০২ মে ২০১২, বৃহস্পতিবার, ০২:২০:২৬ অপরাহ্ন


বাংলাদেশে গণতন্ত্র ফেরাতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে পাশে চান মির্জা ফখরুল
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৩-০৯-২০২৩
বাংলাদেশে গণতন্ত্র ফেরাতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে পাশে চান মির্জা ফখরুল


বাংলাদেশে গণতন্ত্র ফেরাতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে পাশে চান মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। রোববার বিকালে রোহিঙ্গা সমসৗা নিয়ে এক সেমিনারে বিএনপির মহাসচিব এই আহ্বান করেন। তিনি বলেন, ‘‘ এই সংকট শুধু বিএনপির বিষয় নয় অথবা গণতন্ত্র মঞ্চ অথবা গণঅধিকার পরিষদের বিষয় নয়। এটা আজকে সমগ্র বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় সমস্যা। এর চেয়ে বড় সংকট আগে কখনো আসেনি। আমি কথা বলতে পারবো না, আমি বিচার পাবো না, আমি সিকিউরিটি পাবো না, আমি স্বাস্থ্য সেবা পাবো না, আমি শিক্ষা পাবো না… এটা হতে পারে না। আজকে এই সেমিনার যে আবেদন আমি জানাব আপনাদের(গণমাধ্যম)মাধ্যমে সকল আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর কাছে, ইন্টারন্যাশনাল কমিউনিটির কাছে, একই সঙ্গে জনগনের কাছে যে, আসুন আজকে আমরা বাংলাদেশের মানুষকে তার গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে দিতে সেই গণতন্ত্রকে যেটা জনগনকে তার ভোটের অধিকার ফিরে দেয়ার পাশে দাঁড়াই।”

নিউইয়র্ক টাইমে প্রকাশিত প্রতিবেদনের প্রসঙ্গে টেনে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ নিউইয়র্ক টাইমস পরিস্কার করে বলেছে যে, ধীরে ধীরে গোপনে নিরবে বাংলাদেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নেয়া হচ্ছে। মিলিয়স অব পিপল। এটাই সত্য।’’

‘‘ আজকে এই অবস্থা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। এখান থেকে বেরিয়ে আসার কোনো বিকল্প নেই। আমি আবারও সকলকে আহ্বান জানাতে চাই, আসুন আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে যে ভয়াবহ  দানব আমাদের বুকে ওপর বসে আছে তার থেকে আমরা নিজেকে মুক্ত করি, বাংলাদেশের মানুষকে মুক্ত করি, মুক্ত একটা সমাজ গড়ে তুলি, মুক্ত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করি।

গুলশানে হোটেল লেকশোরে বিএনপির উদ্যোগে ‘রোহিঙ্গা সংকট এবং রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তন কৌশল’ শীর্ষক এই সেমিনার হয়। এই সেমিনারে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী।

আমির খসুর বলেন, ‘‘রোহিঙ্গা সমস্যা আমাদের অর্থনীতিতেত একটি ক্রমবর্ধমান সমস্যা এবং আমাদের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য প্রায় হুমকিস্বরুপ। রোহিঙ্গাদের নিরাপদ, স্বেচ্ছায়, মর্যাদাপূর্ণ এবং টেকসই প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করার মাধ্যমে যত দ্রুত সম্ভব আমাদের সংকটের সমাধান করতে হবে তাদের মিয়ানমারে দায়িত্ব দিয়ে। এটি অর্জনের জন্য আমাদের প্রতিবেশীসহ আমাদের সকল আন্তর্জাতিক বন্ধুদের সাথে নিয়ে মিয়ানমারের উপর কার্য্কর চাপ সৃষ্টি করতে হবে। ফ্যাসিবাদী এই শাসকগোষ্ঠি নিজেদের টিকে থাকার জন্য বাংলাদেশের বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থের সাথে আপোষ করছে। জনগনের  ম্যান্ডেটসহ  একটি বৈধ সরকার, জনগনের কাছে দায়বদ্ধ, সংকটের স্থায়ী সমাধান নিশ্চিত করার জন্য সমস্ত আন্তর্জাতিক স্টেকহোল্ডারদের জড়িত করার আবশ্যক।”


‘বিরোধীদের ওপর নির্যাতন’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ বিরোধী দলের ৪ মিলিয়ন নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হয়েছে, নির্যাতন হচ্ছে প্রতিনিয়ত, মিথ্যা মামলা হচ্ছে। এরকম একটা প্রতিকূল পরিবেশে যেখানে আদালত বলতে কিছু নেই, যেখানে প্রশাসন বলতে কিছু নেই। যে প্রশাসন আছে শুধুমাত্র তাদের জন্য।”

‘‘ কিছুক্ষন আগে আমাকে এক সাংবাদিক খবর দিয়ে গেলেন যে, গতকাল ড. মুহাম্মদ ইউনুসের জন্য যে বিবৃতি দিয়েছেন প্রায় ১৬০ জন আন্তর্জাতিক বিশ্বনেতা। তাদের এই বিবৃতির বিপক্ষে দেশের ৫০ জন সম্পাদক বিবৃতি দিয়েছেন। ওই সাংবাদিক বলেছেন এটা ফেইক, এটাতে অধিকাংশই সই করেনি। এখন তারা কথা বলতে পারছেন না এজন্যে যে, কথা বললে আবার তারা নির্যাতনে পড়বেন। এই যে, ফিয়ার ভয়… সরকার সমস্ত জাতিটাকে একটা ভয়ের আস্তরের মধ্যে রেখেছে।”

তিনি বলেন, ‘‘ এই রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে কেনো আসলাম প্রশ্ন করতে পারেন। এই রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে প্রবেশের ৬ বছর হয়ে গেছে। এটা এখন বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। খবরের কাগজে দেখছেন যে, ভেতরে উগ্রবাদ দানা বাঁধছে, ভেতরে বন্দুক যুদ্ধ হচ্ছে।যেটা আমাদের জন্য শুধু নয়, আন্তর্জাতিক কমিউনিটির জন্য অত্যন্ত চিন্তার বিষয় যে, রোহিঙ্গা এলাকায় উগ্রবাদ তৈরি হচ্ছে কিনা। এ বিষয়গুলো আমাদের দেশের জন্য অত্যন্ত জরুরী। এই সরকারের জনগনের সমর্থন নেই, জনগনের সাথে সম্পর্ক নেই্। এরা অনির্বাচিত সরকার। তার যে শক্তি নাই যে শক্তি নিয়ে সে আন্তর্জাতিক বিশ্বের কাছে দাঁড়াতে পারে, কনভিন্স করতে পারে যে আমরা এই ইস্যু সমাধান করতে চাই, মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের ফেরত নেবে এবং তাদের অধিকার, তাদের সন্মান দিয়ে দেশে ফিরিয়ে নেবে।”

বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘‘জনগনের সমর্থন নিয়ে জনগনের সরকার প্রতিষ্ঠা করা যায় তাহলে এই সমস্যার দ্রুত সমাধান হবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। সেজন্য আমরা চাই এই সরকার যারা জনগনের অধিকার হরণ করে নিয়েছে তাদেরকে সরিয়ে সত্যিকার অর্থে নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকারের অধীনে একটি নির্বাচনের মাধ্যমে জনগনের সরকার প্রতিষ্ঠা হোক।”   

বিএনপি মহাসচিবের সভাপতিত্বে ও সাংগঠনিক সম্পাদক শ্যামা ওবাযেদের সঞ্চালনায় সেমিনারে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, কল্যাণ পার্টির সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, গণঅধিকার পরিষদের নুরুল হক নূর, সাবেক রাষ্ট্রদূত ইফতেখারুল করীম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শাহেদুজ্জামান, ইন্ডিপেন্ডেট ইউনিভার্সিটির ড. জাহেদুর রহমান বক্তব্য রাখেন।

সেমিনারে জাতীয় পার্টি(কাজী জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার, নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না, গণফোরামের সুব্রত চৌধুরী, গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকি, এনপিপির ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, জাগপার তাসমিয়া প্রধান, খন্দকার লুতফুর রহমান, লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, সাম্যবাদী দল(মার্কবাদী-লেলিনবাদী) হারুন চৌধুরী, সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টির আবুল কালাম আজাদ, প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দলের হারুন আল রশিদ, সমাজতান্ত্রিক মজদুর পার্টির শামসুল আলম, ন্যাপ-ভাসানীর আজহারুল ইসলাম, মুসলিম লীগের শেখ জুলফিকার বুলবুল চৌধুরী, পিপপলস লীগের সৈয়দ মাহবুব হোসেন, মাইনোরিটি জনতা পার্টির সুকৃতি মন্ডল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ, অধ্যাপক আফম ইউসুফ হায়দার ছিলেন।

বিএনপির গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, আবদুল্লাহ আল নোমান, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, বরকত উল্লাহ বুলু, আবদুল আউয়াল মিন্টু, জয়নুল আবেদীন, আহমেদ আজম খান, নিতাই রায় চৌধুরী, মনিরুল হক চৌধুরী, মিজানুর রহমান মিনু, আবদুস সালাম, জয়নাল আবদিন ফারুক, ইসমাইল জবিউল্লাহ, অধ্যাপক তাজমেরি এস এ ইসলাম, এনামুল হক চৌধুরী, মাহবুব উদ্দিন খোকন, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, রশিদুজ্জামান মিল্লাত, ফজলুল হক মিলন, আসাদুজ্জআমান, শাহজাহান চৌধুরী, নজির হোসেন, জহিরউদ্দির স্বপন, কামরুজ্জামান রতন, মীর হেলাল, তাবিথ আউয়াল, ইশরাক হোসেন, ফারজানা শারমিন পুতুল প্রমূখ সেমিনারে ছিলেন।

অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, জাপান, দক্ষিন কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া, সুইডেন, কানাডা, ইরান, নেদারল্যান্ড, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ইউএনডিপি, ইউএসএইডসহ জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন।


শেয়ার করুন