপুরে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত যৌথ সংবাদ সম্মেলনে যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন।

যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক উল্লেখ করেন, যে গোষ্ঠী বাংলাদেশের বিরুদ্ধে, বাংলাদেশের অগ্রগতির বিরুদ্ধে, বিশেষ করে বঙ্গবন্ধু কন্যার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে- সেই গোষ্ঠী হলো বিএনপি-জামায়াত। তারা একটি দেশবিরোধী শক্তি। সেই বিএনপি-জামায়াতের হত্যা-ষড়যন্ত্র, নৈরাজ্যের প্রতিবাদে আওয়ামী যুবলীগ, আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগের উদ্যোগে আগামী ২৭ জুলাই জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে শান্তি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।

সতর্কতা আওয়ামী লীগের মুখেও 

২৭ জুলাইয়ে মহা সমাবেশ ঘিরে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, আওয়ামী লীগ সংঘাত চায় না। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সংঘাতের আশঙ্কাও নেই। তিনি বলেন, সংঘাতের উসকানি আমরা কখনো দেব না। কারণ, আমরা পাওয়ারে আছি। তবে কেউ যদি সংঘাত ও অশান্তি সৃষ্টির চেষ্টায় উসকানি দেয়, জনগণের জানমাল রক্ষায় শান্তির জন্য প্রটেকশন দেব। 

একই ইস্যুতে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ স্থানীয় একটি পত্রিকাকে এ সমাবেশ নিয়ে মন্তব্য করতে যেয়ে বলেন, বিএনপি (২৭ জুলাই) বৃহস্পতিবার ঢাকায় কোনো ধরনের সহিংসতার চেষ্টা করলে তার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী রয়েছে। আমরাও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে আছি। তাছাড়া ওইদিন ঢাকায় আমাদের তিন সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সমাবেশ রয়েছে। বিএনপি গায়ের জোরে কিছু করতে পারবে না। 

পরিশেষে

বিএনপি ও আওয়ামী লীগের এমন পাশাপাশি কমুসূচিতে রাজধানীর বাসিন্দারা ইতিমধ্যে সতর্কতা অবলম্বন শুরু করেছেন। ওই দিন সরকারি কর্মদিবস হলেও ওইদিন মতিঝিল, গুলিস্তান, কাকরাইল, শান্তিনগর, শাহবাগ, মালিবাগমুখী মানুষ অতি সতর্কতার ভাবছেন। এমনিতেই এমন এক মহাসমাবেশের দিন সকাল থেকেই পাড়া মহল্লা থেকে গাড়ি বা বিভিন্ন যানবাহন নিয়ে সমাবেশস্থল ছুটতে দেখা যায়। সমস্যা হয়েছে, এখন দুই পক্ষই এমন সমাবেশ যাত্রা শুরু করবে বিভিন্ন স্পট থেকে। ফলে সমাবেশের আগেই ওইসমস্ত স্থানেই সংঘাতের সৃষ্টি হয় কি-না এ নিয়েও দুশ্চিন্তা। 

এছাড়াও দুই দলই এ মহাসমাবেশ সফল করতে রাজধানী ঢাকা ছাড়াও আশপাশ থানা, জেলা থেকেও মানুষ যোগ দিতে আসেন। তারা বেশিরভাগ বাস ভাড়া করে বা বিভিন্ন যানবাহনে চলে আসেন রাজধানীতে। এতে করে ওইসব লোকজনের মধ্যে রাস্তায় যদি কোনো সংঘর্ষ হয়? সে শঙ্কাও উড়িয়ে দেয়া যায় না। সব মিলিয়ে একই দিনে এমন কর্মসূচি নিয়ে বাড়তি টেনশন দুশ্চিন্তা সর্বত্র। 

এ ব্যাপারে পুলিশের নিরাপত্তা দানের কোনো প্লান এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। তবে বরাবরের মত আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা এ ব্যাপারে তৎপর থাকেন। বিশেষ করে বিএনপি ও সমামনা দলসমূহের এমন সমাবেশে তারা রাজধানীতে প্রবেশের বিভিন্ন স্পটে তল্লাশিও করে থাকেন। এতে করে রাজধানীতে প্রবেশের মুখে বিশাল যানযটের সৃষ্টি হলেও সেটা নিরাপত্তার স্বার্থে, জনগণের স্বার্থেই করেন বলে তারা বলে আসছেন।

শেয়ার করুন