০২ মে ২০১২, বৃহস্পতিবার, ০৫:২৫:২৫ অপরাহ্ন


বিএনপিকে চাপে রাখার কৌশলে আ.লীগ
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৪-১২-২০২২
বিএনপিকে চাপে রাখার কৌশলে আ.লীগ বিএনপি অফিসের সামনে সতর্ক পুলিশ।


১০ ডিসেম্বর ঢাকার সমাবেশ শেষে বিএনপির টু শব্দটা নেই! সফলতা কী ব্যর্থতা এ নিয়েও তারা বলছে না কিছুই। তবে ১০ ডিসেম্বর থেকে অনর্গল কথা বলছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ। সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ১০ ডিসেম্বর বিকেলে সাভারের এক জনসভায়, বিএনপিকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘আজকে কী? পল্টনে গেলেন না? গেলেন না? হাফ ডিফিট হয়ে গেছে।’ 

১২ ডিসেম্বর চুয়াডাঙ্গা জেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি বক্তব্যে ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিএনপির হাঁকডাক ১০ তারিখের পর খতম হয়ে গেছে। তাদের খেলা এখন শেষ। কোয়ার্টার ফাইনালে বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয়েছে। সামনে সেমিফাইনাল। এরপর ২৪ সালের জানুয়ারির নির্বাচনে হবে ফাইনাল খেলা। 

তিনি বলেন, তারা বলেছিল ১০ ডিসেম্বর বিজয় মিছিল করবে, সবকিছু অচল করে দেবে। কিন্তু কই ১০ তারিখ তো চলে গেছে, এখন তারা নিজেরাই অচল হয়ে গেল। বিএনপির সরকার পতনের রঙিন খোয়াব অবশেষে খতম। এখন খেলা হবে বিএনপির দুর্নীতির বিরুদ্ধে, খেলা হবে হাওয়া ভবনের বিরুদ্ধে, খেলা হবে ভোট চুরির বিরুদ্ধে। অন্যসময় বিএনপি মহাসচিব আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের এমন কথার উত্তর দিলেও এ ব্যাপারে বিএনপি নেতৃবৃন্দ নীরব। তাছাড়া মির্জা ফখরুল তো কারাগারে।  

আসলে বিএনপি যে প্রেশারটা দিয়েছে পরক্ষো বা প্রত্যক্ষভাবে সেটা ফিরিয়ে দেয়ার আপ্রাণ চেষ্টা এখন ক্ষমতাসীনদের। সে পরিপেক্ষিতে এমন কথা। এছাড়াও বিএনপি আরো একভাবে প্রচণ্ড চাপে ফেলে দিয়েছে ক্ষমতাসীনদের। সেটা সংসদে থাকা বিএনপির ৭ সংসদ সদস্যের পদত্যাগ। ইতিমধ্যে ৬ জন পদত্যাগ করলেও দেশের বাইরে এক সাংসদ থাকার কারণে তারটা সশরীরে উপস্থিত হয়ে দিতে হবে বলে জানিয়েছেন স্পিকার। 

এদিকে সংসদ ভেঙে দেয়ার দাবিতে বিএনপির সাত সদস্যের পদত্যাগের বিষয়টা তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া হচ্ছে বলে অনুমান করা যাচ্ছে। কেননা পদত্যাগের সঙ্গে সঙ্গে ৬ আসন দ্রুততম সময়ে শূন্য ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করার অর্থ দ্রুত উপনির্বাচনের দিকে চলে যাওয়া।  

জাতীয় সংসদ থেকে পদত্যাগ করা বিএনপির সংসদ-সদস্যদের আসন শূন্য ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশের ৯০ দিনের মধ্যে উপনির্বাচনের পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর। তিনি বলেন, যেদিন পদত্যাগের গেজেট নোটিফিকেশন হবে, তার পরের ৯০ দিনের মধ্যে ওইসব আসনে উপনির্বাচন হবে। তিনি আরো বলেন, আসন শূন্য হওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন হবে। যতোক্ষণ গেজেট না হবে, ততোক্ষণ আমাদের কাজ শুরু করার সুযোগ নেই। কোনো সংসদ-সদস্য পদত্যাগ করলে ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে, এটাই ইসির দায়িত্ব।  

ফলে যদিও বছরখানেকের মতো সময় এখনো বাকি রয়েছে বর্তমান সরকারের মেয়াদ। ফলে এ সময়ের জন্য উপনির্বাচনের মাধ্যমে শূন্য আসনগুলো পূরণ হবে বলেই মনে হচ্ছে। এটাতে দুটি বিষয় জড়িত। কারণ একটি আসন এতো দীর্ঘসময় (এক বছর) শূন্য পরে থাকাটা অনেকটাই সমীচীন নয়। দ্বিতীয়ত. বিএনপি রাজনৈতিকভাবে যে একটা চাপ দিয়েছে ক্ষমতাসীনদের এবং পদত্যাগে তারা যে সকল বিষয়ে অবতারণা করেছে, সেগুলো পাশ কাটিয়ে উপনির্বাচনের মাধ্যমে বিএনকি পাত্তা না দেয়া অবজ্ঞা করা। দুটি বিষয়ই হতে পারে রাজনৈতিক কৌশল দু’দলের। তবে এমন রাজনীতির হিসাব-নিকাষে কে জিতবে, কে হারবে না কী হবে, এগুলো বলা আসলে সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। আপাতত যে বিষয়টা সামনে এসেছে সেটা হলো বিএনপি যে আন্দোলন সংগ্রাম করছে সেটাতে ক্ষমতাসীন জিরো টলারেন্স। এটাই ক্ষমতাসীনদের কথাবার্তা ও আচরণ ও বিভিন্ন পদক্ষেপে মনে হচ্ছে বলে বিশিষ্টজনরা মনে করেন।  

উল্লেখ্য, এর আগে গত ১২ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদে সকালে সশরীরে পদত্যাগপত্র জমা দেন বগুড়া-৬ আসনের সংসদ সদস্য গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ, বগুড়া-৪ আসনের সংসদ সদস্য মোশারফ হোসেন, ঠাকুরগাঁও-৩ আসনের জাহিদুর রহমান, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনের আমিনুল ইসলাম ও সংরক্ষিত নারী আসনের রুমিন ফারহানা।

সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ দেশের বাইরে থাকায় এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের আবদুস সাত্তার ভূঞা অসুস্থ থাকায় সশরীরে পদত্যাগপত্র জমা না দিয়ে ই-মেইলে পদত্যাগপত্র জমা দেন। এ বিষয়ে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেছেন, ‘হারুনকে নতুন করে পদত্যাগপত্র জমা দিতে হবে।’

শেয়ার করুন