২৯ এপ্রিল ২০১২, সোমবার, ০৯:৬:০১ পূর্বাহ্ন


ভুয়া লাইসেন্সে আসল মালিকের ড্রাইভিং লাইসেন্স সাসপেন্ড
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৮-০৩-২০২৩
ভুয়া লাইসেন্সে আসল মালিকের ড্রাইভিং লাইসেন্স সাসপেন্ড


সাবধান। কমিউনিটিতে এখনো প্রতারণার শিকার হচ্ছেন বাংলাদেশিরা। প্রতারণার শিকার হয়ে তারা অর্থ হারাচ্ছেন এবং নানা ধরনের হয়রানির শিকার হচ্ছেন। একশ্রেণির প্রতারক গোষ্ঠী আপনারা ইনফরমেশন সংগ্রহ করে আপনার ব্যাংক থেকে, ক্রেডিট কার্ড থেকে এবং শেয়ারবাজরের বিনিয়োগ থেকে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ করেও প্রতারকদের প্রতারণা বন্ধ করা যাচ্ছে না। ব্যাংক বা ক্রেডিট কার্ডে কল করে হয়ত কয়েক মাস পর অর্থ ফেরত পাওয়া যায় কিন্তু প্রতারকদের কোনো হদিস পাওয়া যায় না। ব্যাংক বা ক্রেডিট কার্ডে কল করলে তারা বিষয়টি তদন্ত করে এবং তদন্তের পর অর্থ ফেরত দেয়। যদিও শেয়ারবাজারের বিনিয়োগের সব অর্থ ফেরত পাওয়া যায় না। প্রতারণার শিকার অনেক বাংলাদেশিই হয়রানির মধ্যে পড়েছেন। অভিযোগ করার সঙ্গে সঙ্গে অ্যাকাউন্ট সাময়িক বন্ধ করে দেয়া হয়। যারা সরাসরি ব্যাংক থেকে বিল পরিশোধ করেন তাদের নানান ঝামেলা পড়তে হয়। সাময়িক অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেয়ার কারণে তারা সময় মতো পেমেন্ট করতে পারেন না। তাদের অন্য অ্যাকাউন্ট খুলে পরিস্থিতি সামাল দিতে হয়। তবে প্রতারিত ব্যক্তি যে মানসিক যন্ত্রণায় থাকেন তা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশি অধ্যুষিত এলাকা জ্যাকসন হাইটস, জ্যামাইকা এবং অন্যান্য এলাকায় যারা টেলিফোনসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বিল পে করেন সেখান থেকেই ইনফরমেশন অর্থের বিনিময়ে হ্যাকারদের দেয়া হয়। ইতিমধ্যেই জ্যামাইকা এবং জ্যাকসন হাইটস এলাকায় কয়েকটি প্রতিষ্ঠান শনাক্ত করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। জানা গেছে, টেলিফোনের বিল পরিশোধের সময় তারা আপনার ফোন থেকে ডাটা চুরি করে আপনার ইনফরমেশন বিক্রি করে দেয়। যে কারণে ভুইফোঁড় প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বিল পরিশোধ করা উচিত নয় বলে অনেকেই মনে করেন। তাছাড়া টেলিফোনে কারো ব্যক্তিগত তথ্য রাখারও উচিত নয়। যার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে আইডি, সোশ্যাল সিকিউরিটি নম্বরসহ ব্যাংকের ইনফরমেশন। হ্যাকাররা যদি আপনার আইডি এবং সোশ্যাল সিকিউরিটি নম্বর পেয়ে যায়, তাহলে কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তারা আপনারা ব্যাংক এবং ক্রেডিট কার্ডের অর্থ সাবাড় করে দেবে। যে কারণে ফোনের মধ্যে ব্যক্তিগত না রাখাই উত্তম। তাছাড়া যারা অল্প অর্থের লাইন ব্যবহার করেন তারাই প্রতারণার শিকার হচ্ছেন বেশি। অনেক বাংলাদেশি প্রবাসী রয়েছেন যারা ফ্রি কথা বলার জন্য অল্প অর্থের লাইন ব্যবহার করেন। এসব ফোনে ইনফরমেশন রাখা ভয়ংকর। আবার অন্য ফোনও হ্যাক করা হয়। তবে তার সংখ্যা কম। মোট কথা ফোনের মধ্যে ব্যক্তিগত ইনফরমেশন রাখাই উচিত নয়। দরকারে ব্যবহার করে তা ডিলিট করে দেয়াই উত্তম।

অর্থ হাতিয়ে নেয়ার পাশাপাশি আরো ভয়ংকর কাজ করছে প্রতারকরা। প্রতারকরা আপনার ইনফরমেশন দিয়ে আইডি বানাচ্ছে, ড্রাইভিং লাইসেন্স বানাচ্ছে, ব্যাংক কার্ড এবং ক্রেডিট কার্ডও বানাচ্ছেন। সুতরাং সবার সাবধান হওয়া উচিত। বাংলাদেশি কমিউনিটির অত্যন্ত পরিচিত মুখ, রূপসী চাঁদপুর ফাউন্ডেশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বিশিষ্ট রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম প্রতারকদের খপ্পড়ে পড়েছিলেন ২০২২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর। সেই সময় তার ব্যাংক এবং ক্রেডিট কার্ড এবং শেয়ারবাজার থেকে কয়েক ঘন্টার মধ্যে প্রায় ৮০ হাজার ডলারের মত নিয়ে যায়। অনেক চেষ্টা, দৌড়াদৌড়ি করে সব অর্থ উদ্ধার করা সম্ভব হলেও শেয়ারবাজারের ৩ হাজার ২০০ ডলার পাওয়া যায়নি। এটা কোনোদিন পাওয়াও যাবে না। মোটামুটি সবকিছ্ ুঠিক করে স্বস্তিতেই ছিলেন। মনে করেছিলেন বিপদ কেটে গেছে। কিন্তু বিধি বাম প্রায় এক বছর পর আবারো তিনি প্রতারকদের প্রতারণার শিকার হলেন। যা তিনি চিন্তাও করেননি।

সাইফুল ইসলাম দেশ পত্রিকাকে জানান, মায়ের অসুস্থতার জন্য বাংলাদেশে গিয়েছিলেন। বাংলাদেশ থেকে গত ১ মার্চ নিউইয়র্ক আসেন। নিউইয়র্ক এসে কিছুটা অসুস্থ হয়ে জ্যামাইকার বাসায় অবস্থান করেছিলেন। গত ২ মার্চ বৃহস্পতিবার একটি চিঠি পান। সেই চিঠিতে লেখা হয় তার ড্রাইভিং লাইসেন্স সাসপেন্ড। চিঠি উল্লেখ করা হয়, তিনি ফ্লোরিডায় একটি টিকেট পেয়েছেন। টিকেটের অর্থ তিনি পরিশোধ করেননি, যে কারণে তার ড্রাইভিং লাইসেন্স সাসপেন্ড করা হয়েছে। চিঠি পেয়েই তিনি ফ্লোরিডার ঐ কাউন্টি এবং ডিএমভি অফিসে কল করেন। তিনি তার সমস্ত ইনফরমেশন দেন। জানা যায় তার নামের সঙ্গে নামের মিল রয়েছে, তার নামে ভুয়া আইডি এবং ড্রাইভিং লাইসেন্স করা হয়েছে। ঐ অফিস থেকে জানানো হয় ৬ সপ্তাহ পর শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। তখন জানা যাবে তার কী অবস্থা হবে। এই পরিস্থিতিতে তিনি ১০৭ প্রিসেক্টে গিয়ে রিপোর্ট করেন। সেই রিপোর্ট এবং তার আইনজীবীর মাধ্যমে চিঠি প্রেরণ করেন। এসব ডমুমেন্ট পাঠানোর পর জানানো হয় ৬ সপ্তাহ পরে যখন শুনানি অনুষ্ঠিত হবে তখন তারা তা উপস্থাপন করবেন। তিনি আরো জানান, তার নামে যে ভুয়া আইডি এবং ড্রাইভিং লাইসেন্স বানানো হয়েছে তার ঠিকানা ব্যবহার করা হয়েছে বাফেলোতে। সাইফুল ইসলাম জানান, এই পরিস্থিতি আমি গাড়ি নিয়ে বের হতে পারছি না। কোথায় যেতে পারছি না, বাসার মধ্যেই সময় কাটাচ্ছি। মানসিক যন্ত্রণার মধ্যে রয়েছি। তিনি আরো বলেন, যারা প্রতারণার শিকার হয়েছেন তাদের সতর্ক থাকা উচিত।

শেয়ার করুন