২৫ অক্টোবর ২০২৫, শনিবার, ০৪:১৮:৪৬ অপরাহ্ন


সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণা
বাংলাদেশ সোসাইটির ৫০ বছর পূর্তি ২ নভেম্বর
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৭-০৯-২০২৫
বাংলাদেশ সোসাইটির ৫০ বছর পূর্তি ২ নভেম্বর সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত নেতৃবৃন্দ


প্রবাসের মাদার সংগঠন হিসাবে পরিচিত বাংলাদেশ সোসাইটির ৫০ বছর পদার্পণ করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ সোসাইটির বর্তমান কমিটি। ৫০ বছর পূর্তির অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ সোসাইটির ইতিহাস ঐতিহ্য তুলে ধরা হবে। গত ১১ সেপ্টেম্বর জ্যাকসন হাইটসের নবান্ন পার্টি হলে এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ সোসাইটির কর্মকর্তারা এ ঘোষণা দেন। বাংলাদেশ সোসাইটির সভাপতি আতাউর রহমান সেলিমের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলীর পরিচালনায় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সোসাইটির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান শাহ নেওয়াজ, সাবেক চেয়ারম্যান এম আজিজ, বাংলাদেশ সোসাইটির সাবেক সভাপতি ডা. ওয়াদুদ ভূইয়া, ডা. মইনুল ইসলাম মিয়া, ডা. হামিদুদজ্জামান, আজমল হোসেন কুনু, বাংলাদেশ সোসাইটির সিনিয়র সহ-সভাপতি মহিউদ্দিন দেওয়ান, সহ-সভাপতি কামরুজ্জামান কামরুল, সাবেক সহ-সভাপতি মোহাম্মদ হোসেন খোকন, ফখরুল আলম, আব্দুর রহিম হাওলাদার, মাহমুদ চৌধুরী, সাবেক সহ-সভাপতি কাজী আজহারুল হক মিলন, ফারুক হোসেন মজুমদার, বাংলাদেশ সোসাইটির ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য আজিমুর রহমান বোরহান, আতোয়ারুল আলম, নাঈম টুটুল, আহসান হাবিব, সাবেক কর্মকর্তা কাজী শাখাওয়াত হোসেন আজম, বাংলাদেশ সোসাইটির কোষাধ্যক্ষ মফিজুল ইসলাম ভুইয়া রুমি, বাংলাদেশ সোসাইটির কর্মকর্তা হাসান জিলানী, রিজু মোহাম্মদ, জামিল আনসারী, মোস্তফা অনিক রাজ, আবুল কাশেম, ডিউক খান, সাবেক কর্মকর্তা ফারহানা চৌধুরী, কমিউনিটি অ্যাকটিভিস্ট ফাহাদ সোলায়মান, শাহ শহীদুল হক প্রমুখ।

লিখিত বক্তব্যে মোহাম্মদ আলী বলেন, বাংলাদেশ সোসাইটি এ বছরের নভেম্বরে গৌরবময় ৫০ বছরে পদার্পণ করতে যাচ্ছে। অর্ধশতাব্দীর এ ঐতিহাসিক মাইলফলক উদযাপনকে কেন্দ্র করে আমরা হাতে নিয়েছি নানাবিধ কর্মসূচি ও উদ্যোগ, যা আজ আপনাদের সামনে প্রাথমিকভাবে তুলে ধরতে এবং আপনাদের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী কমিউনিটি এবং সব সদস্য ও শুভানুধ্যায়ীদের জানাতে আজকের এ আয়োজন। আজকের এ সংবাদ সম্মেলনটি আমরা আয়োজন করেছি এক বিশেষ দিনে ১১ সেপ্টেম্বর। এই দিনটি আমাদের সবার জন্য গভীর বেদনার, কারণ ২০০১ সালের এদিনে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় হাজারো নিরীহ মানুষের প্রাণহানি ঘটেছিল। তাদের মধ্যে কয়েকজন ছিলেন আমাদেরই বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ভাইবোন।

বাংলাদেশ সোসাইটি ইন্কের পক্ষ থেকে আমরা শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি ৯/১১-এ সব নিহতের। আমরা প্রার্থনা করছি, তাদের আত্মার শান্তির জন্য এবং তাদের পরিবার যেন ধৈর্য ও শক্তি নিয়ে বেঁচে থাকতে পারে। আজকের এ সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে আমরা সে শোকের মুহূর্তের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করছি।

তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ সোসাইটি কেবল একটি সংগঠন নয় এটি প্রবাসী বাংলাদেশিদের ঐক্যের প্রতীক, পরিবারের বন্ধন এবং আমাদের সাংস্কৃতিক ও সামাজিক পরিচয়ের ভিত্তি। ১৯৭৫ সালে যাত্রা শুরু করা এ সংগঠন আজ অর্ধশতাব্দী পেরিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে একটি স্বনির্ভর, প্রভাবশালী ও সেবামুখী প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। আমরা কৃতজ্ঞ তাদের প্রতি যারা এই সংগঠনকে গড়ে তুলেছেন। বাংলাদেশ সোসাইটির এ সাফল্যময় অর্ধশতাব্দীতে প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্যরা বিশাল একটি স্বপ্নের বীজ বপন করে গেছেন। পরবর্তী সময়ে ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন সময়ে নির্বাচিত কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যরা নিজ নিজ অবস্থান থেকে এ সংগঠনকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন তার কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে। আজ বাংলাদেশ সোসাইটি যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ এবং স্বনির্ভর সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন।

এ দীর্ঘযাত্রায় প্রতিষ্ঠাতা থেকে শুরু করে বিভিন্ন সময়ের সব নেতৃবৃন্দ, সদস্য, শুভানুধ্যায়ী এবং স্বেচ্ছাসেবকদের শ্রম, ত্যাগ, দিকনির্দেশনা এবং অবদানের প্রতি আমরা গভীর কৃতজ্ঞতা ও শ্রদ্ধা জানাই। একই সঙ্গে হৃদয়ের অন্তঃস্থল থেকে শ্রদ্ধা জানাই তাদের প্রতি, যারা আজ আমাদের মধ্যে নেই। তাদের ত্যাগ, ভালোবাসা ও নিবেদিত সেবা আজও বাংলাদেশ সোসাইটিকে শক্তি জুগিয়ে যাচ্ছে। তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করি।

তিনি বলেন, করোনা মহামারি থেকে শুরু করে যে কোনো দুর্যোগ-দুর্বিপাকে প্রতিটি সদস্যের পাশে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ সোসাইটি প্রমাণ করেছে সদিচ্ছা ও সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য উদ্দেশ্য থাকলে তার বাস্তবায়ন সম্ভব। এর মাধ্যমে প্রবাসে থাকা সদস্যদের কল্যাণ ছাড়াও বাংলাদেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগেও পীড়িত মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে বারবার অনন্য নজির স্থাপন করেছে বাংলাদেশ সোসাইটি। এ সংগঠন বিভিন্নভাবে প্রবাসীদের সেবা দিয়ে আসছে। প্রবাসীরাও এসব সেবায় উপকৃত হচ্ছেন। ভ্রাম্যমাণ কনস্যুলেট সার্ভিস, ইমিগ্রেশন-সংক্রান্ত তথ্যসেবা, প্রবাসে বেড়ে ওঠা নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের বাংলা শিক্ষার জন্য বাংলা স্কুল স্থাপন যা কুইন্স এবং ব্রুকলিনে নিয়মিতভাবে পরিচালিত হচ্ছে। এছাড়াও দৈনন্দিন নানান প্রয়োজনে বাংলাদেশ সোসাইটি পাশে দাঁড়িয়েছে প্রবাসী বাংলাদেশিদের। নিজস্ব কবরস্থানের মাধ্যমে সোসাইটি তার একটি বড় সামাজিক দায়িত্বে নিজেকে অন্তর্ভুক্ত করতে পেরেছে।

তিনি বলেন, ৫০ বছরের এ দীর্ঘ যাত্রা কেবল উৎসবের নয়, এটি আবেগ, দায়িত্ব ও স্মৃতিরও যাত্রা। তাই মূল অনুষ্ঠানের আগে আমরা আয়োজন করবো কয়েকটি ছোট, কিন্তু অর্থবহ কর্মসূচি-

স্মরণসভা ও দোয়া মাহফিল : আমরা শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবো তাদের, যারা বাংলাদেশ সোসাইটির নেতৃত্ব দিয়েছেন, শ্রম দিয়েছেন, সেবা করেছেন কিন্তু আজ আমাদের মাঝে নেই। তাদের অবদানই আজকের বাংলাদেশ সোসাইটিকে এ অবস্থানে নিয়ে এসেছে। তাদের বিদেহি আত্মার শান্তি কামনা করতে আমরা বিশেষ দোয়া মাহফিলের আয়োজন করবো।

রক্তদান কর্মসূচি : জীবন বাঁচানোর চেয়ে মহৎ কাজ আর নেই। সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে আমরা আয়োজন করবো একটি Blood Donation উৎসব, যাতে প্রবাসী বাংলাদেশিরা মানবতার সেবায় এগিয়ে আসতে পারেন।

কমিউনিটি আলোচনা সভা : এ মহাআয়োজন সফল করতে আমরা কমিউনিটির নেতৃবৃন্দের সঙ্গে মতবিনিময় করবো। প্রবাসের সব আঞ্চলিক, সামাজিক, শিক্ষার্থী, সাংস্কৃতিক, ক্রীড়া, ব্যবসায়ী ও পেশাজীবী সংগঠনের এবং ধর্মীয় নেতৃবৃন্দের সঙ্গে মতামত, পরামর্শ ও সহযোগিতার মাধ্যমেই এ সুবর্ণজয়ন্তীকে সফলভাবে উদযাপন করা সম্ভব হবে। আমরা অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছি আগামী ২ নভেম্বর নিউইয়র্কের বিখ্যাত কনভেনশন হল টেরেস অন দ্য পার্কে, অনুষ্ঠিত হবে সুবর্ণজয়ন্তীর মহাউদযাপন। বিকাল ৪টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত চলবে এ অনন্য আয়োজন, যেখানে মিলিত হবে আমাদের ইতিহাস, সংস্কৃতি, আবেগ, কৃতজ্ঞতা ও ভবিষ্যতের প্রতিশ্রুতি।

সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের প্রাথমিক কর্মসূচি

১. সাবেক কর্মকর্তাদের সংবর্ধনা ও স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠান।

২. যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মাননা প্রধান।

৩. বিশেষ আলোচনা সভা, ইতিহাস ও ঐতিহ্য প্রদর্শনী।

৪. প্রবাসে বেড়ে ওঠা নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের বিশেষ পরিবেশনা ও সম্মাননা প্রদান।

৫. প্রবাস ও কমিউনিটিতে অবদান রাখা বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার বিশিষ্ট ব্যক্তিদের বিশেষ সম্মাননা প্রদান।

৬. সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

তিনি বলেন, সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের অন্যতম প্রধান উদ্যোগ হলো একটি স্মারকগ্রন্থ (স্মরণিকা) প্রকাশনা। এটি কেবল একটি বই হবে না; বরং হবে আমাদের অর্ধশতাব্দীর যাত্রাপথের একটি জীবন্ত দলিল। এতে লিপিবদ্ধ হবে বাংলাদেশ সোসাইটির জন্মলগ্ন থেকে আজ পর্যন্ত ইতিহাস, অভিজ্ঞতা, সংগ্রাম, সাফল্য এবং প্রবাসীদের গল্প।

আমরা বিশেষভাবে প্রাক্তন কর্মকর্তাদের, বিশেষত যারা সংগঠনের প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে ভূমিকা রেখেছেন, তাদের আহ্বান জানাচ্ছি যেন তারা তাদের অভিজ্ঞতা, সংগ্রাম, স্বপ্ন ও কৃতজ্ঞতার কথা লিখে দেন। তাদের কলমেই ধরা পড়বে বাংলাদেশ সোসাইটির প্রকৃত ইতিহাস ও হৃদয়ের গল্প। একই সঙ্গে প্রবাসী সাংবাদিক সমাজ, শুভানুধ্যায়ী, সবাইকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি, আপনাদের চোখে দেখা সোসাইটির অভিজ্ঞতা ও মতামত তুলে ধরতে। আপনাদের কাছে বিনীত অনুরোধ আপনারা যারা লেখা দিতে আগ্রহী তারা অবশ্যই আগামী ২১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে আমাদের ইমেইলে আপনার মূল্যবান লেখাটি পাঠিয়ে দেবেন। এ সুবর্ণজয়ন্তী শুধু অতীত উদযাপন নয়, এটি ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনা। বর্তমান কার্যকরি পরিষদ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ যে আমরা বাংলাদেশ সেন্টার (Bangladesh Community Centre) বাস্তবায়নে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

এটি বাস্তবায়িত হলে প্রবাসে বেড়ে ওঠা প্রজন্মের জন্য এটি হবে একটি স্থায়ী ঠিকানা যেখানে তারা একত্রিত হবে, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের সঙ্গে যুক্ত থাকবে, এবং বাংলাদেশি পরিচয়ের শেকড়কে আরো দৃঢ় করবে। সুবর্ণজয়ন্তীর মহাউদযাপন এ স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার পথে নতুন মাত্রা যোগ করবে।

এ প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের পথে আপনারা যেমন সব সময় পাশে ছিলেন, আগামীতেও আপনাদের সহযোগিতা আমরা প্রত্যাশা করি।

সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে শাহ নেওয়াজ, আতাউর রহমান সেলিম বলেন, বাংলাদেশ সোসাইটির এ অনুষ্ঠানের খরচ সোসাইটির অ্যাকাউন্ট থেকে খরচ করা হবে না। আরেক প্রশ্নের জবাব আতাউর রহমান সেলিম এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলেও সাংবাদিকদের প্রতিবাদের মুখে শাহ নেওয়াজ বলেন, নতুন ভবন বাংলাদেশ সোসাইটির নামেই ক্রয় করা হবে, কোনো ব্যক্তির নামে নয়। পুরোনো ভবন বিক্রির বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়নি।

অনুষ্ঠানে সাবেক সভাপতি ও ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান এম আজিজ বলেন, এ সংগঠন প্রতিষ্ঠায় যারা বিভিন্ন সময়ে সহযোগিতা করেছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। এবং ৫০ বছর পূর্তির অনুষ্ঠানে সহযোগিতার আশ্বাস দেন।

অনুষ্ঠানের শেষ পর্বে সাবেক সভাপতি ড. ওয়াদুদ ভূইয়া সাংবাদিকদের প্রশ্ন নিয়ে অনভিপ্রেত প্রশ্ন তুললে উত্তপ্ত পরিস্থিতির তৈরি হয়। সাংবাদিকরা প্রতিবাদ জানান। এক সময় সোসাইটির কর্মকর্তারা ক্ষমা প্রার্থনা করলে পরিস্থিতি শান্ত হয়।

শেয়ার করুন