৩০ এপ্রিল ২০১২, মঙ্গলবার, ০১:৫৮:৩০ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
‘বিশেষ চাহিদা সম্পন্নদের প্রতিভা বিকাশে কোন ধরনের প্রতিবন্ধকতা রাখা যাবে না’ সরকার ও বেসরকারি উদ্যোগে দরিদ্রমুক্ত দেশ গড়ে উঠবে - আসাদুজ্জামান খান কামাল ৭০ শতাংশ মৃত্যু অসংক্রামক রোগে, বাজেটে বরাদ্দ বৃদ্ধির দাবি ‘বিদেশে দেশবিরোধী অপপ্রচারকারীদের বিরুদ্ধে স্থানীয় আইনে ব্যবস্থা নিন’ ভূল স্বীকার করে সরে দাড়ানোয় একজনের বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহার বাফেলোতে সন্ত্রাসীদের গুলিতে দুই বাংলাদেশী নিহত ‘শেরে বাংলা আপাদমস্তক একজন পারফেক্ট বাঙালি ছিলেন’ বিএনপির বহিস্কৃতদের জন্য সুখবর! মে দিবসে নয়পল্টনে বিএনপির শ্রমিক সমাবেশ উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়ার জের, বিএনপির বহিস্কার ৭৬


এশিয়া কাপ
দৃষ্টি ভারত-পাকিস্তানের দিকেই
সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ৩০-০৮-২০২৩
দৃষ্টি ভারত-পাকিস্তানের দিকেই ভারত ও পাকিস্তান ক্রিকেট টিমের সদস্যরা


শুরু হয়ে গেল এশিয়ার সবচেয়ে মেগা এশিয়া কাপ ক্রিকেটের জমজমাট আসর। ছোট ও অপেক্ষাকৃত দুর্বল দলের সঙ্গে অনেকটাই গা গরমের ম্যাচ খেলছে হট ফেভারিটরা। যেমনটা ৩০ আগস্ট পাকিস্তানের খেলা নেপালের বিপক্ষে। শ্রীলঙ্কা বাংলাদেশ অবশ্য গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ ৩১ আগস্ট। তবে সহসাই এশিয়ার সবচে আলোচিত দুই দল হাইভোল্টেজের এক ম্যাচে মুখোমুখি হবে শ্রীলঙ্কায়। ২ সেপ্টেম্বর সে ম্যাচ। বলার অপেক্ষা রাখে না, ওই ম্যাচে লড়বে পাকিস্তান ও ভারত। পাকিস্তান স্বাগতিক হলেও ভারত-পাকিস্তান আঞ্চলিক ভূরাজনীতির কারণে হাইব্রিড পদ্ধতিতে ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ, আফগানিস্তান, নেপাল ৬ জাতির টুর্নামেন্টের ১৩ খেলার চারটি পাকিস্তানে আর ৯টি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে শ্রীলঙ্কায়। পাক-ভারত ম্যাচটি শ্রীলঙ্কায় নিরপেক্ষ ভেন্যুতে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো বিশেষত ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কায় ক্রিকেট এখন জনপ্রিয়তা শীর্ষে।  কোটি কোটি ভক্ত অনুরাগী ক্রিকেট উন্মাদনায় মেতে থাকে। এবার আবার মাসখানেকের ব্যবধানে অনুষ্ঠিত হবে বিশ্বকাপ। তাই ইতিমধ্যেই ক্রিকেট উত্তেজনা তুঙ্গে পৌঁছেছে। উপমহাদেশে কিন্তু ভারত, পাকিস্তান ক্রিকেট নিয়ে ভিন্নমাত্রার উন্মাদনা আছে। রাজনৈতিক কারণে দুই দল এখন দ্বিপাক্ষিক সিরিজ খেলে না। দেখা হয় শুধু আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে। এবারের এশিয়া কাপে স্বল্প সময়ের ব্যবধানে তিনবার ওদের মুখমুখি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এশিয়া কাপ শুধু না বিশ্ব কাপেও ভারত-পাকিস্তান ফেভারিট দল। নিঃসন্দেহে বিশ্ব বিভিন্ন স্থান থেকে কোটি কোটি ক্রিকেট অনুরাগী নানাভাবে ম্যাচগুলো উপভোগ করবে। যদিও শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ এবং আফগানিস্তানের সম্ভাবনা আছে ফেভারিট দল দুটিকে চমকে দেওয়ার। তবুও সাধারণ হিসাবে শিরোপা লড়াই পাকিস্তান ভারতে সীমিত থাকবে বলে মনে করার যুক্তিসংগত কারণ রয়েছে। 

দুই দল-

ভারত : রোহিত শর্মা ( অধিনায়ক), ভিরাট কোহলি, কে এল রাহুল, সুবমান গিল, সূর্যকুমার যাদব, তিলক ভার্মা, ঈশান কিষান, হার্দিক পান্ডিয়া ( সহঅধিনায়ক), রবীন্দ্র জাদেজা, আক্সার প্যাটেল, শার্দুল ঠাকুর, জাসপ্রিত বুমরা, মোহাম্মদ সামি, মোহাম্মদ সিরাজ, কুলদীপ যাদব, প্রাসিধ কৃষ্ণা।  সানজু স্যামসং (বিকল্প খেলোয়াড়)। 

পাকিস্তান : বাবর আজম (অধিনায়ক), আব্দুল্লাহ শফিক, ফখর জামান, ইমাম উল হক, সালমান আলী আগা, ইফতিখার আহমেদ, তৈয়ব তাহির, মোহাম্মদ রিজওয়ান, মোহাম্মদ হারিস, শাদাব খান, মোহাম্মদ নেওয়াজ, উসামা মীর, ফাহিম আশরাফ, হারিস রউফ, মোহাম্মদ ওয়াসিম (জুনিয়র), নাসিম শাহ এবং শাহীন শাহ আফ্রিদি। 

দুই দলে কিন্তু ম্যাচ জয়ী ইমপ্যাক্ট খেলোয়াড়দের সমাহার। ভারত এশিয়া কাপের সবচেয়ে সফল দল। এখন পর্যন্ত সাতবার জিতেছে শিরোপা। সেই তুলনায় পাকিস্তানের শিরোপা জয়ের রেকর্ড মাত্র দুইবার। কিন্তু শীর্ষ খেলোয়াড় এবং সাম্প্রতিক ফর্মের বিবেচনায় এবারের টুর্নামেন্টে পাকিস্তান সবচেয়ে প্রস্তুত এবং তুখোড় দল। ভারত পাকিস্তান  ক্রিকেট যুদ্ধ এখন এশেজ মোকাবিলার মতোই আকর্ষণীয়। নির্দষ্ট দিনে যে দল স্নায়ুর চাপ মোকাবিলা করে নিজেদের স্বাভাবিক খেলাটা খেলতে পারে ওরাই পাবে জয়। গ্রুপ পর্যায়ে একবার, গ্রুপ অব ফোরে একবার এবং ফাইনালে সম্ভাব্য একবার তিনবার দেখা হতে পারে দুই দলের স্বল্প সময়ের ব্যবধানে। অবশ্য বর্তমান চ্যাম্পিয়ন শ্রীলঙ্কা অথবা একদিনের ক্রিকেটের মেধাবী দল বাংলাদেশ এমনকি আফগানিস্তানকেও একেবারে হিসাবের বাইরে রাখা যাবে না। 

পাকিস্তান কিন্তু খেলার মধ্যেই আছে। দলে যেমন একদিনের ক্রিকেটের তিন সেরা ব্যাটসম্যান বাবার আজম, ইমাম উল হক, ফখর জামান আছে, তেমনি আছে মিডল অর্ডারে মোহাম্মদ রিজওয়ান, মোহাম্মদ হারিস এবং তরুণ তৈয়ব তাহির। স্লগ ওভারে বিধ্বংসী ব্যাটিং করার জন্য আছে শাদাব খান, ইফতিখার আহমেদ এবং চৌকস খেলোয়াড় ফাহিম আশরাফ। ইদানীং আনপ্রেডিকটেবল খ্যাতি থেকে বেরিয়ে এলেও নিজেদের ব্যাটিং দক্ষতা সব সময় পুরোপুরি মেলে ধরছে বলা যাবে না। ভারতের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের শঙ্কা ভারতের এক্স ফ্যাক্টর জাসপ্রিত বুমেরাকে মোকাবিলা করা, রবীন্দ্র জাদেজা এবং কুলদীপ যাদবকে সামলানো। ভারতের যেমন বুমরা পাকিস্তানের তেমনি শাহীন শাহ আফ্রিদি। সঙ্গে যোগ করতে হবে তুখোড় ফর্মে থাকা হারিস রউফ এবং নাসিম শাহ। তরুণ উসামা মীর আছে বিকল্প হিসাবে। পাকিস্তান দলের লেট মিডল অর্ডার ব্যাটিং গভীরতা বাড়ানোর জন্য দলে ভিড়িয়ে এনেছে পেস অল রাউন্ডার ফাহিম আশরাফকে। স্পিন আক্রমণের দায়িত্বে থাকবে শাদাব খান এবং মোহাম্মদ নেওয়াজ। দলে থাকলে সালমান আগা থাকবে বিকল্প স্পিনার হিসেবে। সব চেয়ে বড় পরিবর্তন লক্ষণীয় পাকিস্তানের বদলে যাওয়া ফিল্ডিং দক্ষতা। সম্প্রতি শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে তুখোড় ফিল্ডিং করেছে পাকিস্তান। নিজেদের গ্রুপে ভারত, নেপাল না হলেও কে হারিয়ে পাকিস্তান গ্রুপ সেরা হবে। তবে গ্রুপ অব ফর হবে কঠিন। ধারাবাহিকভাবে দলকে ভালো খেলতে হবে শিরোপা জয় করতে হলে। 

ভারত কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে সব ফরম্যাটে সব টুর্নামেন্টে ফেভারিট থাকলেও দীর্ঘদিন জয় করেনি কিছুই। এবার কিন্তু অনেকের মতে এশিয়া কাপ এবং বিশ্ব কাপ দুটি টুর্নামেন্টে ওদের ফেভারিট বিবেচনা করা হচ্ছে। এই মুহূর্তে ভারত দলে একই মানের পর্যাপ্ত খেলোয়াড় থাকায় অনেক বাছ বিচার করে শেষ মুহূর্তে দল ঘোষণা করেছে ভারত। দলে শিখর ধাওয়ান, রবিচন্দ্র আশ্বিন, চাহালের মতো পরিণত-পরীক্ষিত খেলোয়াড়দের জায়গা না হওয়ায় ভারতজুড়ে বিস্ময় প্রকাশ করা হয়েছে। দীর্ঘসময় খেলার বাইরে থাকা শ্রেয়াস আয়ার, কে এল রাহুলকে ফেরানো হয়েছে দলে। জাসপ্রিত বুমরা ফিরে এসেছে আয়ারল্যান্ডের বিরুদ্ধে সিরিজে নেতৃত্ব দিয়ে। তরুণ জাসওয়ালের জায়গা না হলেও নেওয়া হয়েছে তিলক ভার্মাকে। সকল ফরমেট ক্রিকেটের শীর্ষ স্থানীয় ব্যাটসম্যান রোহিত শর্মার সঙ্গে ইনিংস সূচনা করবে ফর্মে থাকা সুবমান গিল।  আছে  তুখোড় ফর্মে থাকা বিশ্ব ক্রিকেটের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান বিরাট কোহলি, সূর্য কুমার যাদব, শ্রেয়াস আয়ার, কে এল রাহুল কাকে রেখে কাকে খেলাবে ভারত? জানি না ম্যাচ প্রাকটিস না থাকা শ্রেয়াস আয়ার অথবা কে এল রাহুলকে শুরুতেই খেলানোর ঝুঁকি নেবে কিনা ভারত। সেক্ষেত্রে তরুণ তিলক ভার্মার সুযোগ মিলতেও পারে। ভারতের সুবিধা হলো মিডল এবং লেট মিডল অর্ডারে হার্দিক পান্ডিয়া, রবীন্দ্র জাদেজা এবং শার্দুল ঠাকুরের মতো অলরাউন্ডারদের উপস্থিতি। শাহিন, আফ্রিদি, হারিস রউফ, নাসিম শাহ টপ অর্ডারকে কাঁপিয়ে দিলেও ভারত ব্যাটিং গভীরতা ওদের শক্তি।  জানি না জসপ্রিত বুমরা কতটা ফর্ম ফিরে পেয়েছে। তবুও বুমরা, সামি, সিরাজ, প্রাশিদ কৃষ্ণা, শার্দুল ঠাকুরদের মাঝ থেকে গড়া পেস আক্রমণ এবং জাদেজা, কুলদীপ যাদব এবং আক্সার প্যাটেলের সমন্বয়ে গোড়া স্পিন আক্রমণকে অবহেলা করার উপায় নেই। 

সেয়ানে সেয়ানে লড়াই হবে দুই সমান শক্তির দলের। বিশ্ব ক্রিকেটের দুই প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বীর খেলাগুলো সবাই গভীর আগ্রহ নিয়েই দেখবে সারা বিশ্ব। আবার বিশ্ব কাপেও ওরা আছে ফেভারিট তালিকায়।

শেয়ার করুন