২৮ এপ্রিল ২০১২, রবিবার, ০৪:১৫:২০ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
‘শেরে বাংলা আপাদমস্তক একজন পারফেক্ট বাঙালি ছিলেন’ বিএনপির বহিস্কৃতদের জন্য সুখবর! মে দিবসে নয়পল্টনে বিএনপির শ্রমিক সমাবেশ উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়ার জের, বিএনপির বহিস্কার ৭৬ থাইল্যান্ডের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আহ্বান ‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়


শাহজালালের ভিসি’র আচরণের নিন্দা
নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৭-০৯-২০২৩
শাহজালালের ভিসি’র আচরণের নিন্দা অধ্যাপক ফরিদউদ্দিন আহমেদ


দেশের ৩৪ জন নাগরিক শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদউদ্দিন আহমেদের তালেবানী বক্তব্যের নিন্দা জানিয়ে নিম্নোক্ত বিবৃতি প্রদান করেছেন। 

আমরা গভীর ক্ষোভ ও বিস্ময়ের সাথে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত সংবাদ থেকে জেনেছি যে, ২০ সেপ্টেম্বর শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদউদ্দিন আহমেদ বিশ্ববিদ্যালয়ের মিনি অডিটরিয়ামে আয়োজিত তথ্য অধিকার বিষয়ক এক সেমিনারে গিয়ে বলেছেন, ‘সবচেয়ে দুঃখজনক বিষয়, এখানে (বিশ্ববিদ্যালয়) ওপেন কালচার ছিল, ছেলেমেয়েরা যা খুশি, তা-ই করতে পারত। কেউ কিছু বলতে পারত না। 

কারণ, তাদের বয়স ১৮ বছর। কিন্তু আমি বলেছি, সাড়ে ১০টার মধ্যে হলে ঢুকতে হবে। তারা (শিক্ষার্থী) এটার নাম দিয়েছে তালেবানি কালচার। তালেবানি কালচার নিয়ে আমি খুবই গৌরবান্বিত, এটা নিয়ে থাকতে চাই। আমি ওপেন কালচার চাই না।’ তালেবানি কালচার নিয়ে তিনি গৌরবান্বিত এবং এটা নিয়েই তিনি থাকতে চান এমন বক্তব্য একটি স্বনামধন্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শীর্ষ পদে থাকা উপাচার্য কিভাবে সদর্পে উচ্চারণ করেছেন সেটাই আমাদের জিজ্ঞাসা। বিগত তিন দশকে আফগানিস্তানের তালেবানরা যা করেছে তা থেকে সংবাদ মাধ্যমের যে কোন পাঠক-শ্রোতা দর্শকের জানা যে, তালেবানী সংস্কৃতির সাথে ধর্ম পালন বা ধর্ম বিশ্বাসের কোন সম্পর্ক নেই। এটি একটি চরম সম্প্রদায়িক, ধর্মান্ধ ও নারী-বিদ্বেষী রাজনৈতিক মতবাদ। এই মতবাদ নারীর সমমর্যাদা, সম্মান, শিক্ষা ও কাজের অধিকারসহ সকল স্বাধীনতাকে অস্বীকার করে। তালেবানরা ২০২১ সালে নতুনভাবে ক্ষমতা দখলের পর নারীদেরকে শুধু গৃহবন্দী করেছে তা নয়, প্রাথমিক শিক্ষার পর তাদের উচ্চ শিক্ষা লাভের অধিকার, স্বাস্থ্য সুরক্ষা, শিক্ষা, চিকিৎসা সুবিধা এবং বাইরে কাজ করার অধিকার কেড়ে নিয়ে এক ভয়াবহ বৈষম্য-নির্যাতনের পরিবেশ সৃষ্টি করেছে।

উপাচার্যের পদে থাকা একজন দায়িত্বশীল শিক্ষাবিদ হিসেবে এ সকল তথ্য তার অজানা তা বিশ্বাস করা যায় না। তাই তিনি যা বলেছেন তা জেনেশুনে দায়িত্ব নিয়ে বলেছেন বলে মনে করা খুবই যুক্তিসংগত বলে আমরা মনে করি। আর তাকেও আমরা একজন নারীর প্রতি সকল ধরনের বৈষম্য, নারীদের অসম্মান ও অমর্যাদা করা কিংবা নারী বিদ্বেষী মতাদর্শের সমর্থক বা উৎসাহদাতা বলেই বিবেচনা করতে পারি। এই উপাচার্য ২০২২ সালেও জাহাঙ্গীরনগর বিশ^বিদ্যালয়ের ছাত্রীদের চরিত্র নিয়ে অশালীন মন্তব্য করেছিলেন। তখন জাহাঙ্গীরনগরের ছাত্র-শিক্ষকদের তীব্র প্রতিবাদের মুখে তিনি ভুল স্বীকার করে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। তার এই বক্তব্যে সমাজের ব্যাপক সংখ্যক মানুষ বিশ্ববিদ্যালয়, বিশেষ করে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয় সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা পাবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। যা মোটেই কাম্য নয়।  আমরা ভবিষ্যতে এই ধরণের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের উচ্চপদে যাতে কোন চরম সাম্প্রদায়িক, নারী বিদ্বেষী এবং নারীর স্বাধিনতা ও অধিকারের প্রতি অশ্রদ্ধাশীল ব্যক্তি নিয়োগ না পায় তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের লক্ষ্যে নিম্নোক্ত দাবি জানাচ্ছি।

১. উপাচার্যের উল্লেখিত সাম্প্রদায়িক, অশালীন ও নারী বিদ্বেষী বক্তব্য প্রদানের বিষয়টি যথাযথ তদন্তের মাধ্যমে এমন রুচিহীন, আপত্তিকর বক্তব্যের প্রদানের জন্য যথাযথ তদন্তের মাধ্যমে তাকে অপসারনের দাবি জানাচ্ছি।

২. ভবিষ্যতে সংবিধানে স্বীকৃত নারীর সম অধিকার ও মর্যাদাকে অসম্মানসূচক আচরণে অভিযুক্ত কোন ব্যক্তি উপাচার্যের মতো সম্মানীয় ও দায়িত্বশীল পদে নিয়োগ না পায় তার জন্য অবিলম্বে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনকে প্রয়োজনীয় নীতিমালা প্রনয়ন ও তা বাস্তবায়ন করতে হবে।

৩. অধ্যাপক ফরিদউদ্দিন আহমেদের মতো সাম্প্রদায়িক ও নারী বিদ্বেষী ব্যক্তিরা আর কোন কোন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ পেয়েছেন তার একটি তালিকা প্রকাশের জোর দাবি জানাচ্ছি।

বিবৃতিতে যারা স্বাক্ষর করেছেন- সুলতানা কামাল, মানবাধিকার কর্মী ও চেয়ারপার্সন, মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন। রাাশেদা কে. চৌধুরী, নির্বাহী পরিচালক, গণ স্বাক্ষরতা অভিযান ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা খুশী কবির, সমন্বয়কারী, নিজেরা করি ও চেয়ারপার্সন, এএলআরডি, ড. হামিদা হোসেন, মানবাধিকার কর্মী, সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, প্রধান নির্বাহী, বেলা, এড. সালমা আলী, নির্বাহী পরিচালক, বি এন ডব্লিউ এল, শিরীন প. হক, নারী পক্ষ, অ্যাড. জেড আই খান পান্না, সভাপতি, আইন ও সালিশ কেন্দ্র ও আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট, রাণা দাশগুপ্ত, সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ,  শামসুল হুদা, নির্বাহী পরিচালক, এসোসিয়েশ ফর ল্যান্ড রিফর্ম এ্যান্ড ডেভলপমেন্ট (এএলআরডি),  আনু মোহাম্মদ, অধ্যাপক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়,  ড. ইফতেখারুজ্জামান, নির্বাহী পরিচালক, টিআইবি, ড. স্বপন আদনান, ভিজিটিং রিসার্স ফেলো, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়,  ড. সুমাইয়া খায়ের, অধ্যাপক, আইন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, প্রফেসর রোবায়েত ফেরদৌস, অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, তাসনীম সিরাজ মাহবুব, সহযোগী অধ্যাপক, ইংরেজি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, নাসরিন খন্দকার, নৃবিজ্ঞানী, প্রফেসর ফেরদৌস আজিম, ইংরেজী বিভাগ, ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয়, অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, সিনিয়র আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট, কাজল দেবনাথ, প্রেসিডিয়াম সদস্য, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ, তবারক হোসেইন, সিনিয়র আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট, রাহনুমা আহমেদ, কবি ও লেখক, ব্যারিস্টার সারা হোসেন, অনারারি নির্বাহী পরিচালক, ব্লাস্ট,  ড. শহিদুল আলম, আলোকচিত্রী ও সমাজকর্মী, জাকির হোসেন, নির্বাহী পরিচালক, নাগরিক উদ্যোগ, ব্যারিস্টার মো: আশরাফ আলী, আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট, এ্যাড. মিনহাজুল হক চৌধুরী, আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট, ব্যারিস্টার শাহাদাত আলম, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট, ব্যারিস্টার শুভ্র চক্রবর্তী, আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট, এ্যাড. সাইদুর রহমান, প্রধান নির্বাহী, মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন, নুর খান, মানবাধিকার কর্মী, দীপায়ন খীসা, কেন্দ্রীয় সদস্য, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম, জোবাইদা নাসরীন কণা, সহযোগী অধ্যাপক, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, হানা শামস আহমেদ, আদিবাসী অধিকার কর্মী।

শেয়ার করুন