২৭ এপ্রিল ২০১২, শনিবার, ১০:২৫:৫২ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
‘শেরে বাংলা আপাদমস্তক একজন পারফেক্ট বাঙালি ছিলেন’ বিএনপির বহিস্কৃতদের জন্য সুখবর! মে দিবসে নয়পল্টনে বিএনপির শ্রমিক সমাবেশ উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়ার জের, বিএনপির বহিস্কার ৭৬ থাইল্যান্ডের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আহ্বান ‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়


যুক্তরাষ্ট্র আ.লীগের সভাপতির আবেগঘন বক্তব্য : নেত্রীকে ভিডিও পাঠানো হয়
১৫ আগস্ট বাংলাদেশের একটা ক্লাবে, আমি নাকি মেয়ে নিয়ে নৃত্য করেছি
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ২০-০৯-২০২৩
১৫ আগস্ট বাংলাদেশের একটা ক্লাবে, আমি নাকি মেয়ে নিয়ে নৃত্য করেছি বক্তব্য রাখছেন ড. সিদ্দিকুর রহমান


গত ১৬ আগস্ট সন্ধ্যায় জ্যাকসন হাইটসের একটি চাইনিজ রেস্টুরেন্টের অডিটোরিয়ামে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ এবং অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান আবেগঘনময় এক বক্তব্য দিয়েছেন, তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলেছেন। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের নেতারাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে একটি মিথ্যা ভিডিও পাঠিয়েছেন। সেই ভিডিওতে দেখানো হয়েছে, ১৫ আগস্ট আমি নাকি বাংলাদেশের কোনো একটি ক্লাবে মেয়ে নিয়ে নৃত্য করেছি। আমি এই জঘন্য মিথ্যাচারের প্রতিবাদ করছি। যে কারণেই হয়তো প্রধানমন্ত্রী আমার ওপর রাগ করে আছেন। অন্যদের সংবর্ধনার দায়িত্ব দিতে পারেন। তার এই বক্তব্যের পর যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়।

ড. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, আজকে আপনাদের অনেকের বক্তব্য আমার হৃদয়ে স্পর্শ করেছে। কেউ কেউ বলেন, আমার নাকি চামড়া মোটা, চমড়া মোটা না হলে আমি কি এত ষড়যন্ত্রের মধ্যে দল চালাতে পারতাম? আপনারা জানেন নেত্রী সামনেই আমাকে বলেছে নো মোর সিদ্দিক, নেত্রী বলেছেন মোর মোর সিদ্দিক। সেটাই সত্য। ২০১৮ সাল থেকেই ষড়যন্ত্রের মধ্যে দায়িত্ব পালন করছেন। ওয়াশিংটনে নেত্রীর সঙ্গে দেখা করেছি, তিনি সবার সামনে বলেছেন, সিদ্দিকই কাজ করেন, আপনারা তার বিরুদ্ধে বলছেন কেন? তিনি আরো বলেন. প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যাকে সংবর্ধনার দায়িত্ব দেবেন, তারাই সংবর্ধনা করবে। প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত বিচক্ষণ। যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ তারই হাতে গড়া দল। তিনি বলেন, আমি ১২ বছর দায়িত্ব পালন করছি। আজকে আপনাদের বলতে চাই, এই ধরনের সমাবেশ আজই লাস্ট। আমি আর সমাবেশে করবো না। আজকে শনিবার এই স্থানে গিয়েছি, বিশেষ বাহিনীর (এসএসএফ) লোকজন বললেন, সব স্ট্যাটেল। প্রধানমন্ত্রীর নাগরিক সংবর্ধনায় সভাপতিত্ব করবেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ফজলুর রহমান এবং পরিচালনা করবেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ চৌধুরী। এটা শোনার পর আমি সহ্য করতে পারিনি, আমি সঙ্গে সঙ্গে বলেছি, আপনি যে কথাটি বলেছেন ঠিক আছে। যদি নেত্রী বলে থাকে তাহলে আমার কোনো শক্তি নেই তার বিরোধিতা করার। তবে আমি বলেছি, এভাবে হলে আমি ওই নাগরিক সংবর্ধনায় যাবো না, আমিই সব ব্যবস্থা করেছি, তারপরও আমি আসবো না। আমি যদি সভাপতিত্ব করতে না পারি তাহলে আমি ওই হলে থাকবো না, এজন্য আমি আপনাদের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, আজকের এই পরিস্থিতির জন্য আমিই দায়ী। আজকে এই সভা হওয়ার কথা ছিল না। এজন্য আমি দায়ী। আপনারা জানেন ২০১৮ সালে নেত্রী সংবর্ধনায় আমাকে সভাপতিত্ব করতে দেয়া হয়নি। আমি আপনাদের সঙ্গে বসেছিলাম। আপনারা অনেকেই বলেছেন, আপনারাদের রক্তক্ষরণ হয়েছে, আমার তো রক্তই নেই ক্ষরণ হবে কোত্থেকে? এর মধ্যে ২০১৯ থেকে এ পর্যন্ত আরো অনুষ্ঠান করার চেষ্টা করেছি কিন্তু সার্থক হতে পারিনি, আপনাদের আমি সম্মান দেখাতে পারিনি, আপনাদের পরিচয় করিয়ে দিতে পারিনি- ব্যর্থতা আমার। ফ্লোরিড আওয়ামী লীগের একটি কমিটি করা হলো যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগকে উপেক্ষা করে, সেখান থেকেই আমাদের অস্তিত্ব বিলীন হতে শুরু করলো। আমি যতটুকু শুনেছি, নেত্রী নাকি সংবর্ধনার জন্য নিউইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগকে দায়িত্ব দিয়েছেন। জননেত্রী শেখ হাসিনা যা বলবেন আমি তা অমান্য করতে পারবো না। নেত্রী যদি আমাকে বলেন, সিদ্দিকুর রহমান সাহেব আপনি মেরিয়ট হোটেলে আসতে পারবে না, আমি যাবো না এবং কোন কষ্ট থাকবে না। কিন্তু আমি আপনাদের সহযোগিতায় প্রধানমন্ত্রীর আগামী ৩ টি অনুষ্ঠানের সব কিছুর ব্যবস্থা করেছি। এর জন্য শ্রম দিতে হয়েছে, কাজ করতে হয়েছে। আমি আপনাদের বলি এবার আমি সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছি। একটি টিভিতে এসেছে আমাদের সহ-সভাপতি নাকি সভাপতিত্ব করবেন। এটা শুনার পর আমার কী রক্ত থাকতে পারে? আমি শেষ। আমি আপনাদের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। তবে আমি যেটা বলবো- আপনারা সবাই যার যার অবস্থান থেকে নেত্রী অনুষ্ঠানগুলোকে সফল করুন। আমি যদি নেত্রী সংবর্ধনায় সভাপতিত্ব করতে না পারি আমি ঐ সমাবেশে যাবো না। আমার তো একটা পরিচয় আছে? ২০১৮ সাল থেকে আমি মঞ্চে বসতে পারিনি, কেন? আমি কী অন্যায় করেছি? বাংলাদেশে আমার কোন বাড়ি নেই, আমার জেলায় আমার কোনো বাড়ি নেই। এখানে আমি যে বাড়িতে ছিলাম সেই বাড়িতেই আছে, আমি ভাড়া করা গাড়িতে চলাফেরা করি। একটি পয়সা কারো থেকে চাঁদা নিইনি। আমার অপরাধ কী, আমি কী ক্ষতি করেছি যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের? আমি কেন সভাপতিত্ব করতে পারবো না? পদ্মা ব্রিজ নিয়ে যখন দুর্নীতির অভিযোগ উঠলো আমার নেতৃত্বেই বিশ্বব্যাক অফিস ঘোরাও করা হয়। জয় মামাকে নিয়ে যখন এখানে সংবাদ সম্মেলন করা হলো সেখানেই আব্দুল হাসিব মামুন এবং আমরা পুলিশের সামনে প্রতিবাত করেছিলাম। যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ কোন কাজটি করেনি? কেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ সংবর্ধনা দিতে পারবে না? কারা আমাদের বিরোধিতা করছে? আমাদের বিরোধিতা আমরাই করছি। আমি মহানগর আওয়ামী লীগকে দোষ দিই না। আমার আশেপাশে অনেকেই বসে আছে তারাই দায়ী, আমি দায়ী নই। ২২ তারিখও চলে যাবে। আমি ১২ বছর ছিলাম, নেত্রী দায়িত্ব দিয়েছেন তা পালন করছি। আমি আমার পদত্যাগপত্র রেডি করে রেখেছি, আমি স্ত্রী বলেছেন, আমি যেন পদত্যাগ না করি। কারণ নেত্রী আপনাকে দায়িত্ব দিয়েছে, আপনার কোন রাইট নেই পদত্যাগ করার। সেজন্য এখনো আমি পদত্যাগ করিনি। আপনারা বলেন, যখন মহানগর আওয়ামী লীগ নেত্রীর সংবর্ধনা দেবে তখন আমার কেমন লাগে? এই কমিটি আমি দিয়েছি। কীভাবে তারা এটা চায় নেত্রীর কাছে? আমার ভাইস প্রেসিডেন্ট এখানে আছেন- তাকে যখন সভাপতিত্ব করার দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে তখন কী তিনি প্রতিবাদ করেছিলেন? দায়িত্ব আমাকে কেন দিচ্ছেন? আমার প্রেসিডেন্টতো এখানে আছে। উনার বলা উচিত ছিল, উনি বলেননি। নেত্রী যা বলবেন তাই হবে। নেত্রী একবার একটা কথা বললেন তিনি তা পরিবর্তন করেন না। সত্য মিথ্যা নিয়ে ব্যাখ্যা আমি দেবে না। তবে আমি একটা ব্যাখ্যা দেবো। আর সেটি হচ্ছে- আপনারা কী কোনোদিন দেখেছেন আমি কোনো ক্লাবে গিয়েছি, পানি ছাড়া অন্য কিছু স্পর্শ করেছি? আমার যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের নেতারা মিথ্যা একটা ভিডিও বানিয়ে নেত্রীকে পাঠিয়েছে। দেখানো হয়েছে ১৫ আগস্ট বাংলাদেশের একটা ক্লাবে মেয়ে নিয়ে নৃত্য করেছি। চিন্তা করতে পারেন? এই সময় সবাই প্রতিবাদ করতে থাকেন। ড. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ১৫ আগস্ট মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তার পরিবারের ১৮ জনকে হারিয়েছেন। এই রকম একটি ভিডিও ঐ দিনে যদি তার কাছে যায় তখন কী আমার প্রতি তার কোন দয়া থাকবে?  ফজলুর রহমান বলেন, এই কাজটি কারা করেছে তাদের চিহ্নিত করেন আমরা তাদের বিচার করবো। লুৎফল করিম বলেন, যারা এই কাজটি করেছে তারা অন্যায় করেছে। আমরা সঠিক কথাটি নেত্রীকে বলতে চাই। আমরা নেত্রীকে সম্মান করি কিন্তু কোন অন্যায় সহ্য করবো না। আমাদের সঠিক কথা বলতে হবে। মুজিবুর রহমান বলেন, যদি এই ধরনের কোন ঘটনা ঘটে তা উদঘাটন করেন। আপনি যদি মঞ্চে না যেতে পারে তাহলে আমরা কেন যাবো? এই সময় সবাই সমন্বরে বলতে থাকেন আমরা যাবো না এবং সবাই স্লোগান দিতে থাকেন। আইরীন পারভীন বলেন, নিয়ত অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী প্রধানমন্ত্রীর সংবর্ধনার আয়োজন করবে- এটাই নিয়ত। তিনি ভিডিও সম্পর্কে বলেন, যারা এটি করেছে এটা ঘৃণিত কাজ। হাজী এনাম বলেন, আমরা নেত্রীর সঙ্গে বসতে চাই। আমরা আব্দুস সোবহান গোলাপ, ডা. রবি এবং ডা. মাসুদের কথা শুনবো না। তারা কারা? আমি বলতে চাই আমরা কারো কথা শুনবো না এবং মানবো না। আমরা নেত্রী আসলে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবো। আব্দুল হাসিব মামুন ড. সিদ্দিকুর রহমানের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, নেত্রী আপনি কোনো নেতা, এমপি বা মন্ত্রীর সঙ্গে বসবেন না।

ফজলুর রহমান বলেন, আমরা এখনো কারো কথা শুনবো না এবং বিভ্রান্ত হবে না, নেত্রী এলে আমরা তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবো এবং উনি যা বলবেন তাই আমরা করবো।

ড. সিদ্দিকুর রহমান যখন বক্তব্য দিচ্ছিলেন তখন তাকে বেশ আবেগ আপ্লুত দেখা যায়। যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সদস্য এবং ড. সিদ্দিকুর রহমানের স্ত্রী শাহানারা রহমানের চোখ দিয়ে পানি পড়ছিল। এই সময় নেতাকর্মীদের মধ্যে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।

অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সামাদ আজাদ, সহ-সভাপতি ফজলুর রহমান, শামসুদ্দিন আজাদ, লুৎফল করিম, বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মোস্তফা খান মেরাজ, সিনিয়র সহ-সাধারণ সম্পাদক নিজাম চৌধুরী, সহ-সাধারণ সম্পাদক আইরীন পারভীন, সংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল হাসিব মামুন, প্রচার সম্পাদক হাজী এনাম, দপ্তর সম্পাদক আব্দুল মালেক, সদস্য খোরশেদ খন্দকার, স্টেট আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবুর রহমান, যুব লীগ নেতা সেবুল মিয়া, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সহ আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক শাখাওয়াত বিশ্বাসসহ যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ, স্টেট আওয়ামী লীগ, শ্রমিক লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ অঙ্গ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।

শেয়ার করুন