২৭ এপ্রিল ২০১২, শনিবার, ০৫:০৯:১৩ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় ইউরোপে ভারতীয় ৫২৭ পণ্যে ক্যান্সার সৃষ্টিকারি উপাদন শনাক্ত বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশে কড়াকড়ি বিএনপির আন্দোলন ঠেকানোই ক্ষমতাসীনদের প্রধান চ্যালেঞ্জ বিএনপিকে মাঠে ফেরাচ্ছে আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন নিয়ে অদৃশ্য চাপে বিএনপি


অবসর থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফিরিয়েছিলেন তামিমকে
তামিমকে নিয়ে কেন এ নাটকীয়তা
সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৭-০৯-২০২৩
তামিমকে নিয়ে কেন এ নাটকীয়তা আফগানিস্তানের সিরিজের মাঝপথে তামিমের অবসর নেয়ার সেই মুহুর্তগুলো/ফাইল ছবি


 দীর্ঘ সময় নিয়ে নানা পরীক্ষা নিরীক্ষা এবং নাটক করেও বিতর্ক বিহীন বিশ্বকাপ স্কোয়াড দিতে পারেনি। সাকিব আল হাসানের নেতৃত্বে ১৫ সদস্যের স্কোয়াড থেকে ফিটনেসের অজুহাতে বাদ দেয়া হয়েছে বাংলাদেশের সব ফরম্যাটের সর্বোচ্চ রান স্কোরার প্রাক্তন অধিনায়ক দেশ সেরা ওপেনিং ব্যাটসম্যান তামিম ইকবালকে। এশিয়া কাপে ব্যর্থ মিশনের পর নিউ জিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ঘরের মাঠে সদ্য সমাপ্ত ওডিআই সিরিজ বাংলাদেশ ২-০ হেরে গেছে। প্রথম ম্যাচটি বৃষ্টিতে পরিত্যাক্ত হবার পর দ্বিতীয় ম্যাচে বাংলাদেশ পরাজিত হয় ৮৬ রানে। তৃতীয় ম্যাচেও আসে ৭ উইকেটের বিশাল পরাজয়। এমতাবস্থায় সব কিছু ছাড়িয়ে এখন আলোচনার ঝড় তামিম ইকবালকে স্কোয়াড থেকে বাদ দেয়া এবং যে পদ্ধতিতে বাদ দেয়া হলো।
দের মাসের লম্বা টুর্নামেন্টে প্রতিটি দলকে অন্তত ৯ টি ম্যাচ খেলতে হবে। সব দল চাইবে মূল খেলোয়াড়রা যেন বেশিরভাগ খেলার জন্য সুস্থ থাকে। আর ১৫ জন খেলোয়াড়ের স্কোয়াড এবং রিজার্ভ খেলোয়াড় নেয়ার সংস্থান রাখা হয়েছে।


বাংলাদেশ কিন্তু ভারত ,অস্ট্রেলিয়া,ইংল্যান্ড,পাকিস্তানের মত এমন দল না যে বিশ্ব মানের অনেক বিকল্প খেলোয়াড় আছে। নিউজিল্যান্ডের মত দল কিন্তু তাদের অধিনায়ক ১০০% ম্যাচ ফিট না থাকা সত্ত্বেও দলে রেখেছে। অস্ট্রেলিয়া নিয়েছে গ্লেন ম্যাক্সওয়েলকে ( ১০০% ম্যাচ ফিট নয়)। শ্রীলংকা দল ঘোষণা করেছে ১০০% ম্যাচ ফিট নয় ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গাকে অন্তর্ভুক্ত করে। ভারত নিবিড় চিকিৎসা করে জাসপ্রিত বুমরা, কে এল রাহুল ,স্রেস আয়ারকে সুস্থ করে তুলেছে। বাংলাদেশ কেন পারলো না দীর্ঘ সময় আনফিট থাকা তামিম ইকবালকে সুস্থ করতে? আর বাংলাদেশ কেন ১০০% সুস্থ না থাকা তামিমকে দলে নেয়ার ঝুঁকি নিলো না? বিশেষত যখন দলে তামিমের অপরিহার্যতা অন্যানো দলের আলোচিত খেলোয়াড়দের থেকেও বেশি। এমনিতেই দলের টপ অর্ডার নড়বড়ে। লিটন ফর্মে নেই। বিকল্প যাদের পরীক্ষা করা হয়েছে তাদের কেউ মানসম্মত নয়।  


বাংলাদেশ স্কোয়াড: সাকিব আল হাসান ( অধিনায়ক) , লিটন কুমার দাস ( সহ অধিনায়ক) , তানজিদ হাসান তামিম, নাজমুল হাসান শান্ত, তাওহীদ হৃদয়, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, মেহেদী হাসান মিরাজ, তাসকিন আহমেদ, মুস্তাফিজুর রহমান , শরিফুল ইসলাম, হাসান মাহমুদ , তানজিম হাসান শাকিব , শেখ মেহেদী হাসান এবং নাসুম আহমেদ।


একমাত্র তামিম ইকবাল ছাড়া বর্তমান স্কোয়াড নিয়ে কারো আপত্তি থাকার কথা নয়। অনেকের মতে ৭৫% ম্যাচ ফিট তামিম দলের অধিকাংশ ব্যাটসম্যানের থেকে অনেক কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারে। নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে যে দুটি ম্যাচ তামিম খেলেছে কখনোই মাঠে তাকে আনফিট মনে হয়নি। তামিম সততার সঙ্গে তার ফিটনেস বিষয়টি বিবেচনার কথা বলে ভুল করেনি। তামিমের কথার ভিত্তিতে অন্যদের প্রতিক্রিয়া পেশাদারি মনে হয়নি।


তামিমের অধিনায়কত্বে এবং উল্লেখযোগ্য অবদানে প্রথম দিন দলের একটি হয়েই বাংলাদেশ আইসিসি ওডিআই সুপার লীগ শেষ করেছিল। বেশ কিছু দিন থেকেই পিঠের ব্যাথা থাকায় তামিম মাঝেই বিশ্রাম নিচ্ছিলো।  হয়তো দলের দুই একজন ব্যবস্থাপকের সঙ্গে বনিবনার অভাব থাকায় আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে সিরিজ চলা অবস্থায় অভিমান করে বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক তামিম ইকবাল কান্নাভেজা ঘোষনার মাধ্যমে সাংবাদিক সম্মেলনে অবসর গ্রহণের ঘোষণা দিয়েছিলন। ২৪ ঘন্টা নাটকের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুরোধে অবসর থেকে ফিরে আসেন তিনি। এবং ওয়ানডে ক্রিকেটে যেন খেলেন সেটা অনুরোধ করা হলে তামিম সিদ্দান্ত পাল্টিয়ে ফেরেন।


মুলত সে সময়ে তামিমকে ফেরানোর মুল উদ্দেশ্য ভারতে অনুষ্টিত বিশ্বকাপে যেন পাওয়া যায় অভিজ্ঞ এ ওপেনারকে। সবই ঠিক ছিল। কিন্তু দল ঘোষনার আগে তামিমকে নিয়ে যত নাটক। কারন নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দুই ম্যাচের একটিতে ব্যাটিংয়ের সুযোগ পান। যাতে তিনি দ্বায়িত্বের সঙ্গে খেলে করেছিলেন ৪২ রান। এ রান করার পর থেকেই তামিমকে যেহেতু বাদ দেয়ার অংকটা কঠিন হয়, তখন থেকে অজুহাত খোজা শুরু। তামিমের চিকিৎসা বিষয়ে অবহেলার অভিযোগ আছে। বিশ্বকাপ খেলার আগ্রহ থেকেই তামিম ইংল্যান্ড থেকে সুশ্রষা নিয়ে ফিরে এসে নিবিড় অনুশীলন করে।  দুটি ম্যাচ খেলার পর হয়তো চিকিৎসকের পরামর্শেই তৃতীয় ম্যাচে বিশ্রাম নেয়। এমতাবস্থায় গত দুইদিনের নাটক সৃষ্টির নটের গুরু কারা ? কেন এতো লুকোচুরি ?


তাহলে প্রধানমন্ত্রীই বা কেন তাকে অবসর ভাঙ্গার অনুরোধ জানিয়েছিলেন। বিসিবি’র যারা তামিম নাটকটি মঞ্চস্থ করেছেন, তারা কি প্রধানমন্ত্রীর সেই অনুরোধকে অসন্মান করলেন না? এমন প্রশ্ন উঠছে। তামিমের ওপেনিং স্থানে দুর্দান্ত পারফরমার যদি থাকতেন যিনি তামিমের চেয়েও দেশের জন্য বেশী কিছু দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, তাহলে একটা কথা। কিন্তু বাংলাদেশের ওপেনিং জুটি তো নড়বড়ে। যার জন্য লো’য়ার অর্ডার থেকে মেহেদি হাসানকে টেনে তুলে ওপেন করাতে হচ্ছে হাতুরাসিংহকে। কিন্তু মেহেদি তো আর ওপেনার নয়। ওপেনিংয়ে খেলা তো সহজসাধ্য নয়। ওপেনিং ব্যাটসম্যানের ফাষ্ট বল, নতুন বল সামলানোর অভিজ্ঞতা থেকে শুরু করে অনেককিছুই মাথায় নিয়ে খেলতে হয়। এটা অভিজ্ঞতার বিষয়। কিন্তু তামিমের সে অভিজ্ঞতার বিকল্প কে?


বাংলাদেশ এমনিতেই এবারের বিশ্বকাপের সবচেয়ে অপ্রস্তুত দল।  না আছে টপ অর্ডার না আছে বটম অর্ডার। বিশ্বকাপের ৯ টি ম্যাচে সর্বোচ্চ ২ টি জয় পাবে কিনা সন্দেহ। যে দলে ওপেনিং নিয়ে বিশাল সমস্যা সেখানে কোন ভরসায় বাংলাদেশ তামিমকে বাদ দেয়ার ঝুঁকি নিলো? তানজিদ তামিমের হয়তো প্রতিভা আছে। কিন্তু সেকি তামিমের শুন্য স্থান পূরণের জন্য আদৌ প্রস্তুত?


বিশ্বস্ত সূত্রে জেনেছি তামিমকে আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে ম্যাচে মিডল অর্ডারে খেলার প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল ,অন্যানো ম্যাচেও মিডল অর্ডারে খেলার প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল। ১৭ বছর জাতীয় দলে কৃতিত্বের সাথে খেলা একজন বিশ্ব মানের ওপেনারকে এই ধরণের প্রস্তাব দেয়াই ধৃষ্টতা।
যাহোক তবুও বাংলাদেশ দলের জন্য শুভেচ্ছা।  বোলিং আক্রমণ শক্তিশালী।  মাহমুদুল্লাহ ফেরায় মিডল অর্ডার আরো সুসংহত। কিন্তু সমস্যা হবে টপ অর্ডার নিয়ে। দলের ভরাডুবির সম্পূর্ণ দায় দায়িত্ত্ব নিতে হবে টিম ম্যানেজমেন্ট এবং নির্বাচক মণ্ডলীকে।


তবে তামিম ইস্যু শেষ না হয়েও ঝুলে গেছে। কারন তামিমকে দলে না নিয়ে তার ভাই নাফিস ইকবালকেও ম্যানেজম্যান্ট থেকে ছেটে ফেলা হয়েছে। দলে এখানেই সব শেষ নয়, বিতর্কের জন্ম আরেকস্থানেও। লিটন তামিমের অবর্তমানে ক্যাপ্টেনসী করতেন। এবার বিশ্বকাপে সাকিবের সহ অধিনায়ক করা হয়েছে নাজমুল হাসান শান্তকে। কেন লিটনের উপর আস্থা রাখতে পারলেন না ম্যানেজম্যান্ট। যদি সেটাই না হয় তাহলে লিটনকে দিয়ে এর আগে অনেক সময় ক্যাপ্টেনসী করানো হলো কোন লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে। বোর্ডের এসব সিদ্ধান্তের মুলে কে সেটা এখন খুজতে শুরু করেছে ক্রিকেটপ্রেমীরা এটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।  

শেয়ার করুন