২৮ এপ্রিল ২০১২, রবিবার, ০৪:৪৯:৫২ অপরাহ্ন
শিরোনাম :


নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত ছাড়া দেশ আরো বিপর্যয়ের দিকে যাবে -জোনায়েদ সাকি
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৪-১১-২০২২
নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত ছাড়া দেশ আরো বিপর্যয়ের দিকে যাবে  -জোনায়েদ সাকি


গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেছেন  ‘নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত ছাড়া দেশ আরো বিপর্যয়ের দিকে যাবে’। তিনি সব বিরোধী দলকে সরকারের পদত্যাগ ও ফ্যাসিবাদের পতনে আন্দোলন জোরদার করাাা আহবান জানান। ভোটাধিকার ও রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক রূপান্তর ঘটাতে জনগণের বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তোলার দাবিতে

গণসংহতি আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর সমাবেশে তিনি একথা বলেন।

 আজ ৪ নভেম্বর শুক্রবার, বিকাল ৩ টায়, শাহবাগ, জাতীয় জাদুঘরের সামনে গণসংহতি আন্দোলনের সংগ্রামের ২ দশক (২০০২) এবং রাজনৈতিক দল হিসেবে আত্মপ্রকাশের ৭ বছর উপলক্ষে ‘সরকারের পদত্যাগ ও ফ্যাসিবাদের পতনে আন্দোলন জোরদার’ এবং ‘ভোটাধিকার ও রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক রূপান্তর ঘটাতে জনগণের বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তোলার দাবিতে’ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।


গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকির সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন গণসংহতি আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সমম্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল, রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য দেওয়ান আবদুর রশিদ নীলু, হাসান মারুফ রুমী, তাসলিমা আখ্তার, মনির উদ্দীন পাপ্পু, সম্পাদকম-লীর সদস্য বাচ্চু ভূঁইয়া, দীপক রায়, ইমরাদ জুলকারনাইন ইমন, তরিকুল সুজন, কেন্দ্রীয় সদস্য সৈকত মল্লিক, অঞ্জন দাস, উবা থোয়াই মারমা, অপূর্ব নাথ, এস এম আমজাদ হোসেন, মিজানুর রহমান মোল্লা, আলিফ দেওয়ান, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি মশিউর রহমান খান রিচার্ড, বাংলাদেশ গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির কেন্দ্রীয় সদস্য বাবুল হোসেনসহ বিভিন্ন জেলা নেতৃবৃন্দ। সমাবেশ পরিচালনা করেন গণসংহতি আন্দোলনের সম্পাদকম-লীর সদস্য জুলহাসনাইন বাবু।


সভাপতির বক্তব্যে জোনায়েদ সাকি বলেন, সরকার ভোটাধিকার হরণ করেছে। দেশের সার্বভৌমত্বকে চরম হুমকির মুখে ঠেলে দিয়েছে। লুটপাট করে দেশের ব্যাংক ব্যবস্থাকে প্রায় দেউলিয়া করেছে। টাকা পাচার করে দেশের অর্থনৈতিক বিপর্যয় সৃষ্টি করেছে। সংবিধানের ৫০ বছর পূর্তি হচ্ছে, এই সংবিধান জনগণের অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি বরং স্বৈরতন্ত্রের জন্ম দিয়েছে। সুতরাং এই সংবিধান সংস্কার করে একটা নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত প্রতিষ্ঠা করতে হবে।


 নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত ছাড়া দেশ আরো বিপর্যয়ের দিকে যাবে। দেশকে সামগ্রিক বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষার জন্য জনগণের রাজনৈতিক শক্তিকে রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য নির্বাচিত করতে হবে। আমরা গণমানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য, শাসনতন্ত্র বদলের জন্য লড়াই শুরু করেছি। জনগণের বিজয় অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত আমাদের লড়াই চলবে।


আবুল হাসান রুবেল বলেন, এই সরকার ভোট ডাকাত সরকার, মানুষের জবান বন্ধ করার সরকার, টাকা পাচারের সরকার, মিথ্যা কথা বলার সরকার, ভয় দেখানোর সরকার, একখথায় এই সরকার একটা জালেম সরকার। জালেম সরকারের বিরুদ্ধে সমস্ত জায়গায় মানুষ জেগে উঠছেন। কয়দিন আগে সরকার বলতো, বাংলাদেশকে তারা কানাডা, সিঙ্গাপুর বানাবেন। কিন্তু এখন বলছেন দিনে বাতি জ¦ালানোর দরকার নাই। প্রধানমন্ত্রী কুপিবাতি জ¦ালানোর কথা বলছেন।


 তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশে যা খাদ্য আছে তার কারণে এখানে দুর্ভিক্ষ হবার কোনো সম্ভাবনা নেই। দুর্ভিক্ষ খাদ্যের অভাবে হয় না, দুর্ভিক্ষ হয় গণতন্ত্র না থাকলে, দুর্ভিক্ষ হয় মানুষের পকেটে টাকা না থাকলে। সৃতরাং এই জালেম সরকারের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।


দেওয়ান আবদুর রশিদ নীলু বলেন, জনগণ ভালো নেই, সরকার ভালো আছে, মন্ত্রীরা ভালো আছে। মন্ত্রীরা বিদেশে টাকা পাচার করে সেখানে ভবিষ্যৎ গড়ছে। কিন্তু সরকার জনগণের কোনো দায় নিচ্ছে না।


তাসলিমা আখ্তার বলেন, শ্রমিকরা বাঁচার মতো মজুরি পাচ্ছেন না। নারী পুরুষ কেউই অধিকার পাচ্ছে না। নারীরা আরো বেশি নিপীড়নের শিকার। চাকমা মারমা, বম, সাঁওতাল,মান্দী, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, মুসলিমসহ বহু জাতিগোষ্ঠিীর দেশ অথচ সরকার বিভাজন সৃষ্টি করে ফায়দা লুটছে। এই দেশটা যাতে সকলের হয় তার জন্য সকলে মিলে মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই করতে হবে।


সমাবেশে বক্তারা বলেন, প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই গণসংহতি আন্দোলন কৃষক, শ্রমিক, মেহনতি মানুষের কথা বলছে। নিপীড়িত জাতিসত্তার কথা বলছে। দেশে গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা করাই এখন আমাদের প্রধান লক্ষ্য।


বক্তারা আরো বলেন, দেশে আমরা দুর্ভিক্ষ দেখতে চাই না। যারা দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি করছে সেই আওয়ামী লীগ সরকারকে বিদায় করতে হবে। আমরা স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে লড়াই করবো। যারা মানুষের জীবনকে ভেলায় পরিণত করেছে, তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করবো।


বক্তারা বলেন, বর্তমান ফ্যাসিবাদী সরকার বিরোধী দলের মিছিল-সমাবেশ দেখলেই গদি হারানোর ভয় পায়। সরকার বিরোধী দলগুলোর গণতান্ত্রিক ও ন্যায়সঙ্গত কর্মসূচিতে পুলিশ এবং দলীয় গু-া লেলিয়ে বাধা দেয়, গুলি করে। সীমাহীন দুর্নীতি ও টাকা পাচার করে দেশের রিজার্ভ পর্যন্ত খেয়ে ফেলেছে। তথাকথিত উন্নয়নের নামে নদী পাহাড় বন জলাশয় দখল করে প্রকৃতিবিনাশী প্রকল্প করছে। এমপি-মন্ত্রী, দলীয় নেতা ও সরকারের ঘনিষ্ঠজনরা অপরাধ করলেও তাদের কোনো বিচার হয় না। একদিকে দেশের টাকা নয় ছয় করে বিদুৎকেন্দ্রের মালিকদের পকেটে তুলে দিচ্ছে, অন্যদিকে ভয়াবহ লোডশেডিংয়ের কবলে ফেলেছে সমগ্র দেশকে। যেহেতু এই সরকার ভোট ডাকাতি করে জোরপূর্বক ক্ষমতায় বসেছে ফলে জনগণের প্রতি তার বিন্দুমাত্র দায়বদ্ধতা নেই। বিদেশিদের হাতে পায়ে ধরে আবারো ক্ষমতায় বসার ধান্দা করছে। কিন্তু সেই আশায় গুড়েবালি হবে। আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকারের বিরুদ্ধে সারাদেশে মানুষ প্রতিবাদে জেগে উঠছে। আমরা জবাবদিহিতাহীন এই একচেটিয়া শাসনব্যবস্থা বদলের জন্য লড়াই শুরু করেছি। জনগণের সম্মিলিত জাগরণের মুখে ফ্যাসিবাদের পতন অবশ্যম্ভাবী।


সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন, গণসংহতি আন্দোলনের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা নাজার আহমেদ, ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক মনিরুল হুদা বাবনসহ বিভিন্ন জেলা ও থানা কমিটির নেতৃবৃন্দ।



 


শেয়ার করুন