৩০ এপ্রিল ২০১২, মঙ্গলবার, ১১:২৫:৫৪ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
‘বিশেষ চাহিদা সম্পন্নদের প্রতিভা বিকাশে কোন ধরনের প্রতিবন্ধকতা রাখা যাবে না’ সরকার ও বেসরকারি উদ্যোগে দরিদ্রমুক্ত দেশ গড়ে উঠবে - আসাদুজ্জামান খান কামাল ৭০ শতাংশ মৃত্যু অসংক্রামক রোগে, বাজেটে বরাদ্দ বৃদ্ধির দাবি ‘বিদেশে দেশবিরোধী অপপ্রচারকারীদের বিরুদ্ধে স্থানীয় আইনে ব্যবস্থা নিন’ ভূল স্বীকার করে সরে দাড়ানোয় একজনের বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহার বাফেলোতে সন্ত্রাসীদের গুলিতে দুই বাংলাদেশী নিহত ‘শেরে বাংলা আপাদমস্তক একজন পারফেক্ট বাঙালি ছিলেন’ বিএনপির বহিস্কৃতদের জন্য সুখবর! মে দিবসে নয়পল্টনে বিএনপির শ্রমিক সমাবেশ উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়ার জের, বিএনপির বহিস্কার ৭৬


ডোনাল্ড লু’র টেবিলে বাংলাদেশ ইস্যু আছে কী
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ৩১-০১-২০২৪
ডোনাল্ড লু’র টেবিলে বাংলাদেশ ইস্যু আছে কী সহকারী মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু


দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় তার পা রাখা মানে বাংলাদেশও কিছুটা টেনশনে। ডোনাল্ড লু। মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্র কর্মকর্তা। বর্তমানে তিনি সফর করছেন এশিয়ার এ অঞ্চলে। ভারত সফর দিয়ে তার শুরু। ২৬ জানুয়ারি থেকে ৩১ জানুয়ারি তিনি ভারতে অবস্থান করেছেন। এরপর তিনি চলে যাবেন মালদ্বীপে। যতদূর জানা গেছে মালদ্বীপের রাজধানী মালেতে একটি স্থায়ী দূতাবাস প্রতিষ্ঠার জন্য সে দেশের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কার্যকরি আলোচনা করবেন। ফলে বেশ কিছুদিন এ অঞ্চলে তার বিচরণ থাকছে। যার অর্থ এশিয়া অঞ্চলে কোনো কিছু হলে তার হাত ধরেই। তাছাড়া এ মুহূর্তে ভারত মালদ্বীপের বর্তমান সরকার পর্যায়ের সম্পর্কও সুখকর নয়। সব মিলিয়ে ডোনাল্ড লু’র এ সফর নানা দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ। 

ডোনাল্ড লু’ ইতিমধ্যে এ অঞ্চলের একজন প্রভাবশালী মার্কিন কর্মকর্তা এটা এখন সবার জানা! দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগের দিন তার দেওয়া, শর্তহীন সংলাপের চিঠি বাংলাদেশের শীর্ষ তিন দল আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির কাছে হস্তান্তর করেছিলেন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। কিন্তু আওয়ামী লীগ ওই চিঠিতে গুরুত্ব না দিলে ওই উদ্যোগ অকার্যকর থাকে। 

ওই পর্যন্তই ডোনাল্ড লু নিয়ে বাংলাদেশে আলোচনা। এরপর অনুষ্ঠিত হয়ে গেছে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন, যা ক্ষমতাসীন দলের প্রত্যাশা অনুসারে ও সংবিধান অনুসারেই হয়েছে। নির্বাচনে বিএনপিসহ বেশকিছু বড় বড় রাজনৈতিক দল অংশ না নিলেও তাতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কোনো কিছুই হয়নি। স্বাচ্ছন্দ্যে সব সেরে ফেলতে পেরেছেন। যদিও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ ওই দুই দেশের মিত্রদের একটা নির্দেশনা/প্রত্যাশা ছিল যেসব দলকে নিয়ে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন যাতে অনুষ্ঠিত হয় বাংলাদেশে। তবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কাছে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হলেও ওই ব্যাখ্যা মার্কিনিরা মানেনি। নির্বাচনের পরক্ষণেই তারা যেভাবে চেয়েছিল সেভাবে নির্বাচন হয়নি বলে বিবৃতি দিয়েছে। যার অনেকাংশে কপি-পেস্ট ছিল যুক্তরাজ্যের বিবৃতিতেও। কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ার ভাষাও অনেকটাই একই রকম। কিন্তু ওইসব বিবৃতি কানে নেয়নি ভারত, রাশিয়া, চীনসহ বিশ্বের বহু দেশ। তারা নতুন সরকার, প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। একসঙ্গে পথচলা অব্যাহত রাখার অভিপ্রায় ঘোষণার অর্থ আওয়ামী লীগ সরকার টানা চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করার কারণেই। 

এমনি মুহূর্তে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যাশা/নির্দেশনা অনেকটাই বিফলে গেছে বলে মনে করছেন অনেকেই। বিশেষ করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মধ্যে এমন বিশ্বাস প্রবল যে মার্কিনিদের প্রত্যাশা উপেক্ষিত হয়েছে ভারতের প্রভাবে। ভারত মনেপ্রাণে যা চেয়েছিল তেমনই এক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে বাংলাদেশে এবং যেটা নির্বাচন পরবর্তীতে তাদের অভিনন্দন জানানোর সময়, তাদের কথাবার্তাতেও স্পষ্ট। 

এরপরও সন্দেহের আকাশে ডালপালা মেলছে শঙ্কা। মার্কিনিরা কিছু না বুঝেই চেয়েছিল, যা উপেক্ষিত হলো বাংলাদেশে। তারা কী এখন হাত গুটিয়ে বসে থাকবে? নাকি ভারতের চোখেই দেখবে বাংলাদেশকে। যদি তাই হয়, তাহলে কেন তারা বাংলাদেশের নির্বাচন ঘিরে অনেক আগে ভিসানীতিমালা ঘোষণা করবে, আরো অনেক দেনদরবার করবে। প্রতিটা দেনদরবার তো ভারতকে পাশে রেখেই করেছে, যখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বন্ধু দেশ ভারত। তাহলে হঠাৎ কেন ভারতীয়দের এমন ভূমিকা, যেখানে কিছুটা হলেও নাজেহাল মার্কিনিদের প্রত্যাশা। তাহলে কী সব ঘটনার মঞ্চস্থ হওয়ার পরও আরো কিছু বাকি রয়েছে? 

তবে এগুলো নিয়ে ভাববার কিছু নেই। নতুন করে শপথবাক্য পাঠ করে নতুন এমপি, মন্ত্রীরা এখন নিজকর্মে মগ্ন। সম্প্রতি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদও বলেছেন, বাংলাদেশের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, রাশিয়া, চীন, ভারতসহ সবার সঙ্গে চমৎকার সম্পর্ক বিদ্যমান। তবুও যে সন্দেহ কুরে খাচ্ছে সরকারকে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, এই (দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে জয়ী হওয়া) সরকার যাতে ক্ষমতায় থাকতে না পারে, সেজন্য তারা (বিরোধীদল) তাদের বিদেশি বন্ধুদের দিকে তাকিয়ে আছে। তবে আমাদের প্রধানমন্ত্রী কোনো নিষেধাজ্ঞা বা ভিসানীতি নিয়ে মাথা ঘামান না।’ 

গত ২৮ জানুয়ারি সচিবালয়ে ভারতীয় হাইকমিশনারের সঙ্গে সাক্ষাৎকার শেষে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘এদেশে কিছু কিছু অপজিশন তারা কোনো কোনো বিদেশি রাষ্ট্রের সঙ্গে মিলে হয়ে আমাদের এখানে অস্থিতিশীল করতে চেয়েছিল। নির্বাচনটাকে ভ-ুল করতে চেয়েছিল সেসময় ভারত আমাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছিল। সে কথা আমাদের স্বীকার করতেই হবে। দু’দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কে সংশয় আর অবিশ্বাসের যে দেওয়াল তা ভেঙে দিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ভবিষ্যতেও ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কে চিড় ধরার কোনো কারণ দেখছি না।’ সন্দেহের কথা এখানেই। এখনো একটা কিছু হতে পারে সে দুশ্চিন্তায় বিদ্যমান। 

গত ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটের হার নিয়ে নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাদের কাছে জানতে চেয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) বিশেষজ্ঞ দলসহ যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট (আইআরআই) ও ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ইনস্টিটিউটের (এনডিআই)? আইআরআই ও এনডিআইয়ের প্রতিনিধিরাও ইসির কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাদা বৈঠক করেন। সেখানে ভোটের হার নিয়ে জানতে চাওয়া হয় বলে ইসি সচিবালয় সূত্র গণমাধ্যকে জানিয়েছে। 

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বাংলাদেশে অবস্থান করা গবেষকদের তথ্যের হয়তো অপেক্ষা করে থাকতে পারে যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যরা। যার সঙ্গে ডোনাল্ড লু’র ভারত ও মালদ্বীপ সফরের কোনো যোগ সদৃশ আপাতত চোখে না পড়লেও ডোনাল্ড লু তার ভারত সফরে বাংলাদেশ প্রসঙ্গ নিয়ে আলাপ-আলোচনা করবেন না এটা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। 

তাছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মতবিরোধ এখনো বিদ্যমান। বিশেষ করে ড. ইউনুস ইস্যু থেকে শুরু করে বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন নিয়েও। নির্বাচনের পরও ক্ষমতাসীন দলের পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে ইঙ্গিত করেও অনেক কথা বলা হয়েছে। ফলে আপাত দৃষ্টিতে ডোনাল্ড লু’র ভারত ও মালদ্বীপ সফরের সূচিতে বাংলাদেশ ইস্যু না থাকলেও আলোচনার টেবিলে বাংলাদেশ উঠবে না এটা ভাবা একেবারে অমূলক নয়! ফলে বাংলাদেশের ইস্যুতে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের কঠোর দৃষ্টি ডোনাল্ড লু’র সফর পানে সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

শেয়ার করুন