২৮ মার্চ ২০১২, বৃহস্পতিবার, ১১:৩৮:৫৫ অপরাহ্ন


ভারতীয় পত্রিকার রিপোর্ট : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার খোলাখুলিভাবে চট্ট. বন্দর ব্যবহারে ভারতীয়দের সুযোগ দেয়া যুগান্তকারী বিষয়
ভারতকে বন্দর ব্যাবহার করতে দেয়ার প্রস্তাব
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৫-০৫-২০২২
ভারতকে বন্দর ব্যাবহার করতে দেয়ার প্রস্তাব বাংলাদেশের প্রধান সামুদ্রিক বন্দর চট্টগ্রাম/ছবি সংগৃহীত


বাংলাদেশ-ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলে ‘খুল্লাম খুল্লা’ ট্রানজিট দেয়ার প্রস্তাব দিয়েছে। ভারতকে বাংলাদেশ এতোদিন পণ্য পরিবহনের জন্য ট্রানজিট সুবিধা দিয়ে আসছিল, এবার উভয় দেশের মধ্যে অবাধ সংযোগ বা কানেকটিভিটির অংশ হিসেবে বাংলাদেশের প্রধান সামুদ্রিক বন্দর চট্টগ্রাম বন্দরকে আসাম, ত্রিপুরাসহ অন্যান্য অঞ্চলের মধ্যে ট্রানজিট হিসেবে ব্যবহারের প্রস্তাব দিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর যখন গত সপ্তাহে বাংলাদেশে আসেন, তখন তিনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করলে প্রধানমন্ত্রী এ প্রস্তাব দেন বলে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়া জানায়। 

সফরের সময় জয়শঙ্কর ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির এক বার্তা শেখ হাসিনাকে হস্তান্তর করেন, জয়শঙ্কর এক টুইটারে বলেন, উভয় নেতার সহযোগিতায় উভয় দেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ক্রমাগত শক্তিশালী হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্করকে বলেন, পারস্পরিক লাভের জন্য বর্ধিত কানেকটিভিটি প্রয়োজন। আর বিশেষ করে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল বিশেষভাবে উপকৃত হবে। উভয়ের বৈঠকের পর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম এ কথা বলেন বলে পিটিআই জানিয়েছে। 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরো বলেন, ১৯৬৫ সালের ইন্দো-পাক যুদ্ধের পর বন্ধ হয়ে যাওয়া সীমান্ত পারাপার ইতিমধ্যে চালু করা হয়েছে। যখন বন্ধ হয়েছিল তখন বাংলাদেশ পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চল ছিল। 

ইহসানুল করিম বলেন, বেশ কিছুসংখ্যক দ্বিপক্ষীয় ও আন্তর্জাতিক বিষয় আলোচনা হয় আধঘণ্টা সময়েরও বেশি বৈঠকের সময়। এরপর জয়শঙ্কর বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেনের সঙ্গে বৈঠক করেন। স্থানীয় মিডিয়াতে প্রচার হয় যে, কুশিয়ারা ও ফেনী নদীর পানি বণ্টন নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়। 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার খোলাখুলিভাবে চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারে ভারতীয়দের সুযোগ দেয়া এক যুগান্তকারী বিষয় বলে অনেকে মনে করেন। তবে বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমগুলো এ বিষয়ে নীরব। কারণ বিশেষ অনুমতি-সাপেক্ষ চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করে পণ্য পরিবহন এতোদিন চলছিল। এবার কোন ধরনের পণ্য পরিবাহিত হবে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে তার কোনো বিবরণ নেই। বস্তুত সাধারণ কানেকটিভিটির মতো যদি চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারের সুযোগ দেয়া হয়, সে বন্দরের মাধ্যমে অস্ত্রশস্ত্রও চলাচল হতে পারে। আর তা উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ভারতের যে দীর্ঘদিনের দমননীতি তার বিরুদ্ধে যে চীন ও যুক্তরাষ্ট্র পৃথকভাবে সোচ্চার তা নিয়ে সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। 

বিশেষ কিছুদিন থেকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন বলে আসছিলেন যে, র‌্যাবের ওপর থেকে আমেরিকান নিষেধাজ্ঞা বাতিলে বাংলাদেশ ভারতের সহযোগিতা চাইবে। আর একই সময়ে ভারতকে ট্রানজিট দেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নতুন করে প্রণোদনা সৃষ্টি কি একই কাজের পরম্পরা?

মানুষ জানতে চায়, ট্রানজিট প্রদান করে বাংলাদেশ কি লাভ করতে চলেছে। সমগ্র বিশ্বে ট্রানজিটের জন্য অর্থ দেয়া-নেয়ার বন্দোবস্ত হয়েছে। যেমন সুয়েজ ক্যানেল ব্যবহারের জন্য ইউরোপকে দিতে হয় মিসরকে ট্রানজিট ফি। পাকিস্তানের সিপ্যাক-এর মাধ্যমে গোয়ার্দা বন্দর ব্যবহারের জন রাশিয়াও চীনকে দিতে হয় বন্দর ব্যবহারের শুল্ক।

তাছাড়া বিশ্বের যে কোনো বন্দরের সাধারণ ব্যবহারেও দিতে হয় ফি। সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশ চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারের সুযোগ দিয়ে কি পাবে। অন্যান্য দেশও কি চট্টগ্রাম বন্দর বিনাশুল্কে ব্যবহার করতে পারবে? না কানেকটিভিটির নাম করে বিনাশুল্কে বন্দর ব্যবহারের জন্য ভারতের এক ‘খুল্লাম খুল্লা’ সুযোগ।


শেয়ার করুন