২৯ এপ্রিল ২০১২, সোমবার, ০৯:৪৮:০০ পূর্বাহ্ন


প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে কিসের ইঙ্গিত
বিএনপি’র সাথে কি ইইউ’সহ পশ্চিমারা দুতিয়ালি করলো?
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৮-০২-২০২৪
বিএনপি’র সাথে কি ইইউ’সহ পশ্চিমারা দুতিয়ালি করলো?


ইউরোপের দেশগুলোর সঙ্গে ভালো বন্ধুত্ব আমাদের আছে। ফ্রান্স জলবায়ু পরিবর্তনের (প্রভাব মোকাবিলার) জন্য ১ বিলিয়ন ডলার দেবে। ইউরোপের দেশগুলোর সঙ্গে আমাদের রাষ্ট্রীয় সম্পর্ক আছে, আমার ব্যক্তিগত সম্পর্ক থাকায়ও সুবিধা হয়েছে। নির্বাচন নিয়ে কেউ কোন কথা বলেনি (জার্মানি সফরে)। তারা নিজেরাই জানত নির্বাচনে আমি জিতে আসব। যারা আমাকে চায়নি, তাদের মাধ্যমেই কথা ওঠে, প্রশ্ন উঠে। জার্মানি সফরের বিষয়ে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তারা এমন বক্তব্যেই ফুটে উঠেছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সরকারের কূটনৈতিক দক্ষতা আর কৌশলের একটি অংশ মাত্র। 


আর এর বিপরীতে স্পস্ট হয়ে গেছে, বিএনপিসহ সমমনাদের ডাকে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারসহ একদফার আন্দোলনে দৃশ্যত হাওয়া দিলেও কিভাবে পশ্চিমারা সরে গেছে বা তারা সামান্যতম আচও করতে পারেনি। ফুটে উঠেছে বিএনপি’র আন্তর্জাতিক লবি কার্যত কতটা দুর্বল, আর চোরাবালিতে ছিল। অথবা আওয়ামী লীগের শক্তিশালি লবির কাছে তারা পাত্তাই পায়নি মাঠের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। বরং বিএনপি’র ঘাড়ে বন্দুর রেখে পশ্চিমারা ঠিকই তাদের ভূ-রাজনৈতিকের পাশাপাশি ব্যবসায়িক স্বার্থটিও লুফে নিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ থেকে। এসব বিশ্লেষণই এখন রাজনৈাতিক অঙ্গনে জোরে শোরে আলোচিত হচ্ছে। 


কোথায় হারিয়ে গেলো ইউরোপীয়দের সে-ই তৎপরতা..

বিএনপিকে ছাড়া অংশগ্রহণমূলক হবে না- এমন প্রচারণা ছিল দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে। বিশেষ করে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিভিন্ন পর্যায়ের উঁচু-মাপের এসব কূটনীতিক জোর গলায়ই বলে বেড়াতো। নির্বাচনের কয়েক মাস আগে ঢাকায় নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলির সঙ্গে বৈঠকে বিএনপি পরিষ্কার করে জানিয়েছিল, নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকার ছাড়া এখানে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন সম্ভব নয়। অই সময়ে গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামের সঙ্গে দেখা করেন ইইউ রাষ্ট্রদূত। এ সময় বৈঠকে ইইউ রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে ডিসিএম স্প্যানিয়ার বার্ন্ড ও পলিটিক্যাল অফিসার সেবাস্টিয়ান উপস্থিত ছিলেন। বিএনপি মহাসচিবের সঙ্গে দলের মানবাধিকারবিষয়ক সম্পাদক আসাদুজ্জামান উপস্থিত ছিলেন। অন্যদিকে বিএনপি ও তাদের সমমনাদের ভোট বর্জনের ডাকের মধ্যে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সঙ্গে বৈঠক করে গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) প্রতিনিধিদল। বৈঠক শেষে ইইউ রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলি বলেছেন, বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন গণতান্ত্রিক, গ্রহণযোগ্য, শান্তিপূর্ণ ও অংশগ্রহণমূলক দেখতে চায় পুরো বিশ্ব। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আওয়ালের সাথে বৈঠকে বাংলাদেশে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলি বলেন, ইইউ বাংলাদেশে একটি ’গণতান্ত্রিক, গ্রহণযোগ্য, শান্তিপূর্ণ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন’ দেখতে চায়। অন্যদিকে নির্বাচনের আগে খোদ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) বাংলাদেশে অংশগ্রহণমূলক জাতীয় সংসদ নির্বাচন দেখতে চায়। আর হোয়াইটলির মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে সেসময়ে এক সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ’আমরা তাদের (ইইউ) সঙ্গে একমত। নির্বাচনের বিষয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন যা বলেছে, আমরাও তাই চাই।’ পরিস্থিতি এমন দিকেই গড়ায় যে বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন জানিয়ে দেয় যে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) বাংলাদেশে সংসদ নির্বাচনের জন্য পূর্ণাঙ্গ পর্যবেক্ষক দল পাঠাবে না বলে তাদের নিশ্চিত করেছে। যদিও বলা হয় যে বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) তাদের ’বাজেট স্বল্পতার’ কারণেই তারা পূর্ণাঙ্গ পর্যবেক্ষক দল পাঠাচ্ছে না। কিন্তু এমন ঘটনায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর একটি গণমাধ্যমে বলে ফেলেন, যে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সিদ্ধান্তে এটি পরিষ্কার যে বাংলাদেশে নির্বাচনের পরিবেশ নেই-এটি জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে প্রমাণিত। কিন্তু ইউরোপীয়দের এমন তৎপরতার ধাক্কা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে একটু টলাতে পারেনি তা এখন স্পস্ট খোদ প্রধানমন্ত্রীর শুক্রবারের বক্তব্যে ফুটে উঠেছে। 

প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্টজনদের দিয়েই কূটনৈতিক তৎপরতা..

শুধুই প্রতিবেশী দেশ ভারত না, অনেক আগেই কূটনৈতিক তৎপরতা চালায় প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিরার ঘনিষ্টজনদের একটি অংশ। আওয়ামী লীগের একটি সূত্র জানায়, নির্বাচনের অনেক আগেই সরকারের বিশেষ পদক্ষেপ ছিল কূটনৈতিক তৎপরতা। আওয়ামী লীগ ভালোভাবেই জানতো যে পশ্চিমারা এবার জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে নিয়ে তাদের বেশ চাপে রাখবে। এই জন্য দলটির বিশেষ করে সভাপতি প্রধানন্ত্রীর শেখ হাসিনার খুবই কাছের ঘনিষ্টজনদের একটি গ্রুপ কূটনৈতিক পাড়া পশ্চিমাদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে হাই ’ডিপ্লোমেটিক একটিভিটিস’ শুরু করে। প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের একটি ঘনিষ্ট অংশকে কাজে লাগায় শুধু ইউরোপীদের খবরদারিকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে। এর সফলতা ২০২৩ সালের জানুয়ারিতেই পেয়ে যায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। আর এর প্রমাণ পাওয়া যায় ২০২৩ সালের দলের সাধারণ সম্পাদকের একটি বক্তব্যে। জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে ইউরোপীয় ইউনিয়নের কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠক ‘ইতিবাচক’ ছিল বলে জানিয়েছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তার ভাষ্য, বিএনপি এখন বিদেশেও ‘বন্ধুহীন হয়ে পড়েছে’। নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারসহ ১০ দফা দাবি এবং গ্যাস-বিদ্যুৎ ও নিত্যপণের দাম কমানোর দাবিতে শুক্রবার রাজধানীতে বিএনপির ‘নিরব পদযাত্রা’ কর্মসূচির দিন বিকেলে মোহাম্মদপুরে মকবুল হোসেন কলেজে নগর উত্তর আওয়ামী লীগের উদ্যোগে ‘শান্তি সমাবেশে’ অংশ নিয়ে এমনটাই বলেন কাদের। অথচ এম ঘটনায় স্বপ্নে বিভোর বিএনপি একটু বুঝতে পারেনি বা দলে ওই পর্যায়ের কূটনীতিকদের ঘাটতি ছিল। 

বিএনপি’র বিরুদ্ধে যেভাবে ইইউ’কে বাগে আনে..

জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে ইউরোপীয় ইউনিয়নের কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠকে কিংবা যেকোনো ধরনের সভা-সেমিনারে আওয়ামী লীগ সবচেয়ে বড় অস্ত্রটি ব্যবহার করে বিএনপি’র সাথে বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিরোধী সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী জামায়াতের সম্পর্কটিকে। একাজে তারা ভারত লবিকে ব্যবহার করে। ভারতের স্ট্রং লবি প্রমাণ করে দেয় বিএনপি’র সাথে জামায়াতের গোপন সম্পর্ক আছে। প্রমাণ করে ছাড়ে জামায়াত সমমনা সেজে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে নেমেছে। এব্যাপারে আওয়ামী লীগের একজন নেতা এই প্রতিবেদককে জানায় বিএনপি বুঝতেই পারেনি দীর্ঘদিন ধরে জামায়াতের সাথে সরাসরি যোগাযোগ না থাকা সত্ত্বেও এমন দুর্নামেই ইমেজ হারাতে হলো তাদের। 

জামায়াত ইস্যুতে ভারতের অনুরোধ গিললো আমেরিকা

একটি সূত্র জানায়, নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারসহ ১০ দফা দাবি এবং গ্যাস-বিদ্যুৎ ও নিত্যপণ্যের দাম কমানোর দাবিতে ২০২৩ সালের একেবারে শুরুতে মাঠে জামায়াত নামেইনি। কিন্তু হঠ্যাৎ মাঝামাঝি সময়ে জামায়াত ইসলামী রাজধানীতে ২০২৩ সালে ১০জুন একটি সমাবেশ করে ফেলে। রাজধানীতে ১০ বছর পর পুলিশের অনুমতি নিয়েই বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত সমাবেশটি বেশ আলোচনার ঝড় তুলে। এই সমাবেশটি কেনো হলো? কেনোই বা তারা প্রমাণ করতে চাইলো বিএনপি’র পাশাপাশি তারাও নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে কর্মসূচি দিল তা এখনো রহস্যজনক। অনেকে মনে করে আকস্মিকভাবে মাঠে নামার কারণে ভারত একে রাজনৈতিকভাবে ক্যাশ করেছে এই বলে যে বিএনপি’র পাশাপাশি বাংলাদেশে এই সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী জামায়াত ইসলামী মাঠে আছে। আর অন্যদিকে জামায়াতের অতীত রাজনৈতিক রের্কড খারাপ থাকার কারণে ভারত সহজেই ইউরোপীদের কাছে পেয়ে যায়, যা ক্ষসতাসীন আওয়ামী লীগের পক্ষে কাজে লাগায়। একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, জামায়াত বাংলাদেশে রাজনীতি করুক এবং বিএনপি’র পাশে থাকুক প্রথমে এটা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চেয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট তাদের বার্ষিক প্রতিবেদনে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি সম্পর্কে প্রতিবেদনে ৭১-এর গণহত্যাকারী ও যুদ্ধাপরাধীদের দল জামায়াতে ইসলামী সম্পর্কে বলেছে কিছু ইতিবাচক কথা তুলে ধরে। তারা বলেছে, 'আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হয়রানির কারণে বাংলাদেশের বৃহত্তম মুসলিম রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ ও সদস্যবৃন্দ তাদের সংবিধান প্রদত্ত বাকস্বাধীনতা ও সমাবেশের স্বাধীনতা ভোগ করতে পারছেন না। এবং সরকার কর্তৃক রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন বাতিলের কারণে জামায়াত প্রার্থীরা দলের নামে নির্বাচন করতে পারছেন না- ইত্যাদি। এনিয়ে বাংলাদেশে প্রগতিশীল রাজনৈতিক দলগুলির পাশাপাশি বেশ কয়েকটি ইসলামী দলও নিন্দা জানায়। অন্যদিকে ভারতও সক্রিয় হয়। জানা গেছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কয়েকটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশে এসে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারসহ বিভিন্ন ইস্যুতে বিএনপি’সহ বেশ কয়েকটি দলের সাথে বৈঠক করেছে। এসময় একটি বৈঠক তারা ৭১-এর গণহত্যাকারী ও যুদ্ধাপরাধীদের দল জামায়াতে ইসলামীর সাথেও বৈঠক করেছে। কিন্তু এর পরে ৭১-এর গণহত্যাকারী ও যুদ্ধাপরাধীদের দল জামায়াতে ইসলামীর সাথে ইইউ’র পাশাপাশি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে প্রকাশ্যে কোনো বৈঠক করা যায়নি। এমনকি জামায়াতের সংস্কারপন্থীদের নতুন দল এবি পার্টির সাথেও যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক-নির্বাচন মূল্যায়ন মিশনের মতবিনিময় সভা হয়। দেখা গেছে, আন্ত ও অন্তর্দলীয় সহিংসতাসহ নির্বাচন পূর্ব এবং পরবর্তী সহিংসতা পর্যবেক্ষণ করতে আসা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যৌথ মূল্যায়ন টিমের সঙ্গে এবি পার্টির এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। জানা গেছে, একমাত্র ভারতের ঘোরতর আপত্তির কারণে ৭১-এর গণহত্যাকারী ও যুদ্ধাপরাধীদের দল জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ ছাড়তে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাধ্য হয়। এর পাশাপাশি ভারত ইইউ’কেও ৭১-এর গণহত্যাকারী ও যুদ্ধাপরাধীদের দল জামায়াতে ইসলামী সম্পর্কে তাদের আপত্তির কথা জানানো হয়। এবং বোঝানো হয় ৭১-এর গণহত্যাকারী ও যুদ্ধাপরাধীদের দল জামায়াতে ইসলামীর সাথে বিএনপি’র ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রাখে এবং তা চলমান। কিন্তু বিএনপি’র পক্ষ থেকে আন্দোলনের মাঠে কখনোই ৭১-এর গণহত্যাকারী ও যুদ্ধাপরাধীদের দল জামায়াতে ইসলামীর ব্যাপারে প্রকাশ্যে তাদের অবস্থান পরিস্কার করতে দেখা য়ায়নি। অনেকে মনে করে, বিএনপি’র একটি অংশ ৭১-এর গণহত্যাকারী ও যুদ্ধাপরাধীদের দল জামায়াতে ইসলামীর বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে সুবিধাভোগী। একারণে তারা ৭১-এর গণহত্যাকারী ও যুদ্ধাপরাধীদের দল জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধে তেমন উচ্চবাচ্য করে না, যার সুযোগ ভারত বারবার নিচ্ছে। 

লাখ লাখ আওয়ামী লীগ কর্মী নিমূল হয়ে যাবে...

এদিকে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পাশাপাশি ভারত আমেরিকাসহ পুরো পশ্চিমাদের কাছে তুলে ধরে যে বিএনপি আবারো ক্ষমতায় এলে সারা দেশে তাদের (আওয়ামী লীগের) লাখ লাখ নেতাকর্মী নিমিষেই উধাও হয়ে যাবে। রাস্তায় রাস্তায় লাশ পড়ে যাবে। বলা হয় ৭১-এর গণহত্যাকারী ও যুদ্ধাপরাধীদের দল জামায়াতে ইসলামীকে সাথে নিয়ে বিএনপি শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর পর বাংলাদেশ রাজনৈতিকভাবে অস্থিতিশীল হয়ে উঠবে। এমন আশঙ্কার কথা ভারত নিজে যেমন বিশ্বাস করে তেমনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পুরো পশ্চিমাদের বোঝাতে সক্ষম হয়। এসব নেতিবাচক প্রচারণার বিপরীতে বিএনপি’র ভূমিকা বা লবি ছিল মারাত্মক রকম ত্রুটিপূর্ণ ও দুর্বল। 

একটি বিশ্লেষণ..

জার্মানি সফরের বিষয়ে গত শুক্রবার সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যের মর্মকথা যদি চুলচেরা বিশ্লেষণ করা যায় তাহলে বেরিয়ে আসবো অনেক তথ্য। ক্ষমতাসীনরা খুব ভালোভাবে উপরের বিষয়গুলি নিয়েই পশ্চিমাদের সাথে দফায় দফায় যোগাযোগ রেখেছে তা স্পস্ট। কখনো প্রকাশ্যে বা কখনো পদ্মার আড়ালে অত্যন্ত ঘনিষ্ট মাধ্যম দিয়ে ইতিবাচক যোগাযোগ রাখে আওয়ামী লীগের কূটনৈতিক দলটি। এতে করে যে সফল হয়ে তা-ই ফুঠে উঠেছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যে। তিনি স্পষ্ট করে বলেছেন। ইউরোপের দেশগুলোর সঙ্গে আমাদের রাষ্ট্রীয় সম্পর্ক আছে। বলেছেন ব্যক্তিগত সম্পর্ক থাকার কথা। এজন্য দৃঢ়তার সাথে ইউরোপীদের অন্যতম শক্তিশালি দেশ জার্মান সম্পর্কেও। তিনি বলেন। তিনি ইঙ্গিত দেশ নির্বাচন নিয়ে ((জার্মানি)সহ কেউ কোন কথা বলেনি। অন্যদিকে ইই্উ কবজায় পেয়ে যাবার পর বিএনপি’র যে আমেরিকার ওপর নির্ভর করে রাজনৈতিক হিসাব কষেছিল সেটিও পাল্টে দিতে তৎপর হয় আওয়ামী লীগ। ভারতকে ভালোভাবে ব্যবহার করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। বিশেষ করে ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ‘টু প্লাস টু’ মন্ত্রী পর্যায়ের সংলাপ ঠিক নির্বাচনের আগ মুহূর্তে। এতে যোগ দিতে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন দিল্লীতে পৌঁছান। আর এমন বৈঠকেই বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে ভারত তাদের অবস্থান স্পষ্ট করে তুলে ধরেছে যুক্তরাষ্ট্রের সামনে। আর এই বৈঠকেও ইইউদের পাশাপাশি আমেরিকাও বিএনপি’র পক্ষে সরাসরি অবস্থান থেকে সড়ে যায় বা কৌমল পাল্টায়। গত শুক্রবারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যকে বিশ্লেষকরা মনে করেন রাজনৈতিক মাঠে একা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে শক্ত লবি মনে করে বিএনপি’র এমন বিপর্যয় হয়েছে। বিএনপি’কে ঢাকার মাঠে ব্যতিব্যস্ত রেখে ভূ-রাজনৈতিক চালেই যে এবারের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আওয়ামী লীগ সেরে ফেলেছে তা এখন ধীরে ধীরে না প্রকাশ্যেই চলে আসছে। তা না হলে ২০২৩ সালের শুরুতে কি করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দাবি করে বসেন যে জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে ইউরোপীয় ইউনিয়নের কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠক ‘ইতিবাচক’ ছিল? 

শেষ কথা ও ইইউ’র তোরজোড় কি মেকি?

তবে এতো কিছুর মধ্যে আবার প্রশ্ন উঠেছে বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রধান সব কটি রাজনৈতিক দল অংশ না নেওয়ায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)’র হতাশা প্রকাশটি ছিল কি ইউরোপীয় স্টাইলে দ্যুতিয়ালি? কিংবা দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগগুলোর সময়োচিত ও পূর্ণাঙ্গ তদন্ত নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি জানানো ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)’র আহবান কি মেকি? লোক দেখানো? বিএনপি’র বিরুদ্ধে সফল কূটনৈতিক চালে জয়ী প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে পাশাপাশি পশ্চিমাদের সম্পর্কে নানা ভাবনা এখন বিএনপি’র মধ্যে। বিএনপি’র নেতাকর্মীদের সেই প্রশ্নই উঁকি-ঝুঁকি খাচ্ছে, বিএনপি’র সাথে কি ইইউ’সহ পশ্চিমারা দ্যুতিয়ালি করলো? 

শেয়ার করুন