২৯ এপ্রিল ২০১২, সোমবার, ০৫:৫৯:৩৮ পূর্বাহ্ন


মন্তব্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের
‘জামায়াতকে সমাবেশের অনুমতির পেছনে ‘যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতি কাজ করেছে’
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ১২-০৬-২০২৩
‘জামায়াতকে সমাবেশের অনুমতির পেছনে ‘যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতি কাজ করেছে’ গয়েশ্বর চন্দ্র রায়/ফাইল ছবি


এক দশক পর জামায়াতকে ঢাকায় সমাবেশের অনুমতির পেছনে ‘যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতি কাজ করেছ’ বলে মন্তব্য করেছেন গয়েশ্বর চন্দ্র রায়।

 জামায়াতে ইসলামীর সমাবেশ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গন কৌতুহল আলোচনার প্রেক্ষাপটে সোমবার দুপুরে এক আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এরকম মন্তব্য করেন।

 তিনি বলেন, ‘‘ গতকাল সারাদিন সাংবাদিকদের টেলিফোন বাজছে। বিষয়ৃ জামায়াত মিটিং করলো। জামায়াত একটা রাজণৈতিক দল, তারা মিটিং করবেৃ এটাই তো স্বাভাবিক। এতো দিন করতে পারে নাই কেনো এটা প্রশ্ন হতে পারে। এখন কেনো করলো? কেউ কেউ বুঝাইতে চাইল এই সরকারের সাথে কোনো আতাঁত আছে কিনা, সরকারের সাথে আতাঁত করছে এজন্যই তাদেরকে অনুমতি দিছে। জামায়াতকে সরকার অনুমতি দিতে বাধ্য হইছে, সরকার বাধ্য হয়েছে এক ভিসা নীতি, এক ভিসা স্যাংশনের কারণে। সকলের কিন্তু সকাল-বিকাল-দুপুর প্রেসার মাপতে হয়, ডায়াবেটিক রোগীর সুপার মাপতে হয় সকাল অথবা রাতে। কারণ প্রেসার ও সুগারের উঠানামায় শারীরিক সমস্যা পড়তে হয় প্রায় সময়ে।সুতরাং বুঝতেই পারছেস সব কিছুর তো শেষ আছে।”

 

জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে স্বাধীনতা ঐক্য পরিষদের উদ্যোগে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৪২তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এই আলোচনা সভা হয়।

 

‘আমরা খুশি’

 

দলের যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, ‘‘ আমরা শুনেছি, জামায়াতে ইসলাম নিষিদ্ধ। আর সারাক্ষন যিনি অকথ্য কথা বলে বেড়ান, হাসান মাহমুদ (তথ্য মন্ত্রী) ঘুমের মধ্যেও বলেন। সেই অবস্থার মধ্যে জামায়াতের সঙ্গে এমন কি হলো, এমন গোপন চুক্তি বা ষড়যন্ত্র হলো যে, জামায়াতকে এতো নির্ভিগ্নে একটা কর্মসূচি পালন করতে দেয়া হলো। আমরা তো খুশি। কারণ আমার ঘরের ডাকাত তাঁড়াতে যারা রাস্তায় নামবে তারাই আমাদের প্রকৃত বন্ধু। হোক সেটা জামায়াত, হোক সেটা কমিউনিস্ট, হোক সেটা মধ্যপন্থি, হোক সেটা গণতন্ত্র পন্থি যেকোনো রাজনৈতিক দল।”

 

তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘‘ আজকে জামায়াতের এই জিনিসটাকে উস্কে দেয়ার জন্যে আমাদের মধ্যে কিছু কিছু সংবাদ মাধ্যমের ব্যক্তি খুব আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। সরকারের এজেন্ডা উনাদেরকে দেয়া হয়েছে যে, আপনারা এই কাজটা করেন, সেই কাজগুলো তারা করছে।”

 

আলাল বলেন, ‘‘ জিনিস অত্যন্ত পরিস্কার। এটা হচ্ছে অধিকার, আরেকটা হচ্ছে অস্তিত্ব। জামায়াত লড়াই করছে তাদের অধিকারের জন্য, আমরা লড়াই করছি আমাদের অস্তিত্বের জন্য। আমাদের মূল নেতাকে গ্রেফতার করে রেখেছেন। এতো বছর ধরে যে, বেগম খালেদা জিয়ার নামের উপরে লক্ষ মানুষ দিনরাত কোনো কিছু মানেনি, ঝড়-বৃষ্টি-বাদল মানেনি তার কথার শুনার জন্য হাজির হয়- তাকে ঘরে আটকিয়ে রেখেছেন। আমাদের সেক্টেন্ড কমান্ডকে হাজার মাইল দূরে রেখেছেন। আমরা এতো সহজে ছেড়ে দেবো। আমাদের শুধু অধিকার নয়, আমাদের তো অস্তিত্বের প্রশ্ন। বাংলাদেশের অস্তিত্বের প্রশ্নের আমরা কোনো আপোষ করবো না এই সরকারের সঙ্গে।আর অধিকার আদায়ের লড়াই যারা আছেন, যে পরিচয়ে সেখানে আছেন সবাই এই মুহুর্তে আমাদের বন্ধু। সবার হিসাব-নিকাশ পরে হবে সময় তৈরি হলে।”

 

‘কিছু গণমাধ্যমের সমালোচনা’

 

আলাল বলেন, ‘‘ ভারতে চলচিত্র পরিচালক যারা আছেন তাদেরকে নিয়ে একটা সংগঠন আছে তার নাম হচ্ছে ‘ডাইরেক্টরস গিল্ড’। আমরা বাংলাদেশে সারা জীবন শুনেছি সম্পাদক পরিষদ পত্রিকার যারা এডিটর আছেন তাদের সংগঠন, সারা জীবন শুনেছি নোয়াবৃ পত্রিকার মালিক যারা তাদের সংগঠন। হঠাত করে দেখলাম একটা নতুন সংগঠন তৈরি হয়েছে এই সরকারের আমলে। নাম হচ্ছে কি? এডিটর গ্লিড। এটার প্রধান হচ্ছে মোজাম্মেল বাবু সাহেব।  তিনি(মোজাম্মেল বাবু) প্রতি সাপ্তাহে বসে লোকজন ডাকেন, সেখানে বসে তাত্ত্বিক আলোচনা হয়। সেখানে বসে ভাবটা এমন হয় যে, সরকারকে বোধহয় কাতু-কুত দিচ্ছেন অথবা পেটে খোঁজা দিয়ে মনে করিয়ে দিচ্ছে.. এই আপনি কিন্তু এই ভুল করছেন এটা ঠিক করেন-এটা ঠিক করেন। এই যদি হয় সংবাদ মাধ্যমে দায়িত্ব তাহলে সেটা সংবাদ মাধ্যম না, সেটা গণমাধ্যম তো না-ই, সেটা সরকারের প্রচার মাধ্যম।”

 

‘তালিকা হচ্ছে’

 

সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, ‘‘ আমাদের তালিকা করেন পাড়ায় পাড়ায়, এলাকায় এলাকায়, অন্যান্য বিরোধী দলের নেতাদের তালিকা করেন। আপনাদের তালিকাও প্রস্তুত হচ্ছে মনে রাখবেন। কেউ কেউ অদৃশ্যে বসে করছে। যদি নাই করে থাকে আমাদের কাছে তো তালিকা নাই।আজকে সচিবালয় থেকে প্রকাশিত হচ্ছে যে, ২০১৮ সালের দুই নম্বরি-ছয় নম্বরি নির্বাচনে কে কোথায় কোন দায়িত্ব পালন করেছেন, কোন সচিব ছিলেন, কোন অফিসার সেখানে ছিলেন। আজকে সচিবালয় থেকেই তালিকা প্রকাশিত হচ্ছে ২০১৮ এর এই চোরাই নির্বাচনে চোরাই কার্য-এ কোন পুলিশ অফিসার জড়িত ছিলেন, কে কোন জেলার দায়িত্বে ছিলেন, কোন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোন অফিসার, কোন সদস্য সেখানে দায়িত্ব পালন করেছেন। এগুলো কি আমরা ছাপছি? আমরা মার খেতে খেতে অতিষ্ঠ হয়ে গেছি, আমরা মার খাচ্ছি আর আহত হচ্ছি। আমাদের ১৭ জন ভাই নিহত হয়েছে সাম্প্রতিক আন্দোলনে।”

 

গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘‘ গত ১৫ বছরে যারাই যা কিছু করেন, ঘুষ খান, দুর্নীতি করেন, মেগা প্রজেক্ট থেকে কমিশন পান পাইছেন। বকসিস পান যা-ই পান। দেখেন এই সব যে পাঠালেন বিদেশে নিরাপদ থাকার জন্য ৃ সচিবালয়ে কিছু আছে, পুলিশ ডিপার্টমেন্টে কিছু। এদের সংখ্যা দেখবেন ম্যাক্সিমাম ২-৩% লোক করাপশন করছে। ৯৭% তো আমার মতো আপনার মতোইৃ মাসের শেষে বাড়ি ভাড়া দিতে পারে না, স্কুলের বেতন দিতে পারে না, বাচ্চার পেছনে পয়সা দিতে পারে ন্।া হয়ত পুলিশের মধ্যে ঊধর্বতন কিছু আছে-এটলিস্ট এক হাজার হবে না, সচিবালয়ও বোধহয় এইরকমই হবে। সুতরাং কারো চাকুরি নিয়ে টান দেবে না।”

 

‘সংলাপ প্রসঙ্গে’

 

গয়েশ্র চন্দ্র রায় বলেন, ‘‘ আলোচনা-সংলাপ। এখন তো আপনাদের বিদায়ের সময়। আমরা সংলাপ করব কেনো? সংলাপ তো প্রতিদিন আমরা কথা বলতেছি যে, আপনারা শুনতেছেন নাৃ. সংলাপ তো ডেইলি হচ্ছে। সুতরাং এই সংলাপে পরিসমাপ্তিটা কি? শেখ হাসিনা যদি বুদ্ধিমান হয় ১০ দফা মেনে নেন এবং ১০ দফা মেনে নিয়ে আগামী দিন একটা সুষ্ঠু অবাধ নির্বাচনের জন্য যেটা দিতে হবেৃ কেয়ারটেকার গভমেন্ট বা তত্ত্বাবধায়ক সরকার বা নির্বাচনকালীন সরকার সেটা নিয়ে আলোচনা হতে পারে। আগে দাবি মানতে হবে। তারপরে একটা সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য পারস্পরিক সহযোগিতার মধ্য দিয়ে আমরা বর্তমান ক্রান্তিকাল পার করতে পারি, জনগন মুক্তি পাকৃ এটাই আমরা চাই।”

 

সংগঠনের আহ্বায়ক কাজী মনিরুজ্জামান মুনিরের সভাপতিত্বে ও  সদস্য সচিব শাহজালাল শিকদার সাগরের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ, তাঁতী দলের জেএম আনিসুর রহমান, সাখাওয়াত হোসেন আশিক, মহানগর বিএনপির ইসমাইল হোসেন তালুকদার খোকন, কৃষক দলের জাহাঙ্গীর আলম প্রমূখ বক্তব্য রাখেন।

 

অনুষ্ঠানে গুম হওয়া মফিজুল ইসলাম, কাওসার হোসেন, তরিকুল ইসলাম, মাহবুবুর রহমান বাপ্পী, মাহফুজর রহমানের পরিবারের সদস্যরাও তাদের স্বজনদের ফিরে পাওয়ার আকুতির কথা জানান।


শেয়ার করুন