০৬ মে ২০১২, সোমবার, ০৩:৫০:৩৮ অপরাহ্ন


ঢাকা মহানগরী দুনিয়ার অন্যতম নিকৃষ্টতম বসবাসযোগ্য নগরী
দুই বছর ধরে ঢাকায় কেন তীব্র দাবদাহ?
সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৪-০৪-২০২৪
দুই বছর ধরে ঢাকায় কেন তীব্র দাবদাহ? গাছ কাটার প্রতিবাদ (ফাইল ছবি)


একসময় ছায়া সুনিবিড় ঢাকা নগরীকে নিয়ে স্বপ্ন ছিল তিলোত্তমা নগরী গড়ে তোলা। ১৯০০ শতকের ষাট এবং সত্তর দশকে ঢাকা ছিল ছায়া ঢাকা পাখিডাকা শান্তির নীড়। বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের পটভূমি ঐতিহাসিক ঢাকা নগরীতেই ভাষা আন্দোলন, স্বাধীনতার আন্দোলন, স্বাধীনতা আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল। দুনিয়ার অধিকাংশ প্রধান নগরী এক একটি নদীর তীরে অবস্থিত। ঢাকার পরিচয় ছিল বুড়িগঙ্গা নগরীর তীরে অবস্থিত। কিন্তু বৃহত্তর ঢাকা নগরীর সুবিধা ছিল চারটি বহমান নদী বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, বালু এবং তুরাগ। সুযোগ ছিল স্বাধীন বাংলাদেশের রাজধানী হিসাবে ঢাকা মহানগরীকে লন্ডন, প্যারিস, মেলবোর্ন, সিডনি, ভেনিস, আমস্টার্ডামের মতো গড়ে তোলার। কিন্তু স্বাধীনতার পর থেকে নানা দুর্ঘটনায় বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক পরিবেশ বিঘ্নিত হওয়ায় স্বাধীনতার ৫৩ বছর পরে ঢাকা মহানগরী দুনিয়ার অন্যতম নিকৃষ্টতম বসবাসযোগ্য নগরীতে পরিণত হয়েছে। 

ভুল পরিকল্পনা, ভ্রান্ত বাস্তবায়ন কৌশল, দুর্নীতিদুষ্ট অপরিকল্পিত নগরায়ণের কারণে ঢাকা এখন কংক্রিটের বস্তি। বড়জোর ৭৫ লাখ থেকে ১ কোটি ধারণক্ষম ঢাকা মহানগরীতে এখন ২.৫ কোটি মানুষের বাস। যানজট, জলজট, বায়ুদূষণ, শব্দদূষণের ঢাকা মহানগরী এখন বসবাসের জন্য শীর্ষতম অযোগ্য শহর। 

দুর্ভাগ্য জাতির। মুক্তিযুদ্ধে ধ্বংসপ্রাপ্ত দেশ মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে পুর্নঠনের গঠনের কাজে ব্যাস্ত থাকার সময় কায়েমী স্বার্থবাদী গোষ্ঠীর ষড়যন্ত্রে ১৫, অগাস্ট ১৯৭৫ জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে নির্মম হত্যা এবং ৩ নভেম্বর ১৯৭৫ জেলখানায় মুক্তিযুদ্ধের চার প্রধান নেতাকে হত্যাকা-ের পর বাংলাদেশ ক্রমান্বয়ে উল্টোপথে চলে ক্রমান্বয়ে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। ১৯৭৫-১৯৯০ সামরিক একনায়কত্বের কারসাজিতে সব প্রতিষ্ঠান দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে পড়ে। দেশের সব কার্যক্রম রাজধানী ঢাকাকেন্দ্রিক হয়ে পড়ে সারা দেশ থেকে বিপুল মানুষ ঢাকায় চলে আসে। মধ্যবিত্তের পাশাপাশি উপকূলীয় অঞ্চল থেকে বানভাসি মানুষ ঢাকায় ভিড় জমায়। 

স্বল্প সময় ঢাকা মহানগগরীতে ধারণক্ষমতার ২-৩ গুণ জনগোষ্ঠী ঢাকাকে কংক্রিটের বস্তিতে পরিণত করে। ঢাকার চারপাশের চারটি নদীসহ ঢাকার মধ্যে প্রবাহিত খাল জলাশয়সমূহ জবর দখলে মৃতপ্রায় হয়ে পড়ে। নির্বিচারে বৃক্ষনিধন করে ঢাকাকে বৃক্ষহীন করে ফেলা হয়। ঢাকায় নির্মিত বহুতল ভবনসমূহ অধিকাংশ বিল্ডিং কোড না মেলে নির্মিত হওয়ায় ঢাকা অবরুদ্ধ নগরীতে পরিণত হয়। গায়ে গায়ে নির্মিত ভবনসমূহের কারণে ঢাকার স্বাভাবিক বায়ুপ্রবাহ রুদ্ধ হয়। যার সম্মিলিত ফলশ্রুতিতে বিগত দুই বছর যাবৎ গ্রীষ্মকালে ঢাকা উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। গ্রীষ্মের দাবদাহ ঢাকাবাসীকে অতিষ্ঠ করে তুলছে। 

বর্তমান পরিস্থিতিতে ঢাকাকে বসবাসযোগ্য নগরীতে পরিণত করতে হলে সম্মানিত পরিকল্পনার মাধ্যমে ঢাকা নদী, জলাশয়গুলো দখলমুক্ত করে স্বাভাবিক জলপ্রবাহ নিশ্চিত করতে হবে, অপরিকল্পিত ভবনসমূহ অপসারণ করতে হবে, ব্যাপক বৃক্ষ রোপণ করে সবুজায়ন করতে হবে। এছাড়া সড়কে চলাচলকারী বিপুলসংখ্যক ফিটনেসবিহীন যানবাহন অপসারণ করে পরিবেশবান্ধব জ্বালানি ব্যবহারকারী পাবলিক ট্রান্সপোর্ট দ্বারা প্রতিস্থাপন করতে হবে। ঢাকার জনসংখ্যা পরিকল্পিত উপায়ে রিভার্স মাইগ্রেশনের মাধ্যমে যথাসম্ভব কমাতে হবে। রেল এবং সড়ক ব্যবস্থাসমূহে চলমান প্রকল্পসমূহ বাস্তবায়িত হলে ২০৩০ নাগাদ ঢাকার সঙ্গে সংলগ্ন জেলাসমূহে দ্রুততম সময়ে যাতায়াত সুযোগ সৃষ্টি হবে। বহু মানুষ আসে পাশের শহর নগরে থেকে ঢাকায় এসে দৈনন্দিন কাজ করতে পারবে। 

রিভার্স মাইগ্রেশনের মাধ্যমে ঢাকার জনসংখ্যা অন্তত ১.৫ কোটিতে নামানো সম্ভব না হলে ঢাকা অচিরেই মৃত নগরীতে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

শেয়ার করুন