৩০ এপ্রিল ২০১২, মঙ্গলবার, ০৭:৪৪:৪৫ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
‘বিশেষ চাহিদা সম্পন্নদের প্রতিভা বিকাশে কোন ধরনের প্রতিবন্ধকতা রাখা যাবে না’ সরকার ও বেসরকারি উদ্যোগে দরিদ্রমুক্ত দেশ গড়ে উঠবে - আসাদুজ্জামান খান কামাল ৭০ শতাংশ মৃত্যু অসংক্রামক রোগে, বাজেটে বরাদ্দ বৃদ্ধির দাবি ‘বিদেশে দেশবিরোধী অপপ্রচারকারীদের বিরুদ্ধে স্থানীয় আইনে ব্যবস্থা নিন’ ভূল স্বীকার করে সরে দাড়ানোয় একজনের বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহার বাফেলোতে সন্ত্রাসীদের গুলিতে দুই বাংলাদেশী নিহত ‘শেরে বাংলা আপাদমস্তক একজন পারফেক্ট বাঙালি ছিলেন’ বিএনপির বহিস্কৃতদের জন্য সুখবর! মে দিবসে নয়পল্টনে বিএনপির শ্রমিক সমাবেশ উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়ার জের, বিএনপির বহিস্কার ৭৬


সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন পাসের দাবিতে জাতিসংঘের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ২০-০৯-২০২৩
সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন পাসের দাবিতে জাতিসংঘের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ জাতিসংঘের সামনে ইউনাইটেড হিন্দুস ইউএস’র বিক্ষোভ


গত ১৫ সেপ্টেম্বর শুক্রবার ইউনাইটেড হিন্দুস অব ইউএসএ’র উদ্যোগে বিকেলে জাতিসংঘের সামনে ডাগহেমারশোল্ড প্লাজায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার রাজনৈতিক জোটের উদ্দেশ্যে অবিলম্বে সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন পাশ করার দাবিতে এক কেন্ডেললাইট ভিজিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সংগঠনের সভাপতি ভজন সরকারের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক রামদাস ঘরামীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সভায় নিউইয়র্ক শহরের বাংলাদেশি সংখ্যালঘু সংগঠনের প্রতিনিধিরা যোগ দেন। সভায় বক্তাদের মধ্যে ইউনাইটেড হিন্দুস অব ইউএসএ’র চেয়ারম্যান ড. প্রভাত দাস এবং সভাপতি ভজন সরকার নারীর ক্ষমতায়ন, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও অন্যান্য সেক্টরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অর্জনের প্রশংশা করে বলেন, অত্যন্ত দুঃখজনক বিষয় হল দেশে ক্রমবর্ধমান সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের শিকার অসহায় পৌনে ২ কোটি হিন্দু ও অন্যান্য সংখ্যালঘু নাগরিকের নিরাপত্তা ও সম-অধিকারের ব্যাপারে তিনি নির্বিকার। এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি তিনি আমলেই নিচ্ছেন না। তাই প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করতেই এই সমাবেশ। তারা ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা আওয়ামী লীগের আমলেও হাজার হাজার সংখ্যালঘু নাগরিক অত্যাচারিত হয়ে দেশেত্যাগে বাধ্য হবে সেটা অনভিপ্রেত। তারা বলেন যে, ওয়শিংটনস্থ বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ইমরানের মাধ্যমে গত ১৪ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী বরাবরে প্রেরিত স্মারকলিপির মাধমে এবং আজকের সমাবশে থেকে জানানো দাবি একটাই- প্রধানমন্ত্রী যেন আর বিলম্ব না করে, বর্তমান সংসদের চলমান শেষ সেশনে ওনার ২০১৮ সালের নির্বচনী ইশতেহারে দেয়া সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইনটি তড়িৎ গতিতে পাস করেন। ঠিক যেমনি সাইবার সিকিউরিটি আইন পাশ করা হল।

সভায় অন্যদের মধ্যে রাখেন শিতাংশু গুহ, ড. দ্বিজেন ভটাচার্য, সুশীল সিনহা, ভবতোষ মিত্র, সনজিৎ কুমার ঘোষ, জয়দেব গাইন, উত্তম কুমার সাহা, রতন কুমার চক্রবর্তি, মুনমুন সাহা, রত্না ঘোষ, তপু সরকার, শংকর বিশ্বাস, পূজিতা দাশ, রত্নাবতী রায়, পলাশ ঘোষ, পরেশ ধর, দেবব্রত যোষ, সুমন সূত্রধর প্রমুখ।

বক্তারা সকলেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রশংসাও করেন আবার গভীর হতাশা এবং ক্ষোভও প্রকাশ করেন। দুঃখ করে তারা বলেন, দেশে সবার দাবিই চাওয়া মাত্র মেনে নেওয়া হয়, কিন্তু শত্রু সম্পত্তি আইন বাতিল করার জন্য কিংবা রমনা কলীবাড়িতে প্রবেশাধিকারে জন্য আমাদের যুগ যুগ ধরে আন্দেলন করতে হচ্ছে। ২০১৮ সালে প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে ২০২৩ সালেও দেশে এবং প্রবাসে সংখ্যালঘুদের মিছিল-সমাবেশ-লং মার্চ ও অনশন ধর্মঘট করতে হচ্ছে। তারা বলেন, এক দিকে সাংবিধানিকভাবে রাষ্ট্রধর্ম আইন পাশ করে হিন্দু ও অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিকে পরিণত করা হয়েছে, অন্যদিকে সংখ্যালঘু নির্যাতকদের কোনোদিনই বিচারের আওতায় না আনার ফলে সাম্প্রদায়িক শক্তি সংখ্যালঘু নির্যাতনে উৎসাহ পাচ্ছে। তারা বলেন, প্রচলিত আইনে সংখ্যালঘু নির্যাতকদের দমন করা সম্ভব নয় উপলব্ধি করেই প্রধানমন্ত্রী ২০১৮ সালেসংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন পাস করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। 

তারা আরো বলেন, নিরন্তর জমি ও বাড়িঘর দখল, দেবালয়-দেবদেবীর মূর্তি ধ্বংস করা, উচ্ছেদ, ধর্ষণ, বিভিন্নভাবে ধর্মান্তরিত করা ইত্যাদি বর্বর অত্যাচারের মুখে বাধ্য হয়ে দেশ ত্যাগের ফলে বাংলাদেশ আমলে দেশের মোট জনসংখ্যায় সংখ্যালঘুদের প্রতিনিধিত্ব প্রায় ২০ শতাংশ (১৯৭০) থেকে নেমে ৯.১ শতাংশ-এ (শুধু হিন্দু ৭.৯৫ শতাংশ-এ) পৌঁছেছে। এবং গবেষকদের ভবিষদ্বাণী আগামী ৩০ বছরে বাংলাদেশ হিন্দু শূণ্য হবে। দেশের সংখ্যালঘু নাগরিকদের এই অবস্থা ঠেকাতেই হবে। বক্তারা বলেন যে, মাঝে মাঝেই প্রধানমন্ত্রী বলে থাকেন ‘বাংলাদেশে কেউ সংখ্যালঘু নয়, সকলেরই সমান অধিকার রয়েছে’, কিন্তু বাস্তবতা ঠিক বিপরীত। তাই সত্য স্বীকার করে নিয়ে সমস্যার একটি টেকসই সমাধান করাই বেরং শ্রেয়, আর সেটা হল অবিলম্বে সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন পাস করা যার অন্তর্ভুক্ত অবশ্যই থাকা চাই: ক) সংখ্যালঘু নাগরিকদের “সংখ্যোলঘু” বলে স্বীকৃতি প্রদান; খ) একটি হেইট স্পিচ ও হেইট ক্রাইম আইন, যার অধীনে যুক্তরাষ্ট্রের মত সরকার-বাদী-মোকদ্দমার মাধ্যমে হাই কোর্টের একটি বিশেষ ডিভিশনের তত্ত্বাবধানে সংখ্যালঘু নির্যাতকের বিচার ও শাস্তি প্রদানের বিধান; গ) সংখ্যালঘু নির্যাতকদের বিচারের জন্য জেলা প্রতি  একটি করে দ্রুত-বিচারের ক্ষমতা সম্পন্ন আদালত;  (২)জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন; (৩)একটি সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয়;  ৪) বাতিলকৃত অর্পিত সম্পত্তি আইনে অধিগৃহীত সকল সম্পত্তি প্রকৃত মালিককে দ্রুত ফিরিয়ে দেওয়ার বিধান; (৫) সংসদে অন্তত: ২০ শতাংশ আসনে সংখ্যালঘু প্রার্থীদের মনোনয়ন দানের বিধান; (৬) জজ সাহাবুদ্দীন কমিশন কর্তৃক বিচারের জন্য সুপারিশকৃত হাজার হাজার সংখ্যালঘু নির্যাতকদের বিচার প্রক্রিয়া অবিলম্বে শুরু করার ব্যবস্থা; (৭)একটি বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠন পূর্বক ২০০৬ থেকে এখন পর্যন্ত সংঘটিত সকল সংখ্যালঘু নির্যাতনের অপরাধীদের তালিকা করে সংশ্লিষ্ট আদালতের কাছে হস্তান্তর করা এবং নির্যাতনে ক্ষতিগ্রস্তদের যথেষ্ট পরিমাণ ক্ষতিপূরণ দিয়ে তাদের পুনর্বাসন এবং শারীরিক ও মানসিক চিকিৎসার ব্যবস্থা: ৮) প্রতিটি জেলায় অন্তত: একটি করে মেগা মন্দির নির্মাণের জন্য অর্থ বরাদ্দ করা এবং কাজ শুরু করার নির্দেশ; (৯) ইসলামিক ফাউন্ডেশনের আদলে হিন্দু ফাউন্ডেশেন গঠন করার জন্য নির্দেশ ও অর্থ বরাদ্দ করা; (১০) দেবোত্তর সম্পত্তি রক্ষণাবেক্ষণ আইন; এবং (১১) ১৯৭২ সালের সংবিধান পুনরুজ্জীবিত করা।

শেয়ার করুন