৩০ এপ্রিল ২০১২, মঙ্গলবার, ১১:৩৯:২৩ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
যুক্তরাষ্ট্রে এবার বন্দুকধারীর গুলিতে তিন আইনশৃংলাবাহিনীর সদস্য নিহত ‘বিশেষ চাহিদা সম্পন্নদের প্রতিভা বিকাশে কোন ধরনের প্রতিবন্ধকতা রাখা যাবে না’ সরকার ও বেসরকারি উদ্যোগে দরিদ্রমুক্ত দেশ গড়ে উঠবে - আসাদুজ্জামান খান কামাল ৭০ শতাংশ মৃত্যু অসংক্রামক রোগে, বাজেটে বরাদ্দ বৃদ্ধির দাবি ‘বিদেশে দেশবিরোধী অপপ্রচারকারীদের বিরুদ্ধে স্থানীয় আইনে ব্যবস্থা নিন’ ভূল স্বীকার করে সরে দাড়ানোয় একজনের বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহার বাফেলোতে সন্ত্রাসীদের গুলিতে দুই বাংলাদেশী নিহত ‘শেরে বাংলা আপাদমস্তক একজন পারফেক্ট বাঙালি ছিলেন’ বিএনপির বহিস্কৃতদের জন্য সুখবর! মে দিবসে নয়পল্টনে বিএনপির শ্রমিক সমাবেশ


গ্যাস-সংকট কিন্তু কেন
খন্দকার সালেক
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৪-০২-২০২৪
গ্যাস-সংকট কিন্তু কেন


অদূরদর্শী পরিকল্পনা, পেট্রোবাংলা এবং কোম্পানিগুলোর কার্যক্রমে নিরঙ্কুশ আমলাতান্ত্রিক নিয়ন্ত্রণ, পেট্রোবাংলা কোম্পানিগুলোকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে না দেওয়া, পেট্রোবাংলা এবং কোম্পানিসমূহ থেকে দক্ষ অভিজ্ঞ কর্মকর্তাদের ব্যাপক ব্রেন ড্রেন বাংলাদেশের গ্যাস খাতে বর্তমান সংকটের প্রধান কারণ। ঘুনে ধরেছে সেই ২০০১ সাল থেকেই। কিন্তু দুঃখজনক হলো পেট্রোবাংলার সীমাহীন ব্যর্থতার কারণে ২০০৯ সাল থেকে ২০২৩ সাল সংকট গভীর হয়েছে। এই সময়ে নানা স্থূল বিতর্কের কারণে আবিষ্কৃত কয়লা সম্পদ উত্তোলন করা হয় নি। সাগরে এবং স্থলভাগে গ্যাস অনুসন্ধান এবং উন্নয়ন হয়েছে ভুল কৌশলে নিতান্ত ধীরগতিতে। গ্যাসপ্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত না করেই গ্যাস সঞ্চালন অবকাঠামো নির্মাণে বিপুল বিনিয়োগ করা হয়েছে। বিতরণ কোম্পানিগুলোর এলাকায় বিপুল পরিমাণ অবৈধ সংযোগ দেওয়া হয়েছে। বিতরণ নেটওয়ার্ক অনিরাপদ হয়ে পড়েছে। ঘন ঘন দুর্ঘটনা ঘটছে। গ্যাস ফ্রাঞ্চাইজ জুড়ে গ্যাস চাহিদা ৪০০০-৪২০০ মিলিয়ন ঘনফুট। অথচ নিজেদের গ্যাসক্ষেত্রের উৎপাদন (২১০০ মিলিয়ন ঘনফুট) এবং দুটি এফেসারন দিয়ে সর্বোচ্চ (১১০০ মিলিয়ন ঘনফুট) সমেত সর্বোচ্চ সরবরাহ ৩১০০ মিলিয়ন ঘনফুট। নিজেদের উৎপাদন ক্রমশ কমছে। ২০২৬ সালের আগে এলএনজি আমদানি বৃদ্ধির সুযোগ নেই।

গ্যাস সরবরাহ সংকটের কারণে প্রায় ৪ হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতার গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র অলস পড়ে আছে। এর পরেও মেঘনাঘাট এলাকায় তিনটি বৃহদাকার গ্যাস-বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপিত হয়েছে। দেশীয় সামিট এনার্জি, ইউনিক গ্রুপ এবং ভারতের রিলায়েন্স গ্রুপের তিনটি বিদ্যুৎকেন্দ্রে ৩২৫ মিলিয়ন গ্যাস প্রয়োজন। তড়িঘড়ি করে জিটিসিএল গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন হট ট্যাপিং করে গ্যাসসংযোগের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বাণিজ্যিক উৎপাদন পরিস্থিতি সৃষ্টি হলেই উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠাগুলোকে ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হবে।

 আসন্ন গ্রীষ্মকালে বিদ্যুৎ চাহিদা দাঁড়াবে ১৭ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট, চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পেট্রোবাংলাকে ১ হাজার ৭০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস-বিদ্যুৎ উৎপাদনে সরবরাহ করতে হবে। কিন্তু সার, শিল্প, গৃহস্থালি চাহিদা মিটিয়ে কোনোভাবেই পেট্রোবাংলা ১ হাজার ২০০ মিলিয়ন ঘনফুটের বেশি গ্যাস দিতে পারবে না। জানি না এই সময় কয়লা, জ্বালানি তেল, এলএনজি আমদানির জন্য প্রয়োজনীয় ডলার সরবরাহ পাওয়া যাবে কিনা। ফলশ্রুতিতে এবারের গ্রীষ্মকালে ব্যাপক লোডশেডিং এবং গ্যাসসংকট হতে পারে। 

বর্তমান সংকটের অন্যতম প্রধান কারণ পেট্রোবাংলার কাজে অতিরিক্ত আমলাতান্ত্রিক খবরদারি। কারিগরিঘন প্রতিষ্ঠানসমূহ আমলাদের দুর্বল নিয়ন্ত্রণে অদক্ষ হয়ে পড়েছে। দেশে পেট্রোবাংলার বিভিন্ন সময়ে কাজ করা অনেক দক্ষ প্রাক্তন কর্মকর্তা থাকলেও অনভিজ্ঞ, অদক্ষ আমলাদের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণে কোম্পানি বোর্ডসমূহ। কোম্পানিসমূহের যোগ্য প্রধান নির্বাহী খুঁজে পেতে হয়রান হতে হচ্ছে। দীর্ঘদিন পেট্রোবাংলার ঊর্র্ধ্বতন পদে দক্ষ পেশাদার পদায়ন করা হয়নি। পরিকল্পনা ডিভিশন অদক্ষ কর্মকর্তদের হাতে থাকাও বর্তমান অবস্থার জন্য দায়ী। চেয়ারম্যান পদে আমলাদের নিয়োগের কারণে সংকটগুলোর আশু সমাধান হচ্ছে না। বঙ্গবন্ধুর জ্বালানি দর্শন থেকে বহুদূরে সরে গেছে জ্বালানি খাত। 

২০২৪-২০২৫ সালে জ্বালানি সংকট অবসানের কোনো সুযোগ নেই। যতটুকু গ্যাস আছে তার সঠিক ব্যবহার করতে হবে। অবৈধ ব্যবহার, চুরি নির্মূল করতে হবে, জ্বালানির দক্ষ এবং পরিমিত ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। গ্যাস ব্যবহারকারী শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো গ্যাসের পরিবর্তে এসএনজি এ ব্যবহার বিবেচনা করতে পারে। দেশে পর্যাপ্ত এলপিজি আছে। এলপিজি রূপান্তর করে এসএনজি কিন্তু স্বীকৃত সমাধান। 

বিদ্যুৎ সেক্টরকে বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হতে হবে। কৃচ্ছ্রসাধন ছাড়া উপায় নেই। দেশের প্রধান বিদ্যুৎ চাহিদা আসে লাইটিং লোড, কুলিং লোড থেকে। এগুলো সীমিত করার কার্যকরি কর্মপরিকল্পনা নিয়ে বাস্তবায়ন পর্যায়ে নিবিড় তদারকি করতে হবে। জ্বালানি অদক্ষ বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো বন্ধ রেখে জ্বালানি দক্ষ কেন্দ্রগুলো চালু রাখলে জ্বালানি সাশ্রয় হবে। 

পেট্রোবাংলা অনেক দেরিতে হলেও গ্যাস উত্তোলন বিষয়ে তাদের ব্যর্থতা অনুধাবন করেছে। ব্যাপক অনুসন্ধান কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে যা অন্তত একদশক আগে নেওয়া উচিত ছিল। নানা মুনির নানা মত এবং আমলাদের ব্যর্থতার কারণে জ্বালানি বিদ্যুৎ সংকট হয়েছে। যার দায় স্বীকার করতেই হবে জ্বালানি মন্ত্রণালয়কে। আশা করি সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সংকট থেকে পরিত্রাণ পাবে বাংলাদেশ।

শেয়ার করুন