২৫ এপ্রিল ২০১২, বৃহস্পতিবার, ১১:২০:৫৪ পূর্বাহ্ন


নিউইয়র্কের সাব ওয়েতে ২০০ শতাংশ হামলা বেড়েছে
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ০২-০৪-২০২২
নিউইয়র্কের সাব ওয়েতে ২০০ শতাংশ হামলা বেড়েছে নিউইয়র্কের সাবওয়েতে হামলার দৃশ্য


শিকার হচ্ছেন বাংলাদেশিরাও

মিনিয়াপোলিশে কৃষ্ণাঙ্গ যুবক জজ ফয়েডকে হত্যার পর পুরো আমেরিকা আন্দোলনে উত্তাল হয়ে পড়ে। সেই আন্দোলনের দাবি ছিল পুলিশ রিফর্ম এবং বেল রিফর্ম। আমেরিকার বড় বড় স্টেটগুলোতে পুলিশ রিফর্ম এবং বেল রিফর্ম আইনে রূপান্তরিত করা হয়। নিউইয়র্কের তৎকালীন গভর্নর এন্ড্রু কুমো এবং মেয়র বিল ডি বøাজিও পুলিশ রিফর্ম এবং বেল রিফর্ম আইন করেন। এই দুটো আইন করে পুলিশকে হাত-পা বেঁধে পানিতে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।

এই আইন করার ফলে এখন পুলিশের চাকরিই হুমকির মুখে পড়েছে। আগে যেভাবে পুলিশ অপরাধীকে গ্রেফতার করতো এখন সেইভাবে গ্রেফতার করার নিয়ম নেই। আবার পুুলিশের পোশাকের সাথে ক্যামেরাও লাগিয়ে দেয়া হয়েছে। সেই সাথে তা প্রকাশ করার নিয়মও করা হয়েছে। যে কারণে পুলিশ নিজেকে রক্ষা করেই দায়িত্ব পালন করছে। অন্যদিকে বেল রিফর্মের কারণে পুলিশ যে কোন অপরাধীকে ধরার পর থানায় নিয়ে কোর্টের তারিখ দিয়ে ছেড়ে দিতে হচ্ছে। এই সব কারণে অপরাধীরা বেপরোয়া হয়ে উঠছে। তার প্রভাব পড়েছে নিউইয়র্ক সিটিতে।

নিউইয়র্ক শহরের সাবওয়ে এবং স্টেশনগুলোতে অপরাধ প্রবণতা দিন দিন বেড়েই চলছে। প্রায় প্রতিদিনই এসব স্টেশনে নানা ধরনের অপরাধমূলক ঘটনা ঘটছে। এসব ঘটনায় প্রতিনিয়ত হামলার শিকার হচ্ছেন প্রবাসী বাংলাদেশিসহ দক্ষিণ এশিয়ানরা। এজন্য পাতাল ট্রেনে চলাচল করার েেত্র সাধারণ যাত্রীদের মাঝে ব্যাপক অনীহা দেখা দিয়েছে। নিতান্ত বাধ্য না হলে কেউ পাতাল ট্রেন ব্যবহার করতে চান না। যে কারণে নিউইয়র্ক সিটির সাবওয়েতে আগের তুলনায় যাত্রী সংখ্যা কমে গিয়েছে।

করোনা মহামারী থেকে যখন নিউইয়র্ক ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে ঠিক তখনই সাবওয়েতে অপরাধ নিয়ন্ত্রণহীনভাবে বেড়ে চলেছে। এজন্য সন্ধ্যা নামতেই সাবওয়ে স্টেশনগুলোতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।  গত কয়েক সপ্তাহে ট্রেনে চলাচল নিরাপদ করার কঠোর প্রতিজ্ঞা উচ্চারণ করেন এবং স্টেশনগুলো থেকে ছিন্নমূল মানুষদের উচ্ছেদ অভিযান শুরু করার ঘোষণা দেন নিউইয়র্কের নতুন মেয়র। এজন্য সাবওয়ে স্টেশনগুলোতে অধিক পুলিশ সদস্য নিয়োগের ঘোষণাও দেন তিনি। কিন্তু এরপর থেকেই পাতাল ট্রেন স্টেশনে অপরাধ প্রায় ২০০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

সম্প্রতি নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, গণপরিবহনের পরিবর্তে এক আতঙ্কের নাম হয়ে দাঁড়িয়েছে নিউইয়র্কের ট্রেন।  সাম্প্রতিককালে শহরে যত সহিংসতা সংঘটিত হচ্ছে, তার অধিকাংশই ঘটছে ট্রেন স্টেশনে। মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহের সাপ্তাহিক ছুটিতেই সাবওয়েতে অন্তত ছয়টি ছুরিকাঘাতের ঘটনা ঘটেছে। আরো লণীয় ব্যাপার হলো, এসব অপরাধমূল কর্মকাণ্ডের প্রায় প্রত্যেকটিতে হামলার শিকার হন বাংলাদেশ, চীনসহ এশীয় কমিউনিটির সদস্য। প্ল্যাটফর্ম থেকে ধাক্কা দিয়ে চলন্ত ট্রেনের সামনে ফেলে দেয়া, হাতুড়ি দিয়ে আঘাত, ছুরিকাঘাত এবং ট্রেনের কম্পার্টমেন্টে এশীয় যাত্রীদের ঘুষি মারতে মারতে অজ্ঞান করে ফেলার মতো ঘটনা অহরহই ঘটছে। 

নিউইয়র্ক পুলিশের পরিসংখ্যানের উদ্ধৃতি দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ২১ ফেব্রæয়ারি থেকে ২৭ ফেব্রæয়ারি পর্যন্ত সাত দিনে সাবওয়েতে ৫৫টি অপরাধমূলক ঘটনা পুলিশের কাছে রিপোর্ট করা হয়েছে। ২০২১ সালের একই সময়ের তুলনায় সাবওয়ে স্টেশনে অপরাধ বৃদ্ধির হার ২০৫.৬ শতাংশ বেশি। ২০২১ সালের ২১ ফেব্রæয়ারি থেকে ২৭ ফেব্রæয়ারি পর্যন্ত সাবওয়েতে ১৮টি অপরাধমূলক ঘটনা নিউইয়র্ক পুলিশের কাছে রিপোর্ট হয়েছিল।

পরিসংখ্যানে আরো দেখা যায়, চলতি বছরের ২৭ ফেব্রæয়ারি পর্যন্ত ৫৮ দিনে পুলিশের কাছে নিউইয়র্ক সিটি সাবওয়েতে সংঘটিত ৩৭৫টি অপরাধের ঘটনা সম্পর্কে রিপোর্ট করা হয়েছে। ২০২১ সালের একই সময়ে ২১৭টি ঘটনা পুলিশকে অবহিত করা হয়েছিল। এছাড়া পুলিশে রিপোর্ট করা হয় না, এমন অনেক অপরাধও এসব সাবওয়েতে সংঘটিত হচ্ছে বলে ধারণা করছে নিউইয়র্ক পুলিশ।

নিউইয়র্ক পুলিশ বিভাগের কাছে এসব ঘটনার অধিকাংশকই হেটক্রাইম বা ঘৃণিত অপরাধের অংশ বলে অভিযোগ করা হয়। কারণ অধিকাংশ ক্ষেত্রে হামলাকারীরা হামলা করেই দ্রæত স্থান ত্যাগ করে। এমনকি কোনো কিছু লুণ্ঠনের চেষ্টাও করে না তারা। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, তাদের ওপর হওয়া হামলার প্রায় প্রত্যেক েেত্র হামলাকারীরা তাদের নোংরা ভাষায় বর্ণবাদী গালি দিয়েছে এবং আমেরিকা থেকে চলে যেতে বলেছে। এর অন্যথা হলে তাদেরকে আরো কঠোর পরিণতি ভোগ করতে হবে বলেও হুমকি দিয়েছে হামলাকারীরা। এর বাইরেও শহরজুড়ে সংঘটিত অপরাধের মধ্যে গুলিবর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের মতো ঘটনা ঘটছে। তবে পুলিশ মনে করছে যে, শহরে সার্বিকভাবে ভয়াবহ অপরাধের ঘটনা পূর্ববর্তী বছরের চেয়ে উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পেয়েছে।

অপরাধ বিশেষজ্ঞ এবং জন জে কলেজ অব ক্রিমিনাল জাস্টিসের খন্ডকালীন অধ্যাপক জোসেফ গিয়াকেলন বলছেন, করোনার ভয়াবহতা থেকে নিউইয়র্কের বাসিন্দারা যখন নিজের পায়ে দাঁড়াতে যাচ্ছে, তখন তাদেরকে অপরাধের কথা ভাবতে হচ্ছে, যে অপরাধের শিকার তারাও হতে পারেন। একইসঙ্গে পুলিশ সাবওয়ে অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করতে না পারায় হতাশা ব্যক্ত করেছেন তিনি। তিনি বলেন, প্রশাসন যদি চায় যে মানুষ কাজে ফিরে যাক তাহলে গণপরিবহনকে অপরাধমুক্ত করতে হবে। কারণ সাবওয়ে নিউইয়র্ক শহরের জীবনসূত্র। যাত্রীরা যদি সাবওয়ে ব্যবহার করতে ভয় পায় এবং এখন সাবওয়েতে অপরাধের যে চিত্র দেখা যাচ্ছে তাতে তাদের দ্বিধাগ্রস্ত হওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে।

এদিকে নিউইয়র্ক সিটি সাবওয়ের স্টেশনগুলোর মধ্যে ১০টি স্টেশনকে অপরাধ সংঘটনের ক্ষেত্রে অত্যন্ত বিপজ্জনক স্টেশন হিসেবে বর্ণনা করে এসব স্টেশন ব্যবহারকারী যাত্রীদের বিশেষভাবে সতর্কতা অবলম্বন করার পরামর্শ দিয়েছে নিউইয়র্ক পুলিশ বিভাগ।

নিউইয়র্ক পুলিশের তালিকায় স্থান পাওয়া বিপজ্জনক স্টেশনগুলো হচ্ছে- ম্যানহাটানের টাইমস স্কোয়ার স্টেশন, সেভেনথ অ্যাভিনিউ ৪২ স্ট্রিট, ব্রডওয়ে স্টেশন, ২৩ স্ট্রিট, সেভেনথ অ্যাভিনিউ, গ্র্যান্ড সেন্ট্রাল স্টেশন, ৪২ স্ট্রিট, পার্ক অ্যাভিনিউ, ব্রডওয়ে জংশন স্টেশন, ফুলটন স্ট্রিট, ব্রæকলিন, প্রসপেক্ট পার্ক অ্যাভিনিউ, লিঙ্কন রোড, ব্রæকলিন, ১৪৯ স্ট্রিট, গ্র্যান্ড কনকোর্স স্টেশন, ব্রঙ্কস, বাওরি স্টেশন, ডিলেন্সি স্ট্রিট, ব্রড চ্যানেল স্টেশন, ওয়েস্ট রোড, কুইন্স, হারলেম স্টেশন, ১২৫ স্ট্রিট, লেক্সিংটন অ্যাভিনিউ, ৭১ ফরেস্ট হিলস অ্যাভিনিউ স্টেশন, কুইন্স।

এসব স্টেশনে নিকট অতীতে হত্যাসহ ভয়াবহ অপরাধের ঘটনা ঘটেছে এবং এখন পর্যন্ত পুরোপুরি অপরাধমুক্ত করা সম্ভব হয়নি। এজন্য ট্রেন চলাচলের সময় সতর্ক থাকার জন্য যাত্রীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে পুলিশ বিভাগ। অন্যদিকে নিউইয়র্ক সিটির মেয়র এরিক অ্যাডামস পুলিশ রিফর্ম আইনটি বাণিলের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন এবং সবার সহযোগিতা কামনা করেছেন।

শেয়ার করুন